ফরিদপুরে কুমার নদের তীর রক্ষায় নেই উদ্যোগ, ধসের হুমকিতে বাড়ি-সেতু
ফরিদপুর শহরের কুমার নদের তীর সংরক্ষণ কাজের কোন উদ্যোগ নেই। তাইতো ৬ কোটি টাকার ব্রীজসহ তিনশত বাড়ি-ঘর ভয়াবহ মাটি ধসের হুমকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) একাধিকবার জানানো হলেও বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
‘শুকিয়ে গেছে কুমার নদের পানি। সকাল বিকেল সন্ধ্যায় নদের পানির স্তর কমছেই। একদিকে নদের তলদেশে শুকিয়ে যাচ্ছে, পাশাপাশি বড় বড় মাটির চাপ ধসে নদের গর্ভে আছড়ে পড়ছে। বাড়ছে মাটি ধসের প্রবণতা। কুমার নদে ভাঙনের বাঁচানোর কেউ কি নেই!’ – এমন কথায় বললেন ভুক্তভোগী মো. কবির হোসেন।
কবির হোসেনের অভিযোগ, ‘পাউবো কর্তৃপক্ষ কুমার নদের তীর সংরক্ষণের কাজ করার কথা বললেও তীর সংরক্ষণ কাজের কোন উদ্যোগ নেই। তাদের মুখে একটি কথাই ঘুরে-ফিরে শোনা যাচ্ছে ‘বাজেট নেই’। ফরিদপুর কুমার নদের ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোর কেউ কি নাই!
জানা যায়, ফরিদপুর পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ডের চুনাঘাটা এলাকাটি কুমার নদের ভাঙনের ভয়াল চিত্র নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ পরিবেশন করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আপতকালীন অবস্থায় সামান্য কাজ করে ২০২৪ সালে। তবে, স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেইনি আজও। তাইতো এই কাজ কোন উপকারে আসেনি নদের পাশে মাটি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত কোন পরিবারের। এমনই দাবি ভুক্তভোগী কমপক্ষে শতখানেক পরিবারের।
এলাকাবাসীর দাবি, ‘ওই ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবারের বাসা-বাড়ি রক্ষা করতে চুনাঘাটা ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা হতে বসার মিয়ার বাড়ী সড়কের নদীর পাড় পর্যন্ত সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দিয়ে দ্রুতই সিসি ব্লকের মাধ্যমে প্যালাসাইডিং প্লেসিং এবং কমপক্ষে ২০-২৫ টি গভীরের পাকা সিটু পাইলিং খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।’
অন্যথায়, এলজিআরডি অর্থায়নে পাশের কুমার নদের উপর নির্মিত প্রায় ৬ কোটি টাকার ব্রীজটিও ধসে পড়তে পারে। ইতোমধ্যেই, ব্রীজের চার নম্বর পিলারে গোড়া থেকে মাটি ফেঁটে নদের মধ্যে ধসে পড়তে শুরু করছে। পাশাপাশি দুই-তিনটি পিলার জুড়ে বড় বড় মাটির চাপ ফাঁটল ধরে নদের মধ্যে পড়ে যাবার উপক্রম হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩-২৪ সালে ভরা বর্ষা মৌসুমে পুরো এলাকাটির কয়েক শত বিঘা জমি, ফলদ ও মূল্যবান গাছ-গাছালি আঁছড়ে পড়ে নদে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে যদি ওই এলাকার নদীভাঙ্গনের কাজ দ্রত শেষ করা না হয়, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন হবে নদী পাড়ের মানুষ। ভেঙ্গে পড়তে পারে চারটি ইউনিয়ন ও দুটি উপজেলার একমাত্র সংযোগ সড়কের উপর নির্মিত মূল্যবান ব্রীজটিও।
এই বিষয়ে স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাংলাদেশের পুরাতন জেলা ফরিদপুর। শহরের গুহলক্ষ্মী ও ভাটিলক্ষীপুর এলাকা দুটি তথা ১৭-১৮ নং ওয়ার্ড দুটি প্রায় ৪’শ বছরের পুরানো, কিন্তু তবুও অবহেলিত। সম্প্রতি পদ্মার ভয়াল ভাঙনের থাবার কবলে পড়েছে পদ্মার প্রধান শাখা নদ কুমার। ১৭ নং ওয়ার্ডের কমপক্ষে ৭০-৮০টি বাড়ী ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। নতুন করে নদে আঁচড়ে পড়ছে কমপক্ষে ৮-১০টি বাড়ীসহ বিল্ডিং ভবনও।’
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আ.লীগ সরকার এই পুরানো কুমার নদকে নতুন করে খনন করার নামে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করার পর কুমার নদের খনন হওয়া মাটি লুট করার কারণে নদের পাড় দেবে ও ধসে যায়।
তবে, দীর্ঘদিন যাবৎ পাড় ধসে পড়ার রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। নদ খননের নামে হয়েছে প্রায় দুইশত কোটি টাকা লোপাট এমনটাই গুঞ্জন আছে আজও।
বর্তমানে গুহলক্ষীপুর ও ভাটীলক্ষীপুর এলাকা দুটির নদের এপার-ওপার মিলে প্রায় চার কিলোমিটার করে মোট ৮ কিলোমিটার। ওই এলাকায় তথা নদের দুই পাশে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছে। নতুন করে নদে ভাঙন, পাড় ধসে বড় বড় মাটির চাপ পড়ে দেবে যাওয়া অব্যাহত থাকায় ওইসব পরিবারগুলো চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
এলাকাবাসী বলছেন, ‘ভাঙনের হাত থেকে বাঁচাতে দরকার বড় বাজেট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এলাকাবাসীর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পরপর দুইবার সামান্য বাঁশ ও বালির ব্যাগ দিয়ে পানির চাপ ও মাটি ধসে যাওয়া ফেরানোর চেষ্টা করলেও প্রকৃতির রূপ ভিন্ন। উপরন্ত আগের চেয়ে ১০ গুন ভয়ঙ্করী রূপ নিয়েছে মাটি ধস ও ভাঙন।
এখনই যদি চুনাঘাটা ব্রীজ হতে স্লুইসগেট পর্যন্ত নদের দুই পাশে সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ দিয়ে পাড় সংরক্ষণ করা না হয় তাহলে এসব পরিবারগুলোও নদী ভাঙনে তাদের ভিটা-মাটি সহ সবই হারাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এব্যাপারে বক্তব্য জানতে ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের মুঠোফোনে দু’দফায় একাধিকবার যোগাযোগ করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এব্যাপারে ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) সাজু শিকদার ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়েছি। অতিশ্রীঘ্রই এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।’

আপনার মতামত লিখুন
Array