ফরিদপুরে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে যুবককে বিষপ্রয়োগে হত্যার অভিযোগ

মোবাইলে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে ইজ্জল শেখকে মারপিট ও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমন অভিযোগ স্বজনদের।
রোববার (৮ জুন) সন্ধ্যায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে তার। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ইজ্জল শেখের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।
এঘটনা নিয়ে বিকেলে ইজ্জল শেখকে পুনরায় মারপিট করে হানিফ শেখ ও তার লোকজন। এরপর কিছু সময় পর হোগলাকান্দি বাজার সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ইজ্জল শেখকে পরে থাকতে দেখে এবং মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। সেখানে এসে হানিফ শেখের লোকজন ইজ্জল শেখকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে নিয়ে বাজারের পাশে নদীর পানির মধ্যে চুপিয়ে অচেতন অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে ইজ্জল শেখের পরিবারের দাবি, তাকে মারপিট ও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি নিহতের স্বজনদের।
নিহতের স্ত্রী নবীরন বেগম বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই। স্বামী কোনো কাজ করতো না। সে মাঝে মধ্যে জুয়া খেলতো, তাকে অনেকবার নিষেধ করেছি, কিন্তু শোনে না। ঈদের দিন আমি ফরিদপুর গেছিলাম মাংস জোগাড় করতে। বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে গিয়ে মাংস নিয়ে বাড়িতে আসি। এরপর বাড়ি এসে শুনতে পারি আমার স্বামীকে হানিফসহ তার লোকজন মারপিট করেছে। আমি বিষয়টি জানতে গেলে আমাকেও মারপিট করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মারপিট করার পর আমার স্বামীর মুখে বিষ ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর তাকে নদীতে নিয়ে চুবানো হয়, এক পর্যায়ে তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে সেখান থেকে হানিফ ও তার লোকজন চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আমার স্বামীকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
নবীরন বেগম বলেন, ‘এঘটনার পর আমাকে অর্থের লোভ দেখানো হচ্ছে। মিটমাট করতে বলা হচ্ছে। এমনকি হুমকি ধামকিও দেওয়া হচ্ছে আমাকে মিটমাট করার জন্য। কিন্তু আমি মিটমাট চাই না, স্বামী হত্যার বিচার চাই। যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হোক। আমি ভিক্ষা করে সংসার চালাই, গরিব মানুষ বলে স্বামীর হত্যার বিচার পাব না?’
নিহতের বোন ফরিদা খাতুন বলেন, ‘আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে একটি কাগজে তাকে কারা মারছে তাদের নাম উল্লেখ করে লিখে রেখে গেছে। ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। সন্তানরা এতিম হয়ে গেল, ওদের দেখবে কে। ভাইকে যারা মেরেছে তাদের ফাঁসি চাই।’
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন বলেন, ‘হোগলাকান্দি এলাকায় মাদক ও জুয়ায় সয়লাব হয়ে গেছে। যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি এলাকায় মাদক ও জুয়ার ব্যবসা করছে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু রোধ করতে পারছি না।’
তিনি আরও বলেন, ইজ্জল শেখের মৃত্যু নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশের সহায়তা কামনা করেন এবং যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতারের অনুরোধ জানান তিনি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, সংবাদ পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ইজ্জল শেখের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার মৃত্যু বিষক্রিয়ায় হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এঘটনায় থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তবে মোবাইলে জুয়া খেলা নিয়ে তাকে মারপিট করে হত্যা করা হয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অন্য কোনো কারণ পেলে সেই হিসেবে মামলা নেওয়া হবে।
বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী রিয়ান আলী (১৬) নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সে মাদারীপুর জেলার ডাসা উপজেলার হায়দার আলীর পুত্র ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা রিয়ানের দুই বন্ধু আহত হয়েছে।
রোববার (০৮ জুন) বিকেল ৫টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার বাবলাতলা নামক বাসস্ট্যান্ডে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে মারা যায় রিয়ান আলী। আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে মোটরসাইকেলে মাদারীপুরের ডাসা এলাকা থেকে তিন বন্ধু মিলে ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ গোলচত্বর দেখতে আসছিল। ভাঙ্গার বাবলাতলা বাসস্ট্যান্ড অতিক্রম করে একটি সরু ব্রিজ পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বরিশালগামী আইকনিক পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেলটি ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রিয়ান মারা যায়। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা তার অপর দুই বন্ধু আহত হয়।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন বলেন, মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়া আইকনিক পরিবহনের একটি বাস জব্দ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়। কিশোর রিয়ানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ করলে পরবর্তী সময় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রোববার (৮ জুন) দুপুরের দিকে উপজেলার পুরাপাড়া ইউনিয়নের দফা গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আফিয়া ইসলাম ওই গ্রামের মো. আব্দুর রহমানের মেয়ে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আফিয়া বাড়ির উঠানে খেলছিল। তার মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। একপর্যায়ে সবার অজান্তে বাড়ির পাশে বৃষ্টির পানি জমে থাকা একটি ডোবায় পড়ে যায় আফিয়া। তাকে না দেখে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে ডোবা থেকে তার দেহ উদ্ধার করে দ্রুত পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, সবার অজান্তে বাড়ির পাশে ডোবায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পড়ে শিশুটি মারা যায়।
আপনার মতামত লিখুন
Array