খুঁজুন
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ, ১৪৩২

গুম ও আয়নাঘরের একাল সেকাল

এহ্সান মাহমুদ
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩৫ এএম
গুম ও আয়নাঘরের একাল সেকাল

আমার জন্মের ১৫ মাস পরের এক সকালে আব্বু নিখোঁজ হয়েছিলেন। আম্মু আর ছোট মামা বরিশালের মুলাদী থানায় এই ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেটি না করতে পেরে ফিরে এসেছিলেন। ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। আমার স্কুলশিক্ষক বাবার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তখন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন দিন দিন তীব্র হচ্ছে; এমন সময়ে গ্রামের একজন স্কুলশিক্ষক গুম হয়ে গেলেন।

সেই ঘটনার তিন দশক পর বাংলাদেশ আবারও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অভিজ্ঞতা পেল। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হলেন শেখ হাসিনা। তারপরই উন্মোচিত হলো আয়নাঘর। আওয়ামী লীগ আমলে গুম হয়ে থাকা কেউ কেউ ফিরে এলেন। অনেকেই ফিরলেন না। যারা ফিরেছেন, তাদের বক্তব্য, পরিবারের সদস্যদের স্বজন ফিরে পাওয়া হাসিমুখের ছবি আমরা টেলিভিশনের পর্দায় ও খবরের কাগজে দেখেছি। বিপরীতে যাদের স্বজন ফিরে আসেনি, তাদের দীর্ঘশ্বাস কি আমরা টের পাচ্ছি? সম্ভবত পাচ্ছি না। যেমনটা পাইনি সাজেদুল ইসলাম সুমনের স্বজনের পরিবারের দীর্ঘশ্বাস।

সাজেদুল ইসলাম সুমন ছিলেন ঢাকা মহানগরের এক ওয়ার্ড বিএনপির নেতা। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। সেদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও পাঁচজন। নিখোঁজের কিছুক্ষণ পরই খবর পায় পরিবার। এর পর আশপাশের থানা, ডিবি অফিস, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তারা। কিন্তু কোনো খোঁজ মেলেনি।
সুমনের দুই মেয়ে। বাবা নিখোঁজের সময় ছোট মেয়ের বয়স ছিল ২ বছর। একজন নিখোঁজ মানুষের সন্ধানে থানা-পুলিশে গিয়ে যে কাজের কাজ কিছু হয় না, তার প্রমাণ তো আমাদের পরিবার থেকেই পেয়েছিলাম। রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা যে বাহিনী বা সংস্থার, তার কাছেই উল্টো নাগরিকের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়লে মানবিক রাষ্ট্রের ধারণা বাধাগ্রস্ত হয়।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিগত আমলে গড়ে ওঠা টর্চার সেল, যা ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত, সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। সেই পরিদর্শন টিমে রাখা হয়নি সুমনের পরিবারের কাউকে। অথচ আমরা জানি, সুমনের বোনের প্রায় একক চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনটি, যেটি কাজ করে গুম হওয়া পরিবার নিয়ে।
৩০ বছর আগে মফস্বলের একটি থানা মুলাদী কিংবা বর্তমানের রাজধানী ঢাকার টর্চার সেলের সামনে গুমের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটে। আমরা দেখতে পাই, রাষ্ট্রের চরিত্রের কোনো বদল হয় না। তাহলে এত এত শহীদের জীবন, পঙ্গু মানুষের আর্তনাদ কি বৃথা?

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গোপন বন্দিশালায় বিনা বিচারে মানুষকে আটকে রাখা হতো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেকে বন্দিশালা থেকে মুক্তি পান। গুমের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার গত ২৭ আগস্ট গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করে। সেই কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটটির বেশি গোপন বন্দিশালা শনাক্ত করেছে কমিশন। তাদের ভাষ্য, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র‍্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের মতো সংস্থাগুলো এসব গোপন বন্দিশালা পরিচালনা করত।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার ঢাকার তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেছেন। এগুলো রাজধানীর আগারগাঁও, কচুক্ষেত ও উত্তরায় অবস্থিত। বন্দিশালা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের একটা নমুনা প্রতিষ্ঠা করে গেছে। আমাকে নতুন করে বলতে হবে না। বর্ণনা দিতে গেলে বলতে হয়– আয়নাঘরের ভেতরে খুবই বীভৎস দৃশ্য। এখানে মনুষ্যত্ববোধের কিছু নেই। যা হয়েছে তা নৃশংস’ (সমকাল, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।

