খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

রাশেদ হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪০ এএম
ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

দেশের ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ অনেক ব্যবসায়ীর পণ্য এক আগুনেই ছাই হয়ে গেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আগুনের উত্তাপ থেকে বাদ যায়নি পোশাক থেকে শুরু করে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল, আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মালামাল ও ই-কমার্সের উদ্যোক্তাদের পণ্য।

কার্গো ভিলেজে রাখা সব পণ্যই এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ছাড় হওয়ার কথা ছিল। সেই আশা এখন ছাইতে রূপান্তরিত হলো। এতে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। মালামালের খোঁজে ক্লিয়ারিং এবং ফরওয়ার্ডিং এজেন্টের কাছে পণ্যের খবর নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ আশঙ্কা করছে বিমানবন্দরে ২৫০ কারখানার পণ্য পুড়েছে।

 

গতকাল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের ৮ নম্বর গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরায় গার্মেন্ট পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ফার্স্ট অ্যান্ড সেফ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বেনজির বলেন, হংকং ও চীন থেকে দুটি শিপমেন্টের রেডিমেড গার্মেন্টের পণ্যগুলো পুড়ে গেছে। স্যাম্পল প্রোডাক্টও ছিল। তিনি আরও বলেন, আমি ছোট ব্যবসায়ী, লাখ পাঁচেক টাকার মালামাল পুড়লেও এটা অনেক ক্ষতি। আজ আমার মালামাল খালাস করার কথা ছিল।

জেমটেক্স লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইমরান আহমেদ বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা প্রায় ৪০ কেজি লেইচ (অ্যাক্সেসরিজ) ছিল কার্গো ভিলেজে। দাম প্রায় দুই কোটি টাকা। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানিয়েছে, ওই মালামাল পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ৯৯ ভাগ। তিনি বলেন, দ্রুত প্রয়োজন হওয়ায় আকাশপথে এই অ্যাক্সেসরিজ আমদানি করেছিলাম। যার মাধ্যমে ১ লাখ ৬২ হাজার ডলারের রপ্তানি হওয়ার কথা। সম্ভবত এ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ এর আগে আমার রপ্তানির ডেট ফেল করেছি। এ মাসের শেষ পর্যন্ত পণ্য দিতে পারলে ক্রেতা নিতেন।

সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাওন এন্টারপ্রাইজের মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, আগুনে চট্টগ্রাম হাসপাতালের কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। যার মূল্য ৩৬০০ ডলারের মতো। আজকে আমাদের পণ্য বুঝে নেওয়ার কথা ছিল। এখন পর্যন্ত এ পণ্যের কোনো খোঁজ পাইনি। ধারণা করছি আগুনে পুড়ে গেছে।

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সামনে লিখিত বক্তব্যে ইনামুল হক বলেন, সাধারণত উচ্চ মূল্যের পণ্য এবং জরুরি শিপমেন্টের ক্ষেত্রে আকাশপথে জাহাজিকরণ করা হয়। আগুনে তৈরি পোশাক, মূল্যবান কাঁচামাল এবং নতুন ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্যাম্পল পণ্য পুড়ে গেছে। প্রতিদিন ২০০-২৫০টি কারখানার পণ্য আকাশপথে রপ্তানি হয় জানিয়ে ইনামুল হক খান বলেন, ক্ষতির পরিমাণ অনেক হতে পারে। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে শিগগিরই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, কাস্টমসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে একটি সমন্বয় সভা করবে বিজিএমইএ। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আমরা ভিতরে গিয়ে ভয়াবহ চিত্র দেখেছি। পুরো আমদানি বিভাগ পুড়ে গেছে। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে বাণিজ্য উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে নতুন পণ্যের আমদানি কার্যক্রমে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত টার্মিনাল-৩-এ নতুন স্থানে আমদানি পণ্য রাখার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। এ ছাড়া ৭২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত পণ্য খালাসের নির্দেশনা দিয়েছেন উপদেষ্টা।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দেশের রপ্তানি খাত সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত। যে পণ্য এখানে ছিল সেটা পুড়ে  গেছে। কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হবে। পুড়ে যাওয়া পণ্যের চেয়েও বহুগুণ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই আমাদের আগানো সম্ভব নয়। আমরা কি এটা প্রশ্ন করতে পারি বা আমরা কি ভেবে নিতে পারি যে, এর আগেও বিগত বছরগুলোতে আমরা এরকম দেখেছি। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আগুন লাগত। এটা ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিত কি না তা সরকারকে ভেবে দেখা উচিত। ’

বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, আমাদের সদস্যদের ১০০ কোটি টাকার বেশি পণ্য আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়েছে। তবে বেশির ভাগ পণ্য বিমার আওতার মধ্যে আছে। ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ ঠিকমতো পেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রতি এফবিসিসিআই সমবেদনা জানায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।

এদিকে, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বিবৃতিতে বলেন, দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরসহ অন্য বন্দরগুলোর সব স্তরে অগ্নিনিরাপত্তাসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন গতকাল কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন শেষে বলেন, আমদানি করা যত পণ্য ছিল সব আগুনে পুড়ে ধ্বংস হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত সেটা আমরা খাতভিত্তিক নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করছি। গতকাল রাতেও বাণিজ্যিক কার্গো এসেছে। আমাদের বাণিজ্যিক সহায়তার স্বার্থে এসব কার্যক্রম বন্ধ রাখা সম্ভব নয়। তৃতীয় টার্মিনাল এলাকায় বিকল্প জায়গা দেওয়া হয়েছে, যাতে পণ্য পরিবহন চালু থাকে। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্টের কাজ চলছে। ধ্বংসের আর্থিক ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের ওজন নির্ধারণের পাশাপাশি খাতভিত্তিক বিশ্লেষণের কাজও করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতাসহ কোনো কিছু উড়িয়ে দেব না।

এদিকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বিশেষ ব্যবস্থায় চালু রাখার কথা জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর জানায়, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আপাতত জিএসই মেনটেন্যান্স নামক স্থানে পণ্য রাখার জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ওই স্থানে পণ্যের কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করছে, ৯ নম্বর গেটে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ওই গেট দিয়ে পণ্যের খালাস প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হচ্ছে।

ফরিদপুরে কলাবাগানে পড়েছিল অটোরিকশা চালকের লাশ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩:২০ পিএম
ফরিদপুরে কলাবাগানে পড়েছিল অটোরিকশা চালকের লাশ

ফরিদপুরে একটি কলাবাগান থেকে টিপু সুলতান (৪০) নামে এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে ওই অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত টিপু সুলতান একই এলাকার মৃত জায়েদ আলী শেখের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে যে কোনো এক সময় ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সজল মিয়ার পুকুরপাড় সংলগ্ন ইলিয়াস শেখের কলাবাগানের ভেতরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা টিপু সুলতানকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।

অতঃপর ভোরে ইলিয়াস শেখ কলাবাগানে পানি দিতে এসে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের জানান। পরে এলাকাবাসী থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আজমীর হোসেন ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফরিদপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী দোলনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৪৬ পিএম
ফরিদপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী দোলনের

ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা–মধুখালী–বোয়ালমারী) আসনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেছেন, কিছু প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা প্রকাশ্যে আইন অমান্য করছেন, যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘যিনি আইন প্রণেতা হতে চান, তিনি যদি শুরুতেই আইন না মানেন, অনুসারীদের আইন অমান্যে উৎসাহ দেন এবং আইন ভঙ্গকারীদের বিষয়ে নীরব থাকেন—তাহলে তার কাছে জনগণের জান-মাল ও মর্যাদা কতটা নিরাপদ, সেটাই বড় প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর একই আসনে অন্য প্রার্থীকে সহ্য করতে না পারা আসলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর দুর্বলতারই প্রকাশ। তার ভাষায়, ‘একজন এমপি প্রার্থীর নিজেরই যদি টলারেন্স পাওয়ার না থাকে, তাহলে তার হাতে পাঁচ লাখের বেশি ভোটার এবং সাত লাখেরও বেশি মানুষের সম্মান ও অধিকার কীভাবে নিরাপদ থাকবে?’

আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেন, ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই তাকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার, চরিত্রহনন এবং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। আমি এখন ফরিদপুর-১ আসনে এমপি হতে চাওয়া কোনো কোনো প্রার্থীর—সবাই নন—পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছি।’

তার দাবি, যিনি এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, তিনি কিছুদিন আগেও তাকে নিজ রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তার অফিসে বারবার এসেছিলেন। ‘একটাই শর্ত ছিল—আমাকে মঞ্চে উঠে তার পক্ষে কথা বলতে হবে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু আমাকে সরাসরি সমর্থন না করায় ধরে নেওয়া হলো আমি তার বিরুদ্ধে,’ বলেন দোলন।

এরপর তার বিরুদ্ধে নোংরা ভাষায় চরিত্রহনন ও বিষোদ্‌গার শুরু হয় এবং অনুসারীদেরও সেই পথে পরিচালিত করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নিজের পেশাগত অবস্থান তুলে ধরে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘ঢাকা টাইমসের একজন সাংবাদিক ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন কাভার করতে গিয়ে নিহত হলেও তখন সাংবাদিকদের পেশাগত নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ছিলাম এবং আছি।’

তিনি আরও বলেন, তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ড ফরিদপুর-১ আসনের মানুষের অজানা নয়।

আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং মব সৃষ্টি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। ‘আমাকে হত্যা করা বা প্রার্থী না হতে সুস্পষ্ট ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি দেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন,’ বলেন তিনি।

তিনি এসব বিষয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সর্বোপরি ফরিদপুর-১ আসনের জনগণের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানান।

নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে দোলন বলেন, ‘একদিকে দল ঘোষিত প্রার্থীর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের পদধারী নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরছেন এবং অন্যদেরও তাদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে কথা না বললে বা সঙ্গে না ঘুরলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক রং না দেখে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন—এটাই সংবিধানস্বীকৃত দাবি।’

তিনি আরও বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রার্থী ঘন ঘন আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী থানায় যাচ্ছেন, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে কিনা, তা জনগণ, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরিফুর রহমান দোলনের মতে, ফরিদপুর-১ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে কি না, সেটিই প্রমাণ করবে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কি না। তিনি নির্বাচনের আগেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচন কমিশনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপনে ও প্রকাশ্যে সরেজমিন তদন্তের আহ্বান জানান।

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি ভীত নই। আমি দেশের ও মানুষের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নই। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রায় নিতে চাই।’

বিবৃতির শেষাংশে তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর-১ আসনের শান্তিপ্রিয় মানুষই শেষ পর্যন্ত সবকিছুর বিচার করবেন। ফরিদপুর-১ আসনের শান্তিপ্রিয় জনতার জয় হোক।’

সদরপুরে সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে জখম

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:২৯ পিএম
সদরপুরে সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে জখম

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জেরে এক সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম ও পকেট থেকে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চরবিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজাহার মোল্লা (৬৩) পেশায় সার্ভেয়ার। গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে তিনি মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একই গ্রামের রুবেল খান (৩৭) ও তার বাবা ইলিয়াস খান (৬২) পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে তার বসতবাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।

মাজাহার মোল্লা গালিগালাজে বাধা দিলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুবেল খান কাঠের বাটাম দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে বাঁম কপালে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। অপরদিকে ইলিয়াস খান বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার বাঁম কানের ওপর কাটা জখম হয়। পরে তার প্যান্টের পকেটে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

তার চিৎকারে স্ত্রী-সন্তান ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। আহত মাজাহার মোল্লাকে স্থানীয়দের সহায়তায় সদরপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এতে তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগকারী দাবি করেন, রুবেল খানের বিরুদ্ধে এলাকায় আগে থেকেই একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে মাজাহার মোল্লা সদরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আল মামুন শাহ্ বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।