খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১ আশ্বিন, ১৪৩২

জনপ্রশাসনে সংস্কার: বৈষম্য ঘোচাতে কী রূপরেখা থাকছে

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫৯ এএম
জনপ্রশাসনে সংস্কার: বৈষম্য ঘোচাতে কী রূপরেখা থাকছে

সরকারকে জনমুখী করতে জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সুপারিশ রাখছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

সরকারি চাকরিতে প্রচলিত ‘ক্যাডার’ শব্দ বাদ দিয়ে সিভিল সার্ভিস রাখার পাশাপাশি বৈষম্য দূর করতে পদোন্নতিতে ভারসাম্য ও সমানুপাতিকভাবে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর মত সুপারিশ রাখা হচ্ছে কমিশনের প্রতিবেদনে।

দীর্ঘমেয়াদের জন্য টেকসই পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সব সার্ভিসের জন্য সুবিচারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সুপারিশ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

জনপ্রশাসনে ‘ভারসাম্য রাখতে’ রূপরেখা তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান সংস্কার কমিশনের আরেক সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

জেলা-উপজেলায় গিয়ে মতামত নেওয়া, জনমত ও অনলাইনে মতামত নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রতিবেদন জমার কথা ছিল গত মাসে, কিন্তু আমরা আমাদের কাজের কারণে তা করতে পারেনি। এগুলোর ভিত্তিতে আজকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে স্বাক্ষর করা হবে। প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি সুপারিশ থাকছে। এখন এর বাইরে আমি কিছু জানাতে পারব না।”

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীকে প্রধান করে গত ৩ অক্টোবর ১১ সদস্যের জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে প্রস্তুত করা প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমার কথা ছিল। পরে কমিশনের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

জনপ্রশাসনে পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টিও যৌক্তিক মনে করেন না সাবেক সচিব এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার।

বৈষম্য নিয়ে তোলপাড়

উপসচিব পদে পদোন্নতির একটি নতুন বিধান চালুর সুপারিশ থাকতে পারে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে, যেখানে প্রশাসন ক‌্যাডার থেকে ৫০ ও অন‌্য ক‌্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতির বিধান রাখার কথা বলা হতে পারে।

বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ নিয়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য পরিষদ আন্দোলনও করছে। তারা কোটা ব্যবস্থার বিলোপ চায়।

গত ১৭ ডিসেম্বর এক সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী ‘পরীক্ষার মাধ্যমে’ জনপ্রশাসনে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করার কথা বলেন।

তার বক্তব্যের প্রতিবাদে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে প্রশাসন ও বাকি ২৫ ক্যাডারের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা পড়লে ‘সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান’ ঘটবে।

দৃষ্টিভঙ্গি সবার প্রতি জাস্টিস: আইয়ুব মিয়া

মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া বলেন, প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে বুধবার জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রতিবেদন জমার আগে ‘কী ধরনের সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে সে বিষয়ে খুঁটিনাটি তুলে ধরতে চাননি তিনি।

এ সদস্য বলেন, সংস্কার কমিশন এ পর্যন্ত অন্তত ৫০টি বৈঠক করেছে। মাঠ পর্যায় ও নানা মহল থেকে সুপারিশ, বক্তব্য পাওয়া গেছে। ডেটা অ্যানালাইসিস করা হয়েছে, জনমত নেওয়া হয়েছে; জনমতকে (জরিপ) গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সম্ভাব্য প্রস্তাবের প্রতিবাদে ডিসেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ দেখান কর্মকর্তারা। ফাইল ছবি

বর্তমান বাস্তবতায় প্রশাসনে অস্থিরতার বিষয়ে কোনো সুপারিশ রয়েছে কি না জানতে চাইলে আইয়ুব মিয়া বলেন, “সাম্প্রতিক যেসব প্রবলেম, সেগুলো তো আমরা ডিল করিনি। আমরা দীর্ঘমেয়াদের জন্য সাসটেইনেবল পরামর্শ দেওয়ার দিকে নজর রেখেছি। তাৎক্ষণিক কী প্রমোশন হল, পদোন্নতি হল- এগুলো আমাদের এখতিয়ার নয়, আমাদের কাজ নয়। এগুলো গভার্নমেন্ট আলাদাভাবে দেখছে।”

আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের নানা দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, সবার মধ্যে সুইটেবল জাস্টিস-সেটার একটা বিষয় রেখেছি। সবার প্রতি জাস্টিস- আমরা এ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সুপারিশ রাখার চেষ্টা করেছি।”

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পরীক্ষা, প্রশাসনিক প্রদেশের বিষয়ে সুপারিশ থাকার ইঙ্গিত দেন তিনি।

বৈষম্য ঘোচাতে ভারসাম্য আনতে একটা রূপরেখা রয়েছে: হাফিজুর রহমান

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আরেক সদস্য সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান প্রশাসনে ভারসাম্য আনা, প্রশাসনিক প্রদেশের সুপারিশের বিষয়ে বলেছেন, “চ্যাপ্টার বাই চ্যাপ্টার থাকবে প্রতিবেদনে। রিপোর্ট আজ বাঁধাই হবে। এগুলো আমাদের রিপোর্টের মধ্যে মোটামুটিভাবে অ্যানালাইসিস করে, একটা আলোচনা-পর্যালোচনা করে একটা মতামত দেওয়া রয়েছে।”

ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা- চারটি প্রশাসনিক প্রদেশে বিভক্ত করার সুপারিশ থাকতে পারে কমিশনের প্রতিবেদনে।

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণে দীর্ঘমেয়াদে এই সুপারিশের বিষয়ে হাফিজুর রহমান বলেন, “প্রদেশ- এটা তো অনেক বড় ব্যাপার। শুনছি-রিপোর্ট পাওয়ার পরে পলিটিক্যাল পার্টি, সবার সাথে আলোচনা করে উনারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। জনসংখ্যা আগে ছিল ৭ কোটি, এখন ১৮ কোটি। সুবিধা-অসুবিধা অনেকগুলো বিষয়। এ নিয়ে বিতর্ক আলোচনার মধ্যে আছে, আরও কিছু বিষয় আছে।”

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর ও পদোন্নতি সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে সুপারিশ থাকছে বলে জানান এ সদস্য।

তিনি বলেন, “আমরা একটা পরামর্শ রেডি করেছি- যাতে সমানুপাতিকভাবে সবাই সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে। সরকারের কাজ করাই তো ব্যাপার; সুযোগ-সুবিধা নেওয়া তো ব্যাপার নয়; সবাই তো বেতন পায়। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের উপকারের জন্য যেভাবে চালাবে সেভাবে চলবে। সবার মতামত কম্বাইনড করে মোটামুটিভাবে একটা সুপারিশ থাকছে।”

পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “…এদেশের যারা মালিক তাদের কাজ করতে গিয়ে, আমারও দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একটা স্বীকৃতির দরকার। স্বীকৃতিটা সবাই চায়, স্বীকৃতির চাহিদা আছে সবার। সব বিবেচনা করে মোটামুটিভাবে একটা রূপরেখা দিয়েছি আমরা।”

সাবেক এ আমলা বলেন, “কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকারের আলাদা এক্সপার্ট রয়েছে, তারা দেখবেন, পর্যালোচনা করবেন, বিবেচনা করবেন এবং অনেকের সাথে কথা বলবেন। যেটা বাস্তবায়ন করার করবেন।”

গতবছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার ‘প্রাণকেন্দ্র’ হয়ে ওঠে সচিবালয়। ফাইল ছবি

‘ক্যাডার’ নয়, ‘সার্ভিস’ হবে

সরকারি চাকরিতে ‘ক্যাডার’ শব্দটি তুলে দেওয়ার সুপারিশ থাকছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।

কমিশন সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, “সবগুলো সার্ভিস করার চিন্তাভাবনা করা আছে।…ক্যাডার শব্দটি আমরা (বাদ) দেওয়ার সুপারিশ করতে চাচ্ছি। ক্যাডার শব্দ দিয়ে অন্য কিছু বোঝায়। ক্যাডারটা না করে সার্ভিস রাখতে বলছি। বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস, এগ্রিকালচার সার্ভিস- নানা সার্ভিস হবে। এভাবে নামকরণের চিন্তা করছি।”

