খুঁজুন
রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ, ১৪৩২

জলে ভাসা নীলডুমুরের ফুল

সেলিনা শিউলী
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫, ১২:৩১ পিএম
জলে ভাসা নীলডুমুরের ফুল

পিল পিল করে পায়ে হেঁটে মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে ধূলি উড়িয়ে যাচ্ছে নানা বয়সী কিছু মানুষ। পথে পথে বাড়তে থাকে ঘরফিরতি উৎসুক মানুষের দল। এ-যাত্রায় মুখে আনন্দের বিন্দুমাত্র নেই, আছে বাতাসে ভর দেওয়া কানে-মুখে ফিসফিসানি। ছোটরা মুখ উঁচু করে কান খাড়া করে পাশের মানুষটা কী বলছে গোপনে তা জানার জন্য। হাঁটার পথে আছে উহ্-আহ্ শব্দ। কেউ কেউ কোনো কথা বলছে না, চেহারায় ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে চলছে। কেউ ছুটছে ঊর্ধ্বশ্বাসে, কারো বা দৃষ্টিতে শূন্যতা। বাঁ পায়ে বাঘের কামড়ে মাংস তুলে নেওয়া ক্ষত নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দিগি¦দিকশূন্য হয়ে ছুটছে। আলিমের ছেলেবেলার বন্ধু করিমের হাতের লালরঙা গামছায় বাঁধা আলিমের কল্লাটা। আলিম কাঠ কাটতে গিয়ে বাঘের নিশানায় পড়ে যায়। তাকে টেনে বনের গভীরে নিয়ে যায় বাঘ। আলিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ। সঙ্গীরা লাঠিসোটা নিয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখে ওর ছেঁড়া শার্ট, প্যান্ট এদিক-সেদিক আর কিছু হাড়গোড় পড়ে আছে, অদূরে পড়ে আছে মাথাটা। এরপর গন্তব্য তাদের হাওলাদার বাড়ি।

পালের গোদা গ্রামের জসিম মাতবর। তিনি হাত-কাটা নাসিমুদ্দিন, ল্যাংড়া কাদেরসহ তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছেন। নাসিমুদ্দিন বলে, কপাল আমাগো ভালো, এদিক আইছিলেন বইল্যা পাইলাম আপনেরে।

মাতবর বলে, হুম। কলিমরে চিনতাম আমি, এমন কইরা চইল্যা যাইবো তা ভাবি নাই। আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয় না রে।

তিনি নিজের মতোই বলতে থাকেন, শোনো মানুষ যেমন বাঘরে ভয় পায়, তেমনি বাঘ কিন্তু মানুষরে ভয় পায়। গুলপট্টি মারতেছি না, এ হইল সুন্দরবনের বাঘ। জিম করবেটসহ বিখ্যাত সব শিকারির কাছে শুনছি – সব জায়গাতেই মানুষখেকো বাঘ আছে, কম আর বেশি। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘ কিন্তু মানুষের মতোই সেয়ানা আর চালাক। ছোটবেলা থেকে শুইনা আসতেছি, বাঘ নাকি ভরা পেটে থাকলে শিকারের পিছে ছোটে না; কিন্তু কখনো কখনো এই বনের বাঘ দুঃসময়ের জন্য শিকার করে সেই খাবার জমায়া রাখে। ওই শালা সেয়ানা, তক্কেতক্কে থাকে, যেই না একবার কাউরি একলা পালো, অমনি মনে কর তাকে শিকার করি ফালালো। আমি একবার এক লেখায় পড়ছিলাম সুন্দরবনের বাঘ নিয়া। সেখানে লেখছে, সুন্দরবনের লবণাক্ত পানি বাঘের যকৃৎ আর কিডনিকে আক্রান্ত করে, সেই কারণে বাঘের ভিতর অস্বস্তি তৈরি হয়। যে কারণে এখানকার বাঘ ভিতরে ভিতরে হিংস্র হইয়া যায়। বুঝলি কি হয়? বন বিভাগ তো কয়েছে রেজিস্টার্ড যারা তারা বনে যাতি পারবি না, কিন্তু মানা করলি তো আর প্যাট বাঁচবি না। প্যাটের খাওন চাই। বুঝলি, খাওন। ওসব আইনকানুন দিয়া কি আর প্যাট বাঁচে। এই প্যাটের জন্যি সব, এই প্যাটটা না থাকলি পরে ওসব নিয়মকানুন মানলিও চলে। এই যে আলিমডা মরল, সরকারি কিছু পাইব না। এই কারণে মনডা খারাপ হয়ি যায়।

নাসিমুদ্দিন বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, কন কী? কি ভয়ংকর! শুধু নোনা পানির লাইগ্যা?

