খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে পদ্মায় অবৈধ বালুবাহী বলগেটের ধাক্কায় আহত দুই জেলে, ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫, ৮:২২ পিএম
ফরিদপুরে পদ্মায় অবৈধ বালুবাহী বলগেটের ধাক্কায় আহত দুই জেলে, ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার
ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে অবৈধ বালুবাহী বলগেটের ধাক্কায় মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ওই ট্রলারে থাকা দুই জেলে গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তাদের নদীতে ভেসে থাকতে দেখে অন্য জেলেরা উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করে।
মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) ভোররাতের (আনুমানিক চারটা) দিকে পদ্মা নদীর ফরিদপুরের কবিরপুর চর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন- মানিকগঞ্জের বারিক ফকিরের ছেলে ইউসুফ ফকির (৩০) ও মাসুদ রানার ছেলে মজিদ (২৫)।
আহতদের স্বজনেরা জানান, ওই দুই জেলে পদ্মা নদীর কবিরপুর এলাকায় মাছ ধরছিলেন। এসময় বালুবাহী একটি বলগেট ট্রলারটিকে সজোরে আঘাত করে, এতে নৌকাটি দুমড়ে-মুচড়ে নদীতে তলিয়ে যায়। এসময় ওই দুই জেলে পানিতে ছিটকে পড়ে সোলার কার্টুন ধরে ভাসতে থাকেন। পরে অন্য জেলেরা তাদের দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
কোতয়ালী নৌ পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ নাসিম আহমেদ জানান, খবর পেয়ে হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, আঘাতকারী বলগেটটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মায় দীর্ঘদিন ধরে একাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে কবিরপুরসহ আশেপাশের এলাকায় অবৈধভাবে বালু তুলে তা বলগেটের মাধ্যমে নেয়া হচ্ছে। ওই চক্র প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারেন না। রাত নামলেই পদ্মা নদীর দূর্গম এলাকাগুলোতে বাড়ে অবৈধ বালু উত্তোলন ও সেই বালু বহনকারী বলগেটের দৌরাত্ম। বেপরোয়া বলগেটের আঘাতে প্রায়শ ঘটছে দূর্ঘটনা।
আরেকটি সূত্র জানান, সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর বালুবাহী বলগেটও এই রুট দিয়ে রাতে চলাচল করে। দূরের রুট হওয়ায় রাতে ওই বলগেটগুলো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই বেপরোয়াভাবে নদীতে চলাচল করছে। এসব অবৈধ বলগেট চলাচল বন্ধের দাবী স্থানীয় মৎস্য আরোহনকারী ও নৌযান মালিকসহ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে ফরিদপুর নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অপরাধীদের দমনে নৌ পুলিশ সর্বদাই তৎপর রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ জলসীমার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটি স্পিডবোট ব্যবহার করতে হয়, এতে ফাঁক ফোকর দিয়ে কখনো কখনো এমন ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ব্যাত্যয় ঘটে। তিনি নদীতে টহল বৃদ্ধি করে সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে দাবী করেন।

তারেক রহমানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ফরিদপুর যুবদলের স্বাগত র‍্যালী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:১২ পিএম
তারেক রহমানের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ফরিদপুর যুবদলের স্বাগত র‍্যালী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ফরিদপুরে স্বাগত র‍্যালী করেছে জেলা ও‌ মহানগর যুবদল।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর‌ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে একটি স্বাগত র‍্যালী জেলা ‌শহর প্রদক্ষিণ করে ‌জনতা ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।

ফরিদপুর মহানগর যুবদলের ‌সভাপতি ও‌ ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক ‌ভাইস চেয়ারম্যান বেনজির আহমেদ তাবরিজের সভাপতিত্বে ‌এসময় বক্তব্য রাখেন- ‌জেলা যুবদলের ‌সভাপতি ‌মো. রাজিব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ‌আলী রেজওয়ান বিশ্বাস তরুণ, যুবদল নেতা ‌কে,এম জাফর, শহিদুর রহমান শহীদ, বিএম নাহিদুল ইসলাম, গাজী মাহবুব, নাসির খান, আবু সাঈদ খান রানা, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ‌প্রমুখ।

