ফরিদপুর নিখোঁজের তিনদিন পর আখক্ষেতে মিলল নির্মাণশ্রমিকের মরদেহ
কুয়াশার চাদরে ঢাকা শহর তখনো পুরোপুরি জাগেনি। রাস্তার বাতিগুলোর আলো ম্লান, বাতাসে কনকনে শীত। তবুও জীবনের প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছেন অনেকেই। কেউ শ্রমের খোঁজে, কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউ বা শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে।
ফরিদপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোর পাঁচটা থেকেই জড়ো হতে থাকেন দিনমজুররা। পুরোনো চাদর গায়ে, কেউ কেউ আবার পলিথিনে নিজেকে জড়িয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। কাজ মিলবে কি না—এই অনিশ্চয়তার মাঝেই কেটে যায় তাদের সকাল। কথা হয় রহিম মিয়ার সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। বললেন,
“শীত তো আসে যায়, কিন্তু কাজ না থাকলে পেটের আগুন নেভাবো কীভাবে?”
শহরের অলিগলিতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে বের হন কয়েকজন সবজি বিক্রেতা। শীতের সকালে বিক্রি কম, তবুও থেমে থাকলে সংসার চলবে না। গৃহবধূরা ভোরেই বাজারে যাচ্ছেন—কম দামে সবজি কেনার আশায়। কেউ কেউ সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, শীতের মধ্যেই ইউনিফর্ম গায়ে চাপিয়ে।
কুমার নদের পাড়ে বসে থাকা কয়েকজন বৃদ্ধের চোখে ভিন্ন এক গল্প। কারও ছেলে শহরের বাইরে, কারও সন্তান বিদেশে। শীতের সকালে নদীর ধারে বসে রোদ ওঠার অপেক্ষায় থাকেন তারা। একজন বৃদ্ধ ধীরে বললেন,
“রোদ উঠলে শরীর একটু ভালো লাগে, মনটাও।”
শহরের হাসপাতাল চত্বরে ভোরেই দেখা মেলে রোগীর স্বজনদের। কেউ কম্বল পেতে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। ঠান্ডা মেঝেতে বসে চা খাচ্ছেন একজন মা—ভেতরে তার অসুস্থ সন্তান। তার চোখে ক্লান্তি, তবুও আশার আলো নিভে যায়নি।
এই শহরে শীত কেবল তাপমাত্রা নয়, শীত যেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। তবুও মানুষ থেমে থাকে না। কেউ হাল ছাড়ে না। প্রতিটি সকালই নতুন করে লড়াই শুরু করার সাহস এনে দেয়।
ফরিদপুরের এই ভোরগুলো হয়তো খুব জাঁকজমকপূর্ণ নয়, কিন্তু এখানেই লুকিয়ে আছে মানুষের অদম্য জীবনচর্চা, সংগ্রাম আর মানবিকতার নীরব গল্প।
ফরিদপুর জিলা স্কুলের গৌরবময় ১৮৫ বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমস (নগর বাউল)-এর বহুল প্রতীক্ষিত সংগীতানুষ্ঠান হামলার ঘটনায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে জিলা স্কুলের ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
শুক্রবার (২৫) রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্কুল চত্বরে নগর বাউলের সংগীত পরিবেশনের কথা ছিল। তবে অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে বহিরাগতদের অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশে বাধা দিলে একদল বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মঞ্চ দখলের চেষ্টা চালায়। এতে মুহূর্তেই অনুষ্ঠানস্থলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুললে বিক্ষুব্ধরা সরে যেতে বাধ্য হয়। তবে এরই মধ্যে ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও দর্শক আহত হন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রাত ১০টার দিকে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান শামীম মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেন— উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেমসের সংগীতানুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক রাজীবুল হাসান খান বলেন,“জেমসের অনুষ্ঠান সফল করতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন, কী কারণে এবং কারা হামলা চালাল—তা বুঝে উঠতে পারিনি। ইটের আঘাতে আমাদের জিলা স্কুলের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশে অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি।”
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুই দিনব্যাপী ১৮৫ বর্ষপূর্তি ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুক্রবার রাতে র্যাফেল ড্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নির্ধারিত ব্যান্ড সংগীত শিল্পী জেমসের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য এ আয়োজনের সমাপ্তি হওয়ার কথা ছিল।
ঐতিহাসিক ফরিদপুর জিলা স্কুল ব্রিটিশ শাসনামলে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হাতেগোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ের একটি। ১৮৪০ সালে যাত্রা শুরু করা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ১৮৫ বছর ধরে এ অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আন্দোলন ও সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানে দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদকসহ একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চর কৃষ্ণপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মো. শেখ সাদি (৩৫) নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একই এলাকার মৃত আঃ কাদের শেখের ছেলে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার বিকালে যৌথবাহিনী কৃষ্ণপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে শেখ সাদির কাছ থেকে তিনটি দেশীয় অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি, একটি খেলনা পিস্তল এবং ৪২০টি ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, গ্রেপ্তার শেখ সাদি একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি মসজিদের মাইকে মাইকিং করে স্থানীয় লোকজন জড়ো করে মব সৃষ্টির চেষ্টা করেন। তবে যৌথবাহিনীর তৎপরতায় তাকে আটক করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডিয়ার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তারকৃতকে সদরপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনে সেনাবাহিনী সর্বদা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কেউ যদি মাদক, অস্ত্র বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কোনো তথ্য জানতে পারেন, তাহলে নিকটস্থ সেনাক্যাম্প বা থানাকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন
Array