খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন ওটিবয়, কেটে ফেলা হলো অঙ্গ

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:০৪ এএম
ফরিদপুরে প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন ওটিবয়, কেটে ফেলা হলো অঙ্গ

ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় অবস্থিত সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করেন ওটিবয় (কর্মচারী)। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীর স্তন্য ক্যান্সার বা টিস্যু সংক্রামক পরীক্ষার (বায়োপসি) জন্য অস্ত্রোপচার মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে ওই ওটিবয়ের (কর্মচারীর) বিরুদ্ধে। ফলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রামকের কারণে একটি স্তন্য (অঙ্গ) কেটে ফেলতে হয়েছে ওই নারীর।

ভুক্তভোগী রোগী ও তার স্বজনদের সূত্রে জানাগেছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহের পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করেন হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটরের কর্মচারী (ওটিবয়) শেখ নিয়ামুল (২৬)। ভুক্তভোগী নারী ফরিদপুর শহরতলীর কানাইপুর ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামের প্রবাসী সরোয়ার আলমের স্ত্রী ববিতা বেগম (২৮)। তার ৭ বছর ও ১ বছর বয়সি দুগ্ধপানের ছেলে সন্তান রয়েছে। বর্তমানে তিনি শহরের ঝিলটুলী এলাকার সেন্ট্রাল স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

হাসপাতালটিতে চিকিৎসার নথিপত্র ও ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ নভেম্বর পূর্ব পরিচিত ওই ওটিবয়ের শরণাপন্ন হয়ে মা ময়না বেগমকে সাথে নিয়ে সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়ে সার্জারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আতিকুর আহসানের কাছে যান। এক পর্যায়ে ওই চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য নির্দেশনা দেন। পরে তিনি চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হলেই হাসপাতালটির ওটিবয় নিয়ামুল তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না যাওয়ার জন্য ভুল ব্যাখ্যা দেন এবং অল্পখরচে নিজেই কাজ করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগী রোগী ববিতা বেগম জানান, ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার পরে নিয়ামুল এসে বলে মেডিকেলে থাকতে হবে, অনেক ঝামেলা হবে। আমি এই কাজ পারি, আমি করে দেব। কোনো সমস্যা হবে না, মেডিকেলে গেলেও একইভাবে কাটবে। তখন নিয়ামুলকে বলেছিলাম, আমার দুটি বাচ্চা আছে, কোনো ক্ষতি যেন না হয়। এক পর্যায়ে ওটি রুমে নিয়ে সে একাই অপারেশন করে।

তিনি আরও জানান, অস্ত্রোপচার শেষে চারটি সেলাই দেন এবং নিয়ামুল নিজেই প্রেসক্রিপশন লিখে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়৷ পরবর্তীতে প্রায় ১৫ দিন পরে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাই। এরই মধ্যে অস্ত্রোপচারস্থলে মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) পুনরায় চিকিৎসক আতিকুর আহসানের শরণাপন্ন হোন এবং ঘটনা খুলে বলেন। এরপর ওই চিকিৎসক সংক্রমণের ভয়াবহ মাত্রা তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফরিদপুর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন এবং একই দিনে তাঁর সংক্রামক স্তন্যটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়।

এ বিষয় নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগের ইউনিট প্রধান চিকিৎসক আতিকুর আহসান জানান, এ ধরনের টিস্যু সংগ্রহের জন্য চিকিৎসক দ্বারা একটি ফাঁপা সুঁচ ব্যবহার করে স্তনের পিণ্ড বা অস্বাভাবিক জায়গা থেকে কোষ বা টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে প্রয়োজন অনুসারে অস্ত্রোপচার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব তোয়াক্কা না করেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে টিস্যু সংগ্রহ করে ওই ওটিবয়।

