খুঁজুন
বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২ পৌষ, ১৪৩২

ভূমিকম্পে ভূমি কাঁপে, আত্মা কাঁপে

জয়ন্ত সরকার
প্রকাশিত: বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:০৪ পিএম
ভূমিকম্পে ভূমি কাঁপে, আত্মা কাঁপে

ভূমিকম্প। চলমান বাংলাদেশের যাপিত জীবনে ভয়ংকর এক আতঙ্কের নাম। গত ২১ নভেম্বর, ২০২৫, শুক্রবার নরসিংদীর মাধবদীতে সৃষ্ট ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সমগ্র বাংলাদেশ, জনমনে তৈরি হয় ব্যাপক আতঙ্ক। তার পর থেকে দফায় দফায় দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সৃষ্ট ছোট ছোট মাত্রার ভূমিকম্প এই আতঙ্ক বাড়িয়ে চলেছে ক্রমান্বয়ে। পাশাপাশি তথাকথিত ভিউয়ের নেশায় কিছু কিছু গণমাধ্যমের উন্মাদনা, অতিরঞ্জিত প্রচারণা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দেশবাসীর মনোজগতে ফেলেছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষ করে কোমলমতি শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মারাত্মকভাবে, যা তাদের মননশীলতা বিকাশে রাখতে পারে সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব। প্রকৃতির অবারিত আশীর্বাদে মহিমান্বিত আমাদের এই সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা বঙ্গভূমি। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য যেমন এর নান্দনিক সৌন্দর্যের আধার; তেমনি প্রায়ই এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের উপনীত করে নির্মম বাস্তবতার সামনে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, দাবদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, ভূমিকম্প ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে কোনোরকম পূর্বাভাস বা পূর্বসংকেত ছাড়াই যে দুর্যোগটি প্রলয়ংকরী ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম, সেটি হচ্ছে ভূমিকম্প।

সাধারণত ভূমিকম্প বলতে যে কোনো ধরনের ভূকম্পনজনিত ঘটনাকে বোঝায়। সেটা প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের কারণ হচ্ছে ভূগর্ভে ফাটল ও স্তরচ্যুতি হওয়া। তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে—ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরি সংঘটিত হওয়া এবং শিলাচ্যুতি জনিত কারণে। পাশাপাশি এগুলো অন্যান্য কিছু কারণেও হতে পারে। যেমন—তাপ বিকিরণ, ভূগর্ভস্থ বাষ্প, ভূমিধস, ভূপাত, হিমবাহের প্রভাবে, খনিতে বিস্ফোরণ বা ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক গবেষণায় ঘটানো পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকেও। ভূপৃষ্ঠের গভীরে অবস্থিত গ্যাস কোনো ফাটল বা আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলে সে স্থানটি ফাঁকা হয়ে যায়। ফলে পৃথিবীর ওপরের অংশ ওই ফাঁকা স্থানে হঠাৎ দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করে। এমতাবস্থায়ও ভূপৃষ্ঠে প্রবল কম্পন অনুভূত হতে পারে। আবার ভূ-অভ্যন্তরস্থ শিলায় ক্রমাগত পীড়নের ফলে বিভিন্নরকম শক্তি সঞ্চিত হয়। সেই শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে অর্থাৎ ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এ ধরনের আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনও ভূমিকম্প হিসেবে পরিচিত। সাধারণত কম্পন-তরঙ্গ হতে যে শক্তি উৎপন্ন হয়, তা ভূমিকম্প আকারে প্রকাশিত হয়। এই তরঙ্গ ভূ-গর্ভের কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সৃষ্টি হয় এবং উৎসস্থল থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ মোদ্দাকথা হচ্ছে, ভূত্বকের উপরে বা নিচে শিলাস্তরের স্থিতিশীলতার বা অভিকর্ষীয় ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটার ফলে ভূপৃষ্ঠে সৃষ্ট কম্পনের নামই ভূমিকম্প। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে ১-২ মিনিট স্থায়ী হয়। খুব কমসংখ্যক ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। কখনো কখনো কম্পন এত দুর্বল হয় যে, অনুভবও করা যায় না।

