খুঁজুন
শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৭ আষাঢ়, ১৪৩২

শেষ চিঠি

রোমিও অনুব্রত
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ১০:২৭ এএম
শেষ চিঠি

নিরুদ্দেশের কবিতা লেখা সহজ কাজ নয়। এসেনিনকে তাই করতে হয়। এমন নয় যে কবিতা লেখার ঠিকানা তার নেই। বরং একটা নয়…কয়েকটা আছে। এই যেমন ধরা যাক সোফিয়ার কথা। গত তিন মাস হল তার থেকে ১৬ বছরের বড় সোফিয়ার সাথে তার খুব গভীরতা হয়েছে। দুজনেই দুজনের কুয়োর ভিতর যখন তখন একজন আরেকজনকে নামিয়ে নিচ্ছে। কাল রাতেও প্রেম গলিয়ে অনেক আনন্দ করেছে তারা। এসেনিন শক্ত করে সোফিয়াকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলেছে, “তোমার ভিতরে মাথা গুঁজে দম বন্ধ হয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিংবা ধরো, কাঁটা না বেছে একটা লাল গোলাপ পুঁতে দিলাম”! এসব কথার মানে বোঝে না সোফিয়া। এসেনিন নিজেও হয়ত বোঝে না। কিন্তু এইসব কথা খুব শীতে আগুনের আঁচের মতোই ভালো লাগে সোফিয়ার কাছে।

এখন দুপুর বারোটা। সিগারেটের ধোঁয়ায় ঘরটা কেমন ঘোলাটে হয়ে আছে। জানালার পাশের সোফাটায় বসে আছে সোফিয়া। ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছুড়ে দিচ্ছে এসেনিনের দিকে। তার দিকে ভেসে আসতে থাকা একেকটা ধোঁয়ার বৃত্তের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এসেনিন। সে বৃত্তের ওপাশে দেখতে পাচ্ছে দুপুরবেলা হঠাৎ লক আউট হওয়া কোনো কারখানা আর সেখান থেকে বের হয়ে আসতে থাকা শ্রমিকদের ঢল। ড্রেন দিয়ে ভেসে যাচ্ছে পোড়া মবিলের কালো স্রোত। একটা মরা বেড়ালের বাচ্চা সেখানে ডুবছে-ভাসছে, ডুবছে-ভাসছে.. একটা ছেলে শ্রমিকদের উল্টো দিকে ড্রেনের পাশ দিয়ে হাটছে। একটা মোড় ঘুরতেই থামতে হলো। একটা লাশ! ভেজা জামা। উপুড় হয়ে পড়ে আছে। হাতদুটো পিছমোড়া করে দড়ি দিয়ে বাঁধা। একপাশে মাথা কাত হয়ে আছে। চোখ দুটো একটু আগে উপরে ফেলা হয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে রাস্তা। ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। আশেপাশে উপড়ানো চোখদুটো খুঁজছে তার দৃষ্টি। নেই! কিন্তু কোথায়.. আর শ্রমিকেরা ওদিকেই-বা চলে যাচ্ছে কেন! তাদের তো এই লাশ কাঁধে নিয়ে মিছিল করার কথা.. কই… একটা মানুষও তো…

বিহ্বল চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকা এসেনিনকে জিজ্ঞেস করল সোফিয়া, কী ভাবছো এত বলো তো?

-ভাবছি কারখানার ড্রেন দিয়ে যে আলকাতরা ভেসে যায়, তা নিয়ে একটা ছবি আঁকব। একটা মেয়ের মুখ। ধরো সিসিফির মুখ।

-নামটা এখন না বললে কী হতো না!

-সিসিফি তোমার থেকেও বেশি নখরামো জানত। আমি ঘুমের ভিতরে এখনও ওর আঁচড়ের গন্ধ পাই..

-স্টপ ইট!!

-ওকে। আমার না খিদে পেয়েছে!

-দেখো তুমি দশটা মেয়ের সাথে শুতে পারো। কিন্তু আমাকেই বেশি ভালোবাসতে হবে! বাসতেই হবে..

-বাসি তো! সাত দিন হলো একটা লাইনও লিখতে পারিনি। সব যে তোমার ভিতর গলিয়ে দিয়েছি।

-আমারও খুব খিদে লেগেছে। জানো, খালি পেটে সেক্স করলে বেশি এনজয় করা যায়।

-ও। কী খাবে?

-তোমায় খাবো। আসো, আসো বলছি!

-আমি আর কতদূর আসতে পারি বলো!

সোফিয়া দুই হাত প্রসারিত করে বলল, এই যে.. এতদূর

এসেনিন উঠে বিছানায় সোফিয়ার পাশে এসে বসলো। সোফিয়া তার কাঁধের দিকে মাথা ঝুকিয়ে অনুনয়ের সুরে বলল, কই..

এসেনিনের ঠোঁটের কাছে সোফিয়ার ঠোঁট। অন্তত সাত-আটজন পুরুষের পিপাসা মিটিয়েছে তার ঠোঁট। তাও নিজের তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি। ঠোঁট এগিয়ে দেওয়ার সময় চোখের ভাষা সেইরকমই আদিম। কোনো রমণীর প্রথম দিকের কামনার মতো।

একটা ব্যাপার সোফিয়ার সাথে মেলে না এসেনিনের। কামনার খেলায় সোফিয়া একেবারেই সময় নেয় না। কিন্তু এসেনিনের ভালো লাগতো যদি চুমু খাওয়ার সময়গুলোতে শুধু ওর মুখের দিকেই সারাজীবন তাকিয়ে থাকা যেত।

চুমু খাওয়ার ফাঁকে জানালার দিকে চোখ পড়ে যায় এসেনিনের। একটা ছোট্ট রবিন এসে বসেছে। জানালার কাচের ওপাশে। কী সুন্দর রঙ! মা খুব পাখি পছন্দ করে। কতটা পছন্দ করে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রতিদিন মায়ের বারান্দায় বিকেল ৫টায় পাখিরা খাবার খেতে আসে। একদম ঘড়ির কাঁটা দেখে। দেখার মতো একটা দৃশ্য। সেই ছোটবেলা থেকে এমনভাবেই চলে আসছে। পাখিরা এসে খাবার না পেয়ে ফিরে যাবে এইজন্য মা কোনোদিন বাইরে কোথাও যায়নি। মা একা থাকে। গম কিনতে গেলেও তো সেই আট ক্রোশ পথ হেঁটে শহরে পৌঁছাতে হয়। কাকে পাঠায়! কী অদ্ভুত.. তারপরও কিছু থেমে থাকে না।

-ওহ তুমি না! শুধু অন্যমনস্ক হয়ে যাও, এটা খোলো। দেখি আমি..

কণ্ঠস্বরে বিরক্তির সুর থাকলেও সোফিয়া এখন ভীষণ আসক্ত। এসেনিনও জানলা থেকে মন টেনে নিলো। নাহ, এই মেয়েটাকে নিয়ে পারা যায় না। উফ.. অবশ্য সোফিয়ার শরীরের বাসি এই গন্ধটা সত্যিই মাদকতায় ভরা। এমনকি থেলাসেমিয়া রোগীও উঠে বসতে বাধ্য। এসেনিন এবার মন বসাতে পারলো। সেও ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে, আঃ.. মুহূর্তের আচ্ছন্নতা এসেনিনকে একবার মহাশূন্যে আর একবার পাতালে নিয়ে যাচ্ছে। সোফিয়াও সম্পূর্ণ বিকারগ্রস্ত। কিন্তু এইসব লুণ্ঠনের মাঝখানেও এসেনিনের চোখ বারবার মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। সে হঠাৎ সোফিয়ার মাথা ঠেলে সরিয়ে ঝপ করে শুয়ে পড়লো। বললো, প্লিজ থামো.. আই কান্ট টেক দিস নাউ..

সোফিয়া অবাক হলো না। এসেনিন সবসময় খামখেয়ালি করে। কিন্তু তাই বলে এরকম একটা মুহূর্তে! সোফিয়া খুব বিরক্ত হলো।

-কী হয়েছে আমায় একবার বলবে!! (সোফিয়া একটু জোরেই কথাটা বলতে বাধ্য হলো)

-কিছু না। তুমি যেতে পারো!

-হোয়াট!! আর ইউ ক্রেজি!

-দূর হও। তোমাকে আর ভালো লাগছে না।

-এক্সিউজ মি! হোয়াট দা হেল আর ইউ ফাকিং এবাউট..

