খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

বোয়ালমারীতে একটি ক্লিনিকের ভুয়া কিডনি নষ্টের রিপোর্টে বিপাকে রোগীর পরিবার  

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০২৫, ৪:০৫ পিএম
বোয়ালমারীতে একটি ক্লিনিকের ভুয়া কিডনি নষ্টের রিপোর্টে বিপাকে রোগীর পরিবার  

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অবস্থিত মর্ডান ল্যাবরেটরীর কিডনির ওপরে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে বিপাকে ফেলেছে একটি শিশুর পরিবারকে। এ ঘটনা জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিভিন্ন লোকজন বলছে খারাপ এবং নষ্ট মেশিন দিয়ে মর্ডান ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে ল্যাবরেটরিটি পরিচালনা করা হচ্ছে। যার কারণে ভুয়া রিপোর্ট করে।

এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুলাই উপজেলার হাসামদিয়া গ্রামের জাহিদুল বেগের আড়াই বছরের ছেলে জিহাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়া হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এসে ৫ টাকার টিকিট কেটে হাসপাতালে কর্মরত ডা. মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিনকে দেখান। তিনি দেখে প্রসাব ও কিডনি পরীক্ষা দেন। জাহিদুল বেগ তার বাচ্চাকে নিয়ে মর্ডান ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করতে দেন। মর্ডান ল্যাবরেটরির লোকজন পরীক্ষার কাগজে লেখে তার কিডনি ড্যামেজ(নষ্ট) হয়ে গেছে। পরে ওই রিপোর্ট ডাক্তারকে দেখালে ডাক্তার দ্রুত ফরিদপুর নিয়ে যেতে বলেন। তারা ওই দিনই ফরিদপুর গিয়ে শিশুটিকে ডা. এসি পালকে দেখান। তিনি নতুন করে পরীক্ষা দেন। ওই পরীক্ষাগুলো ফরিদপুরে অবস্থিত ডা. জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতলে পরীক্ষা করেন। সেখানে সকল রিপোর্টগুলোই ভালো আসে। প্রসাবে সামান্য একটু সমস্যা পায়। যা ওষুধে ঠিক হয়ে যাবে বলে ডাক্তার জানান।

এ ব্যাপারে বুধবার (২৩ জুলাই) ওই শিশু জিহাদের দাদি জবেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, বোয়ালমারী হাসপাতালের সামনে মর্ডান ল্যাবরেটরী থেকে পরীক্ষা করানোর পর তাদের রিপোর্টে লেখা হয়েছে শিশুটির কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। পরে সেই রিপোর্ট হাসপাতালে গিয়ে ডা. মফিজ উদ্দিনকে দেখালে তিনি রিপোর্ট অনুযায়ী বলেন বাচ্চার কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে তাকে দ্রুত ফরিদপুরে নিয়ে যান। এ কথা শুনে পরিবারের সকলের কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। ওই দিনই ফরিদপুর গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নতুন করে রিপোর্ট করানো হয়। সেখানে রিপোর্টে আসছে কিডনিতে কোন সমস্যা নেই প্রসাবে একটু সমস্যা আছে। তিনি আরও বলেন, এভাবে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে মানুষকে বিপদে ফেলানো ঠিক না।

জানতে চাইলে বোয়ালমারী মর্ডান ল্যাবরেটরির মালিক জিয়া বলেন, রিপোর্ট ভূয়া না। রিপোর্টে কমবেশি হতে পারে। আমি আলফাডাঙ্গায় আছি ফ্রি হয়ে পরে কল দিব বলে লাইনটি কেটে দেন।

বোয়ালমারী হাসপাতালের কর্মরত ডা. মফিজ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার মান যে বিষয়টা এটা আমরা সব সময় ভালো চাই তাহলে নির্ভুল চিকিৎসা দিতে সমস্যা হয় না। আর যদি রিপোর্ট ভালো না হয় ওই রিপোর্টের ওপরেই আমাদের ডিসিশন নিতে হয়। আমরা চাই নিয়ম মেনে সঠিক রিপোর্ট দিক সকলে। যেহেতু রোগীর ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব আসে সেই জন্য ফরিদপুর এসি পাল স্যারের কাছে পাঠিয়েছি।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মাহমুদ বলেন, একই দিনে দুটি রিপোর্ট করা হয়েছে বোয়ালমারীর মর্ডান ল্যাবরেটরির রিপোর্টে আসছে ২.৩৫ আর ফরিদপুরের রিপোর্ট আসছে ০৩। একই তারিখে রিপোর্ট এত পার্থক্য হওয়া উচিত না। বোয়ালমারী ক্লিনিকদের দেখভাল করা আমাদের পক্ষে কষ্টসাধ্য। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষদের দেখা উচিত।

আলফাডাঙ্গায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত

মো. ইকবাল হোসেন, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:১০ পিএম
আলফাডাঙ্গায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস পালিত

