খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

সালথায় খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় মহিলা কর্মকর্তাকে ধমকালেন জামায়াত কর্মী!

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫, ৮:৩৩ পিএম
সালথায় খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় মহিলা কর্মকর্তাকে ধমকালেন জামায়াত কর্মী!
আগামী ৮ই মার্চ নারী দিবস উপলক্ষে চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ধমকিয়েছেন জামায়াতের এক কর্মী।
সালথা উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাধারণ সম্পাদককে খাম ছাড়া চিঠি দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকের সুরে নানা ধরনের কথা বলেন ওই জামায়াত কর্মী।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ ২০২৫) দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলির ব্যবহৃত মোবাইল নম্বারে ফোন দিয়ে এমন কান্ড ঘটান ওয়ালি উজ জামান নামে এক ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ব্যক্তি সালথা উপজেলা জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া তিনি সালথা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি বলেন, নারী দিবস উপলক্ষে আমি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের চিঠি পাঠিয়েছি। জামায়াতের নেতাদের চিঠিটি ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী নিতাইয়ের মাধ্যমে জামান সাহেবের দোকানে পাঠানো হয়।
কারণ, আমার অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। ব্যস্ততার কারণে চিঠিটির খাম দেয়া হয়নি। খাম না দেয়ায় ওই অফিস সহকারীকে তাৎক্ষণিক হেনস্তা করে। পরে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকান যে কেন খাম ছাড়া চিঠি দিলাম।
তাঁদের কথাপোকথনের একটি কলরেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে আসে। কলরেকর্ডটিতে খাম ছাড়া চিঠি দেয়ায় জামায়াতকর্মীকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়। ওই জামায়াত কর্মী জানতে চান, কেন খাম ছাড়া চিঠি দেয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে বলেন, ‘কোথায় কি জিনিস পাঠাইতে হয়, কেমনে চিঠিপত্র পাঠাতে হয় বুঝতে পারেন না? রাজনৈতিক নেতাকে চিঠি দিতে হলে খামে ভরে দিতে হয়। খামের টাকা নাই? বরাদ্দের টাকা কোথায় যায়?
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা, বিল-ভাউচার ভাল করে খাইয়েন, এতদিন যা খাইছেন এখন বুইজ্যা-শুইন্যা খাইয়েন। তখন মহিলা কর্মকর্তা বলেন, আপনি এসব কি বলছেন। এর উত্তরে জামায়াত কর্মী বলেন, যা বলছি ভাল করেই বলছি। ভদ্রলোকের মতো চিঠি পাঠাবেন। আপনি ইউএনওকে কমপ্লিন করেন যে জামান ভাই ফোন দিয়ে এই কথা বলছে।
মহিলা কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্যে করে ওই জামায়াত কর্মীকে আরও বলতে শোনা যায়, আপনি সংশোধন হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সময় অনেক খাইছেন। আওয়ামী লীগের ভয় দেখিয়ে অনেক মানুষকে ল্যাংঠা করছেন আপনি। চেয়ারম্যানদের পর্যন্ত ল্যাংঠা করছেন। আপনি এখন থেকে ভাল হয়ে যান।
এ সময় তিনি ওই মহিলা কর্মকর্তাকে সালথা ছাড়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সম্ভব না হলে সালথা ছাড়েন। তখন এই কর্মকর্তা বলেন ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায় আমি সালথা থাকতেছি। তখন ওই কর্মী বলেন, ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের, ডিপার্টমেন্ট আপনার বাজানের না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই জামায়াত কর্মী বলেন, আমি কোনো দলের না। আমার দোকানে উপজেলা জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারীকে চিঠি দেয়ার জন্য এসেছিল। ওই চিঠিতে কোনো খাম ছিল না। পরে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম, এটা ধমক হইলো কিভাবে? কারণ, উনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন। তাছাড়া এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতা দেখিয়েছে, প্রতিদিন দুপুর ২ টার পর অফিস করতো।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা শাখার আমীর আবুল ফজল মুরাদ বলেন, ‘ঘটনাটি ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। উনাকে ধমকায়নি, জানতে চেয়েছিল। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। তবে চিঠি দেয়ার একটি ন্যূনতম কার্টেসী থাকা উচিৎ ছিল।’
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিছুর রহমান বালি বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছিনা।’

সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম
সালথায় মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (২৬) নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় জড়িত অভিযোগে জাফর মোল্যা (৪২) নামের আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের সদস্যরা।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জাফর মোল্যাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার সাভারের পশ্চিম ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে জাফরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জাফর মোল্যা ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন তেঁতুলিয়া এলাকার মৃত কাদের মোল্যার ছেলে।

এদিকে, গত ১৩ ডিসেম্বর এ হত্যার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ফিরোজ মাতুব্বর নামের অপর এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-১০।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় জাফর মোল্যাকে সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাছ ব্যবসায়ী উৎপল হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তার নাম এসেছিল। জাফরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।’

প্রসঙ্গ, গত ৫ ডিসেম্বর ভোর রাতে ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌড়দিয়া গ্রামের কালীতলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী উৎপল সরকারকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এসময় তার কাছে থাকা টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় হত্যার একদিন পর উৎপলের বাবা অজয় কুমার সরকার বাদী হয়ে সালথা থানার একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
কচুলতায় এসেছে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা। দেড়শ বিঘা দিগন্তজুড়ে কচুর লতার সফল চাষ মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় কচুর লতা চাষে এক ধরনের কৃষি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে এ জেলায়।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রচলিত অনেক ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় কচুর লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই-তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকাতেই মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মৌসুম যত এগোচ্ছে, দামও বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি এক কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে তার উদ্যোগে লতি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ ও ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসলে পরিণত হয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে দুই-তিন বিঘা জমিতে লতি চাষ হতো, এখন সেখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামটি যেন এখন ‘লতার গ্রাম’ হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। লতি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।