-গো আই সে। আই সে গো! (কথাটা চেঁচিয়ে বলে উঠল এসেনিন।)

কেঁপে উঠেছিল সোফিয়া। নিজেকে কোনোরকমে সামলে নিয়ে দ্রুত বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে বাথরুমে ঢুকলো সে। এসেনিন চিৎ হয়ে শুয়ে রইলো। তার কাছে মনে হচ্ছে ঘরটা কেমন দুলছে। ইস ঘরটা কী তবে সত্যি ভেসে উঠলো আকাশে! কই.. জানালার দিকে তাকালো সে। নাহ, বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। সে নেমে এসে জানালার কাচ উঠিয়ে দিলো। কী অদ্ভুত ঠাণ্ডা বাতাস! সে আবারও জানালার পাশে তার প্রিয় জায়গায়টায় বসলো। ওপাশের দেয়ালে পিকাসোর বয় উইথ দা পাইপের প্রিন্টটা দুলছে। একটা সিগারেট ধরালো সে। দেয়ালে হেলান দিয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ছেলেটার মুখ একেবারে আনসিরোর মতো। আনসিরোর মতো ভালো ছেলে পৃথিবীতে একবারই জন্ম নেয়। এসেনিনের হঠাৎ নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়। আনসিরোর মতো বন্ধু পেয়েছিল। একবার দুই বন্ধুতে মিলে একটা নতুন জায়গায় গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছিল। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। পথ খুঁজে পাওয়ার কোনো আগ্রহ নেই দুজনের। অথচ একটা জায়গায় পৌঁছানো খুব জরুরি। এক আত্মীয়কে কিছু টাকা দিয়ে আসতে হবে। সেখানে একজন খুব অসুস্থ। টাকা হাতে পেলে তারা দুধ পাউরুটি কিনবে, ওষুধ কিনবে। অথচ পথ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেষে অনেক ঘুরে তারা সেখানে গেলো। গিয়ে দেখে সেই আত্মীয়দের অবস্থা খুব খারাপ। ঘরে পানি পর্যন্ত নেই। একজন ব্যথায় কাতরাচ্ছে। দুই বন্ধু মিলে তাদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। বাজার করে দিলো। সবকিছু শেষে তারা ফিরে এলো। ফিরে আসার পর দেখা গেলো যে টাকা তারা দেওয়ার কথা ভেবেছিল তার চারগুণ টাকা খরচ করে ফিরেছে তারা। কিন্তু এত টাকা তো তাদের কাছে থাকার কথা না। পরে বোঝা গেলো আনসিরো তার সঞ্চিত সব টাকা সেখানে খরচ করে এসেছে। অথচ তার সাথের বন্ধুটিও ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি তখন। এই হলো আনসিরো। আহা আনসিরোর মুখটা কেমন বাতাসে দুলছে।

এই সময় সোফিয়া বাথরুম থেকে বের হয়ে এলো। বোঝাই যাচ্ছে এতক্ষণ সে কাঁদছিল। সে কোনোরকমে তার ব্যাগটা গুছিয়ে নিলো। ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ও সে চোখ মুছছিল..

এসেনিনের মনে হলো সে একটা সিনেমা দেখছে। সোফিয়া চলে গেছে। তবু মনে হচ্ছে সে আছে। বিছানায় উপুড় হয়ে বুকে বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদছে।

এসেনিন হঠাৎ পাগলের মতো কাগজ কলম খুঁজতে থাকলো। সোফিয়া এনে রেখেছিল। কোথাও না কোথাও আছে। শেষে পাওয়া গেলো। পোশাকহীন অবস্থাতেই এসেনিন টেবিলে লিখতে বসে। সে তার মায়ের কাছে একটা চিঠি লিখতে চায়। এখনই…

প্রিয় মা,
আমি এত মাতাল হয়ে যাইনি যে তোমার সাথে দেখা না করেই মরে যাবো। দেখো একদিন সকাল বেলা তুমি জানালার কাছে বসেই দূর থেকে আমায় দেখতে পাবে। তোমার অনেক আনন্দ হবে মা! আমি কিন্তু তোমার জন্য কিছুই আনতে পারবো না। কারণ আমার মনে থাকবে না ।

মা, আমি স্বপ্নের ভিতরে বেঁচে আছি। বিশ্বাস কর। কেউ করে না। কেউ যেন আমায় একটা বেলচা ধরিয়ে দিয়ে কোনো বনের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। আমি মাটি খুঁড়ি। আমি চাই না। আমি খুঁড়ি। মাঝে মাঝে মনে হয় খুঁড়তে খুঁড়তে আমি একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে পৃথিবীর অন্য পাশে চলে যাবো আর মহাশূন্যে গিয়ে পড়বো। আমি হারিয়ে গেছি মা! মা, আমি হারিয়ে গেছি !!

