খুঁজুন
সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৯ আষাঢ়, ১৪৩২

৩৩ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য

মেহেদী হাসান
প্রকাশিত: সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
৩৩ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য

শিক্ষক সংকটে ধুঁকছে দেশ। বর্তমানে সারা দেশে ৩৩ হাজারের বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক এন্ট্রি লেভেলের সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য। অথচ দেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করে এসব প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষকসংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বড় পরিসরে শিক্ষক নিয়োগে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য পদে প্রায় ১ লাখ শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। জানা গেছে, আজ সোমবার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে। তবে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২২ জুন থেকে। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞপ্তির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। টেকনিক্যাল কোনো জটিলতা না থাকলে নির্ধারিত তারিখেই এটি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ।

জানা গেছে, এবারের গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের একটি বড় অংশ অংশ নেওয়ার সুযোগ পেলেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকছে। এনটিআরসিএর নীতিমালা অনুযায়ী, ৩৫ বছরের বেশি বয়সী নিবন্ধনধারীরা এই নিয়োগে আবেদন করতে পারবেন না। এছাড়া যেসব প্রার্থীর নিবন্ধন সনদ তিন বছরের বেশি সময় আগে পাওয়া, তারাও এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হবেন না। এ কারণে গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় থাকা নিবন্ধন সদনধারী দেড় লাখ প্রার্থী আবেদনেরই সুযোগ পাবেন না। স্নাতক-স্নাতকোত্তর করা তরুণ-তরুণীরা নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ‘নিবন্ধন সনদ’ অর্জন করেছেন। তার পরও দুই শর্তের কারণে আবেদনবঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে এনটিআরসিএ সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালায় বয়স-সংক্রান্ত বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। আমরা এমপিও নীতিমালার বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না।’

অন্যদিকে, এনটিআরসিএর ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি দেশের শিক্ষা খাতে অন্যতম বৃহৎ নিয়োগ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। পদের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তবে এবার তা আরও বড় পরিসরে হচ্ছে। আবেদনকারীদের এনটিআরসিএর নির্ধারিত ওয়েবসাইটে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে হবে ২২ জুন থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে। আবেদনের জন্য প্রার্থীদের অবশ্যই বৈধ শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে এবং বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। এবারের নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো কার্যক্রম পরিচালিত হবে এনটিআরসিএর নিজস্ব সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে। এ ব্যবস্থায় প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই, প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিলিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুপারিশ তৈরি করা হবে, যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

‘যোগ্য ও দক্ষ’ শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। সময়ের পরিক্রমায় ক্ষমতা বাড়লেও চাহিদা মতো শিক্ষক সরবরাহ করতে পারছে না সংস্থাটি। বছরের পর বছর এ সংকট চলায় শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফেনীর ছাগলনাইয়ার পূর্ব দেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬টি পদের মধ্যে ছয়টিই শূন্য। এগুলোর মধ্যে চারটি ২০২১ সালের মার্চ থেকে, একটি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এবং অন্যটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শূন্য রয়েছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকের সাতটি পদ শূন্য। এর মধ্যে ছয়টি পদ ২০২০ সাল থেকেই শূন্য, আরেকটি গত বছরের মে মাস থেকে খালি রয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের ৩১ মার্চ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শূন্যপদ ছিল ৪৩ হাজার ২৮৬টি এবং মাদ্রাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরিপ্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০টি। পরে গত ২১ আগস্ট প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১৯ হাজার ৫৮৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগে সম্মতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৭৭ হাজার ৫০০ পদ ফাঁকা ছিল। এছাড়া চলতি বছরে অবসরের কারণে শূন্য হয় আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার পদ। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও দেয়। এরপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে।