তিনি আরও বলেন, পুরো স্তন্য নয় সংক্রমিত অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য ওই ওটিবয় দায়ী। এ ধরনের অস্ত্রোপচার করার জন্য ওটিবয়ের অধিকার নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে বায়োপসি পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে দেখা যায় নিয়ামুলের আরেক প্রতারণা। পরীক্ষাটি করানো হয় ঢাকা ধানমন্ডির গ্রীণরোড এলাকার এনএন ল্যাব নামক একটি ল্যাব থেকে এবং সেখানে উল্লেখ রয়েছে, নমুনাটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ওটিবয় (কর্মচারী) শেখ নিয়ামুল দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভুল করেছেন বলে স্বীকার করেন।

সুরক্ষা প্রাইভেট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠানের সকলের অজানায় সে এই কাজটি করেছে, তাঁর বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহামুদুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে ওই হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে ঘটনার খোঁজখবর নেওয়া হবে।

কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৫৭ এএম
কচুলতায় জেগে উঠছে সম্ভাবনা, বদলাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য
কচুলতায় এসেছে কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা। দেড়শ বিঘা দিগন্তজুড়ে কচুর লতার সফল চাষ মৌলভীবাজার জেলায় সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা। তুলনামূলক কম খরচ, কম পরিশ্রম এবং বেশি লাভজনক হওয়ায় কচুর লতা চাষে এক ধরনের কৃষি বিপ্লব দেখা যাচ্ছে এ জেলায়।

জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা প্রচলিত অনেক ফসলের তুলনায় বেশি আয়ের আশায় কচুর লতি চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি মৌলভীবাজার থেকে প্রতিদিনই লতি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় তিনশ হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর, শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা এবং কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর গ্রামে।

গিয়াসনগর এলাকায় দেখা গেছে, পুরো গ্রামজুড়ে এখন বাণিজ্যিকভাবে লতি চাষ হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও দুই-তিন বিঘা জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে লতি চাষ হলেও বর্তমানে তা ব্যাপক বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। শুধু গিয়াসনগর এলাকাতেই মৌসুমে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে লতির চাষ হচ্ছে।

গিয়াসনগর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ২১ শতাংশ জমিতে লতিরাজ বারি কচু–১ রোপণ করেছেন। প্রায় এক মাস ধরে তিনি লতি তুলছেন। প্রতি সপ্তাহে ৭০ থেকে ৭৫ কেজি লতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। মৌসুম যত এগোচ্ছে, দামও বাড়ছে। প্রায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।

একই গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ জানান, তিনি এক কিয়ার জমিতে লতি চাষ করেছেন এবং আরও জমিতে চারা রোপণের পরিকল্পনা করছেন। কৃষক মিলন, কাজিম ও আফাই মিয়াসহ অনেকেই বড় পরিসরে লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

কমলগঞ্জ উপজেলায় কচুর লতি চাষে সফল হয়েছেন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার। উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে তার উদ্যোগে লতি চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তার দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও লতি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপাশা গ্রামের এংরাজ মিয়া, রোকন মিয়া, আব্দুল মজিদ ও ইউনুস মিয়া বাণিজ্যিকভাবে কচুর লতি চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছেন।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিরোজ কান্তি রায় বলেন, গিয়াসনগর গ্রামে লতি এখন একটি সমৃদ্ধ ফসলে পরিণত হয়েছে। চার-পাঁচ বছর আগে যেখানে দুই-তিন বিঘা জমিতে লতি চাষ হতো, এখন সেখানে মৌসুমে ১৫০ বিঘা জমিতে লতির আবাদ হচ্ছে। সারা বছর ৫০ থেকে ৭০ বিঘা জমিতে লতি চাষ হয়। লতি অত্যন্ত লাভজনক ফসল এবং এতে রোগবালাই তুলনামূলক কম। গ্রামটি যেন এখন ‘লতার গ্রাম’ হয়ে উঠছে।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, কচুর লতি এ অঞ্চলে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক ফসল। অল্প খরচে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন। লতি চাষ সম্প্রসারণে কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৩ পিএম
মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মহান বিজয় দিবসে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চরভদ্রাসন সরকারী কলেজ মাঠে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল উদ্দিন।

সভার শুরুতে উপজেলার প্রায়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পরে ইউএনও জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যায়েদ হোছাইন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ।