খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের রেকর্ড উৎপাদন, কৃষকের মুখে হাসি

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ৮:৪৬ পিএম
ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজের রেকর্ড উৎপাদন, কৃষকের মুখে হাসি
ফরিদপুর জেলায় এবার সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮০ মেট্রিক টন স্থানীয়ভাবে ব্যবহার হবে এবং বাকি ৬৮৫ মেট্রিক টন সারা দেশে সরবরাহ করা হবে। এক সময় দেশের পেঁয়াজ বীজের চাহিদা পুরোপুরি আমদানি নির্ভর ছিল, কিন্তু বর্তমানে ফরিদপুরের কৃষকরা দেশের মোট চাহিদার ৫০ শতাংশ পূরণ করছেন।
ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এবারও এই জেলার কৃষকরা পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে ‘কালো সোনা’ বা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ নামে পরিচিত এই পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন এবার রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।
স্থানীয় কৃষাণী শাহেদা বেগম বলেন, “২১ বছর যাবত পেঁয়াজ বীজ চাষ ও উৎপাদন করছি। এবারের ফলন অত্যন্ত ভালো হবে বলে আশা করছি। আমি একশত একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি এবং এই বীজের মানের জন্য আমি দেশের সেরা কৃষাণী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি। এবারের পেঁয়াজের ফুলে দানা এসেছে বেশ ভালো, আবহাওয়া সহায়ক থাকলে বিঘা প্রতি দুই থেকে আড়াই মণ বীজ পাওয়া যাবে।”
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, “আমি গত ১০ বছর ধরে পেঁয়াজ বীজ চাষ করছি। এবার আমার ২০ একর জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন আশানুরূপ হবে বলে মনে করছি। সরকার যদি আমাদের বীজ সংরক্ষণের জন্য ভালো ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমরা আরও বেশি উৎপাদন করতে পারব।”
সদরপুর উপজেলার কৃষাণি রহিমা খাতুন বলেন, “আমি পরিবারের সাথে মিলে ১৫ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। এবার ফুলে দানা খুব ভালো হয়েছে, আশা করছি বিঘা প্রতি আড়াই মণ বীজ পাব। তবে হাতে পরাগায়ন করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের জন্য মৌমাছির ব্যবস্থা করে দেন, তাহলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে।”
নগরকান্দা উপজেলার কৃষক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি এবার ৩০ একর জমিতে পেঁয়াজ বীজ চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে বীজ সংরক্ষণ এবং বিপণনের জন্য সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও বেশি লাভবান হব।”
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন, “আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এই মৌসুমে প্রায় ৯৬৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো। আমরা কৃষকদের পরামর্শ ও সাহায্য দিয়ে তাদের সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের লক্ষ্য হলো, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের উৎপাদন আরও বাড়ানো এবং দেশের চাহিদা পূরণে এই জেলাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।”
ফরিদপুরের কৃষকরা এবার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্যের আশা করছেন। কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা এবং কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই জেলার পেঁয়াজ বীজ দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফরিদপুরের কৃষকদের এই সাফল্য দেশের কৃষি খাতের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
কচুলতায় এসেছে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা। দেড়শ বিঘা দিগন্তজুড়ে কচুর লতার সফল চাষ মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় কচুর লতা চাষে এক ধরনের কৃষি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে এ জেলায়।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রচলিত অনেক ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় কচুর লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই-তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকাতেই মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মৌসুম যত এগোচ্ছে, দামও বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি এক কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে তার উদ্যোগে লতি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ ও ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসলে পরিণত হয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে দুই-তিন বিঘা জমিতে লতি চাষ হতো, এখন সেখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামটি যেন এখন ‘লতার গ্রাম’ হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। লতি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৩ পিএম
মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মহান বিজয় দিবসে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চরভদ্রাসন সরকারী কলেজ মাঠে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল উদ্দিন।

সভার শুরুতে উপজেলার প্রায়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পরে ইউএনও জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যায়েদ হোছাইন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ।