খুঁজুন
শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ, ১৪৩২

ফরিদপুরের সোনালী হরিণের গল্প: শখ থেকে স্বপ্নের পথে

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫, ২:৩৮ পিএম
ফরিদপুরের সোনালী হরিণের গল্প: শখ থেকে স্বপ্নের পথে

ফরিদপুর শহরতলীর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে এক অনন্য উদ্যোগের জন্ম হয়েছে, যা এখন সারা জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন মো. ফরিদ শেখ, একজন মাদ্রাসা পরিচালক, যিনি শখের বশে শুরু করা হরিণ পালনকে একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক উদ্যোগে রূপান্তর করেছেন। তার এই প্রচেষ্টা শুধু আয়ের নতুন পথই খুলেনি, বরং এতিম শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছে। “ফরিদাবাদ শেখ ফেলু দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা”র পাশে অবস্থিত ফরিদ শেখের হরিণের খামার এখন ফরিদপুরের গর্ব।

শখ থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য:

২০১৭ সালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ফরিদ শেখ ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি হরিণ কিনে আনেন। শুরুটা ছিল কেবল শখ। কিন্তু আড়াই মাসের মধ্যেই হরিণ দুটি থেকে জন্ম নেয় একটি শাবক। ধীরে ধীরে তার খামারে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যখন হরিণের সংখ্যা ১২-এ পৌঁছায়, তিনি শৌখিন লাইসেন্সকে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে রূপান্তর করেন। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি হরিণ বিক্রি করেছেন, যার প্রতিটির দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এই আয় সরাসরি মাদ্রাসার তহবিলে যোগ হয়, যা দিয়ে এতিম শিশুদের পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানো হয়।

হরিণ পালন: সহজ ও লাভজনক

হরিণ পালনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর স্বল্প খরচ ও ন্যূনতম রোগব্যাধি। মো. ফরিদ শেখ জানান, “হরিণ তৃণভোজী প্রাণী। নেপিয়ার ঘাস, কলমি ঘাস, ছোলা, ভুসি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, লাউ দিয়েই আমি হরিণ পালন করি। প্রতিটি হরিণের পেছনে দৈনিক খরচ মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। অন্যান্য পশুদের তুলনায় হরিণের রোগবালাই কম, তাই ওষুধ বা ভ্যাকসিনের খরচও প্রায় নেই।” এই সহজ পদ্ধতি এবং কম খরচই তার উদ্যোগকে লাভজনক করে তুলেছে।

বন অধিদপ্তরের নিয়মকানুন:

হরিণ পালনের জন্য বন অধিদপ্তর থেকে শৌখিন এবং বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। শৌখিন লাইসেন্সের জন্য বিভাগীয় বন অফিসে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করে জায়গার উপযুক্ততা যাচাই করে অনুমতি দেয়। হরিণের সংখ্যা ১১-এর বেশি হলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রয়োজন, যার জন্য আগারগাঁও বন অফিসে আবেদন করতে হয়। এই লাইসেন্সে প্রতিটি হরিণের জন্য বছরে ১২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।

শুধু হরিণ নয়, আরও বৈচিত্র্য:

ফরিদ শেখের উদ্যোগ শুধু হরিণ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়। তার গরু, দুম্বা এবং বিশাল মাছের খামারও রয়েছে, যেখান থেকে তিনি প্রতি বছর মোটা অঙ্কের আয় করেন। এই খামারগুলোতে ৩০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, যা স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।

পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত খামার:

ফরিদপুরে হরিণ পালনের এমন উদ্যোগ আর কোথাও নেই। ফরিদ শেখের খামার এখন শুধু ব্যবসা নয়, একটি পর্যটন কেন্দ্রও। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই সোনালী হরিণগুলো দেখতে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হরিণদের লাফালাফি দেখে আনন্দ পায় এবং সময় পেলে তাদের খাবার দেয়, খেলে। মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এই খামার মাদ্রাসার পরিচিতি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীরা হরিণ দেখতে এসে ছবি তুলেন, খেলেন এবং এতিম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই খামার মাদ্রাসাটিকে ফরিদপুরের একটি অনন্য স্থানে পরিণত করেছে।

ফরিদ শেখের বক্তব্য:

মো. ফরিদ শেখ বলেন, “আমার শখের শুরু ছিল এই হরিণ পালন। কিন্তু এটি এখন আমার জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খামার থেকে আয় দিয়ে আমি এতিম শিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ় ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো শখকেও সফল ব্যবসায় রূপান্তর করা সম্ভব। আমি চাই, আমার এই উদ্যোগ অন্য তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করুক।”