“দক্ষতা নিয়ে যাবে বিদেশ রেমিট্যান্স দিয়ে গড়বো স্বদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) হলরুমে উপজেলা প্রশাসন ও আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আয়োজনে এ বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও আলোচনা সভা অুনষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ.কে.এম রায়হানুর রহমান।

আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলামের সভাপতিত্বে ও টিটিসির প্রশিক্ষক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আলফাডাঙ্গা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এম এম মজিবুর রহমান।

এসময় বক্তব্য প্রদান করেন, আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি মো.ইকবাল হোসেন, প্রশিক্ষক আশিকুল ইসলাম প্রমুখ।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে কম্পিউটার বিভাগের প্রশিক্ষক খালেদ আল আরাফাত ও ইজাজ আহম্মেদ রাজকে সেরা প্রশিক্ষক হিসেবে ক্রেস্ট তুলে দেন উপস্থিতি অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি আলফাডাঙ্গার কামারগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর হাতে-কলমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। এখান থেকে স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এলাকার শত শত বেকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেকে বিদেশ গিয়ে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে আছে।’

তিনি আরও জানান, এখন বিদেশে পাঠানোর নাম করে দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তিনি বিদেশ গামীদের ভিসা যাচাই-বাছাই করে বিদেশ যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন এবং দেশ থেকে বিভিন্ন কাজ শিখে নিজেকে দক্ষ করে বিদেশ গেলে কাউকে বসে থাকতে হবে না। তারা সহজেই তাদের ভাগ্য পাল্টাতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ শাহিনুর ইসলাম।

ফরিদপুরে মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫:৫৭ পিএম
ফরিদপুরে মাদ্রাসায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড় শাগীর শাহ্ দেওয়ান দাখিল মাদ্রাসায় চলমান পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। উক্ত মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে যোগ্য প্রার্থীদের উপেক্ষা করে অদক্ষ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) জমা দেওয়া ওই অভিযোগপত্রে পরীক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন যে, বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়াটি প্রচলিত আইন ও বিধিবিধানের পরিপন্থী এবং এতে অনৈতিকভাবে অর্থ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগকারী পরীক্ষার্থী রিয়াজুল, হাসিব খাঁন, আশিক মৃধা, আজিজুর রহমান ও নাঈম ইসলাম মাদ্রাসার সুষ্ঠু পরিবেশ ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছ নিয়োগ দানে চলমান নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন।

তাদের অভিযোগ, উপজেলার কাটাগড় গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোল্যার ছেলে রাকিব মোল্যাকে অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করেছেন মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট। বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অন্যান্য নিয়োগ প্রত্যাশীরা। আবেদনের সাথে তারা নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও বিজ্ঞপ্তির কপি সংযুক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসাটির সুপার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও অর্থ লেনদেনের বিষয়টি সঠিক নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সকলের উপস্থিতিতে শতভাগ মেধার ভিত্তিতে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হবে।

মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাওলানা ফরিদুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাছাড়া অর্থ লেনদেনের কোনো প্রশ্নই উঠে না। নিয়োগ প্রার্থীদের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যে প্রথম হবে তাকেই নিয়োগ প্রদান করা হবে।

বোয়ালমারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দীন বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ নিয়োগ পরীক্ষায় আমি একজন সদস্য মাত্র। পরীক্ষা বন্ধ করার ক্ষমতা আমার হাতে নেই। আমার হাতে নিয়োগ বন্ধ করার ক্ষমতা থাকলে নিয়োগ বন্ধ করে দিতাম। তাছাড়া আমার স্ত্রী অসুস্থ এ কারনে নিয়োগ পরীক্ষায় আমি উপস্থিত থাকতে পারবোনা। আমার একজন প্রতিনিধি থাকবেন।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম রকিবুল হাসান বলেন, আমি নির্বাচনী ট্রেনিংয়ে গত দুই দিন ঢাকায় অবস্থান করছি। যার কারণে অভিযোগ সম্পর্কে জানা নেই। তারপরও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে অবশ্যই অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

লোকগানের কিংবদন্তী শিল্পী হাজেরা বিবির স্মরণে

মফিজ ইমাম মিলন
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫:৪২ পিএম
লোকগানের কিংবদন্তী শিল্পী হাজেরা বিবির স্মরণে

হাজেরা বিবি। তিনি শুধু লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন না। ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের এক অক্লান্ত পরিব্রাজক ও কৃতি সাধিকা। তাঁর সংগীত জীবনের সাফল্যগাথা কলমের আঁচড়ে হয়তো কাগজের বুকে এঁকে দেয়া যায়। কিন্তু তাঁর আধ্যাত্ম সাধনার নিরন্তর অন্তরজ্বালা ও ক্রমাগত দহন, সমাজের কাছ থেকে পাওয়া উপেক্ষা অবজ্ঞা, ভ্র-কুঞ্চন আর রক্তচক্ষুর আস্ফালনজাত বিষাদ ও ক্লান্তির কড়চা যথার্থভাবে পরিস্ফুটনের শক্তি আমার কলমে নেই।