নিয়োগ হয় যেভাবে : বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজে শিক্ষক হতে চাইলে অবশ্যই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ থাকতে হয়। একসময় ঐ সনদধারীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগের যাবতীয় কাজ করত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। স্থানীয় সংসদ সদস্য বা উপজেলা চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন এসব পর্ষদের বিরুদ্ধে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’সহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে। এই বাণিজ্য ঠেকাতে ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে। তাতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আসে। ঐ বছরের ৩০ ডিসেম্বর নতুন নিয়মের পরিপত্র জারি করা হয় ; যাতে বলা হয়—এনটিআরসিএ প্রতি বছর মেধার ভিত্তিতে যে প্রার্থীকে সুপারিশ করবে, তাকেই নিয়োগ দিতে হবে পরিচালনা পর্ষদকে। ফলে নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ আর থাকেনি পরিচালনা পর্ষদের হাতে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদ পেতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে অন্তত ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর; এ সনদধারীরা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ১ হাজার টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এ আবেদনে একজন প্রার্থী নিজ বিষয়ে ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে পারেন। নিবন্ধন পরীক্ষায় ঐ প্রার্থীর পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে তাকে ঐসব প্রতিষ্ঠানের একটিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপত্র নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদান করে থাকেন।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৪ জুন আমাদের বোর্ড সভায় ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থাৎ ১৬ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে এটি গত ৪ জুন সিদ্ধান্ত হয়েছে। নতুন করে আমরা কিছুই করছি না। এখন শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বাকি।’ ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা কত এমন প্রশ্নের জবাবে মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের মোট শূন্য পদের সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজারের মতো। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নন-এমপিও এবং অতিরিক্ত চাহিদা দিয়েছেন। এগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। ৯০ হাজারের বেশি পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’

এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) নেতারা শিক্ষকসংকট পরিস্থিতির জন্য এনটিআরসিএকেই দুষছেন। তারা বলেন, একদিকে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা—তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও একজন প্রার্থীকে এনটিআরসিএ চাকরি দিতে পারে না; অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর পদ ফাঁকা। এটি আসলে সমন্বয়ের অভাব। শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া থেকে নিয়োগের সুপারিশ পর্যন্ত সব কটি ধাপ শেষ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ফলে অনেক প্রার্থী অন্য পেশায় চলে যান, আর শিক্ষক পদ শূন্যই থেকে যায়। এনটিআরসিএকে কমিশনে রূপান্তর করার পরামর্শ দেন তারা।

এদিকে শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন পলিটেকনিক, মনোটেকনিক এবং কারিগরি স্কুল ও কলেজগুলো। এগুলোর সরকারি হিসাব অনুযায়ীই ৭০ শতাংশ শিক্ষক পদ খালি। জনশক্তি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যুরোর অধীন কারিগরি প্রতিষ্ঠানেও প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষক পদ শূন্য।

“তোমায় খুঁজি, বাবা”

মুহাম্মাদ মুরাদ হোসাইন
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৮:৩৩ এএম
“তোমায় খুঁজি, বাবা”

নীরব আকাশ, চুপ করে আজ,

তোমার কথা মনে পড়ে বারবার।

ছায়ার মতো ছিলে পাশে,
আজ নেই, তবু আছো হৃদয় জুড়ে সারাক্ষণ।

তোমার কণ্ঠের ডাক নেই আজ,
ঘরে ফিরে পাই না হাসিমুখ।
তবু মন বলে, বাবার স্পর্শ
আজো মিশে আছে হাওয়ার সুখ।

যখন কষ্টে ভেঙে পড়ি,
তোমার কথা মনে পড়ে খুব।
তুমি বলতে, “সব ঠিক হবে”,
আজ সে শব্দ শুধুই রূপ।

তোমায় ছাড়া জীবনটা এখন
অপূর্ণ এক উপন্যাস।
তবু বিশ্বাস, তুমি আছো
আমার প্রতিটি নিঃশ্বাস।

ঘুমের দেশে রয়েছো তুমি,
আলো হয়ে আমার পাশে।
যতদিন বাঁচি, তুমি থাকবে—
ভালোবাসার গোপন ভাসে।

সদরপুরে ইয়াবাসহ দম্পতি গ্রেপ্তার

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৮:২৫ এএম
সদরপুরে ইয়াবাসহ দম্পতি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় দুইশত পিস ইয়াবাসহ এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)।

শনিবার (২১ জুন) বিকেল ৫ টার দিকে উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়নের বাবুরচর নতুন ডাঙ্গী গ্রামের একটি ভাড়া বাসা থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢেউখালী ইউনিয়নের বাবুরচর নতুন ডাঙ্গী গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী মাতুব্বরের পুত্র দাদন মাতুব্বর (৫০) ও তার স্ত্রী শিউলি আক্তার (৪০)।

জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় আমি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সদরপুর থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেছি। দাদন মাতুব্বর দীর্ঘদিন যাবত মাদক বিক্রির সাথে জড়িত। সে এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিতির কারণে তার বিরুদ্ধে সবাই স্বাক্ষী দিতে ভয় পেত।

