খুঁজুন
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আ.লীগ নেত্রীর মেয়ে, কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ৭:১৮ পিএম
ফরিদপুরে এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আ.লীগ নেত্রীর মেয়ে, কমিটি নিয়ে ক্ষোভ
ফরিদপুরে সদ্য ঘোষিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব মো. সোহেল রানা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডিতে তিনি লিখেছেন, ‘উল্টে যাচ্ছে গণেশ… সাপের ডিম সাপেই খাবে।’
২৩ সদস্যের এই কমিটিতে ‘তৎকালীন আওয়ামী লীগের দোসর’ ও ‘ফ্যাসিবাদের কোলে বসে থাকা মুখোশধারীদের’ স্থান দেওয়ায় তিনি হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জুলাই-গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এনসিপি ছিল শহীদদের রক্ত ও বীরদের ত্যাগে নির্মিত। কিন্তু আজ সেই দলে জায়গা পাচ্ছে তারা, যারা সেই সময় বিরোধিতা করেছিল।
ফরিদপুর জেলা শাখার ঘোষিত সমন্বয় কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন ফরিদপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদা বেগমের মেয়ে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফরিদপুরের ছাত্রজনতার বুকে গুলি চালানোর অভিযোগে অভিযুক্ত ফরিদপুর জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগ্নি সৈয়দা নীলিমা দোলা। যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে রয়েছেন এসএম জাহিদ, সাইফ হাসান খান, জিল্লুর রহমান, মো. বায়েজিদ হোসেন ও মো. কামাল হোসাইন। এছাড়া ১৭ জন সদস্য রয়েছেন যারা জেলার বিভিন্ন পেশা ও পটভূমি থেকে এসেছেন।
গত ৫ জুন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনে এ কমিটি ঘোষণা করেন সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে তিন মাস বা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্ব পর্যন্ত।
এছাড়া গত ৩ জুন এনসিপির শ্রমিক উইংসের ৩৬ সদস্যের আরেকটি জেলা কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠিত হয়। যার প্রধান সমন্বয়কারী এসএম জুনায়েদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদপুরের সদস্যসচিব সোহেল রানা ফেসবুকে তার নিজস্ব আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন।
ওই মন্তব্যে সোহেল রানা লেখেন, ‘উল্টে যাচ্ছে গণেশ। জুলাই- গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দল এনসিপি। শদীদের রক্ত, হায়েনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া বীরদের ত্যাগের ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রাজনৈতিক দল। দেখতে পাচ্ছি আমরা তৎকালীন সময়ের আওয়ামী লীগের সম্মানিত দালালরা, ফ্যাসিবাদের কোলে বসে থাকা দোসররা মুখ লুকিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যায়গা নিচ্ছেন এই দলে। বাদ যাচ্ছে না সহযোগী সংগঠন গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন- ‘এমন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার আগে কখনো খতিয়ে দেখার চেষ্টাও করেন নাই, জুলাইয়ে তাদের ভূমিকা ছিল। কার অবস্থান কি ছিল! জুলাইয়ের পক্ষে নাকি বিপক্ষে? যাদের পদ/পদবি দিবেন, তারা কি চায়! মানুষের জন্য রাজনীতি নাকি, টেন্ডারবাজি, দখলদারী, করে নিজের পকেট ভারী। সময় ভালো চলছে…বসন্তের কোকিল আসবে ঝাঁকে ঝাঁকে, সময় খারাপ হলে, এদের কি আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে? রীতিমতো অবাক করে দিচ্ছেন  আমাদের! যেটার ফলাফল হবে- সাপের ডিম সাপেই খাবে!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ফরিদপুর জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, রাজনীতিতে কিছু বিতর্ক থাকবেই। আমরা ছবির রাজনীতি করি না। কারও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ছবি থাকলে সেটাই সব নয়। তবে কারও বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতেও নানান মাইন্ডের অনেকে রয়েছে। তাই কারও পুরোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা সম্পর্কের ভিত্তিতে না দেখে আমরা তার বর্তমান অবস্থান ও ভূমিকা দেখছি।