তোমায় বলা হয়নি, এখন আমি একটা হোটেলে থাকি। জানো, আমি মাঝে মাঝেই বাইরে থেকে ফিরে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়ি। তুমি কি হাসছো মা? দেখি! আসলে আমি একা থাকি না। আমার সাথে সোফিয়াও থাকে। আমরা বিয়ে করেছি। কেন যে মানুষ বিয়ে করে! শুধুই বাচ্চার জন্য, শুধুই সঙ্গমের জন্য। মানুষের কী একটুও লজ্জাবোধ নেই! মা জানো, আমার এখন সবথেকে বেশি রাগ হয় দেয়ালের উপর। সব দেয়ালগুলি যদি শুইয়ে দেওয়া যেতো। আমার নিজেকে সাপের মতো মনে হয়। দেখো তো কী নিয়ে কথা বলছিলাম, কী সব বলছি! আচ্ছা তোমায় সোফিয়ার কথা বলি। সে এখন বিছানার উপর উপুড় হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। কোনো পোশাক নেই। এই দৃশ্যটা আমার কী যে ভালো লাগে। মা নগ্ন মেয়েদের কাছে পৃথিবীর ঋণ কবে শেষ হবে!

মা তুমি কি জানো ম্যাজিক মাশরুম কি? খুব নেশা হয় মা। তোমাকেও একদিন দেবো। তুমিও কি ডানা মেলে আকাশে উড়তে চাও না?

আমার কোনো কাজ নেই। কী করি বলো। হোটেলের পাশ দিয়ে একটা রেললাইন চলে গেছে। আমি রেললাইনের উপর শুয়ে থাকি। বিছানায় আমার ঘুম আসে না মা। সবাই ভাবে আমি উন্মাদ। আমি হাসি। তুমি বল তোমার ছেলের থেকে ভালো কবিতা এই পৃথিবীতে আর কেউ লিখতে পারে! কিন্তু কতদিন আমি লিখি না মা। আমার শরীরে সবাই লিখে যাচ্ছে। আমি পারি না। অন্যের কলমের আঘাতে আমার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। আমার শরীরে রক্ত নেই মা। শুধু কালি। ক্ষত থেকে শুধু কালি ঝরে পড়ছে। আমি মারা যাচ্ছি মা। কী যে শান্তি। আবার কবে তোমায় লিখতে পারবো মা? আবার কবে…

ইতি
তোমার সবচেয়ে প্রিয় ছেলে

গল্পসুত্র : এসেনিন একজন রুশ কবি । ক্ষনজন্মা । আত্মহত্যা করেছিলেন । তার বিখ্যাত কবিতা Goodbye My Friend কলম না পেয়ে লিখেছিলেন নিজের রক্ত দিয়ে । মাকে খুব ভালবাসতেন । গল্পে যে চিঠিটা আছে তার প্রথম লাইন সত্যিই তিনি তার মাকে লিখেছিলেন।

ফরিদপুরে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন কুয়েত প্রবাসী

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা :
প্রকাশিত: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ৫:৪৫ পিএম
ফরিদপুরে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন কুয়েত প্রবাসী
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামে বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ে করলেন কুয়েত প্রবাসী আতিয়ার খলিফা।
শুক্রবার ( ২০ জুন) বিকেলে বিয়ে করে নববধূকে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে বাড়িতে আসেন।
হেলিকপ্টার ও বর কনেকে এক নজর দেখতে স্কুল মাঠে হাজার হাজার গ্রামবাসী ভিড় করেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলার দেওড়া গ্রামের নুর ইসলাম খালিফার ছেলে কুয়েত প্রবাসী আতিয়ার খলিফার সাথে একই উপজেলার গজারিয়া  গ্রামের ফিরোজ শেখের মেয়ে আমেনা খাতুনের বিয়ে ঠিক হয়। বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে বর আতিয়ার খলিফা হেলিকপ্টার ভাড়া করেন।
শুক্রবার বিকেলে ভাঙ্গা  উপজেলার দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে বর সেজে হেলিকপ্টারে চড়েন আতিয়ার খলিফা। পরে হামিরদী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে নামে হেলিকপ্টারটি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিকেলে আবার হেলিকপ্টারে চড়ে কনেকে নিয়ে নিজ এলাকা দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে  ফিরে আসেন।
 এ সময় স্থানীয় হাজার হাজার উৎসুক জনতা দুপুর থেকে বর-কনে ও হেলিকপ্টার দেখতে ভিড় করেন।
হেলিকপ্টারে বিয়ের বিষয় বর মোঃ আতিয়ার খলিফা বলেন, বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে হেলিকপ্টারটি ভাড়া করেছি। বাবা-মাকে খুশি করতে পেরে আমি অনেক খুশি।
বর আতিয়ার খলিফার বাবা নুর ইসলাম খলিফা বলেন, আমার ছেলে কুয়েত প্রবাসী। আমাদের আশা ছিল ছেলেকে হেলিকপ্টারে করে বিয়ে করাবো, ছেলে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছে। আমাদের ইউনিয়নে এবং আমার জীবনের এই প্রথম হেলিকপ্টার কাছে থেকে দেখেছি এবং ছেলেকে হেলিকপ্টারে বিয়ে করিয়েছি।
হেলিকপ্টার দেখতে আসা আক্কাস বেপারী বলেন, ‘আমি কখনো হেলিকপ্টার দেখিনি। এখানে হেলিকপ্টার আসবে শুনে দেখতে আসলাম। হেলিকপ্টার দেখতে পেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি।
স্থানীয় গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তি বলেন, এই হেলিকপ্টার ওঠানামা দেখার জন্য গ্রামের বহু মানুষ ভিড় করেছিল। এ ধরনের আয়োজন আমরা আগে কোনদিন দেখিনি। হেলিকপ্টার দেখতে পেয়ে আমরা খুব আনন্দ পেয়েছি।