একটি মহৎ উদ্যোগ:

ফরিদ শেখের এই উদ্যোগ শুধু ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প নয়, এটি একটি মানবিক মিশন। তার হরিণের খামার থেকে আয় দিয়ে তিনি “ফরিদাবাদ শেখ ফেলু দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা” পরিচালনা করছেন, যেখানে এতিম শিশুরা শিক্ষা ও আশ্রয় পাচ্ছে। এই উদ্যোগ তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা, যারা স্বপ্ন দেখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। ফরিদপুরের এই সোনালী হরিণের খামার এখন শুধু একটি খামার নয়, এটি আশা, স্বপ্ন আর সম্ভাবনার প্রতীক।

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে সালথায় মানববন্ধন 

সালথা প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৫১ পিএম
সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে সালথায় মানববন্ধন 

গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ফরিদপুরের সালথায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয় সাংবাদিকরা।

শুক্রবার (০৮ আগস্ট ) বিকেলে সালথা প্রেসক্লাবের আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সালথা প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. সেলিম মোল্লার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নাহিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, সালথা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনির মোল্লা, সহ-সভাপতি হারুন-অর-রশীদ, সাইফুল ইসলাম, রেজাউল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক শরিফুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন, প্রচার সম্পাদক লাভলু মিয়া, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পারভেজ মিয়া, সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক আকাশ সাহা, কার্যনির্বাহী সদস্য এম কিউ হুসাইন বুলবুল, বিডি২৪লাইভ-এর ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি মো. এহসানুল হক মিয়া প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা তুহিন হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। এসময় বক্তারা বলেন, তুহিন হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (০৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় কুপিয়ে ও জবাই করে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

বিস্ফোরক মামলা : ভাঙ্গায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৪৭ পিএম
বিস্ফোরক মামলা : ভাঙ্গায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (০৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় থেকে ভাঙ্গা থানার একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একইদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তাছাড়া ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সে কিছুটা গা ডাকা দিয়েছিল। তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক এমপি মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরীর আস্তাভাজন ছিলেন।

এবিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, শুক্রবার সকালে ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ভাঙ্গা থানাযর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।

ফরিদপুরে পাট শুকানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০২৫, ৮:৪২ পিএম
ফরিদপুরে পাট শুকানোকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ২০

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে চলাচলের সড়কে পাট শুকানোর বাঁশপুতাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (০৮ আগস্ট) সকালে উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বাজিদাদপুর গ্রামে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় উভয়পক্ষের ৭ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে উত্তম সরকার (৩০) নামে একজনকে আশঙ্কজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

গুরুতর আহতরা হলেন, বাজিদাদপুর গ্রামের বিশ্বাস গ্রুপের জগদীশ বিশ্বাস (৬০), জয়ন্ত বিশ্বাস (২৬) ও অপূর্ব বিশ্বাস (৩৫) এবং বালা গ্রুপের শিবু বালা (৬০), রতন বালা (৪০) ও সুজন সরকার (২৫)। তারা সকলেই ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া জগদীশের স্ত্রী ইতি বিশ্বাস (৫২), সুশান্ত বিশ্বাস (৩০), রবিন বিশ্বাস (৫০), সমীর বিশ্বাস (৪০), সুজন সরকার (৩০), শুক্লা বিশ্বাস (৩৩)সহ বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বাজিদাদপুর গ্রামের নীতিশ কুমার বালা (৫৫) ও জগদ্বীশ কুমার বিশ্বাসের (৬০) মধ্যে বাড়ির সামনে রাস্তা সংলগ্ন জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক বসে। সম্প্রতি শালিশ মিমাংসা করে সীমানা নির্ধারণ পিলার বসিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকালের দিকে জগদিশ বিশ্বাসরা সড়কের ওপর পাট শুকানো বাঁশ পুঁততে গেলে প্রতিপক্ষ নীতিশ কুমার বালার লোকজন বাঁধা দেয়। এ সময় বাঁশ সরানো নিয়ে দুইপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উভয়পক্ষের ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

সংঘর্ষের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী শেখর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সাইদ (পান্নু) জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইপক্ষকে নিবৃত করার চেষ্টা করি। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার খবর পেয়ে টহল পুলিশ অর্ধেক পথ থেকে ফিরে গেছেন।

বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা হক রুম্পা জানান, একটি মারামারির ঘটনায় ১৭ জন হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে ৭জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।