খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

ভালো নেই সবার প্রিয় শিক্ষক ‘বকুল আপা’, শরীরে বেঁধেছে নানা রোগ!

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:৩৩ এএম
ভালো নেই সবার প্রিয় শিক্ষক ‘বকুল আপা’, শরীরে বেঁধেছে নানা রোগ!

‘একসময় স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নেচে-গেয়ে পাঠদান করাতেন। আনন্দ আর বিনোদনের মাধ্যমে আয়ত্ত করাতেন পড়ালেখা। তাইতো সবার মুখে মুখে বকুল আপার কথা শুনা যেত। মাঝেমধ্যে অন্য শিক্ষকের ক্লাস ফাঁকি দিলেও বকুল আপার ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতোনা কোনো শিক্ষার্থী। ভালোবাসা আর আদর দিয়ে পড়াতেন কোমলমতি শিশুদের। তাইতো, তার সুনাম গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা স্কুলমুখী হতে শুরু করে। অবসরে যাওয়ার পর এখন টাকার অভাবে দু’টি চোখ হারাতে বসেছে এই শিক্ষক। শরীরও তার ভালো নেই, বেঁধেছে নানা রোগ।’

এতক্ষণ যার কথা বলছি তিনি হলেন- ফহমিদা খাতুন বকুল (৬৪)। যিনি ফরিদপুর শহরের ভাজনডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। ২০২০ সালে তিনি অবসরে যান। তবে, তিনি বকুল আপা নামেই অধিক পরিচিত। যাকে, সবাই বকুল আপা নামেই ডাকেন। কিন্তু, অবসরে যাওয়ার পর এ শিক্ষিকা পেনশনের ১৬ লাখ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও পেয়েছেন মাত্র ৮ লাখ টাকা। অদৃশ্য কারণে বাকী ৮লাখ টাকা আজও ভাগ্যে জুটেনি।’

জানা যায়, ‘১৯৮৯ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ৮২টি ঘর নিয়ে ‘ভাজনডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম’ প্রতিষ্ঠিত করেন। অবহেলিত ও শিক্ষাবঞ্চিত কোমলমতি শিশুদের জন্য সে বছরই ভাজনডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরু থেকেই এই স্কুলটিতে শিক্ষকতা করছেন ফাহমিদা খাতুন বকুল। এরপর ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ করে সরকার। এরপর ২০২০ সালে অবসরে যান শিক্ষিকা বকুল।’

স্কুল সূত্রে জানা যায়, ‘শিক্ষিকা বকুল আপা খুবই আন্তরিক একজন মানুষ। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। তাইতো শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যন্য সহকর্মীদেরও কাছে ছিলেন জনপ্রিয়। কখনো ক্লাস ফাঁকি দিতেন না তিনি। কোমলমতি শিশুরা আগ্রহের সঙ্গে তার ক্লাস করতেন। গান, নাচ আর গজলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন। যার, কারণে তিনি অন্যন্য শিক্ষকদের তুলনায় ভিন্ন ছিলেন।’

এসব বিষয়ে কথা হয় স্কুল শিক্ষিকা ফহমিদা খাতুন বকুলের সাথে।

তিনি বলেন, ‘একসময় ভাজনডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেচে, গান গেয়ে ও গজলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে পাঠদান করেছি। আমি অবসরে যাওয়ার পর সেই স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। দু’টো চোখে ছানি পড়ায় প্রাণের স্কুলটা দেখতেও যেতে পারিনা। খুব কষ্ট হয়। এখন দ্রুত চোখের অপারেশন করাতে না পারলে আমি হয়তো চিরতরে অন্ধ হয়ে যাবো। তাইতো কেউ যদি আমার চোখের ছানি অপারেশন করে দিতো, তবে আমি আবার চোখে দেখতে পারতাম।’

এই স্কুল শিক্ষিকা বলেন, ‘আমার পুরো শরীরে নানা রোগে বাসা বেঁধেছে। হয়তো যে কোনো সময় চলে যাব। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিনা।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘পেনশনে যাওয়ার পর কাগজ-কলমে ১৬ লাখ টাকা দেখানো হলেও আমাকে দিয়েছে মাত্র ৮ লাখ টাকা। আমার বাকি টাকা মেরে দিয়েছি। সেই টাকার হিসেব আজও পাইনি। আমি সরকারের কাছে পেনশনের বাকী ৮ লাখ টাকা চাই, যাতে চিকিৎসা করাতে পারি।’

ভাজনডাঙ্গা গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চঞ্চলা রানী সরকার বলেন, ‘বকুলের মতো স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এ বিদ্যালয়ের সঙ্গে আমিও জড়িত। ৮০ ঘর গুচ্ছগ্রামের এলাকায় স্কুলটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বকুল আপা একজন জলি মাইন্ডের শিক্ষক। নাচ-গানসহ নানাভাবে শিক্ষার্থীদের তিনি ক্লাসে আনন্দ দিতেন। শিক্ষার্থী সংগ্রহ থেকে শুরু করে স্কুল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল তার। তার ক্লাসের ধরণ দেখে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়তো।’

