খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

শীতে ছড়িয়ে দিন মানবিক উষ্ণতা

সাইফুল ইসলাম
প্রকাশিত: সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:২৪ পিএম
শীতে ছড়িয়ে দিন মানবিক উষ্ণতা

বাংলাদেশের শীত ঋতু অনেকের জন্য প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আর রোমাঞ্চের বার্তা নিয়ে আসে। কিন্তু একই শীত দরিদ্র, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের সামনে জীবন-মরণ সংগ্রাম তৈরি করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র শীতের কারণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে; বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও অসহায় জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতায় শীতকাল শুধু একটি ঋতু নয়—বরং মানবতার প্রতি আমাদের দায়িত্ববোধের এক স্পষ্ট আহ্বান। ইসলাম সেই দায়িত্বকে আরও দৃঢ়ভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়।

ইসলামে মানবসেবা একটি মৌলিক মূল্যবোধ। দরিদ্র, অসহায় ও পথবাসী মানুষের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতাকে কেবল সামাজিক কর্তব্য নয়, বরং ঈমানের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি মুমিন নয়—যে নিজে পরিতৃপ্ত হয়ে রাত কাটায় আর তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বুখারি : ১৭৬৪)। এই হাদিস শুধু প্রতিবেশীর কথাই বলে না বা শুধুমাত্র খাবারের কথা বলে না; বরং সমাজের প্রতিটি দুর্বল, অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের অনুপ্রেরণা দেয়। বিশেষত শীতকালে যখন মানুষ ঠান্ডায় কাঁপে, তখন একটি কম্বল, একটি গরম কাপড় বা একটু উষ্ণ খাবার তাদের জীবনে কিছুটা হলেও সুখ এনে দিতে পারে।

কুরআনেও মানবসেবা বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। সুরা আদ-দাহরে আল্লাহ বলেন, ‘আর তারা আল্লাহর প্রেমে দরিদ্র, অনাথ ও বন্দীদের খাদ্য দান করে।’ এই আয়াত পরিষ্কার করে দেয় যে মানবসেবা আল্লাহর প্রেম অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। তাই শীতকালে গরিবদের সাহায্য করা কেবল মৌসুমি দান নয়; বরং এটি অন্তরের ঈমান, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মানবতার একটি বাস্তব প্রকাশ।

ইসলামের ইতিহাসও মানবসেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে পূর্ণ। রাসুল (সা.) ব্যক্তিগতভাবে দান করতেন, সাহাবীদের উৎসাহ দিতেন । নববী দাওয়াহর সেই শিক্ষা—মানুষকে বাঁচানো, মানুষের কষ্ট ভাগ করে নেওয়া—আজও মুসলিম সমাজের আদর্শ হওয়া উচিত।

বাংলাদেশে শীতকালে হাজারো পরিবার শীতবস্ত্রের অভাবে ভোগে। পাহাড়ি এলাকা, চরাঞ্চল, নদীভাঙন এবং শহরের ফুটপাতবাসীদের জন্য শীত হয়ে ওঠে প্রকৃত দুর্যোগ। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তি, পরিবার, মসজিদ, সামাজিক সংগঠন ও দাওয়াহ প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত একসঙ্গে কাজ করা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে পুরোনো কাপড় পরিষ্কার করে দান, কম্বল কেনা, মানবতার দেয়াল তৈরি করা বা পথবাসীদের জন্য রাতের খাবার সরবরাহ করা সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর উদ্যোগ। মসজিদভিত্তিক শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ কর্মসূচি অত্যন্ত সফল হতে পারে। আবার যুবসমাজ এই কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করে নেতৃত্বগুণ ও নৈতিকতার বাস্তব শিক্ষা অর্জন করতে পারে। বাংলাদেশে এসব কাজ যদিও চলমান তবে তা আরো বৃহৎ পরিসরে হওয়া উচিত।

দাওয়াহ ও চ্যারিটি সংগঠনগুলো শীতকালে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারে—যেমন গরম কাপড় প্রদানের পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প এবং পথবাসীদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন। শীতের রাতে এমন আশ্রয়কেন্দ্র শত শত মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে। পাশাপাশি, সমাজসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত করুণাময় রূপও মানুষের সামনে প্রতিভাত হয়।

অতএব, শীত আমাদের মনে করিয়ে দেয় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা। ইসলাম শেখায়—মানুষের কষ্ট দূর করা ঈমানের অংশ। আর মানবতা বলে—সবচেয়ে বেশি দরকারে যার পাশে দাঁড়ানো হয়, সেই সাহায্যই সবচেয়ে মহৎ। প্রত্যেক মানুষের একটি ছোট উদ্যোগও অন্য কারও জীবনে বড় পরিবর্তন এনে দিতে

শীতকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবতা, ইসলামি শিক্ষা ও সামাজিক দায়িত্ব—এই তিনটিরই মিলিত প্রয়াস। তাই এই শীতে আসুন ইসলাম ও মানবতার আদর্শ অনুসরণ করে সমাজে উষ্ণতার আলো ছড়িয়ে দেই, সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করি । আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফিক দান করুক। আমিন

লেখক : শিক্ষার্থী, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ইসলামিক দাওয়াহ, আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

