খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ, ১৪৩২

আষাঢ় এলো, শুরু হলো বাদল ঝরা দিন

মৃত্যুঞ্জয় রায়
প্রকাশিত: রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫, ১:২৮ পিএম
আষাঢ় এলো, শুরু হলো বাদল ঝরা দিন

এলো আষাঢ়, এলো বাদল ঝরা দিন। এমন দিনের কাছেই যেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করেছেন আত্মসমর্পণ: ‘একলা ঘরে বসে আছি, কেউ নেই কাছে,/ সারাটা দিন মেঘ করে আছে।’

তাঁর বাদল কবিতাটির মতোই প্রকৃতিতে যেন সেই বাদল দিনের ছবি দেখছি– সারাদিন আকাশভরা মেঘ, সারাদিন বৃষ্টি, সারাদিন বাদল হাওয়া; চারিদিক আঁধার হওয়া, মাঝেমধ্যে দূর কোনো সবুজ বনের মাথায় বজ্রের ঝিলিক মিলিয়ে যাওয়া।

দমকা হাওয়ায় কড় কড় করে বাঁশে বাঁশ ঘষে ডেকে ওঠে প্রকৃতি, জলভরা জলাশয়ে পদ্মপাতায় ওঠে ব্যাঙের নাচন আর বেসুরো সংগীত, টিনের চালে রিমঝিম রিমঝিম আর পুকুরজলে টাপুরটুপুর বৃষ্টির মূর্ছনা; যেন নিয়ে যায় কোনো স্বপ্নলোকে। কানে বাজে কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই গান, ‘রিমি ঝিম্‌ রিমি ঝিম্‌ ঐ নামিল দেয়া। শুনি শিহরে কদম, বিদরে কেয়া।’

ঘরে বসে হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি সেই বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল ও কেয়ার গন্ধ। আশপাশের বাগান থেকে ভেসে আসছে দোলনচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা ও কাঁঠালিচাঁপার ঘ্রাণ। চোখ মুদে দেখতে পাচ্ছি দূরে ধূসর হয়ে নামছে বাদলের ধারা, কর্দমাক্ত পথঘাট, সেই বৃষ্টির আনন্দে আত্মহারা কৃষক-জেলেরা। বৃষ্টিভেজা মাঠে নামবে হাল, গ্রামে গ্রামে হবে হলকর্ষণের উৎসব। নরম মাটির বুক চিরে লাগানো হবে আমন ধানের চারা।

তেমনি পুকুর-ডোবা, বিল-ঝিল ভরে উঠবে নতুন পানিতে, জেলেদের জালে উঠবে পুঁটি, রয়না, ডানকনা, খলশে, বোয়াল মাছ। আমাদের পাতে উঠবে সেসব মাছের ঝোল; ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে উঠতে পারে ইলিশও।

আর পাখিরা! বর্ষাকাল মাছরাঙা, বুলবুলি, টিয়া, ফিঙে, বক, শালিক, ভাতশালিক, ময়না, হরিয়ালসহ প্রায় সব আবাসিক পাখিরই প্রজননকাল।

বাংলায় আষাঢ়-শ্রাবণ মিলে বর্ষাকাল। আজ আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। কৃষ্ণচূড়া যেমন গ্রীষ্মের প্রতীক, কদম তেমনি বর্ষার। পঞ্জিকার পাতা না দেখেও কদম ফুলের ফোটা দেখে বলে দেওয়া যায়, বর্ষাকাল এসেছে। এই বর্ষাকাল ভরে উঠুক বৃষ্টি ও কদম ফুলে, সে রকমই প্রত্যাশা কবিদের। বনবাণী কাব্যে রবীন্দ্রনাথ বর্ষাকালের প্রত্যাশা করেছেন প্রত্যাশা কবিতায়: ‘অঝোর-ঝরণ শ্রাবণজলে,/ তিমিরমেদুর বনাঞ্চলে/ ফুটুক সোনার কদম্বফুল/ নিবিড় হর্ষণে।’

বর্ষা আর কদম যে কত কবিতা ও গানে আশ্রয় নিয়েছে, তার হিসাব মেলানো যাবে না। কবি কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ– সবাই করেছেন কদমের স্তুতি। কবি কালিদাস তাঁর ঋতুসংহার কাব্যের দ্বিতীয় সর্গে বর্ষার বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন: ‘কদম বকুল কেতকী কুসুমে গাঁথিয়া মোহন মালিকা/বিলাসিনীদল আজি কুন্তলে বাঁধে’।

কদমকে আমাদের দেশি গাছ মনে হলেও আসলে সে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছে দক্ষিণ চীন থেকে, মতান্তরে মাদাগাস্কার। তবে কদম বৃক্ষের কথা কালিদাসের কাব্যে যেহেতু পাওয়া যায়, সেহেতু ধরে নেওয়া যায় অন্তত দুই হাজার বছর আগে থেকেই কদম এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কদমের অনেক নাম– কদম্ব, কদম, নীপ। যে গাছের তলে হতো রাধা-কৃষ্ণের অভিসার, সে গাছটিই কদম। তাই হয়তো আষাঢ়ে বৃষ্টি ও কদমের আগমন আমন্ত্রণ জানায় কবি এবং প্রেমিক-প্রেমিকাদের সেই নবধারা জলে অবগাহনের: ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে/ এসো করো স্নান নবধারাজলে’।

কিন্তু যে কদমের এত আকর্ষণ ও আহ্বান, সেই কদমের বন তথা নীপবন কই? এদিকে-সেদিকে দু-চারটা বিক্ষিপ্তভাবে থাকা কদমের গাছ চোখে পড়ে, তাতে আর যাই হোক অভিসার চলে না। শেরপুর বার্ড কনজারভেশন সোসাইটির সভাপতি সুজয় মালাকার জানালেন, তারা শেরপুরের গারো পাহাড়ে এবারের বর্ষায় এক হাজার কদমের চারা লাগিয়ে সেই নীপবন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। কদমগাছ দ্রুত বাড়ে। আশা করি, সে বনে হয়তো এক বর্ষায় কদমের সেই পরিপূর্ণ উচ্ছ্বাস দেখে যেতে পারব।

ফরিদপুরে এনসিপি নেতার পদত্যাগ 

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৭:৩৫ পিএম
ফরিদপুরে এনসিপি নেতার পদত্যাগ 

ফরিদপুরে মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) নামের জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা পদত্যাগ করেছেন। তিনি এনসিপির ফরিদপুর জেলা কমিটির সদস্য।

সোমবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রুবেল মিয়া (হৃদয়) পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পদত্যাগপত্রে রুবেল মিয়া হৃদয় উল্লেখ করেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দলের কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ, দলের কার্যক্রম সিদ্ধান্ত এবং অবস্থানগুলো জুলাই বিপ্লবের নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় এবং দলটির বর্তমান পথচলা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায়, আমি গভীরভাবে হতাশ ও বিচলিত।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি আর দলের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারছি না। তাই আমি বিনীতভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি, ফরিদপুর জেলা-এর সকল কার্যক্রম ও পদ থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করছি।’

পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. রুবেল মিয়া (হৃদয়) বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর থেকে আমি যেমনটা ভেবেছিলাম তার সাথে বর্তমান কার্যক্রমের কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছিনা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দলের কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ, দলের কার্যক্রম সিদ্ধান্ত এবং অবস্থানগুলো জুলাই বিপ্লবের নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় আমি পদত্যাগ করেছি।’

ফরিদপুর জেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘রাজনীতি দীর্ঘ দিনের পথচলা। সেখানে অনেকে হতাশ হয়ে যান। এমনটা রুবেল মিয়া হৃদয়ের মধ্যেও রয়েছে। সে হতাশ। তাই পদত্যাগ করেছেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘তাকে অনুরোধ করার পরও পদত্যাগ থেকে পিছপা হননি। তাই তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে।’

 

জন্মনিবন্ধন সনদ পেল ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা, কাটল স্কুলে ভর্তির জটিলতা 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৬:০৪ পিএম
জন্মনিবন্ধন সনদ পেল ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা, কাটল স্কুলে ভর্তির জটিলতা 

এক সময় তারা পরিচয় দিতে পারতো না, স্কুলে ভর্তি হতে পারতো না! সেই অবহেলিত ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা অবশেষে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এসব শিশুদের মাঝে দেওয়া শুরু হয়েছে জন্মনিবন্ধন সনদ। বঞ্চিত এসব শিশুরা এখন থেকে যেতে পারবে স্কুলে, পড়ালেখার পাশাপাশি কাজকর্মে পড়তে হবে না কোনো জটিলতায়।

গত শনিবার (০৯ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার হলরুমে শাপলা মহিলা সংস্থার আয়োজনে প্রথম পর্যায়ে ফরিদপুরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাটের দুইটি যৌনপল্লীর ৩৫ জন শিশু ও যৌনকর্মীকে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে।

সনদ বিতরণকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

এ সময় প্রধান অতিথি বলেন, এই জন্মসনদের মাধ্যমে সকল নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে যৌনপল্লীর বঞ্চিত শিশুরা। এসব শিশুদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি বক্তব্যকালে উল্লেখ করেন।

শাপলা মহিলা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেলা সদরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাটের দুইটি যৌনপল্লীতে ৩৮৯ জন যৌনকর্মী রয়েছে। এসব যৌনকর্মীদের শিশু সন্তান রয়েছে ২৯৬ জন। এদের মধ্যে অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন করতে না পারায় স্কুলে ভর্তি জটিলতায় ভুগছিল। বিষয়টি নিয়ে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘জন্মনিবন্ধন জটিলতায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না যৌনপল্লীর শিশুরা’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যৌনকর্মীর সন্তানদের আবাসিকের পাশাপাশি পড়ালেখার সুবিধা দিয়ে আসছে ‘শাপলা মহিলা’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা। এসব শিশুদের আবাসনের জন্য শহরতলীর গেরদায় গড়ে তোলা হয়েছে ভবন। বর্তমানে সেখানে ৫০ জন মেয়ে ও ৩৫ জন ছেলে রয়েছে। দি ফ্রিডম ফান্ডে’র সহযোগিতায় এসব শিশু ও যৌনকর্মীদের জন্মসনদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে সংস্থাটি। সেই ধারাবাহিকতায় বাবার নাম পরিচয় ছাড়াই বিশেষভাবে এই জন্মসনদ তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যা ফরিদপুর পৌরসভার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।

জন্মসনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পৌর প্রশাসক মো. সোহরাব হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, দ্যা ফ্রিডম ফান্ডে’র বাংলাদেশের প্রতিনিধি খালেদা আক্তার ও শাপলা মহিলা সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক শ্যামল প্রকাশ অধিকারী প্রমূখ।

ফরিদপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৫:৫৯ পিএম
ফরিদপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন

ফরিদপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় স্বামী রয়েল মণ্ডলকে (৪৬) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় দেন।

রায়ের সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল।

পরে পুলিশ পাহারায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দুই লাখ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মলিনা বেগম (২৫) নামের ওই গৃহবধূকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও শরীরে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেন রয়েল মণ্ডল।

মলিনা একই উপজেলার তাম্বুলখানা গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে। ঘটনার একদিন পর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন তার বাবা।