মানবজীবনতো শুধুই ক্রমাগত ক্লেশ আর ক্ষরণের নয়। হাজেরা বিবিও একদিন জয় করেন জীবন ও সমাজের সমূহ উষ্মা ধারাবাহিক বিরূপতা ।

১৯৬০ সালে ফতেহ লোহানী পরিচালিত ‘ আসিয়া ‘ চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন তিনি। এর আগে রেডিও পাকিস্তান, পিটিভি, স্বাধীনতার পরে রেডিও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তবে তাঁর বেশি জনপ্রিয়তা ছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে পালাগান, বিচারগান, জারী ও মুর্শীদা গানের শিল্পী হিসেবে ।

হাজেরার প্রকৃত নাম ছিল ননীবালা। বাবা রাজকুমার ছিলেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মা শ্যামাদাসী করতেন পুরোপুরি ঘরসংসারী। তাদের কয়েকটি সন্তান হয়ে মারা গেলে পরে ননীবালার ( হাজেরা) জন্ম হলে মানত অনুযায়ী কোলে কোলে বিয়ে দেন একই গ্রামের শিশু হিতিশের সাথে।

খুবই অল্প বয়সে একটি ছেলে হলে নাম রাখেন মন্টু। মন্টুর জন্মের কিছু দিন পরেই স্বামী হিতিশ মৃত্যু বরণ করেন। মন্টুও বেঁচে ছিল মাত্র ১১ মাস। এর কিছু দিন পরেই বাবা রাজকুমার, মা শ্যামাদাসীও পৃথিবী ছাড়েন। ফলে, সংসার নয় নিজের জীবনই দুর্বিষহ হয়ে ওঠে নিজের কাছে ।

স্বামী সন্তান বাবা-মা হারিয়ে আশ্রয় নেন মামা বাড়ি ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুরে। এখানে সান্নিধ্য পান বনকু সাধুর। সাধু সনাতন ধর্মের অনেক তথ্য ও তত্ত্বকথা শিখিয়েছিলেন ননীবালাকে। যা পরবর্তীকালে বিচার গানে তুলে এনেছেন তিনি।

এমনই এক গানের অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় কবি জসীম উদদীন এর সাথে। কবি তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হন। ননীবালা কবিকে বাবা বলে সম্বোধন করেন। তাঁর কণ্ঠে কবি বিচার গানের ভবিষ্যৎ দেখতে পান। নিঃসঙ্গ জীবনে পথের অবসান ঘটাতে কবি পেশা হিসেবে গানকে বেছে নিতে উদ্বুদ্ধ করেন তাকে।

ননীবালার এভিডেভিড করে নাম রাখা হয় হাজেরা। কবির নিজের ধর্মপুত্র আজাহার মন্ডলের সাথে বিয়ে দেন তাকে। আজাহার মন্ডলেরও ছিল গান-বাজনা পেশা। শুরু হয় হাজেরা বিবি নামে এক গায়িকার নতুন জীবন সতীনের সংসারে।

লোকগানের শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন হাজেরা। কবি জসীম উদদীন তাঁকে অলইন্ডিয়া রেডিওতে গান গাইবার ব্যবস্থা করে দেন। ঢাকার রমনা পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও তাকে দিয়ে গান গাইয়েছিলেন।

গান গাইবার অপরাধে হাজেরাকে এক ঘরে করা হয়েছিল গ্রাম্য শালিসিতে। আগে হিন্দু ছিল সে অভিযোগে ‘৭১ সালে তাঁর বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বামী অজানা রোগে অন্ধত্ব বরণ করে ও মারা যায়। অসহায় হাজেরা গানের দলের দোহার মনিরুদ্দিন ফকিরের আশ্রয় নেন। গ্রামের মানুষ তাদের বিয়ে দিয়ে দেন। এ স্বামীও অন্ধ হয়ে রোগে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে দুঃখ-কষ্ট অভাব অভিযোগে হিমসিম খেতে থাকেন। কণ্ঠ ভেঙে গিয়েছিল। গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যায় ।

হাজেরা বিবি সারাজীবন লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে মানুষের সেবা ও আনন্দ দিলেও তাঁর ব্যক্তি জীবন ছিল ভাঙা-গড়া বিরহ-বিচ্ছেদ দুঃখ কষ্টে ভরা। তাকে দেখতে চিত্রশিল্পী আনোয়ার হোসেন, পরিচালক খান আতাউর রহমান, সুরকার আজাদ রহমান, নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এসেছেন ফরিদপুরে।

২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর লোক গানের কিংবদন্তি শিল্পী হাজেরা পৃথিবী ছেড়েছেন শতবছর বয়সে।

 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, ফরিদপুর।