এ সময় বক্তারা বলেন, ‘আগামী ২৫ ডিসেম্বর ‌ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‌ বাংলাদেশে আসছেন। আর তাঁকে স্বাগত জানিয়ে ‌ আজ সারা দেশের মতো ‌ফরিদপুরেও আমরা স্বাগত র‍্যালী করছি।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘গত ১৭ বছর তিনি ‌দেশ ছেড়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে দলকে পরিচালিত করছেন। ‌‌তার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি ছাত্র জনতার পাশে থেকে ‌‌ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী দিনে তারই নেতৃত্বে ‌ ‌বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ‌পরিচালিত হবে। দেশবাসী ‌দীর্ঘ ১৭ বছর ‌অপেক্ষার পর ‌তাদের নেতাকে ‌আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশের মাটিতে দেখতে পাবেন। আর তাইতো ওইদিন ‌বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজনৈতিক সুবর্ণ অধ্যায় ‌সৃষ্টি হবে।’ ‌

ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল নারীর

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:৫৬ পিএম
ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল নারীর

ফরিদপুরে মধুমতি এক্সপ্রেস নামক ট্রেনে কাটা পড়ে দীপ্তি রানী সাহা (৩৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১২ টার দিকে ফরিদপুর শহরের ১ নং হাবেলী গোপালপুরের ৩ নং রেলগেটে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত দীপ্তি রানী সাহা ফরিদপুর সদরের চন্ডিপুর এলাকার মৃত বিজয় কুমার রায়ের স্ত্রী। ওই নারী শহরের ১নং গোয়ালচামট ভাড়া বাসায় থাকতেন। তবে, কি কারণে আত্মহত্যা করেছেন তা জানা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, হাবেলী গোপালপুর এলাকার সামনে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস নামক ট্রেনের নিচে দীপ্তি রানী সাহা ‌ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ‌করেন। নিহত নারী আগে থেকেই ট্রেনে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য রেললাইনের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলেন। রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ফরিদপুর শহরস্থ স্টেশন ত্যাগ করে হাবেলী গোপালপুরে পৌঁছালে দীপ্তি রানী নামক ওই মহিলা সেই ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এ সময় তার শরীর মাঝামাঝি স্থান থেকে আলাদা হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও কোতয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে রেল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

রাজবাড়ী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রেলওয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

আজ ১৭ ডিসেম্বর : ফরিদপুরে শত্রুমুক্ত হয় এইদিনে

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:১৬ পিএম
আজ ১৭ ডিসেম্বর : ফরিদপুরে শত্রুমুক্ত হয় এইদিনে

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও, সেই দিন বিজয়ের আনন্দ পুরোপুরি সাধ পায়নি ফরিদপুরবাসী। বিজয়ের সূর্য ফরিদপুরের আকাশে উদিত হয় একদিন পরেে ১৭ ডিসেম্বর। এইদিন ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ও ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীসহ শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে ১০ মার্চ (১৯৭১) পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা অম্বিকা ময়দানে উত্তোলনকারী ছাত্রনেতা ভিপি শাহ মো. আবু জাফর সার্কিট হাউজে বিজয়ী স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ফরিদপুর জেলা শত্রুমুক্ত হয়।

২৫ মার্চ ১৯৭১-এর কালরাতের পর দেশের অন্যান্য জেলার মতো ফরিদপুরেও শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা শুরু করে নির্বিচারে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও লুটপাট। ফরিদপুর সদর ও বোয়ালমারী উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠে একাধিক নির্যাতনকেন্দ্র। বহু নিরীহ মানুষ শহীদ হন, অসংখ্য পরিবার সর্বস্ব হারায়। তবুও দমে যাননি ফরিদপুরের মানুষ। কৃষক, ছাত্র, শ্রমিক, সবাই যার যার অবস্থান থেকে যুক্ত হন মুক্তিযুদ্ধে।

মাসের রক্তঝরা লড়াইয়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সব জেলা শত্রুমুক্ত হয়ে গেলেও ফরিদপুরে তখনও যুদ্ধের বিভীষিকা পুরোপুরি থামেনি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সরাসরি উপস্থিতির পাশাপাশি তাদের সহযোগী বিহারি ও রাজাকার বাহিনী শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে থাকে। শহরের বিভিন্ন স্থানে তারা অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেয়, যাতে করে মুক্তিবাহিনীর অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা যায়।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণের খবর ফরিদপুরে পৌঁছালেও শত্রুপক্ষ তখনো অস্ত্র ফেলে দেয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা সতর্ক অবস্থান নেন। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যশোর ক্যান্টনমেন্টের রিজিওনাল হেডকোয়ার্টারের প্রধান ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর জাহানজের আরবারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের জন্য বার্তা পাঠায়।