তিনি আরও বলেন, তাকে গ্রেপ্তারের সময় সাক্ষী নিতে গেলে এলাকাবাসী বলেন, আমরা এই ব্যাপারে কথা বললে দাদন জেল থেকে বের হয়ে লোকজন নিয়ে আমাদের উপরে হামলা করবে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫, ৭:৪৮ এএম
আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফরিদপুর থেকেে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা। এই জেলার বিভিন্ন গ্রামের খেটে খাওয়া দিনমুজুর পরিবারের গৃহবধূ, কিশোরীদের হাতের ছোঁয়ায় তৈরী হতো গ্রামীণ কাঁথা। এই কাঁথায় তাদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলা হতো নানা নকশা।

ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ কাঁথা কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। লেপ, কম্বল ও দামী চাদরের কারণে গ্রামের দারিদ্র পরিবারের সংসারের গ্রামীণ কাঁথা সেলাইয়ের বাড়তি আয়ের উৎসটি এখন আর নেই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যে মিশে আছে গ্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন এই সুচ শিল্প। সেই সাথে এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড। সুচের ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনন পল্লী নারীদের উপার্জন প্রাচীন ঐতিহ্য গ্রামীণ কাঁথা আধুনিকতার স্পর্শে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

গ্রামের বিয়েতে কন্যার শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো হতো কিংবা শীত নিবারণের জন্য কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো গ্রামাঞ্চলের কিশোরী ও মহিলারা। গ্রামের নারীদের আড্ডা আর খোস গল্পের ছলে কাঁথা সেলাইয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে সচারচর আর চোখে পড়ে না। পুরাতন শাড়ি, লুঙ্গি বা ওড়না কাপড়ে রং-বেরঙ্গের সুতা দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করা হয় এ কাঁথা। গ্রামের নারীরা মনের মাধুরী মেশানো অনুভুতিতে নান্দনিক রূপ বর্ণ-বৈচিত্রে এই গ্রামীণ কাঁথা বুনন করতেন। নারীদের সুক্ষম হাতে সুচ আর লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি, হলুদসহ কয়েক রংয়ের সুতায় নান্দনিকতার বৈচিত্রে সেলাই করা হয়ে থাকে কাঁথা।

ফরিদপুরের এই সুই-সুতার এফোঁড়-ওফোঁড় করার মাধ্যমে ফুল-ফল, গাছ-লতাপাতা, জিরা গাঁথুনি, চেইন গাঁথুনি, মরিচ লাইট গাঁথুনিসহ বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা যায় এই কাঁথায়। এছাড়া আপন মনের ইচ্ছায় দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র কাঁথায় ফুটিয়ে তোলেন কাঁথা শিল্পীরা। তারা নিজেরাই এর শিল্পী, রূপকার এবং কারিগর। এ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে গ্রামের আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড।

বর্তমান সময়ের ব্যবধানে নতুনত্বের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে হাতের সেলাইয়ে গড়া এই কাঁথার ঐতিহ্য। হাতে তৈরি নানা রকমের ফুল-ফল, পশু-পাখি, গাছ-পালা এবং প্রকৃতির নকশায় সজ্জিত হয়ে উঠত কাঁথা। বড় বড় কারখানায় তৈরিকৃত দেশি-বিদেশী রং-বে-রঙ এর রেডিমেট লেপ-কম্বলের চাপায় হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গ্রামীণ শিল্পটি। কালের বিবর্তনে আজকাল আর চোখে পড়ে না গ্রামীণ এ কাথাঁ সেলাই এর দৃশ্য।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের অভাবী নারীরা সংসারের সব কাজ শেষে অবসরে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করতেন। জায়গা ভেদে একটি কাঁথা সেলাই করতে ১০ দিন হতে এক মাস সময় লাগে। আর মজুরি হিসেবে মেলে ৬ শ’ হতে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সন্তানদের বায়না পূরণ, লেখাপড়ার খরচ মেটাতে বেশ ভূমিকা রাখত হাতে তৈরি এই কাঁথা।

স্থানীয়দের দাবি, দারিদ্র পরিবারের মহিলাদের সংসারের বাড়তি আয় ছিল গ্রামীণ এ কাঁথা। তবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই কাঁথা। অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও নতুন কর্ম-সংস্থান তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে এই খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি বে-সরকারি সংস্থা এগিয়ে আসলে হারানো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তবে এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।