খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০ পৌষ, ১৪৩২

ফরিদপুরে হেমন্ত ঋতুতেই প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:৪০ এএম
ফরিদপুরে হেমন্ত ঋতুতেই প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা

প্রকৃতিতে এখন ঋতুবদলের আয়োজন। শরৎ শেষে হেমন্ত নামছে। এরপর শীতকাল। কিন্তু এখনই প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। দক্ষিণের জেলা ফরিদপুরে শীত নামা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যেই প্রকৃতিতে বইতে শুরু করেছে মৃদু হিম বাতাস।

শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের ওপর ভোরের সূর্যের আলো হালকা লালচে রঙয়ের ঝিলিক দেখা গেছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোর মতো শিশির কণা জমে আছে।

সারদিনের তীব্র গরম শেষে গভীর রাত থেকে শুরু হচ্ছে হালকা হিমেল হাওয়া, সঙ্গে নামছে হালকা কুয়াশা। শীতকে ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে গ্রাম অঞ্চলের পিঠাপুলির দোকানগুলো।

ফরিদপুরের সালথার রিপন মাতুব্বর বলেন, ঘাসের ওপর শিশির কণা রৌদ্রে ঝলমল করে, হাঁটাচলা করলে শীতে পা ভিজে যায়। আমাদের এলাকায় শীতের আগমন ঘটে গেছে। শীত এলাকার মানুষের জন্য কষ্টের সঙ্গে আনন্দেরও।

ফরিদপুর সদরের সমির খাঁ বলেন, ফরিদপুরে এবার আগাম শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শীতে শাকসবজির বেশি আবাদ হয়। নতুন ধান কাটা শুরু হয়।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, ফরিদপুরে সকালে ও রাতে আমরা শীতের ছোঁয়া পাচ্ছি। তাপমাত্রারও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।

সরিষা ফুলের মাঝে জমে থাকা এক হারানো শৈশব

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:৩৩ এএম
সরিষা ফুলের মাঝে জমে থাকা এক হারানো শৈশব

সরিষার হলুদ ফুলে ভরা বিস্তীর্ণ মাঠ। রোদে ঝলমল করে ওঠা গ্রামীণ প্রান্তর। সেই মাঠের মাঝখানে চার-পাঁচটি শিশু—মুখে অদম্য হাসি, শরীরে কাদা-মাখা জামা, হাতে পুরোনো একটি চাকার রিম। কেউ সেটি ঠেলে দিচ্ছে, কেউ দৌড়ে পিছু নিচ্ছে। ছবিটি এক নজরে আনন্দের হলেও, গভীরে তাকালে ধরা পড়ে হারিয়ে যেতে বসা এক শৈশবের নীরব আর্তনাদ।

এই শিশুরা কোনো দামি খেলনার দাস নয়। তাদের খেলাধুলা জন্ম নেয় মাঠে, মাটিতে, প্রকৃতির কোলে। একসময় গ্রামবাংলার প্রায় প্রতিটি শৈশবই এমন ছিল। বিকেলের আলো ফুরোতে না ফুরোতেই মাঠে নেমে পড়ত শিশুরা—ডাংগুলি, মার্বেল, চাক্কা ঘোরানো, লুকোচুরি। এখন সেই দৃশ্য ক্রমেই বিরল। মোবাইল ফোন, ট্যাব আর শহুরে ব্যস্ততা গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

ছবির শিশুরা হয়তো জানেই না—তাদের এই দৌড়ানো, মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া, ফুলের গন্ধ মাখা মুহূর্তগুলো একদিন স্মৃতি হয়ে থাকবে। বড় হয়ে তারা হয়তো কাজের খোঁজে শহরে যাবে, ঢুকে পড়বে কংক্রিটের জঙ্গলে। তখন আর এমন সরিষার মাঠ থাকবে না, থাকবে না খোলা আকাশের নিচে অবাধ খেলাধুলা।

হারানো শৈশব বলতে শুধু খেলাধুলার অভাব নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র্য, শিশুশ্রমের ভয়। অনেক শিশুই আজ মাঠে দৌড়ানোর বয়সে কাজে নামতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ ইটভাটায়, কেউ হোটেলে, কেউ রিকশার পেছনে ঝুলে থাকা এক ছোট সহকারী। তাদের শৈশব হারিয়ে যায় প্রয়োজনের চাপে।

এই ছবিটি তাই শুধু সুন্দর দৃশ্য নয়; এটি একটি সতর্কবার্তা। আমাদের মনে করিয়ে দেয়—শিশু মানেই দায়িত্ব। তাদের জন্য চাই নিরাপদ শৈশব, খেলাধুলার সুযোগ, শিক্ষার নিশ্চয়তা। প্রযুক্তির যুগে দাঁড়িয়ে আমরা যদি প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার এই সহজ আনন্দটুকু রক্ষা করতে না পারি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানবেই না—সরিষার হলুদ মাঠে দৌড়ানোর সুখ কতটা গভীর হতে পারে।

ছবির শিশুরা আজ হাসছে। প্রশ্ন হলো—এই হাসি কি আগামী দিনের বাংলাদেশেও টিকে থাকবে?