মুখে বললেও তার মনের ভেতর কিন্তু নানা কথা চলে, হাঁটে আর মাথা চুলকায়, সাহস পায় না, মাতবরকে কীভাবে বলে কথাটা। বলে, আলিম ভালা মানুষ আছিল। তয় হুজুর যাই কন, আলিমের বউডা ভাতারখাকি, অপয়া আর কুলটা। নাইলে এমুন হয়! দেখছেন এই বাপের জনমে মাথাডা ধড়ের লগেও নাই? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এক মাসের ছাওয়াল নিয়া বিধবা হয়? শঙ্খিনী জাতের মাইয়া এইডা। এই জাতের মাইয়া বিয়া করলি সাক্ষাৎ মৃত্যু – বলে বিজ্ঞের মতো ঘাড় নাড়ে নাসিমুদ্দিন।

শোরগোল শোনা যায়। উৎসুক বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় জটলা পাকানো মানুষের দল। আলিমের হাওলাদার বাড়িব দরজায় সমবেত হয় উৎসুক জনতা। এ-বাড়ির সামনে বহু মানুষের ভিড় আজ। উঠানে জায়গা হয় না, এত মানুষ। ফাল্গুন মাসের শেষ দিন, চারদিকে ঝকঝকা রোদ। বাতাসের তোড়ে আলগা ধুলোর ঝাপটা সবার চোখমুখ ছুঁয়ে যায়।

ঘরের পেছন দিকটায় গরু-ছাগলের বিচরণ বন্ধ করতে কাউফলা গাছের ডাল কলাগাছের ফেতনা দিয়ে বেঁধে, পুরনো মাছ ধরার জাল আর তালগাছের একটা ডাল কেটে করাত বানিয়ে গোবরজল, ধানের কুড়া আর আঠালো মাটি গুলে ঘরের পিড়া লেপতে ব্যস্ত তখন জমিরন বেওয়া।

বাড়ির বউ আছিয়া বেগম গত সপ্তাহে উঠান নিকিয়েছে। সে-উঠানে হোগলা পাটি বিছিয়ে শীতে নামানো লেপ-কাঁথা আর বালিশ শুকাতে দিয়ে, গাছ থেকে পড়া শুকনো পাতা ঝাড়ু দিয়ে একটি হাজিতে রাখছিল আছিয়া। দুই শরিকের ঘর, এক বাড়ি। পুরুষ বলতে কেউ নেই। আছিয়ার শ্বশুর মরেছেন বছর আটেক আগে। সুন্দরবনে জোংরা শামুক সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি বাঘের পেটে যান। সে বার দল থেক দূরে গিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন নবীন হাওলাদার। হঠাৎ বাঘের আক্রমণে তার আর্তচিৎকারে উপস্থিত সবাই ভয়ে যে যেদিকে পেরেছে দৌড়ে পালিয়েছে। কিছুক্ষণ পর সবাই লাঠিসোটা নিয়ে এক জায়গায় জড়ো হয় বটে, ততক্ষণে সময় গড়িয়েছে অনেকটা। বনের ভেতরে কে আগে যাবে – এ জাতীয় দেনদরবার করতে করতে সবাই একসঙ্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তারা নবীন হাওলাদারকে ডেকে ডেকে সামনে এগোতে থাকে। বনজীবী যারা তারা অকুতোভয় হলেও তাদের বুকের ভেতরে ঢিপ ঢিপ শব্দ বাড়ে। দলটি আর খোঁজ পায়নি তার। জীবনের মায়ায় তারা গভীর জঙ্গলে না গিয়ে ফিরে এসেছিল। নবীনের বাড়িতে এসে খবরটা দিয়ে দায়মুক্ত হয় সকলে।

