খুঁজুন
শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন, ১৪৩২

জন্মনিবন্ধন সনদ পেল ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা, কাটল স্কুলে ভর্তির জটিলতা 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ৬:০৪ পিএম
জন্মনিবন্ধন সনদ পেল ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা, কাটল স্কুলে ভর্তির জটিলতা 

এক সময় তারা পরিচয় দিতে পারতো না, স্কুলে ভর্তি হতে পারতো না! সেই অবহেলিত ফরিদপুরের যৌনপল্লীর শিশুরা অবশেষে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এসব শিশুদের মাঝে দেওয়া শুরু হয়েছে জন্মনিবন্ধন সনদ। বঞ্চিত এসব শিশুরা এখন থেকে যেতে পারবে স্কুলে, পড়ালেখার পাশাপাশি কাজকর্মে পড়তে হবে না কোনো জটিলতায়।

গত শনিবার (০৯ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুর পৌরসভার হলরুমে শাপলা মহিলা সংস্থার আয়োজনে প্রথম পর্যায়ে ফরিদপুরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাটের দুইটি যৌনপল্লীর ৩৫ জন শিশু ও যৌনকর্মীকে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে।

সনদ বিতরণকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

এ সময় প্রধান অতিথি বলেন, এই জন্মসনদের মাধ্যমে সকল নাগরিক সুবিধা ভোগ করবে যৌনপল্লীর বঞ্চিত শিশুরা। এসব শিশুদেরকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি বক্তব্যকালে উল্লেখ করেন।

শাপলা মহিলা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুর জেলা সদরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাটের দুইটি যৌনপল্লীতে ৩৮৯ জন যৌনকর্মী রয়েছে। এসব যৌনকর্মীদের শিশু সন্তান রয়েছে ২৯৬ জন। এদের মধ্যে অনেকেরই জন্ম নিবন্ধন করতে না পারায় স্কুলে ভর্তি জটিলতায় ভুগছিল। বিষয়টি নিয়ে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘জন্মনিবন্ধন জটিলতায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না যৌনপল্লীর শিশুরা’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যৌনকর্মীর সন্তানদের আবাসিকের পাশাপাশি পড়ালেখার সুবিধা দিয়ে আসছে ‘শাপলা মহিলা’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থা। এসব শিশুদের আবাসনের জন্য শহরতলীর গেরদায় গড়ে তোলা হয়েছে ভবন। বর্তমানে সেখানে ৫০ জন মেয়ে ও ৩৫ জন ছেলে রয়েছে। দি ফ্রিডম ফান্ডে’র সহযোগিতায় এসব শিশু ও যৌনকর্মীদের জন্মসনদ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে সংস্থাটি। সেই ধারাবাহিকতায় বাবার নাম পরিচয় ছাড়াই বিশেষভাবে এই জন্মসনদ তৈরি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। যা ফরিদপুর পৌরসভার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।

জন্মসনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও পৌর প্রশাসক মো. সোহরাব হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান, দ্যা ফ্রিডম ফান্ডে’র বাংলাদেশের প্রতিনিধি খালেদা আক্তার ও শাপলা মহিলা সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক শ্যামল প্রকাশ অধিকারী প্রমূখ।

ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

হারুন আনসারী, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:৩১ পিএম
ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু

ফরিদপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাসানচর চৌধুরী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিহত দু’জনের মরদেহ স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এ রিপোর্ট লেখার সময় (রাত ৮টা) এখনো এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে।

নিহতরা হলেন, ওই গ্রামের বেলালউদ্দিন মৃধার স্ত্রী মালেকা বেগম (৭০) এবং তাঁর দুই নাতি তৌসিক (৬) ও সোয়াদ (৭)। নিহত দুই শিশু সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। তৌসিকের বাবার নাম জহিরুল ইসলাম তোতা আর সোয়াদের বাবার নাম শরিফউদ্দিন মৃধা। তারা যথাক্রমে ভাসানচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ির পাশে কুমার নদে গোসল করতে যায় আপন চাচাতো দুই ভাই শিশু সোয়াদ (৬) ও তৌসিফ (৭)। এসময় তারা পানিতে ডুবে যায়। তাদেরকে উদ্ধার করতে যেয়ে তাদের দাদিও পানিতে ডুবে যান। তবে তাদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে কেউ জানতে পারেনি।

এদিকে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নদীতে দু’টি মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় জনতা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। এরপর মরদেহ উদ্ধার করলে তাদের পরিচয় জানা যায়।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের লিডার মোহাম্মদ নিসার আলী বলেন, বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে দু’টি মরদেহ কুমার নদে ভেসে উঠেছে বলে খবর পেয়ে সেখানে উদ্ধার কর্মীরা ছুটে যান। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের উদ্ধার করার পর নিহতদের পরিচয় জানা যায়। এ ঘটনায় নিহত অপর শিশু সোয়াদ নিখোঁজ রয়েছে। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় আজকের মতো উদ্ধার কাজ শেষ করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত নিখোঁজ শিশুর সন্ধান না মিললে পুনরায় উদ্ধার অভিযান চালানো হবে।

