খুঁজুন
শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২ পৌষ, ১৪৩২

ভাঙ্গায় ট্রাক–অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, গুরুতর আহত ২

এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:২৯ এএম
ভাঙ্গায় ট্রাক–অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, গুরুতর আহত ২

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন।

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ভাঙ্গা–খুলনা মহাসড়কের মুনসরাবাদ এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার পর মহাসড়কে কিছু সময় যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় ও ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভাঙ্গা থেকে খুলনাগামী একটি ট্রাকের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় অ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন এবং আরও দুইজন গুরুতর আহত হন।

খবর পেয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। আহতদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম–পরিচয় জানা যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে হতাহতদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পর কিছু সময় ভাঙ্গা–খুলনা মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হলেও বর্তমানে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফরিদপুরে ফুটপাত দখলে পথচারীদের দুর্ভোগ, ব্যাহত স্বাভাবিক চলাচল

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:২২ পিএম
ফরিদপুরে ফুটপাত দখলে পথচারীদের দুর্ভোগ, ব্যাহত স্বাভাবিক চলাচল

ফরিদপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ফুটপাত দখল করে দোকানপাট ও ভাসমান ব্যবসা বসানোর কারণে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নির্ধারিত ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে।

শহরের জনতা ব্যাংক মোড়, হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের সামনের সড়ক, থানা মোড়, গোয়ালচামট সড়কসংলগ্ন এলাকায় দেখা গেছে, ফুটপাতের অধিকাংশ অংশ দখল করে অস্থায়ী দোকান, চা-স্টল ও ফলের দোকান বসানো হয়েছে। কোথাও কোথাও স্থায়ী দোকান মালিকরাও দোকানের সামনের ফুটপাত পুরোপুরি দখল করে রেখেছেন। ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্ক মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

রহিমা বেগম নামে এক পথচারী ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, “ফুটপাত দিয়ে হাঁটার কোনো জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তায় নামতে হয়। এতে সব সময় দুর্ঘটনার ভয় থাকে।” আরেকজন জানান, সন্ধ্যার পর অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

জনতা ব্যাংকের মোড়ের সালাম নামের ভাসমান এক শীতের পোশাক বিক্রেতা ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, ‘কারো অনুমতি না নিয়েই এখানে বসেছি। এখানে বসার জন্য কাউকে কোনো ভাড়া দিতে হয়না। পৌরসভা কিংবা জেলা প্রশাসনের অনুমতিরও দরকার হয়না’

তবে রাজবাড়ির খানখানাপুর এলাকা থেকে আসা মো. শাহিন নামের এক দোকানদার ‘ফরিদপুর প্রতিদিন’কে বলেন, ‘স্থায়ী দোকানের সামনের মালিকদের প্রতিদিন চাঁদার নামে ৫’শ টাকা বকশিস দিতে হয়। এছাড়া দোকান না খুললেও মাসে ১৫ হাজার টাকা গুনতে হয়।’

এছাড়া আরেক দোকানদার অনিক মিয়া বলেন, ‘ভাড়া কিংবা অনুমতির বিষয়টি দোকান মালিক জানে। আমি তার কর্মচারী।’

পৌরসভার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ‘অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও পরে আবার ফুটপাত দখল হয়ে যায়।’

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সভাপতি আবরাব নাদিম ইতু ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘প্রশাসন দুই দিন পর পর বলে থাকেন তারা ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু তাদের বলার মধ্যেই কথাগুলো সীমাবদ্ধ থাকে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষদের।’

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. সোহরাব হোসেন ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, ‘ফরিদপুর পৌরসভা থেকে অনুমতি নিতে একটা প্রসিডিউর মেইনটেইন করতে হয়। সেটা তারা করেনি ও অনুমতি নেইনি। আমরা অবৈধ ভাসমান দোকানগুলোর বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাচ্ছি। শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। শহরের যানজট নিরসনে শিগগিরই নতুন করে উচ্ছেদ অভিযান জোরদার করা হবে এবং অবৈধভাবে ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে কিছু ব্যবসায়ী বারবার নির্দেশনা অমান্য করছেন।”

সচেতন মহলের মতে, ফুটপাত পথচারীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দুর্ঘটনা ও জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারা মনে করেন, নিয়মিত মনিটরিং ও স্থায়ী সমাধান ছাড়া এ সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না।

আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে বন্ধ ফরিদপুরের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:২০ পিএম
আইনশৃঙ্খলার অজুহাতে বন্ধ ফরিদপুরের আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসব

ফরিদপুরে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে আয়োজিত বহুল প্রতীক্ষিত ঘুড়ি উৎসবটি শেষ মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের নির্দেশনায় তা স্থগিত করা হয়। আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন উৎসবপ্রেমী সাধারণ মানুষসহ আয়োজকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে ফরিদপুর জেলা স্কুলের ১৮৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নগর বাউল জেমসের সংগীত পরিবেশনের সময় সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই ঘুড়ি উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে—এমন ধারণা করছেন অনেকেই।

শনিবার সকালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস ঘুড়ি উৎসব বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “বর্তমান সময়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ঘুড়ি উৎসবটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” তবে এর বেশি বিস্তারিত জানাতে তিনি অনিচ্ছা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শামছুল আজম ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “ঘুড়ি উৎসবটি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”তিনিও সিদ্ধান্তের পেছনের নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

ঘুড়ি উৎসব বন্ধের প্রকৃত কারণ জানতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্যার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, ফরিদপুর সিটি অর্গানাইজেশনের সভাপতি ও ঘুড়ি উৎসব আয়োজন কমিটির সভাপতি মো. ইমদাদ হাসান ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা ঘুড়ি উৎসবটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। শেষ মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক।”

উল্লেখ্য, ফরিদপুরের ঘুড়ি উৎসবটি কেবল বিনোদনের আয়োজন নয়; এটি গ্রামীণ সংস্কৃতি ও আবহমান বাংলার ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।

হঠাৎ করে উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয়দের মতে, আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও এমন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন বাতিলের আগে বিকল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত।

রঙিন ঘুড়িতে ভরে ওঠা আকাশের অপেক্ষায় থাকা ফরিদপুরবাসীর প্রশ্ন—বারবার কেন সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলোই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে?

কনকনে শীতেও থামে না জীবনযুদ্ধ: ভোরের ফরিদপুরে মানুষের মানবিক গল্প

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:৫১ এএম
কনকনে শীতেও থামে না জীবনযুদ্ধ: ভোরের ফরিদপুরে মানুষের মানবিক গল্প

কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর তখনো পুরোপুরি জাগেনি। রাস্তার বাতিগুলোর আলো ম্লান, বাতাসে কনকনে শীত। তবুও জীবনের প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। কেউ শ্রমের খোঁজে, কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউ বা শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।

ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোর পাঁচটা থেকেই জড়ো হতে থাকেন দিনমজুররা। পুরোনো চাদর গায়ে, কেউ কেউ আবার পলিথিনে নিজেকে জড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কাজ মিলবে কি না—এই অনিশ্চয়তার মাঝেই কেটে যায় তাদের সকাল। কথা হয় রহিম মিয়ার সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। বললেন,
“শীত তো আসে যায়, কিন্তু কাজ না থাকলে পেটের আগুন নেভাবো কীভাবে?”

শহরের অলিগলিতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হন কয়েকজন সবজি বিক্রেতা। শীতের সকালে বিক্রি কম, তবুও থেমে থাকলে সংসার চলবে না। গৃহবধূরা ভোরেই বাজারে যাচ্ছেন—কম দামে সবজি কেনার আশায়। কেউ কেউ সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, শীতের মধ্যেই ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়ে।

কুমার নদের পাড়ে বসে থাকা কয়েকজন বৃদ্ধের চোখে ভিন্ন এক গল্প। কারও ছেলে শহরের বাইরে, কারও সন্তান বিদেশে। শীতের সকালে নদীর ধারে বসে রোদ ওঠার অপেক্ষায় থাকেন তারা। একজন বৃদ্ধ ধীরে বললেন,
“রোদ উঠলে শরীর একটু ভালো লাগে, মনটাও।”

শহরের হাসপাতাল চত্বরে ভোরেই দেখা মেলে রোগীর স্বজনদের। কেউ কম্বল পেতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। ঠান্ডা মেঝেতে বসে চা খাচ্ছেন একজন মা—ভেতরে তার অসুস্থ সন্তান। তার চোখে ক্লান্তি, তবুও আশার আলো নিভে যায়নি।

এই শহরে শীত কেবল তাপমাত্রা নয়, শীত যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। কেউ হাল ছাড়ে না। প্রতিটি সকালই নতুন করে লড়াই শুরু করার সাহস এনে দেয়।

ফরিদপুরের এই ভোরগুলো হয়তো খুব জাঁকজমকপূর্ণ নয়, কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে মানুষের অদম্য জীবনচর্চা, সংগ্রাম আর মানবিকতার নীরব গল্প।