এ ধরনের নৃশংস ঘটনা থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি না? পরিতাপের বিষয়, সম্ভবত আমরা কেউই শিক্ষা নিতে আগ্রহী না। নাগরিকের নিরাপত্তা, সুশাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখনও তাই অধরা রয়ে যায়। এমনকি এই পরিবারগুলোর প্রতি ন্যূনতম যে মানবিক আচরণ করার কথা, সেটাও আমরা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছি।
গুমের শিকার হয়েছেন যারা, তাদের পরিবারগুলোর উদ্দেশে প্রতিবছর ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ‘গুম’ বলতে এখন বোঝানো হয়– সরকারের কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া। বেসরকারি কোনো গোষ্ঠী বা অপরাধী চক্রের তুলে নেওয়া সাধারণত ‘অপহরণ’ আখ্যা পায়।

গুমের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯২ সালে ৪৭/১৩৩ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে। তাতে বলা হয়েছে, সরকারের কোনো পর্যায় বা কোনো শাখার কর্মকর্তা অথবা সরকারের পক্ষে কিংবা তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন অথবা সম্মতি নিয়ে কোনো বেসরকারি সংগঠিত গোষ্ঠী কাউকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার, আটক বা অপহরণ করে তাঁর ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করলে এবং তাঁকে আইনের পরিধির বাইরে রেখে দিয়ে তাঁর অবস্থান জানাতে অস্বীকার করাই হচ্ছে গুম।

কেউ মারা গেলে অথবা কাউকে হত্যা করা হলে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। স্বজনদেরও ধীরে ধীরে কষ্ট কমতে থাকে। মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা সম্পদের উত্তরাধিকার লাভ করেন। কিন্তু গুমের শিকার হলে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ভুক্তভোগী বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন– শুধু এই তথ্যটুকু না পাওয়া প্রতিমুহূর্তে তাদের যন্ত্রণায় বিদ্ধ করতে থাকে। গুমের ঘটনা খুনের চেয়েও খারাপ অপরাধ। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের গত বছরের আগস্টের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাতশর বেশি মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।

৫ আগস্টের পরে ‘নতুন বাংলাদেশ’ কথাটি বেশ উচ্চারিত হচ্ছে। আমরা ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চাই, এটা সত্যি। তার আগে নিশ্চিত করা দরকার, ইতোমধ্যে ঘটা ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পরিচালিত ফেসবুক পেজে আয়নাঘরের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। আয়নাঘরে বন্দিদের কাহিনি এখন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে। দেখা গেল একাধিক বন্দির সাক্ষাৎকার। তিক্ত, ভয়ানক ও রোমহর্ষক ঘটনার যে বিবরণ তাতে উঠে এসেছে এবং এসব বর্ণনাকালে একেকজন বন্দির চোখেমুখে যে আতঙ্ক প্রকাশমান, তা মর্মন্তুদ। ‘নতুন বাংলাদেশে’ আমরা এমন মর্মন্তুদ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। একই সঙ্গে আগের ঘটনার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে এই বার্তা দিতে হবে– মানবতাবিরোধী এসব অপরাধের বিচার থেকে কেউ রেহাই পাবে না। বিচার নিশ্চিত হলেই ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সহজ হবে। ভবিষ্যতের সহজ কাজটির জন্য এখন দরকার একটি যথাযথ আইনি ও বিচার প্রক্রিয়া। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি এই আস্থাটুকু রাখতে চাই।

এহ্‌সান মাহমুদ: সহকারী সম্পাদক, সমকাল; কথাসাহিত্যিক

বোয়ালমারীতে বালুমহল ইজারা বাণিজ্যের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত-৩

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৩৭ পিএম
বোয়ালমারীতে বালুমহল ইজারা বাণিজ্যের ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ, আহত-৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে বালুমহল ইজারা বাণিজ্যের (নিকো) টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে ৩ জন আহত।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। এ নিয়ে অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে।

