খুঁজুন
মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১ আশ্বিন, ১৪৩২

দেশের রাজনীতিতে ঘটনাবহুল ৫ তারিখ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম
দেশের রাজনীতিতে ঘটনাবহুল ৫ তারিখ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর গত ৫০ বছরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো দেশের রাজনীতি ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদল এনে দিয়েছে। রাষ্ট্র গঠনের পর রাজনৈতিক হত্যা, সামরিক অভ্যুত্থান, ক্ষমতা দখল, নির্বাচনি সহিংসতাসহ ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই রয়েছে।

তবে ২০১৩ থেকে ২০২৫ সাল অবধি দেশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মধ্যে একটা জায়গায় কাকতালীয় মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আর তা হলো ক্যালেন্ডারের ৫ তারিখ।

জেনে নেওয়া যাক এই সময়ের মধ্যে যেসব ঘটনা গভীর দাগ কেটেছে—

৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ : গণজাগরণ মঞ্চ

বাংলাদেশে যেসব আন্দোলন হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ আলোচিত, সমালোচিত এবং বিতর্কিত একটি নাম। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ওই আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিছু অনলাইন অ্যাকিভিস্ট এ আন্দোলন শুরু করলেও খুব দ্রুত এটি রাজনৈতিক মাত্রা পায়।

২০১৩ সালের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি সকালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই রায়ে সন্তুষ্ট না হয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সেদিন বিকেলে ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা শাহবাগে জড়ো হয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। যদিও সে আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থন দিলেও পরে তাদের সঙ্গেও মতবিরোধ তৈরি হয়।

৫ মে ২০১৩ : শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি

ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে আলোচনায় এসেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ এবং নারী নীতির বিরোধিতা করাসহ ১৩ দফা দাবি তুলে হেফাজতে ইসলাম ওই কর্মসূচি নিয়েছিল। ২০১৩ সালের ৫ মে দিনভর উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়িয়েছিল সংগঠনটির ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। সেই রাতে রাজধানীর অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক ভীতিকর পরিবেশ। শেষ পর্যন্ত পুলিশ–র‍্যাব ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির অভিযানে খালি করা হয়েছিল শাপলা চত্বর।

২০১৩ সালের ৫ মে দিনের সহিংসতা এবং পরদিন ৬ মে দুই দিনে সারা দেশে সহিংসতায় সরকারের পক্ষ থেকে নিহতের সংখ্যা ১৩ বলে জানানো হয়। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা সংঘটিত সেই নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের একটি তথ্যানুসন্ধান মিশন পরিচালনা করে এবং ৬১ জন নিহত উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

৫ জানুয়ারি ২০১৪ : একতরফা সংসদ নির্বাচন

বাংলাদেশের ইতিহাসে একতরফা নির্বাচনের যেসব নজির রয়েছে তার মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্যতম। সে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামী সে নির্বাচন বয়কটের প্রেক্ষাপটে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪৬টি আসনে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার যখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশের পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর করা এবং অন্যদিকে বিরোধী দলের ডাকা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি।

নির্বাচনের ১০দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল ১৫ দিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হয়। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছিল, ততই সহিংসতাও বাড়তে থাকে। নির্বাচনের আগে ৩৮টি জেলায় প্রায় দেড়শর মতো কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় ব্যালট পেপার ও নির্বাচন সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এবং অনেকে হতাহত হন।

৫ জুন ২০২৪ : কোটা নিয়ে আদালতের রায়

সর্বপ্রথম বড় ধরনের কোটা সংস্কার আন্দোলন হয় ২০১৩ সালে। এরপর ২০১৮ সালে আন্দোলনের পর আন্দোলনকারীদের পক্ষে পরিপত্র ঘোষণা করা হয়। কিন্তু হাইকোর্ট কর্তৃক এই পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করায় ২০২৪ সালে পুনরায় আন্দোলন শুরু হয়। প্রতিবার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ পুলিশ ও ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়।