ফরিদপুরে মাদকবিরোধী প্রীতি ক্রিকেট ও ভলিবল টুর্নামেন্ট

মানিক কুমার দাস, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:২০ পিএম
ফরিদপুরে মাদকবিরোধী প্রীতি ক্রিকেট ও ভলিবল টুর্নামেন্ট

ফরিদপুরে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রীতি ক্রিকেট ও ভলিবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় শহরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সহযোগিতায় আয়োজিত এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শিরিন আক্তারের সভাপতিত্বে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম আব্দুল হালিম, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওবায়দুর রহমান এবং জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আল-আমিন খন্দকার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম।

আলোচনা সভায় বক্তারা মাদকের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলেন, একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি শুধু নিজের নয়, পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বক্তারা যুবসমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই উল্লেখ করে নিয়মিত ক্রীড়া চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে অতিথিবৃন্দ প্রীতি ক্রিকেট ও ভলিবল টুর্নামেন্টের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
প্রতিযোগিতায় ক্রিকেট ইভেন্টে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগ এবং ভলিবল ইভেন্টে বিএনসিসি ও রাজেন্দ্র কলেজ রোভার ইউনিট অংশগ্রহণ করে।

এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ও খেলোয়াড়রা উপস্থিত ছিলেন।

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে ফরিদপুর

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
হঠাৎ ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে ফরিদপুর

হঠাৎ ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে ফরিদপুর। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে সড়ক-মহাসড়ক, ফসলের মাঠ।

কুয়াশার প্রকোপে সামান্য দূরত্ব নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার পাশাপাশি ঠান্ডা বিরাজ করায় ভোরে লোকজনের উপস্থিতিও অনেকটাই কম রয়েছে বাইরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার ভোর রাত থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। ভোরে কুয়াশার মাত্রা আরও বেড়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশায় জেঁকে বসছে চারপাশ। জেলার সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলেও রয়েছে ধীরগতি।

গ্রামীণ সড়কেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে ছোট যানবাহনগুলো।

এদিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে ভোর থেকেই যানবাহন চলাচল সীমিত রয়েছে বলে জানা গেছে। কুয়াশায় মহাসড়ক ও পদ্মাসেতু এলাকাও ঢাকা পড়েছে। এছাড়া কুয়াশা থাকায় লোকাল পরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কম রয়েছে বলেও জানা গেছে।

ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী মো. ইব্রাহিম মিয়া বলেন, প্রচুর কুয়াশা পড়েছে ভোর থেকে। সড়কে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মহাসড়কে কুয়াশার মধ্যে চলাচল বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। স্ট্যান্ডে ভোরে ঢাকাগামী যাত্রী তেমন দেখা যাচ্ছে না। বাসও দেরি করে আসছে।

কাভার্ডভ্যান চালক মো. হাসান বলেন, ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছি। কুয়াশার মাত্রা বাড়ছে। ভাঙ্গা স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছি। কুয়াশায় মহাসড়কে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।’

চার প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

শিক্ষা ডেস্ক:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
চার প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সরকারের তিনজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ (ইউএনও) ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৭ ডিসেম্বর দুদকের নওগাঁ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক আল মামুন মামলাটি করেছেন। তবে এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়নি।

মামলার আসামিরা হলেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ও কালাই উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার, নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) ও কালাই উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাত আরা তিথি, নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও কালাই উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত এবং কালাই উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা শামিমা আক্তার জাহান। তারা সবাই আইভিএ কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন।

অন্য আসামিরা হলেন, ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (এসডিএস)’ এর নির্বাহী পরিচালক মোছা. আয়েশা আক্তার, ‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’র নির্বাহী পরিচালক গাউসুল আজম ও সাবেক উপজেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোখছেদ আলী; কালাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ইন্ডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি (আইভিএ) কমিটির সাবেক সদস্য সচিব কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান, কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ও আইভিএ কমিটির সাবেক সদস্য হাসান আলী, নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও আইভিএ কমিটির সাবেক সদস্য নীলিমা জাহান, গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা ও আইভিএ কমিটির সাবেক সদস্য আনোয়ার আলী, কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও আইভিএ কমিটির সাবেক সদস্য অরুণ চন্দ্র রায় ও কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও আইভিএ কমিটির সাবেক সদস্য তৌহিদা মোহতামিম।