ভূমিকম্প সাধারণত তিন ধরনের হয়। মৃদু, মাঝারি এবং প্রচণ্ড। আবার উৎসের গভীরতা অনুসারে ভূমিকম্প তিনভাগে বিভক্ত। অগভীর, মধ্যবর্তী এবং গভীর ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূপৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে অগভীর, ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে মধ্যবর্তী এবং ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ যা তরঙ্গ বা কম্পন রেকর্ড করে এবং ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্রের নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্রা ৫-এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। ভূমিকম্প এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে এর মাত্রা ১০ থেকে ৩২ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ – ৫.৯৯ মাঝারি, ৬ – ৬.৯৯ তীব্র, ৭ – ৭.৯৯ ভয়াবহ এবং ৮-এর ওপর অত্যন্ত ভয়াবহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভূমিকম্প হলে ভূ-ত্বকে অসংখ্য ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয়। সমুদ্রতলের অনেক স্থান উপরে ভেসে উঠে দ্বীপের সৃষ্টি হতে পারে। আবার স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত বা বন্ধ হয়ে যায়। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পর্বতগাত্র থেকে বড় বড় বরফখণ্ড নিচে পড়ে যায়, ফলে পর্বতের পাদদেশ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তীব্র ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের পানি সাময়িকভাবে তীর থেকে নিচে নেমে কিছুক্ষণ পরে প্রচণ্ড গর্জনসহ ১৫-২০ মিটার উঁচু হয়ে জলোচ্ছ্বাস আকারে উপকূলে আছড়ে পড়ে। যা সুনামি হিসেবে পরিচিত। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামিতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভারত প্রভৃতি দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

প্রাগৈতিহাসিককালে পৃথিবীর সকল স্থলভাগ একত্রে ছিল। সময়ের পরিক্রমায় সেগুলো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর উপরিভাগের ৭০-১০০ কিলোমিটার পুরুত্বের লিথোস্ফিয়ার ১৯-২০টি অনমনীয় টেকটোনিক প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। উত্তপ্ত ও নরম এস্থোনোস্ফিয়ারের ওপর ভাসমান এ প্লেটগুলো প্রতিনিয়ত এবং বৈশ্বিকভাবে গতিশীল। এই টেকটোনিক মুভমেন্ট ভূ-অভ্যন্তরীণ কনভেকশন কারেন্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তবে প্লেটগুলোর প্রকৃতি ও প্রান্তীয় বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে প্লেটের গতি-প্রকৃতি ও মাত্রা ভিন্নতর হয়ে থাকে। ভূপৃষ্ঠের আয়তন সীমিত হওয়ায় টেকটোনিক প্লেটগুলো মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে সংকুচিত হয়ে যায়, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১০০ বছরে প্রায় দেড় মিটার। অন্যদিকে বিপরীতমুখী সম্প্রসারণের মাধ্যমে জন্ম হয় নতুন প্লেটের। ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, পাহাড়-পর্বত সৃষ্টিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ভূত্বক গঠনকারী প্লেটগুলোর সঞ্চারণের ওপর। ভূ-অভ্যন্তরস্থ টেকটোনিক প্লেটসমূহ পরস্পরের সঙ্গে লেগে থাকে। কোনও কারণবশত এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই তরঙ্গ অত্যন্ত শক্তিশালী হলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। তারপরও যথেষ্ট শক্তি সঞ্চিত থাকলে সেটা ভূ-ত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। ভূ-অভ্যন্তরের গলিত পদার্থসমূহ অবস্থান করে টেকটোনিক প্লেটগুলোর ঠিক নিচেই। প্রাকৃতিক কোনো কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোও স্থানচ্যুত হয়। এসময় একটি প্লেটের কোনো অংশ অপর প্লেটের নিচে ঢুকে গেলে প্রচণ্ড ঘর্ষণের ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়। যার চূড়ান্ত পরিণতি ভূমিকম্প হিসেবে বহির্প্রকাশ।

ভূগর্ভে ভূকম্প-তরঙ্গ উৎপত্তিস্থলকে বলা হয় ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা হাইপোসেন্টার। কেন্দ্র থেকে ভূপৃষ্ঠের ওপর সর্বনিম্ন দূরত্বে লম্ব টানলে যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে বলে উপকেন্দ্র বা এপিসেন্টার। ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমা অতিক্রম করলে শিলায় ফাটল ধরে এবং শক্তি নির্গত হয়। তাই সাধারণত ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখা অংশে অবস্থান করে। সচরাচর ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিমির মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কি.মি. গভীরে অবস্থিত গুরুমণ্ডল (Mantle) থেকেও ভূ-কম্পন সৃষ্টি হতে পারে।