এবার আন্দোলন শুরু হয় গত ৫ জুন। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। ঢাকায় শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন এবং শহীদ মিনারে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

২ থেকে ৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে সংগঠিত হয় এবং সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের সরকারি বিজ্ঞপ্তি পুনর্বহালের দাবিতে টিএসসি এলাকায় একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

পরের কয়েক দিন দেশের অন্যান্য অংশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে মিছিল-সমাবেশ করে।

পরে ৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ৫ জুন দেওয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন ৬ জুলাই শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেন।

৭ জুলাই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে ঢাকা শহর স্থবির হয়ে যায়। এদিন ছয়টির বেশি ব্যস্ত সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ বিক্ষোভকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। এরপর অবরোধ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে।

১৪ জুলাই সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা করে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন সন্ধ্যায় একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বিতর্কিত মন্তব্য করেন, মন্তব্যে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’র সঙ্গে তুলনা করেন। এই মন্তব্যের পরই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার’।

১৬ জুলাই ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন নিহত হয়। সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের হল খালি করতে বলা হয়েছে। সরকার ছয়টি জেলায় বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) মোতায়েন করে। সেদিন শিক্ষার্থীরা ঢাবি ও রাবির অধিকাংশ হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুর করে। এদিকে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এই মৃত্যু এবং মুগ্ধসহ আরও কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনের গতিপথ ভিন্ন দিকে মোড় নিলে সরকার বেকায়দায় পড়ে যায়। পরে ছাত্ররা ১ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে অনড় থাকেন।

৫ আগস্ট ২০২৪ : শেখ হাসিনার পতন

সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা ছিল সোমবার (৫ আগস্ট)। এদিন সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতা রাজধানী ঘিরে ফেললে এক দফা দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পদত্যাগ করে বেলা আড়াইটার দিকে থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। হেলিকপ্টারটি ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের ক্ষমতার অবসান হয়। এদিন ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে উল্লাস করে।

৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ : ধানমন্ডি ৩২

সম্প্রতি ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণা দেন। এর পাল্টা জবাবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিলের’ ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পূর্বঘোষিত ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ছাত্র-জনতার জমায়েত শুরু হয়।

রাত ৮টার দিকে ৩২ নম্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর শুরু করেন। ভাঙচুর চালানোর এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

এ সময় ওই এলাকায় বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী জড়ো হতে থাকেন। তারা মিছিল করেন এবং স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রাত থেকে বুলডোজার দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের তিনতলা বাড়িটির সামনের অংশ অনেকটাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৩২ পিএম
প্রশাসনের আশ্বাসে ভাঙ্গায় আগামী শনিবার পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত

ফরিদপুরে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ও পুরোনো সীমানা বহালের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচি আগামী শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এ ঘোষণা দেন তারা।

জানা যায়, জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ও দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে মানুষের ভোগান্তি যাতে না হয় এজন্য আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পর থেকে রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা। সে অনুযায়ী আগামী বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত কোন অবরোধ থাকবে না বলে জানায় আন্দোলনকারী সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষ।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কাউকে হয়রানি করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। এ সময়, আগামী রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) তাদের ৫ দফা দাবি মেনে নেয়া না হলে, পুনরায় লাগাতার আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

 

ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:২৮ পিএম
ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে ইসিকে ডিসির চিঠি

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধ-রেলপথ বন্ধের পর সহিংস ঘটনাও ঘটে। এরপর ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানা পুনর্বহালে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যা।

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন বরাবর এ চিঠি দেন ডিসি।

চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর-০২ এবং ফরিদপুর-০৪ এর সংসদীয় সীমানা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

ওই তালিকায় ফরিদপুর- ৪ এর অন্তর্গত ২টি ইউনিয়ন, আলগী ও হামিরদী জাতীয় সংসদীয় আসন ফরিদপুর-২ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার ফলে গত ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে থাকে।
ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, সর্বশেষ আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হবার কারণে সাধারণ জনগণকে তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। বিক্ষোভকারীরা তাদের দাবির সমর্থনে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।