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) সব মিলিয়ে ক্যাডার রয়েছে ২৬টি।

বিসিএস (ক্যাডার) পদে নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি বিষয়ে পিএসসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রণীত বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা-২০১৪ অনুযায়ী বিসিএস-এর ২৬টি ক্যাডারে উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের উদ্দেশ্যে কমিশনে ৩ স্তরবিশিষ্ট পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।

এক মত বিনিময় সভায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী

প্রশাসনিক প্রাদেশ ‘সম্ভব না’, ৫০-৫০ কোটায় আপত্তি বিশ্লেষকের

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাদেশিক প্রশাসন ও পদোন্নতিতে ৫০-৫০ বণ্টনের যে সুপারিশ করা হচ্ছে, তা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন প্রশাসন বিষয়ে গবেষক এ কে এম আব্দুল আউয়াল মজুমদার। তবে ‘ক্যাডার’ শব্দটি উঠিয়ে দেওয়ার প্রশংসা করেছেন তিনি।

সাবেক এই সচিব বলেন, “এরকম পৃথিবীর কোথাও নেই। আফ্রিকা, ইউরোপ কোথাও বিসিএস ব্র্যাকেটে খাদ্য, বিসিএস ব্র্যাকেটে প্রশাসন- এসব কোথাও নেই। ভারত, পাকিস্তান, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য সব জায়গায় যেখানে সিভিল সার্ভিস টাইপের আছে, সবখানে সার্ভিস। কমিশন ব্র্যাকেট তুলে দিয়ে ভালো কাজ করেছে।

“১৯৭৯ সালে মাজেদুল হক সাহেব করেছিলেন; আমাদের এখানেও এটা আগে ছিল সার্ভিস। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান, পুলিশ সার্ভিস অব পাকিস্তান, পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস- এরকম। এ কারণে উনারা এটা সার্ভিস করে দিয়েছেন, এটা যুক্তিসঙ্গত করেছেন।”

তবে পদোন্নতিতে ৫০-৫০ কোটার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে সাবেক এ আমলার।

নিজেকে জনপ্রশাসন বিষয়ক একজন ছাত্র, গবেষক হিসেবে বর্ণনা করে আব্দুল আউয়াল বলেন, “ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া-সব জায়গায় এনট্রান্সে যে যেখানে যাচ্ছেন, সেখানেই গড়ে উঠছেন। এখন ৪০তম ব্যাচ থেকে তো আর কোটা নেই। তাই যিনি যেখানে ঢুকবেন, সেখানে তৈরি হওয়ার বিষয় রয়েছে। ১০/১২/১৪ বছর পরে একজন কর্মকর্তা হঠাৎ উপসচিব হয়ে এসে তৈরি হওয়া খুব ডিফিকাল্ট।”

বিশ্ব এখন দুই ধরনের সিভিল সার্ভিস রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া-একরকম; এগুলো হলো লাইন প্রমোশন। আমেরিক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া-সেখানে ওপেন সিলেকশন। একটা পদ খালি হলে তখন দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। যোগ্যতার ভিত্তিতে ভেতরে-বাইরের সবাই দরখাস্ত করতে পারেন।

“ধরেন ঢাকার অধ্যক্ষ বা এসপির পদ খালি হবে যখন, তখন অ্যাডভারটাইজমেন্ট হবে, যোগ্যরা আবেদন করতে পারবে। ইনডিপেন্ডেন্ট কমিশন বা কমিটি করা থাকে, সাক্ষাৎকার নিয়ে তারা বাছাই করবে। এটা ওপেন সিলেকশন। লাইন প্রমোশন হচ্ছে- সহকারী কমিশনার হিসেবে ঢুকলেন, প্রমোশন পেয়ে পেয়ে সেখান থেকে ডিসি, কমিশন, সেক্রেটারি হবেন।”