উঠানের সামনের ঘরে থাকে আছিয়ার চাচা শ্বশুর খালেক ও আছিয়ার দেওর হালিম হাওলাদার। তারা সাতদিন আগে বনে গেছে কাঠ কাটতে। এ-বাড়িতে মানুষ বলতে চাচি শাশুড়িসহ তারা মোট তিনজন নারী ও এক শিশু। বাড়িময় ছোটাছুটি করে পাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা খেলছে আর বারকয়েক উঠে পড়ছে সদ্য নিকানো পিঁড়ায়। অমনি গালাগাল দিয়ে সবার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে শিশুদের শাপশাপান্ত করে জমিরন। এরপরও শিশুরা তাদের কানামাছি খেলা শেষ করে না। পরে ধমক খেয়ে পুরনো শাড়ি থেকে ছিঁড়ে ত্যানা বানিয়ে খড়ের ছোট্ট পুঁটলিতে শোয়া আছিয়ার ছেলেকে নিয়ে খেলতে বসে শিশুরা – শিশুটি তখন ও চোখ পিটপিট করে।

একসময় মানুষের জটলা এসে থামে মান্দার গাছ আর হোগলা পাতা দিয়ে ঘেরা দরজার সামনে।

ও কলিমের মা, কলিমের মা আছো বাড়িত?

এলাকার মাতবরের হাঁকে হাঁটুর কাপড় ঠিক করে ব্লাউজবিহীন ঝুলে পড়া স্তন সামলে মাথায় আঁচল টানে আধময়লা পুরনো শাড়িতে জমিরন।

বুকে ঢাক্ গুড়্ গুড়্ শুরু হয়নি তখন। কী কারণে ডাকছে তা দেখার জন্য এগোতে যাবে দরজায় ঠিক তখনই বাড়িতে ঢোকে দঙ্গলটি। গরিবের ঘরে হাতির পারা নয়, অশনিসংকেতের মতো ধেয়ে আসে পেছনে পেছনে মানুষগুলো। ঝাঁটা হাতে থমকে দাঁড়ায় আছিয়া। তার বুক হাঁপরের মতো ওঠে আর নামে। ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন বলে ওঠে, মামা আইজ অসদয় হইছে, বনবিবির কথাও শোনে নাই। তোমার ছাওয়ালরে খাইয়া ফেলাইছে, নৌকার অন্য মাঝিরা অনেক দূর গিয়া হের পর কলিমের মাথাডা পাইছে।

মাতবর গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন, আমরা তোমারে একটা খারাপ খবর দিতে আইছি। চোখ তার কথা বলতে বলতে ঘুরে আসে উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা সবার দিকে। তারপর বলতে থাকেন ঘটনা। এমন ঘটনা এর আগে শোনেনি পাঁচ গাঁওয়ের  মানুষ। তার কথা শেষ হতে না হতেই মাথাটা কেমন জানি করে ওঠে আছিয়ার। সে নিকানো উঠানে লুটিয়ে পড়ে। ‘আল্লাহ গো মা গো’ বলে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ওঠে জমিরন বেওয়া। জোটভাঙা নারীর কয়েকজন এগিয়ে আসে। কেউ ছোটে পুকুরের দিকে। বদনায় পানি নিয়ে বউ আর শাশুড়ির মাথায় ঢালে।

জসিম মাতবর গলায় জমাটবদ্ধ কাশি সরাতে গলা খাকারি দেন, আশেপাশে তাকিয়ে বলেন – সবই ওপরওয়ালার ইচ্ছা, তোমার পোলা-ভাগ্য এমনই – কী করবা কও। হুনলাম বিয়ানবেলা আলিম গেছিল মাছ ধরতে, নৌকায় আর কেউ আছিল না। মামা ওরে একলা পাইয়া টাইন্যা নিয়া গেছে। আশেপাশের দুই-একজন মাঝিমাল্লা দেখলে পরে ডাকাডাকি কইরা লাঠিবৈঠা লইয়া ছুইটা গেছে। ওর মাথাডা বাঁচাইতে পারছে। বাকি সব হের প্যাডে। মানুষের হাতে সবসময় কিছু থাহে না, বান্দার হিসাব ওপরওয়ালাই ভালো জানেন। কথাগুলো বলে তাকান জমিরন বেওয়ার মুখের দিকে, ততক্ষণে মূর্ছা যাওয়া বউটা বসে থাকে এক হাত ঘোমটা দিয়ে। তাকে ঘিরে থাকা কয়েকজন প্রতিবেশী আড়েঠাড়ে আছিয়াকে বোঝাতে চায়, দোষটা যেন তারই। এখানে এসব জায়গায় স্বামী বাঘের খোরাক হলে বা কোনো বিপদ হলে দোষ এসে পড়ে বাড়ির বউয়ের ওপর। ধারণা করা হয়, বউয়ের চলন দোষে এমনটা ঘটেছে।