জানা যায়, বোয়ালমারী উপজেলাধীন মধুমতী নদীর বালুমহল ইজারা দরপত্র বাণিজ্যের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এ সংঘর্ষ হয় ।

প্রতি বছরের ন্যায় ১৪৩২ সালের ১ বছরের জন্য উপজেলাধীন লঙ্কারচর বালুমহল ইজারার দরপত্র আহ্বান করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়।
এতে প্রায় ১৫ টি দরপত্র বিক্রয় হলেও দরপত্রদাতাদের মাঝে সমঝোতার ভিত্তিতে গোপন নিলাম ডাকের মাধ্যমে ক্রয়বিক্রয় সম্পাদিত হয়। সমঝোতার ভিত্তিতে দরপত্রদাতাদের মাঝে টাকা ভাগাভাগির কথা থাকলেও নিকো-বোর্ড দরপত্র দাতা জুয়েল বিশ্বাসকে পাওনা টাকা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । এ নিয়ে বুধবার রাতে বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদের সামনে মা ফার্মাসি মার্কেট চত্বরে এক শালিশ বৈঠক বসে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ, বিএনপি নেতা মহসিন আলম চান, মিরাজ মৃধাসহ স্থানীয়রা। শালিশ বৈঠক শুনানির সময় দরপত্র দাতা আঁধারকোঠা গ্রামের মঈনুদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে জামায়াতে কর্মী জুয়েল বিশ্বাসের কোমরে থাকা একটি দেশীয় অস্ত্র দেখে ফেলে লোকজন। এসময় অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে জুয়েল বিশ্বাসের সাথে ধস্তাধস্তি হয় স্থানীয়দের। পরে জুয়েলের নেতৃত্বে ২৫/৩০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মা ফার্মাসিতে আক্রমণ চালায়। এতে বোয়ালমারী সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যা ও মা ফার্মাসির কর্ণধার রিয়াজ মৃধা মারাত্মক আহত হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে কাঠের বাটাম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আঁধারকোঠা গ্রামের একদল যুবক আক্রমণ চালায়। এসময় মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নেওয়া রাসেল আহমেদের ছোট ভাই কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করে আক্রমণ কারিরা। আক্রমণকারীদের প্রতিহত করতে গিয়ে আহত হন রিয়াজ মৃধা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। রিয়াজ মৃধাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও রবিন মোল্যা বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
জুয়েল বিশ্বাস জানান- বালুমহলের নিকোর ৪৫ হাজার টাকা জমা ছিলো রাসেল আহমেদ ও মিরাজ মৃধার নিকট, সে টাকা চাওয়ায় আমাকে মা ফার্মাসিতে ডেকে নেয় রাসেল আহমেদ। সেখানে গেলে তারা টাকা না দিয়ে টালবাহানার আশ্রয় নেয় ও আমার উপর আক্রমণ চালায়। খবর পেয়ে আমার গ্রামের ভাইব্রাদার আমাকে উদ্ধার করতে ছুটে আসে। সেখানে রাসেল আহমেদের ভাই রবিনকে পেয়ে তাকে মারধর করে।

এ বিষয়ে পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমেদ বলেন – জামায়াতে ইসলামীর ক্যাডার জুয়েল বিশ্বাস আমার নিকট চাঁদা দাবি করে । এ বিষয়ে জানতে মহসিন আলম চান ও মিরাজ মৃধা তাকে ডাকলে সে পরিকল্পনা করে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রস্তুত রেখে কোমরে অস্ত্র নিয়ে আসে। লোকজন তা দেখে কেড়ে নিলে আগে থেকে ওতপেতে থাকা তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালায়, জীবন রক্ষার্থে আমি পালিয়ে গেলেও আমার ছোট ভাই মা ফার্মাসিতে আশ্রয় নেয়। সেখানে ঢুকে সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে।

বিএনপি নেতা মিরাজ মৃধা বলেন – রাসেলের সাথে জুয়েল বিশ্বাসের দেনাপাওনা নিয়ে ফোনে কথা-কাটাকাটি হয়, পরে সমঝোতার জন্য আমার ফার্মাসিতে আসে জুয়েল। কথা বলার সময় তার কোমরে একটি ধারলো অস্ত্র দেখে লোকজন তা কেড়ে নেয়। এসময় সে পালিয়ে গিয়ে কিছু সময় পর ২৫/৩০ জনের একটি দুর্বৃত্ত দল নিয়ে আমার ফার্মাসিতে অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় আমার বড় ভাই ও ছাত্রদলের কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি রবিন মোল্যার উপর হামলা চালায় এতে মারাত্মক আহত দু’জন । আক্রমণকারীরা ফার্মাসিতে ভাঙচুর ও লুটপাটও চালায় । এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

