খুঁজুন
বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ১১ আষাঢ়, ১৪৩২

সালথায় ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল স্কুলছাত্রের মরদেহ

আবু নাসের, সালথা:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ৩:১৯ পিএম
সালথায় ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল স্কুলছাত্রের মরদেহ

বাবার উপর অভিমান করে ফরিদপুরের সালথায় ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সামিউল শরীফ (১২) নামে এক স্কুলছাত্র আত্মহত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

সোমবার (২৩ জুন) দিবাগত রাতে উপজেলার বড় খারদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত সামিল বড় খারদিয়া গ্রামের মেহেদী হাসান শরীফের ছেলে ও বড় খারদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, বাবার উপর অভিমান করে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সামিউল আত্মহত্যা করে। নিহতের মরদেহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা রুজু হয়েছে।

বিলুপ্তির পথে ফরিদপুরের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ৭:৫১ এএম
বিলুপ্তির পথে ফরিদপুরের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা

বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ফরিদপুরের ধানের গোলা। একসময় গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের বাড়িতে এরকম ধানের গোলার প্রচলন ছিল। গোলাভরা ধান ও পুকুর ভরা মাছ ছিল। জমিদারি প্রথা ও কৃষক পরিবারের বিভিন্ন ঐতিহ্যের মধ্যে ছিল এই ধানের গোলা।

 

এখন মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করার জন্য বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি ঐতিহ্যবাহী ধানের গোলা। অথচ একসময় সমাজে মানুষের আভিজাত্য নির্ভর করতো কার কয়টি ধানের গোলা আছে এ হিসাব কষে। শুধু তাই নয়, কন্যা পাত্রস্থ করতেও বরপক্ষের লোকজন আগে দেখতো ধানের গোলা। নতুন প্রজন্মের কাছে এটা একটা ইতিহাস। শুধু রূপকথার গল্পের মতো। প্রবীণ ও পুরোনোদের কাছে এটি শুধু হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারের সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন আর ফরিদপুরে কোথাও চোখে পড়ে না। তবে পুরো জেলার মধ্যে একটি মাত্র ধানের গোলা এখনও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে কৃষক অধীর কুমার বিশ্বাসের বাড়িতে এটি রয়েছে। তার মাঠের সব ধান এই গোলায়ই তিনি সংরক্ষণ করেন। পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে বাড়ির উঠানে এখনো তিনি এই ধানের গোলাটি যত্ন করে রেখেছেন। আগেকার দিনের মতো ব্যবহার করছেন।

অধীর কুমার বিশ্বাস বলেন, একসময় এ রকমের ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ পরিবারে ছিল। কিন্তু এখন আর কোথাও দেখা যায় না। ফরিদপুর জেলার মধ্যে আমার বাড়িতে একটি মাত্র ধানের গোলা আছে। এখন এর বয়স হয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর। গোলাটিতে একশত মণেরও বেশি ধান রাখা যায়। আমার নিজের জমির যতো ধান হয়, রাখার উপযোগী করে তা এ গোলায়ই রাখি।বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে এসেছি। অনেক যত্ন করে ব্যবহার করা হয় এবং মাঝে মাঝে সংস্কার করে পুরোনো ঐতিহ্য টিকিয়ে রেখেছি। ধানের মৌসুমে ধান কেটে শুকিয়ে গোলায় রাখা হয়। প্রয়োজনের সময় গোলা থেকে ধান বের করে পুনরায় রোদে শুকিয়ে ভাঙানো হয়।

অধীর কুমার বলেন, আগেরকার সময় নামকরা গৃহস্থ বলতে মাঠভরা বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ আর কৃষকের গোলা ভরা ধানকেই বোঝাত। এখন আর আগের মতো কেউ এভাবে ধান রাখে না। বস্তায় করে গোডাউন অথবা ঘরের মধ্যে রেখে দেন।

তিনি আরও বলেন, প্রথমে বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হয়। এঁটেল মাটির কাদা তৈরি করে ভেতরে ও বাইরে আস্তরণ লাগিয়ে উপরে টিনের চালা দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা এই ধানের গোলা। প্রবেশপথ বেশ উপরে, যেন চোর বা ডাকাত সহজে ধান নিতে না পারে। এ ধরনের ধানের গোলায় ইঁদুর ঢুকেও ক্ষতি করতে পারে না। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল শক্ত হয়। তখনকার কৃষকদের কাছে এটিই ছিল ধান রাখার আদর্শ পদ্ধতি।

উপজেলা সদরের সদরদি গ্রামের বাসিন্দা মো. সজীব মোল্লা। তিনি ফরিদপুর সিটি পেজের মডারেটর হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করেন। কিন্তু এর আগে কখনো তিনি ধানের গোলা দেখেননি। তিনি বলেন, আমার গ্রামের পাশেই কৃষ্ণনগর গ্রামে পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি মাত্র ধানের গোলা আছে। কিন্তু এর আগে এটি সম্পর্কে জানিনি।