এই বার্তার মধ্য দিয়ে কার্যত ফরিদপুরে যুদ্ধের ইতি ঘটতে শুরু করে। কিছু সময়ের মধ্যেই শত্রুপক্ষের প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। মুক্তিযোদ্ধারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। ফরিদপুর শহরের আকাশে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা।

১৭ ডিসেম্বরের সেই সকাল ছিল ফরিদপুরবাসীর জন্য আবেগে ভরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার আনন্দে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা। যারা স্বজন হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের চোখের জল আর গর্ব একাকার হয়ে যায়।

ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু একটি জেলার মুক্তির গল্প নয়, এটি সাহস, ত্যাগ আর অবিচল প্রতিরোধের এক অনন্য দলিল। এখানে যুদ্ধ হয়েছে সম্মুখসমরে, আবার হয়েছে নীরব প্রতিরোধে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা নাম না জানা থেকেই গেছেন, কিন্তু তাদের অবদান ইতিহাসের পাতায় অমলিন।

রনাঙ্গণে ফরিদপুরের মধ্যে ১৯৭১ সালে ২১শে এপ্রিল পাকহানাদার বাহিনীর ফরিদপুর জেলা শহরের প্রবেশমুখে শ্রী অঙ্গনে কীর্তনরত ৮ সাধুকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকযুদ্ধ। এরপর ২রা মে প্রথম পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালায় ঈশান গোপালপুর জমিদার বাড়িতে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া ২৮ জন নিরীহ বাঙালিকে হত্যা করা হয়।

এছাড়া সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের বাকচর গ্রামে ১১ জন নিরীহ মানুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহগুলোকে রাস্তার পাশে এনে মাটি চাপা দেয় এলাকাবাসী।

একাত্তরের ১৬ মে ও ১৫ আগস্ট বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম জ্বালিয়ে ৩৩ জন মানুষকে হত্যা এবং নগরকান্দা উপজেলার একটি গ্রামে ১৮ নারীসহ ৩৭ জন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করে পাকবাহিনী। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে এমন অসংখ্য হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় ফরিদপুর জেলা।

রনাঙ্গনের স্মরণীয় ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে যুদ্ধকালীন ফিল্ড কমান্ডার (বি.এল.এফ) শাহ্ মো. আবু জাফর প্রথমেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে সারাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়। তখন আমি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্র-ছাত্রী সংসদের ভিপি। ১০ মার্চ অম্বিকা ময়দানে সকল ছাত্রদের জমায়েত করে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে সর্বপ্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। রনাঙ্গনের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর আমরা ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে তৎকালীন ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর নেতৃত্বে এফ.এফ ও বি.এল.এফ একসাথে আক্রমণ করি। তুমুল আক্রমণ করার সময় ঢাকা ও যশোর থেকে বিমান এসে আমাদের উপর সেলিং করতেছিল। ওই সময় আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা মারা যায়।

তিনি বলেন, ওইদিন আক্রমণের মুখে আমরা তাদের পরাহস্ত করতে পারলাম না। ১৫ ডিসেম্বর আমরা মর্টার দিয়ে আক্রমণ দিয়ে ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পে আক্রমণ করলাম, অনেক গুলাগুলি হলো। তারপরও পাক আর্মিরা আত্মসর্মাপন করল না। তারপর ১৬ ডিসেম্বর জানতে পারলাম ঢাকায় হানাদার বাহিনী আত্মসমার্পণ করেছে। ওইদিন বিকেলে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর নিকট ভাটিয়াপাড়ায় আর্মিরা আত্মসমার্পণ করেন। ওই সময় বোয়ালমারীতে শত শত মুক্তিযোদ্ধা আনন্দ উল্লাস করার কথা জানতে পারি। পরেরদিন ১৭ ডিসেম্বর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ফরিদপুর সার্কিট হাউজে বেলা ১২টার মধ্যে পৌঁছায়, সেখানে ডিসি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। আমাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন তারা।

তিনি আরো বলেন, “দুপুরে খাওয়ার আগে বেলা ২টার দিকে সার্কিট হাউজে ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীকে পতাকা উত্তোলন করতে বললাম। এ সময় তিনি বললেন (জামাল চৌধুরী) তুমিই প্রথম ছাত্রনেতা হিসেবে গত ১০ মার্চ স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলে, তাই আজকেও ছাত্র হিসেবে তুমিই পতাকা উত্তোলন করো। তারপর আমি স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করি। ফরিদপুর শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন পাকিস্তান আর্মিরা বিকেল ৪টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ও ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর হাতে পাকিস্তান আর্মিরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমার্পণ করেন।