মধুখালীতে মোটরসাইকেল চোরচক্রের সদস্য গ্রেপ্তার, উদ্ধার চোরাইকৃত মোটরসাইকেল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম
মধুখালীতে মোটরসাইকেল চোরচক্রের সদস্য গ্রেপ্তার, উদ্ধার চোরাইকৃত মোটরসাইকেল

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় মোটরসাইকেল চোরচক্রের একজন সক্রিয় সদস্যকে চোরাইকৃত মোটরসাইকেল ও একটি মাস্টার চাবিসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে মধুখালী থানা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার মেগচামী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মাসুদের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান পরিচালনা করে ওই ব্যক্তিকে আটক করে।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত আব্দুল শুকুর মোল্লার ছেলে। অভিযানের সময় তার হেফাজত থেকে একটি চোরাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর কুষ্টিয়া হ-১৬-০২২৫। এছাড়া মোটরসাইকেল চুরিতে ব্যবহৃত একটি মাস্টার চাবিও জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষে গ্রেফতারকৃত আসামিকে ফরিদপুরের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির মো. তাইজুর রহমান বলেন, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মধুখালী থানা পুলিশের একটি দল মোটরসাইকেল চোরচক্রের একজন সক্রিয় সদস্যকে চোরাইকৃত মোটরসাইকেল ও মাস্টার চাবিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। চোরচক্রের সঙ্গে জড়িত অন্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশি তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, এর আগে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটলেও সেগুলোর কোনোটিই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতারকৃত আসামির মাধ্যমে এসব চুরির রহস্য উদঘাটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সদরপুরে ভুয়া স্মার্ট দাখিলা চক্রের ফাঁস, এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

শিশির খাঁন, সদরপুর:
প্রকাশিত: বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৫ পিএম
সদরপুরে ভুয়া স্মার্ট দাখিলা চক্রের ফাঁস, এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় স্মার্ট ভূমি উন্নয়ন করের ভুয়া দাখিলা তৈরি করে জমি রেজিস্ট্রির চেষ্টার অভিযোগে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আকোটের চর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দেবাশীষ রায় বাদী হয়ে সদরপুর থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সদরপুর উপজেলার আকোটের চর ইউনিয়নের কৃষ্ণমঙ্গলের ডাঙ্গী মৌজার নামজারি মামলা নং ৪৩৬৯-এর আওতাভুক্ত ২৬৫৪ খতিয়ানের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য মো. মোস্তফিজুর রহমানের পক্ষে তার আত্মীয় কামরুল ইসলাম ভূমি অফিসে উপস্থিত হন। সে সময় ভূমি কর্মকর্তা জানান, বদলিজনিত কারণে নামজারি আইডি সচল না থাকায় খতিয়ান সমন্বয় ও দাখিলা প্রদান এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।

পরবর্তীতে কামরুল ইসলাম দাখিলা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশনের জন্য গেলে সাব-রেজিস্ট্রার স্ক্যানের মাধ্যমে যাচাই করে দাখিলাটি সন্দেহজনক মনে করেন এবং বিষয়টি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অবহিত করেন। দলিলদাতাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কামরুল ইসলাম তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দাখিলাটি সংগ্রহ করেছিলেন।

পরবর্তীতে কামরুল ইসলাম জানান, আকোটের চর ইউনিয়নের মোলামের ডাঙ্গী এলাকার আব্দুল ছত্তার বেপারীর ছেলে রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব মিয়ার মাধ্যমে তিনি দাখিলাটি পেয়েছেন। যাচাই-বাছাই শেষে দাখিলাটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত রাকিবুল ইসলামের মোবাইল ফোন তল্লাশি করে একটি যুক্তরাজ্যের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়া দাখিলা প্রেরণের প্রমাণ পাওয়া যায়। বিনিময়ে অভিযুক্ত ২ হাজার ৪০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে প্রদান করেন। এ ঘটনায় দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪৬৫ ও ৪৬৮ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত আনজুম পিয়া বলেন, “স্মার্ট ভূমি উন্নয়ন করের ভুয়া দাখিলা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রির চেষ্টা করা হচ্ছিল। সাব-রেজিস্ট্রারের সন্দেহের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করে জাল দাখিলা প্রস্তুতকারককে শনাক্ত করতে সক্ষম হই। পরে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

সদরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন শাহ্ জানান, “ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, ভূমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনলাইন প্রতারণা বিষয়ে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। ভূমিসেবা গ্রহণের সময় অবশ্যই https://land.gov.bd অথবা https://www.land.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দাখিলায় প্রদত্ত QR কোড স্ক্যান করে https://www.ldtax.gov.bd/dakhila অথবা https://ldtax.gov.bd/dakhila ইউআরএল নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতারক চক্রগুলো https://www.portal.gov.bd অথবা https://portal.ldtax.gov.bd এর সঙ্গে অতিরিক্ত অক্ষর বা ডোমেইন যুক্ত করে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করছে। এ ধরনের প্রতারণাকে ইউআরএল স্পুফিং বলা হয়, যার মাধ্যমে ফিশিং, হ্যাকিংসহ বিভিন্ন সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এতে ব্যক্তিগত ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ডিভাইসে ম্যালওয়্যার প্রবেশের ঝুঁকিও রয়েছে।