যে কারণে দায়ের করা হয় মামলাটি :

জানা যায়, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের একটি প্রকল্পে ১ হাজার ৩৫৬ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে দুদকে পেয়েছে মাত্র ১১ জন। অথচ এই বিষয়ে কোনো আপত্তি না জানিয়ে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এর মাধ্যমে সরকারের ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩২ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর এ সময়ের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) এর সাব-কম্পোনেন্ট ২.৫ প্রকল্পে এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮-১৪ বছর বয়সী ঝরে পড়া ও বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাই না করে, প্রকৃত ঝরে পড়া ও বিদ্যালয় বহির্ভূত শিক্ষার্থী না নিয়ে ১ হাজার ৬৫৭ জন ভুয়া ঝরে পড়া ও বিদ্যালয় বহির্ভূত শিক্ষার্থী উপস্থিত দেখানো হয়। তাদের নিয়ে ৫৫টি ভুয়া উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (উপানুষ্ঠানিক শিখনকেন্দ্র) প্রতিষ্ঠা দেখানো হয়। ভুয়া শিক্ষার্থীদের নামে বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ভুয়া দলিল তৈরি করা হয়।

কত টাকা আত্মসাৎ?

প্রকল্পের চুক্তিপত্রের ৫ম অ্যাপেনডিক্স অনুসারে, ৫৫ টি শিক্ষণকেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ প্রত্যেক শিক্ষকের বেতন ৫ হাজার টাকা হারে বার্ষিক ৩৩ লাখ টাকা, অর্থাৎ ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে মোট ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ৫৫টি শিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচাদি প্রতিটির জন্য ২২ হাজার ৬৯০ টাকা হারে মোট ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৯৫০ টাকা, ৫৫টি শিক্ষণকেন্দ্রে শিক্ষক ও অন্যান্যদের ট্রেনিংয়ের খরচাদি প্রতিটির জন্য ৬২ হাজার ৩৯২ টাকা হারে মোট ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৫৬০ টাকা, ৫৫টি শিক্ষণকেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের পোশাকের খরচাদি প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ৮০০ টাকা হারে মোট ২৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্কুল ব্যাগের খরচাদি প্রতিজন শিক্ষার্থীর জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা হারে মোট ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (উপানুষ্ঠানিক শিখনকেন্দ্র) রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যবস্থাপনা খরচাদি ও অন্যান্য খরচসহ ওই প্রকল্পের মোট ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪৩২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

জানা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) এর সঙ্গে বাস্তবায়ন সহায়ক সংস্থা/লিড এনজিও জয়পুরহাটের পাঁচবিবির সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসের (এসডিএস) একটি চুক্তিপত্র হয়। যার পঞ্চম অ্যাপেনডিক্স অনুযায়ী, কালাই উপজেলার ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিখনকেন্দ্রে ২ হাজার ৯৮ জন শিক্ষার্থীর যাবতীয় খরচাদির জন্য ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪ কোটি ৫০ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাস্তবায়ন সহায়ক সংস্থা/লিড এনজিও চুক্তির আলোকে সব কাজ সম্পন্ন করবে বলে চুক্তিতে বলা হয়।

তবে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (এসডিএস) তাদের কৌশলগত প্রয়োজনে নির্ধারিত অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা সম্পন্ন স্থানীয় একটি এনজিও ‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’কে সহযোগী সংস্থা হিসেবে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে। তাদেরকে ওই প্রকল্পের কালাই উপজেলার ৭০টি শিখনকেন্দ্রের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্নের দায়িত্ব দেয়।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, আসামি আয়েশা আক্তার, গাউসুল আজম ও মোখছেদ আলী ১ হাজার ৬৫৭ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত থাকলেও অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ওই শিক্ষার্থীদের নাম জরিপের তালিকায় দেখান। তারা ৫৫টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষনকেন্দ্র) প্রতিষ্ঠা করেননি।