চরভদ্রাসনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

মো. মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮:২০ পিএম
চরভদ্রাসনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে জনদুর্ভোগ কমাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার হাসপাতাল রোড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

এসময় চার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা খাতুন।

অভিযানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সিএ মো. উজ্জল সেক ও চরভদ্রাসন থানা পুলিশ।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাসপাতাল রোড এলাকায় কয়েকজন ব্যাবসায়ী যত্রতত্র গাছের গুঁড়ি ও কাঠ ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করায় দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯১ ধারা ভঙ্গের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে আট হাজার পাঁচশত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- খাদিজা আর হালিমা ফার্নিচার ২ হাজার টাকা, বিল্লাল ফার্নিচারকে ১ হাজার পাঁচশত টাকা, একলাছ ফার্নিচারকে ২ হাজার টাকা ও হাওলাদার স্ মিল মালিককে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভেড়া বিতরণ

তামিম ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৬:০৪ পিএম
ফরিদপুরের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভেড়া বিতরণ

ফরিদপুর সদর উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া চর অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে “সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের” অধীনে ভেড়া বিতরণ করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নদী-বিধৌত চর এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১০৭ জন সুফল ভোগীর মাঝে প্রত্যেকের জন্য দুটি ভেড়ি ও একটি ভেড়া দেওয়া হয়েছে।

এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো প্রান্তিক কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। ভেড়া বিতরণের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষদের দুই দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সঠিকভাবে পশুপালন করতে পারে। এছাড়াও, ভেড়া ও ছাগলের ঘর তৈরির জন্য ১১,০০০ টাকা এবং হাঁস-মুরগির ঘর তৈরির জন্য ৮,৮০০ টাকা করে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের অধীনে ফরিদপুর সদর উপজেলার মোট ৫৮৩৫ জন সুফল ভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। এরই অংশ হিসেবে ১৩০ জনকে উন্নত জাতের হাঁস, ২৫ জনকে দেশি মুরগি এবং ২৫ জনকে ছাগলও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫৫ জন সুফলভোগী তিন কিস্তিতে মোট ২২৬ কেজি হাঁস-মুরগির খাবার পেয়েছেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রকল্পের পরিচালক ডা. মো. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, “আমাদের এই সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পটি ৭টি জেলার ৩১টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৬৫,২৯০ জন সুফল ভোগীকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফরিদপুরে আমরা বিশেষ করে নদী-বিধৌত চর অঞ্চলের মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছি।”

সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ফরিদপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ.কে.এম আমজাদ।

তিনি বলেন, “ভেড়া বিতরণ কেবল একটি কর্মসূচি নয়, এটি প্রান্তিক মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির একটি বড় সুযোগ। আমরা আশা করি, এই ভেড়াগুলো চর এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং স্থানীয় মানুষদের স্বাবলম্বী করে তুলবে।”

সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সদর উপজেলার চর এলাকার মানুষের জন্য এই প্রকল্পটি একটি বড় প্রাপ্তি। আমরা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি যে প্রকল্পের সকল সুবিধা প্রকৃত সুফল ভোগীদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায়।”

এই সহায়তা পেয়ে খুশি চর অঞ্চলের বাসিন্দারা। চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের আকবর মোল্লা বলেন, “আমরা চর এলাকার মানুষ, আমাদের জীবন অনেক কষ্টের। এই ভেড়াগুলো পেয়ে আমরা খুব খুশি। শুধু ভেড়াই নয়, তারা আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং ঘর বানানোর টাকাও দিয়েছে। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষেরা একটু মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে।”

ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের মো. হাবিব জানান, “আমাদের আগে ভেড়া পালনের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়ে আমরা এখন ভেড়া পালন করতে পারব। আশা করি, এই ভেড়াগুলো বড় হলে বিক্রি করে আমরা ভালো লাভ পাব এবং আমাদের পরিবারের অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।”

নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আসমার আক্তার বলেন, “আমাদের মতো মহিলাদের জন্য এই প্রকল্প একটি বড় সুযোগ। ভেড়া পালন করে আমরাও পরিবারের আয়ে সাহায্য করতে পারব। এই ধরনের সহযোগিতা পেলে আমরাও স্বাবলম্বী হতে পারব।”

এই প্রকল্প ফরিদপুরের চর অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে এবং প্রান্তিক মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।