খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০ পৌষ, ১৪৩২

সরিষা ফুলের মাঝে জমে থাকা এক হারানো শৈশব

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:৩৩ এএম
সরিষা ফুলের মাঝে জমে থাকা এক হারানো শৈশব

সরিষার হলুদ ফুলে ভরা বিস্তীর্ণ মাঠ। রোদে ঝলমল করে ওঠা গ্রামীণ প্রান্তর। সেই মাঠের মাঝখানে চার-পাঁচটি শিশু—মুখে অদম্য হাসি, শরীরে কাদা-মাখা জামা, হাতে পুরোনো একটি চাকার রিম। কেউ সেটি ঠেলে দিচ্ছে, কেউ দৌড়ে পিছু নিচ্ছে। ছবিটি এক নজরে আনন্দের হলেও, গভীরে তাকালে ধরা পড়ে হারিয়ে যেতে বসা এক শৈশবের নীরব আর্তনাদ।

এই শিশুরা কোনো দামি খেলনার দাস নয়। তাদের খেলাধুলা জন্ম নেয় মাঠে, মাটিতে, প্রকৃতির কোলে। একসময় গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি শৈশবই এমন ছিল। বিকেলের আলো ফুরোতে না ফুরোতেই মাঠে নেমে পড়ত শিশুরা—ডাংগুলি, মার্বেল, চাক্কা ঘোরানো, লুকোচুরি। এখন সেই দৃশ্য ক্রমেই বিরল। মোবাইল ফোন, ট্যাব আর শহুরে ব্যস্ততা গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

ছবির শিশুরা হয়তো জানেই না—তাদের এই দৌড়ানো, মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, ফুলের গন্ধ মাখা মুহূর্তগুলো একদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে। বড় হয়ে তারা হয়তো কাজের খোঁজে শহরে যাবে, ঢুকে পড়বে কংক্রিটের জঙ্গলে। তখন আর এমন সরিষার মাঠ থাকবে না, থাকবে না খোলা আকাশের নিচে অবাধ খেলাধুলা।

হারানো শৈশব বলতে শুধু খেলাধুলার অভাব নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র্য, শিশুশ্রমের ভয়। অনেক শিশুই আজ মাঠে দৌড়ানোর বয়সে কাজে নামতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ ইটভাটায়, কেউ হোটেলে, কেউ রিকশার পেছনে ঝুলে থাকা এক ছোট সহকারী। তাদের শৈশব হারিয়ে যায় প্রয়োজনের চাপে।

এই ছবিটি তাই শুধু সুন্দর দৃশ্য নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা। আমাদের মনে করিয়ে দেয়—শিশু মানেই দায়িত্ব। তাদের জন্য চাই নিরাপদ শৈশব, খেলাধুলার সুযোগ, শিক্ষার নিশ্চয়তা। প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে আমরা যদি প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার এই সহজ আনন্দটুকু রক্ষা করতে না পারি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবেই না—সরিষার হলুদ মাঠে দৌড়ানোর সুখ কতটা গভীর হতে পারে।

ছবির শিশুরা আজ হাসছে। প্রশ্ন হলো—এই হাসি কি আগামী দিনের বাংলাদেশেও টিকে থাকবে?

স্মৃতি আবেগ আর মিলনে রঙিন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পুনর্মিলনী উৎসব

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:১২ পিএম
স্মৃতি আবেগ আর মিলনে রঙিন ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পুনর্মিলনী উৎসব

উৎসাহ-উদ্দীপনা, স্মৃতিচারণা আর আবেগঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী পুনর্মিলনী উৎসব শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার (দুই দিন) নানা আয়োজনের মাধ্যমে এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরবময় পথচলা উদযাপন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা বসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাবেক শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করেন। বহুদিন পর পুরনো সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালের এক সাবেক শিক্ষার্থী জানান, তার অনেক সমবয়সী বন্ধু আজ আর বেঁচে নেই, তবুও স্কুলের প্রতি ভালোবাসার টানেই তিনি এই পুনর্মিলনীতে অংশ নিতে এসেছেন।

অনুষ্ঠানের সূচনা হয় পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে। এরপর এসেম্বলি, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়।

আয়োজিত অনুষ্ঠানে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা। বিশেষ অতিথি ছিলেন- ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. নজরুল ইসলাম।

এছাড়া বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা প্রীতিলতা সরকার এবং আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ওয়াহিদ মিয়া কুটি।

বক্তারা বলেন, ফরিদপুর জিলা স্কুল শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি এ অঞ্চলের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বাতিঘর। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অসংখ্য গুণীজন দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