এখন আর কোটা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আগে কোটার কারণে হয়ত কুমিল্লার একজন বেশি নম্বর পেয়ে পেছনের দিকের ক্যাডার পেত; লালমনিরহাটের একজন কম নম্বর পেয়ে সামনের দিকের ক্যাডার পেত। সে কারণে ২৫% রাখার একটা ভিত্তি ছিল।

“কিন্তু এখন যেহেতু আর ওরকম কোটা নেই; মেধার ভিত্তিতে নম্বরের ভিত্তিতে পছন্দের ভিত্তিতে একটি ক্যাডারে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি তৈরি হবেন।”

প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন, “শুধু অ্যাডমিনে যারা জয়েন করবে, তারা সচিবালয়ের পদগুলোর জন্য তৈরি হবে। ফিল্ডে, সচিবালয়ে কাজ করে তৈরি হবে, যেভাবে সিএসপিরা তৈরি হয়েছে। অন্য ক্যাডারদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেন। অন্য ক্যাডার থেকে এভাবে আসে না। প্রেসিডেন্টের হাতে ১০% আছে, তিনি মনে করলে যোগ্য লোকদের আনেন।”

অন্য ক্যাডারদের সুবিধা বাড়িয়ে দিলে আন্তঃক্যাডারের প্রশ্ন আসবে না বলে মনে করেন তিনি।

পদোন্নতির জন্য পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টিও যৌক্তিক মনে করেন না সাবেক এ সচিব। তার মতে, যার যার ক্যাডারে পদোন্নতির বিধান থাকতে পারে।

বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং খুলনা- এ চার প্রদেশ গঠনের মত যোগ্যতা এখনও বাংলাদেশে অর্জন করেনি বলে মন্তব্য করেন এ সাবেক আমলা।

“এতে দুর্নীতি বাড়বে। ওভারহেড কস্ট বাড়বে। মানুষের কোনো কল্যাণ হবে বলে আমি মনে করি না। কিছু লোকের হয়ত চাকরি হবে, ভোগ-উপভোগ করবে। কিন্তু মানুষের কল্যাণ হবে না।”

–বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৩২ পিএম
প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচি আগামী শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেন তারা।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয় এজন্য আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। সে অনুযায়ী আগামী বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কোন অবরোধ থাকবে না বলে জানায় আন্দোলনকারী সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষ।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময়, আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) তাদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে, পুনরায় লাগাতার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

 

ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:২৮ পিএম
ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ-রেলপথ বন্ধের পর সহিংস ঘটনাও ঘটে। এরপর ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন বরাবর এ চিঠি দেন ডিসি।

চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর-০২ এবং ফরিদপুর-০৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

ওই তালিকায় ফরিদপুর- ৪ এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হবার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

 

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-০৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-০২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণের বিষয় দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। ওই দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ণিতাবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর- ২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ-আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানা, হাইওয়ে থানা ও উপজেলা পরিষদে আগুন-হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩৫ টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে, ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। থানা চত্তরে থাকা অন্তত চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। থানার ব্যানার ও ভবনের কাচ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়।

অপরদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আন্দোলনকারীরা ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আন্দোলনকারীরা চারটি পিক-আপ, একটি রেকার, একটি জলকামান গাড়ী, আটটি মোটরসাইকেল, একটি এম্বুলেন্স ও দুইটি আলামতের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, থানা, হাইওয়ে ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন হঠাৎ করে রামদা-লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এসব করতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, হামলা-ভাংচুরের সময় কয়েকজন কনস্টেবলকে কৌশলে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর আমরা কয়েকজন থানার রান্না ঘরের পাশে একটি বাথরুমে আশ্রয় নেই। হামলাকারীরা গাড়ী, মোটরসাইকেলসহ অফিসের ল্যাপটপ, টিভি থেকে শুরু করে এমন কোথাও নেই যে ভাংচুর করতে বাকি রেখেছে। তারপরও বিস্তারিত দেখে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানানো যাবে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় জনতা। তারা আসনগুলোর পূর্বের অবস্থায় বহাল চান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার থেকে টানা তিন দিন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।