চরভদ্রাসনে সাপে কামড় দেওয়ার তিনদিন পর যুবকের মৃত্যু

চরভদ্রাসন প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ১০:২৮ পিএম
চরভদ্রাসনে সাপে কামড় দেওয়ার তিনদিন পর যুবকের মৃত্যু
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে সাপে কামড় দেওয়ার তিনদিন পর কাউসার ভূইয়া (৩৪) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (২০ জুন) সকালে উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বিল্লাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত কাউসার ভূঁইয়া চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের শালিপুর মধ্য গ্রামের মৃত ফালু হভূইয়ার ছোট ছেলে। তার স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জেলার চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়নের শালিপুর মধ্য গ্রামের মৃত ফালু হভূইয়ার ছোট ছেলে কাউসার ভূঁইয়াকে গত ১৬ জুন দুপুরের দিকে ধান ক্ষেতের গরু তাড়াতে গেলে সাপে কামড় দেয়। পরে বাড়িতে ফিরে সাপে কামড়ানোর কথা পরিবারকে জানায় যে, তাকে বল ছাপার রং সাপে কামড় দিয়েছে। তবে রাসেল’স ভাইপারকে স্থানীয়রা ‘বল ছাপা’ সাপ বলে থাকেন। ঘটনার দিন বিকেলে পরিবারের লোকজন তাকে প্রথমে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার একদিন পর তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

ফরিদপুরে জাল নিবন্ধনে বাল্যবিয়ের অপরাধে কনের মা ও কাজীকে জরিমানা

হাসান মাতুব্বর (শ্রাবণ), ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২০ জুন, ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
ফরিদপুরে জাল নিবন্ধনে বাল্যবিয়ের অপরাধে কনের মা ও কাজীকে জরিমানা
ফরিদপুরে জাল জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে দেয়ার অভিযোগে কনের মা ও সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিষ্ট্রারকে (কাজী) জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
শুক্রবার (২০ জুন) রাত ৯ টায় শহরের চকবাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটের দোতলায় অবস্থিত কাজী অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইসরাত জাহান।
এ সময় নিকাহ রেজিষ্ট্রার মো. কামরুল হাসানকে (৪৮) বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে একই অপরাধে বিকালে শহরের বায়তুল আমান এলাকায় কনের মা’কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১২ জুন শহরের বায়তুল আমান এলাকায় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোরীকে জাল জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বাড়িয়ে বাল্যবিবাহ দেয়া হয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিকালে কনের বাড়িতে গিয়ে তথ্য যাচাই করেন। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিকাহ রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা যায়, বিভিন্ন অভিযোগের কারণে নিকাহ রেজিস্টার কামরুল হাসানের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি উচ্চ আদালত থেকে এক আদেশের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। ওই আদেশ গত ৮ জুন পর্যন্ত কার্যকর ছিল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান বলেন- ‘এক কিশোরীর জাল নিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বেশি দেখিয়ে বাল্য বিয়ে দেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান করা হয়েছে এবং সত্যতাও পাওয়া গেছে। যে কারণে দুইজনকে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর আমরা একটি চিঠি পাঠাবো ওনার নিবন্ধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।