মধুখালী উপজেলার মেকচামী ইউনিয়নের বামুন্দী গ্রামের বাসিন্দা ও প্রবীণ শিক্ষক প্রভাষ মণ্ডল জানান, এখন আর গোলার প্রচলন বা কদর কোনোটাই নেই। এখন এটি চোখেও পড়ে না। ড্রাম কিংবা বস্তায়ই ধান রাখা হয়।

বোয়ালমারী উপজেলা সদর এলাকার বাসিন্দা, সাংস্কৃতিক কর্মী আমীর চারু, সুমন খানসহ অনেকেই জানান, এখন আর এসব চোখে পড়ে না। একেবারেই বিলুপ্তির পথে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন এই পেশাটিও হরিয়ে গেছে।

কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কাজী হাসান ফিরোজ ও সমর চক্রবর্তী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখেছি ও শুনেছি গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গেছে। অন্য জেলায় কিছু কিছু দেখা গেলেও আমার জানা মতে ফরিদপুরে নেই। গোলাগুলো একসময় আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য বহন করতো।

সালথা উপজেলা যদুনন্দীর গোপীনাথপুর গ্রামের নরেন্দ্র নাথ মজুমদার ও সদরপুর, নগরকান্দা, ভাঙ্গা এলাকার প্রবীণরা জানান, আগেরকার দিনে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই এ ধরনের ধানের গোলা থাকত। নাতি-নাতনিদের কাছে বললে তারা এখন বিশ্বাসও করতে চায় না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা।বর্তমানে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক কালের কলের নাঙলে ওলট-পালট করে দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী সেসব চালচ্চিত্র। শুধু ধানের গোলা নয়, ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহেদুজ্জামান বলেন, কালের বিবর্তনে আজ বিলুপ্ত। আশির দশকের দিকে ওইসব ধানের গোলা কৃষক ও সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতো। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য উপকরণে।ফলে ঐতিহ্যবাহী এসব ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা। এগুলো তৈরি ঝামেলামুক্ত ও সহজে বাজারে পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের গোলার পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে বাঁশের গোলার কদর। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালিকায় এর অবস্থান শূন্য বলে তিনি জানান।

ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্রিজের ওপর হাটতে গিয়ে প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর

আব্দুল মান্নান, ভাঙ্গা:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ৭:২২ এএম
ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্রিজের ওপর হাটতে গিয়ে প্রাণ গেল এসএসসি পরীক্ষার্থীর

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক্সপ্রেসওয়ে ব্রিজের ওপর হাটতে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীর ও তাবলীগ জামাতে চিল্লার সদস্য যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা গোলচত্বর এক্সপ্রেসওয়েতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম নুরুউদ্দিন (১৭)। তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থানার কামাল হোসেনের ছেলে এবং মোহনগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের এসএসসি-২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

জানা যায়, এস,এস,সি পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ৪১ দিনের তাবলীগ জামাতে এক চিল্লা দিতে ঢাকা কাকরাইল থেকে ভাঙ্গায় আসেন নুরুউদ্দিন। ছয় দিন পর এক চিল্লা শেষ করে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। মঙ্গলবার আছরের নামাজ পড়ে তার বন্ধুদের সঙ্গে ভাঙ্গা গোলচত্বরে ঘুরতে আসেন তিনি।

এ সময় সন্ধ্যার দিকে ব্রিজের ওপর হাটতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ব্রিজের ওপর থেকে নিচে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত ৮টা দিকে তার মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানসিভ জুবায়ের বলেন,
“নুরুউদ্দিন নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে আনা হয়েছিল। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

সালথায় হামলা-হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

আবু নাসের, সালথা:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০২৫, ৯:২০ পিএম
সালথায় হামলা-হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

0-0x0-0-0#

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, হাট-বাজারে যাতায়াতে বাধা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে মারধরসহ একের পর এক ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার নটখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

স্থানীয়রা জানান, সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি মো. মঞ্জু মাতুব্বর ও ময়েনদিয়া শ্রীনগরের আক্কাছ মাতুব্বরের নেতৃত্বে গত কয়েকদিন ধরে নটখোলা গ্রামের বাসিন্দাদের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ময়েনদিয়া বাজারে গেলে তাদের মারধর করা হয়, দোকানপাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বাজার ছাড়তে হুমকি দেওয়া হয়। এতে করে তারামিয়া সমর্থিত ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি নেতা ইদ্রিস মাতুব্বর, বিকুল মাতুব্বর, আনোয়ার মোল্যা, পেঁয়াজ ব্যবসায়ী এস্কেন্দার মুন্সী এবং মাহিন্দ্র ড্রাইভার জাহিদ মোল্যা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, “প্রতিপক্ষের নির্যাতনের কারণে এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কে রয়েছে। বাজারে যেতে পারছে না, ব্যবসা করতে পারছে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই এবং অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি করছি।”

গ্রামবাসীরা বলেন, যদি দ্রুত এ ঘটনার বিচার ও দোষীদের আইনের আওতায় না আনা হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে মুঞ্জু মাতুব্বর বলেন, আমার সাথে কারো কোন ঝামেলা নেই। ময়েনদিয়ার আক্কাছ মেম্বারের ছেলের সাথে তারা মিয়ার ছেলের ঝামেলা এটা।