ফরিদপুরে পাটের জাগ ও দাম নিয়ে শঙ্কিত চাষিরা

‘সোনালি আঁশে ভরপুর ভালোবাসি ফরিদপুর’—স্লোগানের মতোই ফরিদপুর জেলা পাট চাষের মাধ্যমে দেশের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। গতবারের চেয়ে এ বছর ফরিদপুরে পাটের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য উপযোগী। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাম্পার ফলনের আশা করলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় চাষিরা শঙ্কিত। আবার খরচ বাড়লেও ভালো দাম না পেলে লোকসানের চিন্তা তো আছেই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের সোনালি আঁশ শুধু জেলার পরিচিতিই নয়; কৃষকদের জীবন-জীবিকারও প্রতীক। সঠিক নীতি ও সহায়তা পেলে এ ঐতিহ্য আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবার গত বছরের তুলনায় পাটের আবাদ কিছুটা বেড়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গতবার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার পাটের ফলন সামগ্রিকভাবে অত্যন্ত সন্তোষজনক এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা আছে। তবে কিছু নিম্নাঞ্চলের জমিতে বৃষ্টির পানি দীর্ঘসময় জমে থাকায় পাটের আকার প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়নি। যা সীমিত পরিসরে পাটের ক্ষতির কারণ হয়েছে। তবে এ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জেলার অধিকাংশ এলাকায় পাটের ফলন ভালো হয়েছে। যা কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
চাষিদের দাবি, পাটের ন্যায্য দাম নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। বীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকদের মজুরির মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার কারণে তাদের লাভের সম্ভাবনা কমিয়ে দিচ্ছে। তারা সরকারের কাছে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা এবং বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন।
সালথা উপজেলার গট্টি গ্রামের পাট চাষি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবার পাট চাষে প্রতি বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২ কেজি পাট উৎপাদন হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উপজেলার ভাওয়াল গ্রামের ফরিদ মোল্লা ও পুরুরা গ্রামের সুদের বিশ্বাস বলেন, ‘বীজ সার, ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুরই দাম বৃদ্ধি। শ্রমিকের মূল্য বেশি। অনাবৃষ্টির কারণে কয়েকবার মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হয়েছে। এখন দুশ্চিন্তায় আছি। খালে-বিলে, নদী-নালায়, পুকুরে পানি নেই; পাট জাগ দেবো কোথায়? ভালো পানি না হলে পাটের রং ভালো হবে না। আমাদের দাবি, পাটের দাম যেন ভালো দেওয়া হয়।’
পাটের আবাদ নিয়ে কথা হয় বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের বাইখীর গ্রামের সুইট মন্ডলের সাথে। তিনি বলেন, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা গেলে পাট চাষের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। তবে সবকিছুর দাম বেশি। ফলে পাট আবাদের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আশপাশের খাল-বিলে, পুকুরে পানি নেই। পাট জাগ দেবো কোথায়? এত কিছুর পরেও যদি কাঙ্ক্ষিত দাম না পাই, তাহলে ক্ষতিতে পড়তে হবে।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর জেলা পাট উৎপাদনে সব সময়ই শীর্ষে। এ বছর পাট আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।’
আপনার মতামত লিখুন
Array