অনুষ্ঠান শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সংবাদ লেখা পর্যন্ত উৎসব চলমান ছিল। আয়োজক কমিটি জানায়, পরবর্তী পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ, বিনোদনমূলক আয়োজন ও আতশবাজি অনুষ্ঠিত হবে। সন্ধ্যায় স্কুলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে আলোচনা সভা এবং রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রাখা হয়েছে।

পুরনো স্মৃতি আর নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন—সব মিলিয়ে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বছরের এই পুনর্মিলনী উৎসব পরিণত হয়েছে এক আবেগঘন ও আনন্দঘন

ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপন

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১:৫১ পিএম
ফরিদপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপন

ফরিদপুরে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে। যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন চার্চে নেওয়া হয়েছে দিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি। শীতের কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই চার্চগুলোতে ভিড় জমাতে দেখা যায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও শিশুদের।

বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে ফরিদপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ মিশনে প্রধান উপাসনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

সকাল ৯টা থেকে অনুষ্ঠিত উপাসনায় যিশু খ্রিস্টের জীবন, ত্যাগ ও মানবপ্রেমের বাণী তুলে ধরা হয়। প্রার্থনা শেষে আয়োজন করা হয় সম্মিলিত প্রীতিভোজ। এ সময় ধর্মপ্রাণ মানুষ একে অপরের সঙ্গে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা বিনিময় করেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা যায় সবাইকে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় বড়দিন উপলক্ষে চার্চ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় নানা আয়োজন। ধর্মীয় আলোচনা ও প্রার্থনার পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শান্তা ক্লজের উপস্থিতি। শান্তা ক্লজ শিশুদের মধ্যে উপহার সামগ্রী বিতরণ করলে শিশুদের মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠে। গান, নাচ ও অভিনয়ের মাধ্যমে বড়দিনের আনন্দ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।

চার্চ সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় মোট সাতটি চার্চে বড়দিনের উৎসব একযোগে পালিত হচ্ছে। প্রতিটি চার্চেই স্থানীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বড়দিন উপলক্ষে আগামী কয়েকদিন পরবর্তীতে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এসব আয়োজনের মাধ্যমে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।

সার্বিকভাবে ফরিদপুরে বড়দিন উদযাপন পরিণত হয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, আনন্দ ও মানবিকতার এক মিলনমেলায়।

ফরিদপুরে কনকনে শীতেও থেমে নেই জনজীবন

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:২৫ এএম
ফরিদপুরে কনকনে শীতেও থেমে নেই জনজীবন

ফরিদপুরে হঠাৎ করে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। ঘন কুয়াশা, হিমেল হাওয়া আর কমে যাওয়া তাপমাত্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিশেষ করে ভোরের দিকে শীতের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবুও জীবিকার তাগিদে থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন চলাচল ও কর্মব্যস্ততা।

ভোর থেকেই শহরের প্রধান সড়কগুলোতে দেখা যায় রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল। শীত উপেক্ষা করে অফিসগামী মানুষ, শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবীরা বেরিয়ে পড়ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। অনেকেই গরম কাপড়, মাফলার, টুপি ও হাতমোজা পরে শীত মোকাবিলা করছেন। আবার নিম্নআয়ের মানুষের অনেককে দেখা যাচ্ছে খোলা আকাশের নিচে আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করতে।

শহরের কাঁচাবাজারগুলোতেও সকাল থেকেই ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সবজি বিক্রেতা, মাছ ও মাংস ব্যবসায়ীরা শীতের মধ্যেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতারাও প্রয়োজনের তাগিদে বাজারে আসছেন, যদিও শীতের কারণে অনেকের মুখে অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট। এক সবজি বিক্রেতা বলেন, “শীত বেশি হলেও বেচাকেনা থেমে নেই, পেটের দায়ে বসতেই হয়।”

অন্যদিকে, শীতের প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া ও ছিন্নমূল মানুষের জীবনে। ফুটপাত ও খোলা জায়গায় বসবাসকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতবস্ত্রের অভাবে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সামাজিক উদ্যোগে শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ শুরু হলেও তা এখনও পর্যাপ্ত নয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

এদিকে চিকিৎসকরা শীতজনিত রোগ থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও জ্বরের ঝুঁকি বেশি থাকায় গরম কাপড় পরা, কুসুম গরম পানি ব্যবহার এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সব মিলিয়ে কনকনে শীত ফরিদপুরের মানুষের জীবনযাত্রায় কিছুটা কষ্ট বাড়ালেও জীবন থেমে নেই। সংগ্রাম আর জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই প্রতিদিনের পথচলা অব্যাহত রেখেছে এ জেলার মানুষ।