ফরিদপুর সদর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার পে স্কেলের কারণে কম পেনশন পেতে পারে। এ ছাড়া স্কুলটি বেসরকারি ছিল, পরে জাতীয়করণ হয়। এ জন্য তিনি কম পেয়েছেন কি-না সেটা যাচাই-বাছাই করে জানাতে পারবো।’

ফরিদপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘পেনশন নিয়ে ওই শিক্ষিকার কোনো জটিলতা রয়েছে কি-না বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।’

 

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

মিয়া রাকিবুল, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:৩৪ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যাত্রা শুরু হলো একটি নিজস্ব ও সুপরিসর খেলার মাঠের।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা প্রদর্শনের মাধ্যমে নবনির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন মাঠটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে।

এতদিন উপজেলা প্রশাসনের জাতীয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানগুলো পরিষদের বাইরে স্থানীয় আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নিজস্ব মাঠে বিজয় দিবস উদযাপিত হলো।

​উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের পুরাতন ভবনের পেছনে বিশাল একখণ্ড নিচু জমি দীর্ঘকাল ধরে পরিত্যক্ত ও অকেঁজো অবস্থায় পড়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক এই স্থানটিকে ভরাট করে একটি আধুনিক মাঠে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন এবং স্থানীয় সমাজ সেবকদের সহযোগিতার আহ্বান জানান। ​ইউএনও’র সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণ সমাজসেবক তাজমিনউর রহমান তুহিন মাঠটি তৈরির দায়িত্ব নেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরহুম আলহাজ্ব আলী আহমেদ মৃধার ছেলে। তুহিন হযরত শাহ্ জালাল মৎস্য এ্যান্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও লেবাজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

​ব্যক্তিগত অর্থায়ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় এক মাস সময় ধরে বিপুল পরিমাণ মাটি ভরাট করে জায়গাটিকে একটি আধুনিক ও সমতল খেলার মাঠে রূপান্তর করেন তুহিন। তার এই নিঃস্বার্থ অবদানের ফলে বর্তমানে মাঠটি সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত এক মনোরম স্থানে পরিণত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কুচকাওয়াজ ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

​নতুন মাঠে প্রথম অনুষ্ঠান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাজমিনউর রহমান তুহিন বলেন, ‘তৎকালীন ইউএনও রফিকুল হকের অনুপ্রেরণায় আমরা কাজটি শুরু করি। আজ যখন দেখলাম এই সুন্দর মাঠে জাতি শ্রদ্ধাভরে বিজয় দিবস উদযাপন করছে, তখন মনটা ভরে গেল। এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি স্থায়ী মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।’

​এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনিরুল হক সিকদার বলেন, ‘এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন একটি মাঠের অভাবে জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তা দূর হলো। সমাজসেবক তুহিনের মতো তরুণরা এগিয়ে এলে সমাজের আমূল পরিবর্তন সম্ভব।’

​উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুধীজন মনে করছেন, এই মাঠটি শুধু খেলাধুলা নয়, বরং বছরজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।

সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৬ পিএম
সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচন কমিশন সকল প্রকার রাজনৈতিক ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশনা দেন। গত শনিবার রাত নয় টায় ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করেননি তারা। সেই নির্দেশনা না শুনায় ফেস্টুন অপসারণ করেছে প্রশাসন।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়ার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ব্যানার ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ অভিযান শুরু করেন।

অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সদরপুর বাজার, কৃষ্ণপুর মোড় ও থানার মোড় এলাকায় অপসারণ করেন। এ সময় ভূমি অফিসের কর্মচারী সহ গ্রাম পুলিশের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সদরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম পিয়া বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ করেন নাই বিধায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপসারণ অভিযান শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য সকল প্রার্থীর সব ধরণের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড , গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী নিজ খরচে/দায়িত্বে অপসারণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:১৮ পিএম
বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের আওতাধীন সদরপুর উপজেলা থেকে ২৪ জন অসহায় ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রোগীকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

এর আগে দুই ধাপে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায় বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ধাপে সদরপুর উপজেলায় ৩৫ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে চরভদ্রাসন উপজেলায় ২৮ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন (লেন্সসহ) সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল।

এই পুরো কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও দেখভাল করছেন ফরিদপুর-৪ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুল।

জানা গেছে, চোখের চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি এর আগেও একাধিকবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প (ওষুধসহ) এবং ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেছেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম খান বাবুল জানান, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এসব মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।