খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২৪ আশ্বিন, ১৪৩২

‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই’  –ফরিদপুরে রাশেদ খাঁন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৭:২৪ পিএম
‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই’    –ফরিদপুরে রাশেদ খাঁন

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে গত এক বছরে কোন পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগী এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের  স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।’

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ‌দুপুর দেড়টার দিকে‌ ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক লিয়াকত হোসেন মিলনায়তনে ‌‌জেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ‌তিনি এসব কথা বলেন।

রাশেদ খাঁন বলেন, ‘ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি আওয়ামী লীগ রক্ষা করতে পারে নাই। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ সবাই মিলে এক সঙ্গে লড়াই করেছি। সেইদিন ফরিদপুরের মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে রাস্তায় নেমেছিল, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুন্ডাদের ঝাঁটা দিয়ে বিতাড়িত করেছিল। তার ফল হিসেবে আমরা পেয়েছি একটি গণঅভ্যুত্থান।’

তিনি গত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘ফরিদপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হলেও শেখ হাসিনা এখানে উন্নয়ন করেনি, উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ক্যাডারদের। উন্নয়ন হয়েছে তাঁর বিয়াই সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের। সাধারণ মানুষের কোন উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন কি করেছিলেন তা ফরিদপুর-ভাঙ্গা ৩২ কিলোমিটার খানাখন্দে ভরা মহাসড়ক দেখলে বোঝা যায়।’

রাশেদ খাঁন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে আমাদের অনেক আশা ছিল। উপদেষ্টারা তাদের সম্পদের হিসাব দিতে চেয়েছিল, সেটা জনসম্মুখে দেয় নাই। সরকারের এক বছরে দেশে কোন রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয় নাই, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ হয় নাই, দৃশ্যমান কোন সংস্কার হয় নাই।’

তিনি বলেন, আমরা গত এক বছর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সমালোচনা করি নাই। তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা বন্দোবস্ত টিকিয়ে রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। পুলিশে আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন দপ্তরে-সেক্টরে আওয়ামী লীগ। সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগকেই বহাল তবিয়তে রাখা হয়েছে। এর জন্য কি আমরা সংগ্রাম করেছি, এ জন্য কি ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে?

রাশেদ খান ড. মুহাম্মদ ইউনুসের স্বজনপ্রীতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাঁর স্বজনপ্রীতির উদাহরণ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। যার নিজেরই স্বাস্থের ঠিক নাই, যিনি ক্যানসারের রোগি এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তাকে বানানো হয়েছে ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। যার যেখানে অভিজ্ঞতা, তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত ছিল (বিষয়টি হাসানত আব্দুল্লাহ বলেছিল)। তাহলে আমরা গত এক বছরে অনেক সংস্কার দেখতে পেতাম। আজকে শিক্ষাখাত ও চিকিৎসা খাতে সরকারের কি ভূমিকা? এই ফরিদপুর মেডিক্যালে আগেও যা ছিল, এখনো সেই অবস্থায় চলছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, পৌরসভা দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? থানায় দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে? কোন সেক্টরেই ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয় নাই। তাহলে কি সংস্কার হলো, মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকার অভ্যুত্থানে যারা সংগ্রাম করেছে, রক্ত দিয়েছে তাদেরকে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন যারা বলতেছেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়; ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নয়। নির্বাচন না দিয়ে সরকার কি করবে? এই সরকারের কি ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা আছে, নাই। এই জন্যই আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্র সমন্বয়কদের সমালোচনা করে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এরপরে সেই ছাত্র প্রতিনিধিরা চাঁদাবাজি ও ট্রেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতিতে জড়িত হয়ে পড়লো। এর দায় কার? এর দায় উপদেষ্টা পরিষদের, এর দায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের। কারণ তিনি কখনোই বলেন নাই; তোমার দেশের গর্ব, তোমরা আমাদের গণঅভ্যুত্থান এনে দিয়েছো। তোমরা এখন ক্লাসে ফিরে যাও। তা না করে তিনি ছাত্রদের দল করার পরামর্শ দিয়ে মাথায় তুলেছেন।

তিনি বলেন, ডিসি-এসপি-রা সমন্বয়কদের নাম শুনলে, তাদেরকে (ছাত্রদের) আসেন আসেন ডেকে নিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়েছেন। পারলে সমন্বয়কদের খুুঁশি করতে নিজের চেয়ারটা ছেড়ে দিতে পারলে বাঁচে। এইভাবে অতি ভক্তি, তেলামি করে ছাত্রদের বিভ্রান্তিতে ফেলানো হয়েছে। আমি সকল ছাত্রদের কথা বলছি না, যারা করেছে, তাদের বলছি। আজকে ছাত্ররা ডিসি অফিস ও এসপি অফিসে গিয়ে তারা খবরদারি করছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে এইটা আশা করিনি। দেশে যা শুরু হয়েছে, এভাবে দেশ চলতে পারে না। তিনি সর্বশষে ১৪ দলের সহযোগী জাতীয় পার্টির জি.এম কাদের ও চুন্নুর গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