প্রথম ইন্ডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি কমিটির কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান, টুকটুক তালুকদার, ডা. মো. হাসান আলী, নীলিমা জাহান ও মো. আনোয়ার আলী শুরু থেকেই দায়িত্বরত থেকে বিধিমালা অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষনকেন্দ্র) স্থাপনের তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়, শিক্ষক, সিএমসি সদস্য, শিক্ষা উপকরণ এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের যথাযথ ভ্যালিডেশন করার কথা থাকলেও তারা তা করেননি। এছাড়া দায়িত্বে চরম অবহেলা, ভুয়া-অগ্রহণযোগ্য রেকর্ডপত্র তৈরিতে সহযোগিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের জরিপ তালিকায় ক্যাম্পেইন কমিটির সভাপতি অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ক্যাচমেন্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়ন/এনওসি থাকা বাধ্যতামূলক থাকার পরও সভাপতির প্রত্যয়ন ব্যতীত-ই শিক্ষার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ও ভ্যালিডেশন কার্যক্রমে কোনো আপত্তি না জানিয়ে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম সন্তোষজনক মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

জরিপের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দুদক জানায়, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৩৫৬ জন, অথচ রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণে, কালাই উপজেলায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থী মাত্র ১১ জন পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে কোনো আপত্তি না জানিয়ে ওই প্রকল্পের কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পিইডিপি-৪ এর সাব কম্পোনেন্ট ২.৫ আউট অব চিলড্রেন এডুকেশন কার্যক্রমের শিখন কেন্দ্র মাঠ পর্যায়ে ভ্যালিডেশন ও কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট বা প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রতিবেদন ছাড়া উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর যথাযথ কর্তৃপক্ষ কোনো বিলের অর্থ ছাড় অনুমোদন করেন না। অথচ তিনিসহ তাদের কমিটি এসব বিষয় যাচাই বাছাই ছাড়াই সমস্ত কার্যক্রম সন্তোষজনক বলে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এছাড়াও, পরবর্তী ইন্ডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি কমিটির জান্নাত আরা তিথি, আবুল হায়াত, শামিমা আক্তার জাহান, অরুণ চন্দ্র রায়, তৌহিদা মোহতামিম বিধিমালা অনুযায়ী, উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় (উপানুষ্ঠানিক শিক্ষনকেন্দ্র) প্রতিটি উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয়, শিক্ষক, সিএমসি সদস্য, শিক্ষা উপকরণ এবং ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের যথাযথ ভ্যালিডেশন করার কথা থাকলেও তা ওই কমিটি করেনি। এছাড়া দায়িত্বে চরম অবহেলা, ভুয়া-অগ্রহণযোগ্য রেকর্ডপত্র তৈরিতে সহযোগিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তারা।

 

তিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও এক ইউএনও ইন্ডিপেনডেন্ট ভেরিফিকেশন এজেন্সি (আইভিএ) কমিটির সভাপতি ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর টুকটুক তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বাক্ষরে কোনো টাকা তো যায়নি। উপজেলায় মনিটরিং টিমে ছিলাম শুধু। দুদক তো আমাকে আসামি করার কথা নয়। সাক্ষী করেছে কিনা, ভালো করে দেখুন।’

শামিমা আক্তার জাহান বলেন, ‘কালাই উপজেলায় আমি যোগ দেওয়ার আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর কালাইতে যোগ দিয়েছিলাম। আগের ইউএনও স্যারের রিপোর্ট অনুযায়ী আমি শুধু প্রকল্প সমাপনী প্রত্যয়ন প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেছি। দুদক আমার কোনো বক্তব্য নেয়নি।’

জান্নাত আরা তিথি বলেন, ‘দুদকের মামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। দুদক বলতে পারবে কেন আমাকে আসামি করছে।’

অপর আসামি আবুল হায়াত কল রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

তথ্য সূত্র : দৈনিক শিক্ষা ডটকম