জরিমন বেওয়া জানে না সে কী করবে। বিলাপ করতে করতে মাতবরকে উদ্দেশ করে বলে, আমনেরা যা ভালো মনে হরেন, মোর কপাল পুড়ছে। ছোড পোলাডায় বাড়িত নাই, মোর কোন পাপে মোর পোলাডা গেলে?

মাতবর পকেট থেকে হাজার দুয়েক টাকা বের করে দেয় চাপা মুনসীকে – দাফন-কাফনের কাজ করার জন্য। মাতবরের খাস লোক এই মুনসী।

জমিরন বিলাপ থামিয়ে তাকায় টাকার দিকে। বলে, মোরা দুইজন মাতারি আর কি বুঝি? আমনেরা বুঝব্যবস্থা করেন। ওর বাপের মাতার লগে রাইখ্যা দিয়েন ওরে আপনেরা।

মাতবর শহরে যাওয়ার তোড়জোড় করে।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার শেষ গ্রাম নীলডুমুর। সুন্দরবনের বুড়িগোয়ালিনী রেঞ্জে গ্রামটির অবস্থান। এ-গ্রামের মানুষের জীবন জলের মতো স্বচ্ছ-সরল। নীলডুমুরের চারপাশে জলের নহর যেন। বুড়িগোয়ালিনী থেকে এ-গ্রামে যাতায়াত করা বেশ কষ্টকর – পাড়ি দিতে হয় ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ। ইঞ্জিনের নৌকা বা স্পিডবোট যাতায়াতের উপায়। প্রতিটি ঘর লাগোয়া চিকন চিকন সড়ক সাবধানে পার হতে হয়। সে-পথেই তাদের নিত্যচলাচল। মাতবর ফিরে যেতে উদ্যত হন।

জানাজা পড়াতে আসা মসজিদের ইমাম বলেন, মোর জীবনে কহনও এমুন দাফনকাজ আর হয় নাই। মউত যে কার কেমনে হয় তা একমাত্র মাবুদই জানেন।

বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে কাকের শরীরের মতো। কমতে থাকে উৎসাহীদের উৎসাহ। দু-একজন প্রতিবেশী এসে দুজনকে সান্ত্বনা দিয়ে যার যার ঘরে ফিরে গেছে। পুরনো একটা কাপড় বিছিয়ে সেই থেকে নামাজ পড়ে আর কেঁদেই চলেছে জমিরন। মাঝে মাঝে বিলাপের সুরে বলতে থাকে – তার নসিব হলো না স্বামী আর ছেলের মরা মুখ শেষবারের মতো দেখার। ছেলের শরীরটা গেছে বাঘের পেটে, দেখার জন্য আছে শুধু ক্ষতবিক্ষত মুখ। তাও দুই চোখের কোনায় গভীর ক্ষত। এদিকে আছিয়া স্বামীর মুখটা দেখতে চাইলেও তাকে ওই বীভৎস চেহারা দেখাতে চায়নি উপস্থিত জনতা। তারা বলছিল, দোয়া করো, হের যে মউত হইছে, তার য্যান সব পাপ মাফ হয়।

এ গ্রামের সবাই দরিদ্র, বলতে গেছে হতদরিদ্র। খেটে খাওয়া মানুষ। নিজেদের দু-মুঠো খাবার জোগাড়েই সবার হিমশিম অবস্থা – অন্যকে সাহায্য করবে কীভাবে। এই রেওয়াজ এ-গ্রামে দেখাও যায় না। সবারই সবকিছু বাড়ন্ত।

আজ বাড়িতে চুলা জ্বালানো হয়নি সারাদিন। পেটের তাড়নায় চুলায় চাল আর আলু সেদ্ধ দেয় আছিয়া। জলডোবা ফোলা দুই চোখে অশ্রু। ভাবে – অমন সুন্দর শরীরডা, নাদুসনুদুস, কেমনে খায় বাঘে – তার বুদ্ধিতে কুলায় না। তার স্বামী যে নেই সেটাও যেন ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না আছিয়া। শুধু স্বামীর মাথাটার কথা মনে হতেই শিউরে ওঠে।