গণ অধিকার পরিষদের ফরিদপুর জেলা শাখার সভাপতি ‌মো. ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‌ফরিদপুর জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ মিয়া, বোয়ালমারী উপজেলা সভাপতি‌ লাবলু শরীফ, ফরিদপুর সদর উপজেলা সভাপতি রাজু আহমেদ, ভাঙ্গা উপজেলার আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি ‌হৃদয় আহমেদ, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি সাইদুর রহমান, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি ‌জুয়েল ভান্ডারী ও সালথা উপজেলা সভাপতি ‌ফারুক ফকির প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় জেলার নেতৃবৃন্দ রাশেদ খাঁনের মাধ্যমে ফরিদপুর নামেই বিভাগ ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।

ফরিদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল মাটিকাটা শ্রমিকের 

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৪১ পিএম
ফরিদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল মাটিকাটা শ্রমিকের 

ফরিদপুরে দোকানের শাটারে হেলান দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ইছহাক মাতুব্বর (৫৫) নামে এক মাটি কাটা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে শহরের পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত শ্রমিক ইছহাক মাতুব্বর জেলার সালথা উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বালিয়াগট্টি এলাকার বাসিন্দা।

ওই এলাকার নির্মাণ শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজের পাশে তরুণ বাবুর বাড়িতে বাথরুমের ৪টি মাটির রিং বসানোর জন্য সকাল ১০টায় বাজার থেকে ওই ব্যক্তিকে ডেকে আনা হয়। এদিন দুপুর ২টার দিকে ওই ব্যক্তি মাটি কেটে রিং বসানোর কাজ শেষ করে দোকানে কিছু খেতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়। দোকান থেকে খেয়ে ফেরার পথে বৃষ্টি হলে পশ্চিম আলিপুর খন্দকার লজ এলাকায় জিসান মোল্লার অটো রিক্সার ব্যাটারি ও পার্টসের বন্ধ দোকানের সামনে বসে শাটারের সাথে বিশ্রাম নিতে গেলে বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান।

এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. অহিদুজ্জামান জানান, একজন মাটি কাটার শ্রমিক কাজ শেষ করে রাস্তার পাশের একটি দোকানের শাটারের সামনে বসে বিশ্রাম নিতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বিদ্যুত বিভাগের লোক এসে দোকানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। দোকানের সামনে পড়ে থাকা মরদেহটির সুরতহাল শেষে কোতোয়ালি থানায় নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অবিলম্বে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

মাহবুব হোসেন পিয়াল, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
অবিলম্বে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়নের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান

অভিলম্বে বিভাগ বাস্তবায়নসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের সার্বিক উন্নয়নের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটি।

বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ।

স্মারকলিপিতে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির উত্থাপিত দাবিসমূহ হলো : অবিলম্বে ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন করা, একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা,দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু, ফরিদপুর–ভাঙ্গা মহাসড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীতকরণ, ভাঙ্গায় মানমন্দিরকে কেন্দ্র করে একটি ‘সায়েন্স সিটি’ স্থাপন,ফরিদপুরে গ্যাস সংযোগ প্রদান,একটি মহিলা ক্যাডেট কলেজ স্থাপন, টেপাখোলা লেক থেকে ভুবনেশ্বর নদী পর্যন্ত খনন করে পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন, বাইশরশি জমিদার বাড়িসহ জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার,কবি জসীমউদ্দীন স্মৃতি কমপ্লেক্সকে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা।

এসময় সময় কমিটির সভাপতি ডা. এম এ জলিল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ, সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ, সিনিয়র সাংবাদিক পান্না বালা, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, বিশিষ্ট আইনজীবি অধ্যাপক তারেক আইয়ুব খান, অধ্যাপক আজাদ উদ্দিন, অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান, মো. হাফিজুর রহমান মিঞা ও আলাউদ্দিন আহম্মদ সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে ফরিদপুর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ শিক্ষাবিদ প্রফেসর মো. আব্দুল আজিজ বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত ফরিদপুর বিভাগ বাস্তবায়ন এবং দৌলতদিয়া–পাটুরিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, এই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ও উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে, যা শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি ও পর্যটন খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়নের সূচনা করবে।

চিঠি হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্যের সাক্ষী লাল ডাকবাক্স

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫, ২:২৭ পিএম
চিঠি হারিয়ে গেলেও ঐতিহ্যের সাক্ষী লাল ডাকবাক্স

সময় বদলেছে, বদলেছে যোগাযোগের ধরনও। একসময় যার অপেক্ষায় প্রহর গুনতেন প্রিয়জনরা, সেই ডাকপিয়নের ডাক এখন আর শোনা যায় না।

প্রযুক্তির স্পর্শে বদলে গেছে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাতে-কলমে লেখা চিঠির জায়গা করে নিয়েছে মোবাইল, ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়া।

 

একটা সময় ছিল, চিঠি পৌঁছাতে লাগত সপ্তাহ কিংবা মাস। প্রিয়জনের খবর জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হতো। এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে বার্তা। এক ক্লিকে পাঠানো যাচ্ছে অর্থ, ছবি, শুভেচ্ছা।

চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ডাক বিভাগ একসময় ছিল অপরিহার্য। অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিগত যোগাযোগেও ডাকপিয়নের পদধ্বনি ছিল খবরের প্রতীক। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এনালগ থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ডাকবিভাগের সেই জৌলুস ক্রমেই ম্লান হয়ে গেছে। এখন আর দেখা মেলে না রাস্তার মোড়ে মোড়ে রাখা সেই লাল রঙের ডাকবাক্স। জিপিওর সামনে কয়েকটা রয়েছে তাও ফুটপাতের ভাসমান দোকানের কারণে ভেতরে পড়ে আছে। দেখা যায় না কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে আসা চেনা মুখের সেই ডাকপিয়নদের।

তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দ্রুত যোগাযোগের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। চিঠির জায়গা দখল করেছে ই-মেইল, ফেসবুক, টুইটারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এমনকি ফ্যাক্স ব্যবস্থাও হারিয়ে যাচ্ছে ই-মেইলের দাপটে। মানুষের আর্থিক লেনদেনও এখন সহজ। ডাক মানিঅর্ডারের জায়গা নিয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। একইসঙ্গে দেশজুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে কুরিয়ার সার্ভিস, যা ডাকবিভাগের বিকল্প হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যদিও তা তুলনামূলক ব্যয়বহুল।

ডাকবিভাগের কার্যক্রম আজও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অফিসিয়াল নথি, সরকারি চিঠি, নিয়োগপত্র কিংবা নোটিশ পাঠানোয় আজও ডাক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০০০ সালে চালু হয় ই-পোস্ট সার্ভিস, এর মাধ্যমে দেশের তৃণমূল জনগণ পাচ্ছে ইন্টারনেটভিত্তিক ডাকসেবা। এ ছাড়া অনেক জেলা শহরে রয়েছে নাইট পোস্ট অফিস। যেখানে সারারাত চিঠি ও পার্সেল আদান-প্রদান হয়।

বিশ্বব্যাপী ডাক সেবাকে সমন্বিত ও আধুনিক করার লক্ষ্যেই ১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জেনারেল পোস্টাল ইউনিয়ন’। ১৯৬৯ সালে টোকিও সম্মেলনে দিনটি ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এ সংগঠনের সদস্য হয় এবং তখন থেকেই ৯ অক্টোবর বিশ্ব ডাক দিবস পালন করে আসছে।

যদিও সময়ের পরিবর্তনে ডাক ব্যবস্থা তার উজ্জ্বলতা অনেকটাই হারিয়েছে, তবুও এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এখনও জনগণের পাশে আছে। ডাকবাক্সে কেউ চিঠি না ফেললেও, এগুলোকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করা দরকার— অতীত ঐতিহ্য হিসেবে নয়, বরং ইতিহাসের অংশ হিসেবে। কারণ এই ডাক ব্যবস্থা একসময় ছিল মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত একটি আবেগময় অধ্যায়।

বিশ্ব ডাক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর গুলিস্থান এলাকার জিপিওর সিনিয়র পোস্টমাস্টার মো. মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বিরক্তবোধ করেন ও জানান কথা বলতে রাজি নন।

গুলিস্তান জেনারেল পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন আবদুল মতিন বলেন, আমরা যেদিন চিঠি হাতে নিয়ে মানুষের দোরগোড়ায় যেতাম, সেদিন ওদের মুখে যে হাসি দেখতাম, সেটা আজ আর দেখি না। তখন মানুষ চিঠির অপেক্ষায় থাকত।  এখন অপেক্ষায় থাকে মোবাইলের নোটিফিকেশনের। তবে সব সরকারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদেরকেই জাগায়মতো পৌঁছাতে হয়।

মুরাদপুর হাই স্কুলের শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, আমাদের স্কুলজীবনে বন্ধুরা একে অপরকে চিঠি লিখতাম। খামে করে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঈদ কার্ডের শুভেচ্ছা পাঠাতাম। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এখন সবকিছু ভার্চ্যুয়াল। চিঠির মতো মমতা আর ভালোবাসা আর কোথাও নেই।

গণমাধ্যমকর্মী আকাশমনি বলেন, সময়ের সাথে সাথে আমাদের ভালোবাসা হারিয়েছে। আমাদের আবেগ অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে। আগে আমরা আবেগ দিয়ে একটি চিঠি লিখতে গিয়ে কত কাগজ নষ্ট করতাম। রাতের পর রাত জাগতাম। সেই সময়ের গভীর যে টান, এখন সেই গভীর টান আর নাই। আমাদের মা, খালারাদের দেখতাম তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষার থাকতো কখন ডাকপিয়ন সন্তানের চিঠি নিয়ে বাসায় আসবে।

 

কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল মিয়া বলেন, আগে মানিঅর্ডারেই টাকা পাঠাতাম। এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মুহূর্তেই চলে যায়। তবে ডাক বিভাগের নির্ভরযোগ্যতা আজও মনে পড়ে। চিঠি ছিল সম্পর্কের এক মধুর মাধ্যম। আমি চাই, পোস্ট অফিসগুলোকে অন্তত ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হোক।