 

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ফরিদপুর-০৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) সংসদীয় আসনের ভাঙ্গা থেকে আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-০২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সংসদীয় আসন পুনঃনির্ধারণের বিষয় দুইটি সংসদীয় আসনের জনগণ মেনে নিতে পারেনি। ওই দুইটি আসনের সর্বস্তরের জনগণ এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মর্মে জানা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা না হলে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ণিতাবস্থায়, জাতীয় সংসদীয় আসন ২১২ ফরিদপুর- ২ (নগরকান্দা ও সালথা) এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার ২টি ইউনিয়ন আলগী ও হামিরদীকে জাতীয় সংসদীয় আসন ২১৪ ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন) এর মধ্যে পুনরায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হলো।

এর আগে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সংসদীয় আসন পুনর্বিন্যাসের দাবিতে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ জনতা ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে থানা, ইউএনও অফিস, নির্বাচন অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

৪ সেপ্টেম্বর গেজেটের মাধ্যমে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় যুক্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই ভাঙ্গায় মহাসড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন স্থানীয় জনতা।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তান্ডব : পুলিশের ৮ গাড়ি ও ১৯ মোটরসাইকেল ভাঙচুর

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ-আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে থানা, হাইওয়ে থানা ও উপজেলা পরিষদে আগুন-হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, আন্দোলনকারীরা প্রথমে উপজেলা পরিষদের হল রুমে ঢুকে শতাধিক চেয়ার, ১০টি ফ্যান ও ৩৫ টির বেশি লাইট ভাঙচুর করে। এরপর তিনতলা বিশিষ্ট উপজেলা পরিষদ ভবনের প্রতিটি তলায় সাতটি করে মোট ২১টি কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষের কাচ ও আসবাবপত্র ভাংচুর করা হয়। এসময় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও অফিসার্স ক্লাবের গ্যারেজে থাকা সাতটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা অফিসার্স ক্লাবও ভাঙচুর করা হয়।

এদিকে, ভাঙ্গা থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশের তিনটি গাড়ি ও একটি বড় রিজার্ভ ভ্যান ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। থানা চত্তরে থাকা অন্তত চারটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। থানার ব্যানার ও ভবনের কাচ সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করা হয়।

অপরদিকে, ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় আন্দোলনকারীরা ব্যাপক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। আন্দোলনকারীরা চারটি পিক-আপ, একটি রেকার, একটি জলকামান গাড়ী, আটটি মোটরসাইকেল, একটি এম্বুলেন্স ও দুইটি আলামতের গাড়ী ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

ভাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, থানা, হাইওয়ে ও উপজেলায় ভাঙচুরের সময় লোকজন হঠাৎ করে রামদা-লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। ওইসব অস্ত্র দিয়ে তাণ্ডব চালায় এবং পেট্রল দিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর এসব করতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, হামলা-ভাংচুরের সময় কয়েকজন কনস্টেবলকে কৌশলে থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর আমরা কয়েকজন থানার রান্না ঘরের পাশে একটি বাথরুমে আশ্রয় নেই। হামলাকারীরা গাড়ী, মোটরসাইকেলসহ অফিসের ল্যাপটপ, টিভি থেকে শুরু করে এমন কোথাও নেই যে ভাংচুর করতে বাকি রেখেছে। তারপরও বিস্তারিত দেখে পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য জানানো যাবে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মিজানুর রহমান এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে আলগী ও হামিরদী নামে দুটি ইউনিয়ন কেটে নিয়ে ফরিদপুর-২ আসনের নগরকান্দায় সংযুক্ত করার প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করে আসছেন স্থানীয় জনতা। তারা আসনগুলোর পূর্বের অবস্থায় বহাল চান। আন্দোলনের অংশ হিসেবে রোববার থেকে টানা তিন দিন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সোমবার দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি চলছে। বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। এরপর ভাঙ্গা উপজেলা সদরে এসে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়।