সহসা শাড়ির আঁচল সরিয়ে ব্লাউজের ফাঁকে একটু থুতু দেয় আছিয়া। ভাবে, যে-মানুষটা বছরের তিন মাস একসঙ্গে থাকল, তারে ভালো করে চেনা হয়নি, শরমের ভেদভাও বোঝা হয়নি, চোখ তুলে ভালো করে তাকানোও হয়নি, শুধু বিয়ের দিনক্ষণ হিসাবমতে ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছে সে। সেই মানুষটা চলে গেল তার অভিমান নিয়ে, না পাওয়ার বেদনা নিয়ে, স্বপ্ন পূরণের কথা না বলে। মরে যাওয়ার আগে বাঘে যখন টেনে নিয়ে গেল তখন সে মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিল ছোট ডিঙি নৌকাটায়। ক্ষুধার্ত বাঘটা যখন তাকে খেল, তখন কি দুর্বল শরীরে কোনো শক্তি ছিল না নিজেকে রক্ষা করার? এসব ভাবতে ভাবতে আছিয়ার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না বাতাসে মিলায়।

সারাদিন শুধু তার ছেলেটা কেঁদেছে। সন্ধ্যায় কোলের ছেলে বুকের দুধ পায়নি বলে আছিয়া রান্না করতে বসে। জমিরন শুয়ে আছে ছেঁড়া কাঁথাটা মুড়ি দিয়ে। সে ভাবে, এ-বাড়িতে তার ভাত উঠে যাবে। তার কান্নার দিন শুরু হলো। সে-কান্না দিনে গুমরে গুমরে নিশুতি রাতে হাহাকার মেশানো আর্তনাদে রূপ নেবে। আছিয়ার পরিবারেও বাঘে-খাওয়া মানুষ আছে।

স্বামী হারানোর পর থেকে আছিয়ার জীবন চলে ধুঁকে ধুঁকে। ঘরে চাল নেই। বাইরে গিয়ে কাজ করবে – সেটা চায় না জমিরন। তার মনে হয়, আছিয়া ঘরের বের হলে ঘরে আর ফিরবে না। তার বাপের বাড়ি থেকেও মেয়েকে নিতে এসেছিল। আছিয়ার শাশুড়ি নানা আচার আর নিয়মের বালাই দিয়ে বলেছিল – বছর পার না কইরা স্বামীর বাড়ির বাইর হওন যায় না …।

বাঘের নাম এ-অঞ্চলের মানুষের মুখে শোনা যায় না। সমীহ করে তাকে বলা হয় ‘মামা’। এখানকার মানুষ বুঝে নেয় তা। কেউ বাঘের নাম মুখে আনলেই ভয় পায়, যেন বাঘ খপ্ করে খেয়ে নেবে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা মানুষগুলো বাঘের হাত থেকে বাঁচতে কত কিছুর আশ্রয় নেয়। বনে যাওয়ায় সময় দোয়াদরুদ পড়ে, সুস্থভাবে ঘরে ফিরে আসার জন্য মা ও ঘরের বউ সিন্নি আর বনমোরগ মানত করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীরা দেবদেবীর নামে জপ-তপ করে। তবে এখানকার সব ধর্মের মানুষই মনে করে, সুন্দরবনের রক্ষক বনবিবি। নারীরা তাদের স্বামীর সুস্থতা কামনায় যুগ যুগ ধরে বনবিবিকে সন্তুষ্ট রাখতে গান গায় –

রাতদুপুরে ঘরের চালে পেঁচায় দেলে ডাক

বেন বেলা কেন মাথার পরে কা কা করে কাক।

শোনো বলি মা বনবিবি

বলি গো তোমারে,

শোনো তুমি মা বনবিবি,

অভাগিনী শরণ নেলে

তোমারই চরণে ॥

ওমা তোমারই চরণে।

সুন্দরবনের চারপাশে গড়ে ওঠা গ্রামগুলোর মানুষ বনে যাওয়ার সময় নানা নিয়ম ও কৌশল মেনে চলে। তারা মনে করে, তাদের জীবন কঠিন নিয়মে বাঁধা। তাই তারা দিনক্ষণ দেখে বনবাদাড়ে যায়।