মিয়া রাকিবুল, আলফাডাঙ্গা:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:৩৪ পিএম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার পরিত্যক্ত জমি এখন দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠ

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যাত্রা শুরু হলো একটি নিজস্ব ও সুপরিসর খেলার মাঠের।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবসের বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা প্রদর্শনের মাধ্যমে নবনির্মিত এই দৃষ্টিনন্দন মাঠটির আনুষ্ঠানিক পথচলা শুরু হয়েছে।

এতদিন উপজেলা প্রশাসনের জাতীয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানগুলো পরিষদের বাইরে স্থানীয় আরিফুজ্জামান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হতো। এবারই প্রথম উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে নিজস্ব মাঠে বিজয় দিবস উদযাপিত হলো।

​উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, পরিষদের পুরাতন ভবনের পেছনে বিশাল একখণ্ড নিচু জমি দীর্ঘকাল ধরে পরিত্যক্ত ও অকেঁজো অবস্থায় পড়েছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক এই স্থানটিকে ভরাট করে একটি আধুনিক মাঠে রূপান্তরের উদ্যোগ নেন এবং স্থানীয় সমাজ সেবকদের সহযোগিতার আহ্বান জানান। ​ইউএনও’র সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে তরুণ সমাজসেবক তাজমিনউর রহমান তুহিন মাঠটি তৈরির দায়িত্ব নেন। তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিদ্যাধর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মরহুম আলহাজ্ব আলী আহমেদ মৃধার ছেলে। তুহিন হযরত শাহ্ জালাল মৎস্য এ্যান্ড ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী ও লেবাজ সোয়েটার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান।

​ব্যক্তিগত অর্থায়ন ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রায় এক মাস সময় ধরে বিপুল পরিমাণ মাটি ভরাট করে জায়গাটিকে একটি আধুনিক ও সমতল খেলার মাঠে রূপান্তর করেন তুহিন। তার এই নিঃস্বার্থ অবদানের ফলে বর্তমানে মাঠটি সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত এক মনোরম স্থানে পরিণত হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে কুচকাওয়াজ ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

​নতুন মাঠে প্রথম অনুষ্ঠান সফল হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তাজমিনউর রহমান তুহিন বলেন, ‘তৎকালীন ইউএনও রফিকুল হকের অনুপ্রেরণায় আমরা কাজটি শুরু করি। আজ যখন দেখলাম এই সুন্দর মাঠে জাতি শ্রদ্ধাভরে বিজয় দিবস উদযাপন করছে, তখন মনটা ভরে গেল। এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি স্থায়ী মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।’

​এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মনিরুল হক সিকদার বলেন, ‘এটি আলফাডাঙ্গাবাসীর জন্য একটি বড় প্রাপ্তি। উপজেলা পরিষদের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন একটি মাঠের অভাবে জাতীয় অনুষ্ঠান আয়োজনে যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তা দূর হলো। সমাজসেবক তুহিনের মতো তরুণরা এগিয়ে এলে সমাজের আমূল পরিবর্তন সম্ভব।’

​উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সুধীজন মনে করছেন, এই মাঠটি শুধু খেলাধুলা নয়, বরং বছরজুড়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে।

সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:৪৬ পিএম
সদরপুরে অভিযানের দ্বিতীয় দিনেও ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করল প্রশাসন

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করার পর নির্বাচন কমিশন সকল প্রকার রাজনৈতিক ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশনা দেন। গত শনিবার রাত নয় টায় ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টার অপসারণ করেননি তারা। সেই নির্দেশনা না শুনায় ফেস্টুন অপসারণ করেছে প্রশাসন।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়ার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন ব্যানার ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ অভিযান শুরু করেন।

অভিযানের দ্বিতীয় দিনে সদরপুর বাজার, কৃষ্ণপুর মোড় ও থানার মোড় এলাকায় অপসারণ করেন। এ সময় ভূমি অফিসের কর্মচারী সহ গ্রাম পুলিশের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

সদরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম পিয়া বলেন, রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন এবং পোস্টার অপসারণ করেন নাই বিধায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপসারণ অভিযান শুরু করেছি।

তিনি আরও বলেন, ফরিদপুর-৪ নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য সকল প্রার্থীর সব ধরণের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল লিখন, বিলবোর্ড , গেইট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি প্রচার সামগ্রী নিজ খরচে/দায়িত্বে অপসারণ করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:১৮ পিএম
বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ফরিদপুর থেকে ঢাকায় পাঠানো হলো ২৪ রোগী

ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসনের আওতাধীন সদরপুর উপজেলা থেকে ২৪ জন অসহায় ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী রোগীকে বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়।

এর আগে দুই ধাপে সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলায় বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ধাপে সদরপুর উপজেলায় ৩৫ জন এবং দ্বিতীয় ধাপে চরভদ্রাসন উপজেলায় ২৮ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন (লেন্সসহ) সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছিল।

এই পুরো কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও দেখভাল করছেন ফরিদপুর-৪ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম খান বাবুল।

জানা গেছে, চোখের চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি এর আগেও একাধিকবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প (ওষুধসহ) এবং ফ্রি চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করেছেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন তিনি।

এ বিষয়ে শহিদুল ইসলাম খান বাবুল জানান, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই এসব মানবিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।