বোয়ালমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন- খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনো পক্ষই অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে

‘ফরিদপুরে পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে বৃদ্ধ খুন’ থানায় হত্যা মামলা, তিনজন আটক

ফরিদপুর ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৫২ এএম
‘ফরিদপুরে পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে বৃদ্ধ খুন’ থানায় হত্যা মামলা, তিনজন আটক
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় পাওনা টাকা আদায়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে মো. আব্দুল হালিম মোল্লা (৬১) নামে এক বৃদ্ধের জিহ্বা কর্তনের ঘটন্য়া দুইদিনের মাথায় চিকিৎসাধীন তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের একমাত্র মেয়ে রিনা বেগম (৩৭) বাদি হয়ে বুধবার সকালে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলফাডাঙ্গা থানার ওসি হারুন অর রশিদ।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ আব্দুল হালিম মোল্যা মারা যান। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
নিহত আব্দুল হালিম মোল্লা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম বাজারে নৈশপ্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি পাড়াগ্রামের মৃত আবু সাঈদ মোল্লার ছেলে। নিহত ব্যক্তির একটি মাত্র মেয়ে রিনা বেগমের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় এবং স্ত্রী মারা যাওয়ায় তিনি একাই বাড়িতে বসবাস করতেন।
মামলা ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মো. আব্দুল হালিম মোল্লা (৬১) তার মা তছিরণ নেছা ওরফে ছুটু বিবিকে (৭৫) নিজের ধার দেওয়া টাকা আদায়ের কথা বলে গত ১২ এপ্রিল বিকেলে আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাড়াগ্রাম নিজ বাড়ি থেকে বের হন। পরেরদিন ১৩ এপ্রিল সকালে পাড়াগ্রামের লাল্টুর পরিত্যক্ত জমিতে ওই গ্রামের নুর ইসলাম (৫৮) নামে এক ব্যক্তি আব্দুল হালিম মোল্যাকে জিব্বা কাটাসহ জখম অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ডাক চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে হালিম মোল্যাকে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ বাবলুর সহায়তায় আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য আলফাডাঙ্গা হাসপাতাল থেকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালের দিকে তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় বুধবার সকালে নিহতের একমাত্র মেয়ে রিনা বেগম (৩৭) বাদি হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০৯। মামলার পর সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই এলাকার তিনজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনার দিন আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আবিদ হোসেন জানান, বৃদ্ধ আব্দুল হালিম মোল্যাকে জিব্বা কাটা অবস্থায় হাসপাতালে আনার পর অবস্থার অবনতি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি গুরুতর জখম ছিলেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে আলফাডাঙ্গা থানার ওসি হারুন অর রশিদ বলেন, খবর পেয়েই ওইদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আব্দুল হালিম মোল্যার মেয়ে রিনা বেগম বাদি হয়ে থানায় আজ হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলার এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। বাদি কারো নাম উল্লেখ করেননি। মামলার পর ঘটনাস্থল এলাকার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। হত্যার রহস্য উৎঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। আশা করি দ্রুতই প্রকৃত আসামিদের আমরা গ্রেপ্তার করতে পারবো।

ফরিদপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:১৫ এএম
ফরিদপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দুদকের অভিযান
নানা অনিয়মের অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি দল।
অভিযানকালে সিটিজেন চার্টার না থাকাসহ নানা অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ায় কিছু রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়। সেগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর পাঠানো হবে বলে জানান দুদক কর্মকর্তা।
দুদক, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপ-সহকারি পরিচালক মো. কামরুল হাসান জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চরভদ্রাসন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে সিটিজেন চার্টার পাওয়া যায়নি। এছাড়া অনিয়মের কিছু রেকর্ডপত্র জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর পাঠানো হবে।