কলিমের দাফনের পরপরই বদলে যেতে থাকে আছিয়ার জীবন। জমিরন বেওয়ার পুরনো একটা সাদা থান এনে তাকে পরিয়ে দেয় প্রতিবেশী কয়েকজন নারী। তার তেল-না-দেওয়া উসকোখুসকো চুল ঢেকে দেওয়া হয় লম্বা ঘোমটা টেনে। ফ্যাকাসে সাদা শাড়ি পরা আছিয়ার মাথায় ঘোমটা আরো লম্বা হয়। খোয়া যাওয়ার ভয়ে নাকের একরত্তি ওজনের সোনার নাকফুলটা খুলে তার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তেকে খোলা চুলে আর কারো সামনে যেতে পারবে না সে। হাতের ক’গাছা কাচের চুড়িও ভেঙে ফেলা হয়। পায়ের স্যান্ডেল নেই, খালি পায়ে হাঁটাচলা। তার স্বামী যখন বনে যায় তখনো এমনই চালচলন ছিল তার। শুধু শাড়িটা ছিল বাংলা ছাপার। স্বামীর মঙ্গল কামনায় ও তার ফিরে আসার অপেক্ষায় এখানকার নারীরা এমনসব নিয়ম মেনে চলে। যতটা না নিজের ইচ্ছায় তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি সমাজের চাপে তারা এসব মেনে চলে। এ সময় কোনো পুরুষের মুখ ও ছায়াও তারা মাড়ায় না। আছিয়া নতুন নামে সমাজের কাছে পরিচিত হয়। সমাজ তার নাম দেয় ‘বাঘবিধবা’। বাঘের খাবার হওয়া স্বামীকে এসব নারী রক্ষা করতে না পারায় তারা বিশেষিত হয় অপয়া, কুলটা, ভাতারখাকি, রাক্ষুসী নামে।

চুলায় পাটকাঠি ঠেসে দিয়ে থুঁতনি হাঁটুতে রেখে চোখের জলের বাঁধ যেন মিশে যায়। গতকাল চালের ছাতু লবণ আর ঝোলা গুড় মিশিয়ে খেয়েছে দুপুরবেলা। রাতভর কিছুই খায়নি পানি ছাড়া। তাতেই জমিরন শুকরান গুজার করেছে। সপ্তাহ হলো আছিয়া স্বামীকে হারিয়েছে। ঠিকমতো খাওয়া নেই। বুকের দুধ অপুষ্ট ছেলেটা পায় না ঠিকমতো। সারাদিন ট্যাঁ ট্যাঁ করে কাঁদে। দেওরের খোঁজ নেই। লোকমুখ জেনেছে গহিন বনে থাকায় কিছুদিন দেরি হবে। তার মনে পড়ে, যাওয়ার দিন স্বামীর কাছে আবদার করেছিল এক ছটাক গরুর মাংস আনার জন্য, ফেরার পথে। রাতে নিজেদের একান্ত সময় কেটেছিল। আহ্লাদী হয়ে স্বামীকে বলেছিল সে-কথা। আলিম বলছিল ঠাট্টা করে, আমার ফুলবানুর লাইগ্যাই যামু বনে। আছিয়া আলিমের বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে লাজুক হাসি হেসেছিল চোখ বন্ধ করে। নিজেকে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মনে হয়েছিল তার।

সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় নোনাজলের কারণে খাওয়ার পানি জোগাড়ে যেতে হয় অনেকটা পথ। চিংড়ির ঘের পার হয়ে সামনে এগোতেই পথে দেখা হয় হরতন বিবির সঙ্গে। এই এলাকায় তিনি নানা কারণে নিন্দিত। নানা কথা চালু আছে তাকে নিয়ে। আছিয়া ভয় পায়। এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু হরতন বলে, সেমাই যাও কেনে, মুই অপয়া নই। তুমিই কও, স্বামীরে মামা নিয়া গেল। আল্লাই কপালে রাখছিল। মোর ক্যান দোষে? মোর জীবনডা ফাঁসি দিছে সকলে। মোর কহন দিন গেইছে কহন রাইত তা ঠাহর করতি পারিনি। খালি যহন সলক হয়, তহন চায়ি দেখতাম রাইত পরিষ্কার হয়ি গেছে। অন্য কামকাজ করতি পারলে লাবলুর বাপ বনে যাতো না।

লবণ-পানির চিংড়ি ঘের না হলি মুইও বিধবা হতাম না।

হরতন কাঁদতে কাঁদতে জানায়, রাত দিন জাল টানা, জাল ধরা, তিনডা ছাওয়াল-পাওয়াল লয়া পার করতিছি দিন-রাইত। বেবাক সমান লাগে। পরের বাড়িত চায়াচিন্তে খাই। কেউ দিছে ফেন, চাউলের খুদকুড়া, চাউলে বা খুদে বেশি পানি দিয়া ভাতের মাড় দিয়া, নুন দিয়া খাওন নাগে। শাশুড়ি বলে, ওলো ভাতারখাকি, শঙ্খিনী, তোর সোয়ামিরে খাইছিস, মোগোও খাবি। যার সোয়ামি যায়, হে কতি পারে কী যায়, মোর চোখের পানি ছাড়া গতি নাই। মোক শিকল পরায়ে রাখে, সলক হওনের আগে খুলি দেয়। কয় – মোর পাপে ছাওয়াল হারায়ছে।

আছিয়া এক অদ্ভুত নির্জীবতা-নির্লিপ্ততা নিয়ে কলসি কাঁখে হরতনের কথা শোনে।

পানি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আছিয়া ভাবে, তার জীবনে এখনো এমন কিছু ঘটেনি। দেওরের ঘরে ফেরার অপেক্ষা করে তার শাশুড়ি। তখন জানা যাবে সংসারের মতিগতি। সদ্যবিধবা আছিয়াও জানে, স্বামী বাউরে গেলে এসব নারী চুল আঁচড়াতে পারে না, চুলে তেলও মাখতে পারে না। তাদের খোলা চুলে চলাফেরা করা বারণ। এ-সময় তারা সাবানও ব্যবহার করতে পারে না। পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। এ-গ্রামের অলিখিত নিয়ম এটাই।

এতকিছু স্ত্রীদের মেনে চলার পরও যখন কারো স্বামী বাঘের আক্রমণে মারা যায়, তখন সব দোষ গিয়ে পড়ে স্ত্রীর ওপর। সমাজ ধরে নেয়, স্ত্রীর ব্রত পালনে কোথাও হয়তো গাফিলতি হয়েছে। তাই স্বামীর মৃত্যুর পর সমস্ত দায় তাকে বহন করতে হয়।

জমিরন বেওয়া আছিয়াকে ডেকে হাত ধরে বলে, এই গেরাম এমন আছিল না, মোরা ভালোই আছিলাম। ১৯৯০ সালের পর থেকে এসব অঞ্চলের চাষের জমিতে লবণ পানি তুইলে অনেক মানুষ চিংড়ি চাষ শুরু করে, আর মোগো কপালও পোড়ে। মোগের স্বামীরা কৃষিকাজ পায় না। মজুরির কাজও পায় না। মোগো কপাল পোড়ে। মোগো ব্যাডারা জাল দিয়া মাছ ধরতো, মধু আইন্যা বাজারে বেচতো, কাঠ কাটতি যাইতো বনে। সবকিছু এই পোড়া প্যাটের লাইগ্যা।

সে আছিয়াকে কাতর কণ্ঠে বলে, বউরে তুই মোরে ফালাইয়া যাইস না, তুই চইল্যা গেলে মাগো মোরে কে রাইন্ধা খাওয়াইবে। মুই না খাইয়া মইরা যাইমুগা। মোরে ছাইড়্যা যাইস না। হারপাই যেন মোর প্যাটে জম্মের খিদা।

ফরিদপুরে কাঁচা রাস্তায় ৬ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫, ২:১১ পিএম
ফরিদপুরে কাঁচা রাস্তায় ৬ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

দেখে বোঝার উপায় নেই, এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন ৬ গ্রামের মানুষ। দেখে মনে হবে ধান চাষাবাদের জন্য কোনো কৃষক তার জমি হালচাষ করে রেখেছেন। আসলে এটা হালচাষের কোনো জমি নয়। এটা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের টিটা গ্রামের একটি রাস্তা। এ রাস্তা দিয়ে টিটা, টিটা পানাইল, ইকড়াইল, শিকারপুর, মালা ও বড়ভাগসহ অনেক গামের কৃষকরা তাদের ফসলা আনা-নেওয়া করে গ্রামীণ এই রাস্তা দিয়ে। এ সমস্য দীর্ঘদিনের।

বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিরা রাস্তায় কিছু অংশ ইটের সলিং দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করলেও অবশিষ্ট ৫০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কয়েক বছরে পাকা হয়নি এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এ জন্য দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ। রাস্তাটি দ্রুত পাকাকরণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

প্রায় ১৩ বছর আগের ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে রাস্তাটি হলেও এখনও পাকাকরণ হয়নি। বৃষ্টির মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। টিটা চরাঞ্চলের একমাত্র যাতায়াতের সড়ক এটি। এই সড়ক দিয়ে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।

আশপাশের অনন্ত ৬ গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক এই সড়ক দিয়ে তাদের ফসল আনা-নেওয়া করে। এখন চলছে পাট কাটার মৌসুম। সড়ক বেহাল হওয়ার জন্য অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে পাট কাটতে পারছে না। সামান্য বৃষ্টি হলে কাদাপানিতে রাস্তা একাকার হয়ে যায়। পানিবন্ধতায় কোথাও কোথাও রাস্তা তলিয়ে কাদায় ভাগাড়ে পরিণত হয়।

টিটা গ্রামের গৃহিনী সেলিনা বেগম জানান, কয়েক দিন রান্না করার গ্যাস ফুরিয়ে গেছে, চাল ও প্রায় শেষের দিকে। এ রাস্তা দিয়ে কোনো ভ্যান চলাচল করতে পারে না। এমনকি পায়ে হেঁটে মানুষ যাতায়াত করতে পারে না। এ জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার ক্রয় করতে পারছি না। নানাবিধ সমস্যা হচ্ছে।

স্থানীয় টিটা শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাব্বানী মিয়া জানান, এ বছর বৃষ্টি শুরুতে কাঁচা সড়কটিতে ছোট-বড় গর্ত আর খানাখন্দ হওয়ার পর স্কুলে যেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। এরপর আর এ সড়ক দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। এদিকে আমার পাইভেট পড়া বন্ধ রয়েছে। রাব্বানীর মত এমন অনেক ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী রয়েছে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় করে।

টিটা গ্রামের কৃষক নাছির মিয়ার প্রায় তিন একর জমিতে রয়েছে পাট। তার ভাষ্য পাট কাটার উপযোগী হয়ে পড়েছে তবে রাস্তার সমস্যার জন্য পাট কাটতে ভয় পাচ্ছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সাইদে পটু মিয়া বলেন, টিটা ভাসমান সেতু পাড় থেকে টিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কটি ইট বিছিয়ে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। অবশিষ্ট যে অংশ এখনও কাঁচা রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারা ইট বিছিয়ে রাস্তা করে দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিয়া আসাদুজ্জামান একই কথা বলেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগত হোসেন সৈকত বলেন, বৃষ্টি মৌসুমে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখে রাস্তাটি সংস্কার করে পাকাকরণের ব্যবস্থা করা হবে।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল জানিয়েছেন সরেজমিন গিয়ে সংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে কথা বলে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে সালথায় মানববন্ধন 

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৫১ পিএম
সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে সালথায় মানববন্ধন 

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফরিদপুরের সালথায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।

শুক্রবার (০৮ আগস্ট ) বিকেলে সালথা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সেলিম মোল্লার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, সালথা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির মোল্লা, সহ-সভাপতি হারুন-অর-রশীদ, সাইফুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক শরিফুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক লাভলু মিয়া, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পারভেজ মিয়া, সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক আকাশ সাহা, কার্যনির্বাহী সদস্য এম কিউ হুসাইন বুলবুল, বিডি২৪লাইভ-এর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি মো. এহসানুল হক মিয়া প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা তুহিন হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এসময় বক্তারা বলেন, তুহিন হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কুপিয়ে ও জবাই করে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

বিস্ফোরক মামলা : ভাঙ্গায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৪৭ পিএম
বিস্ফোরক মামলা : ভাঙ্গায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (০৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় থেকে ভাঙ্গা থানার একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একইদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাছাড়া ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সে কিছুটা গা ডাকা দিয়েছিল। তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর আস্তাভাজন ছিলেন।

এবিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, শুক্রবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ভাঙ্গা থানাযর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।