প্রাকৃতিকভাবেই কার্বন চক্রের প্রভাবে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। বৈশ্বিকভাবে ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার উৎসস্থল মূলত দুটি। একটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘রিং অফ ফায়ার এলাকা’। পৃথিবীতে সংঘটিত ভূমিকম্পসমূহের ৯০ শতাংশের উৎসস্থল এটা। অপরটি ‘আলপাইন-হিমালয়ান’ অঞ্চল এবং ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ এই অঞ্চল তথা ইন্ডিয়ান, ইউরেশীয় এবং বার্মা টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান প্লেট এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল এবং পূর্বে বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের সংযোগস্থল। ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান প্লেট দুটি ১৯৩৪ সালের পর থেকে হিমালয়ের পাদদেশে আটকে আছে, অপেক্ষা করছে বড় ধরনের নড়াচড়ার অর্থাৎ তীব্র মাত্রার ভূ-কম্পনের। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ইন্ডিয়ান প্লেট মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের প্লেটকে বছরে ৪৬ মিলিমিটার করে ধাক্কা দিচ্ছে এবং ক্রমান্বয়ে বার্মিজ প্লেটের নিচে চলে যাচ্ছে। প্লেটগুলো এভাবে গতিশীল থাকায় বাংলাদেশ ভূখণ্ডও ক্রমান্বয়ে সরে যাচ্ছে।

বিগত প্রায় ৪০০ বছর ধরে বাংলাদেশের অবস্থানস্থল তথা ইন্ডিয়ান-বার্মা টেকটোনিক প্লেটে চাপ জমে উঠছে। এই চাপ মুক্ত হলে সৃষ্ট ভূমিকম্পের মাত্রা হতে পারে প্রায় ৮.২ রিখটার, এমনকি তা ৯ রিখটারেও পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে ভূমিকম্পনের উৎস দুটি হলো পূর্বাঞ্চলীয় সাবডাকশন জোন ও উত্তরাঞ্চলীয় ডাউকি ফল্ট জোন যা হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায়। এসব স্থানে অনিবার্যভাবে ভূমিকম্প সংঘটিত হবে। সাবডাকশন জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয় এবং একটির নিচে অন্যটি তলিয়ে যায়। ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোন’ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোন আবার দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি হলো লকড জোন, অপরটি স্লো-স্লিপ জোন। লকড জোন ভয়াবহ ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। যা বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তে বা সাবডাকশন জোনের পশ্চিমে অর্থাৎ সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-মেঘনা নদী থেকে পূর্বে ভারতের মণিপুর-মিজোরাম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানে ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। ফলে বর্তমানে সেখানে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার মতো শক্তি সঞ্চিত আছে।

ভূ-তাত্ত্বিক গঠন অনুসারে বাংলাদেশে ৮টি ভূতাত্ত্বিক চ্যুতি এলাকা বা ফল্ট জোন সক্রিয় রয়েছে। এগুলো হচ্ছে বগুড়া চ্যুতি এলাকা, রাজশাহীর তানোর চ্যুতি এলাকা, ত্রিপুরা চ্যুতি এলাকা, চট্টগ্রাম উপকূল বরাবর সীতাকুণ্ড-টেকনাফ চ্যুতি এলাকা, সিলেট-মেঘালয় সীমান্তের ডাউকি চ্যুতি এলাকা, ডুবরি চ্যুতি এলাকা, সিলেটের শাহজীবাজার চ্যুতি এলাকা (আংশিক-ডাউকি চ্যুতি) এবং রাঙামাটির বরকলে রাঙামাটি চ্যুতি এলাকা। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সমতল ভূমিতে অসংখ্য ফাটল অবস্থিত, যা ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। রাজধানী ঢাকার পূর্বে, পশ্চিমে, উত্তরে ও দক্ষিণে অর্থাৎ চারপাশেই ভূমিকম্প সৃষ্টি হওয়ার মতো ফাটল লক্ষ্য করা যায়।

যুগ যুগ ধরে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে সৃষ্ট বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ড ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে। ফলে কিছু কিছু জায়গা তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে বিশালাকার ভবন, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ও স্থাপনা। প্রায় ৬২ হাজার বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বাংলাদেশকে, ভূমিকম্পের তীব্রতার ভিত্তিতে ভূ-কম্পন এলাকাভিত্তিক মানচিত্রে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে ৪৩ শতাংশ এলাকা উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে অর্থাৎ জোন-১ এ অবস্থিত। এলাকাগুলো হচ্ছে পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণ অংশ, এবং ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ। ৪১ শতাংশ এলাকা মধ্যমমাত্রার ঝুঁকিতে অর্থাৎ জোন-২ এ অবস্থিত। এলাকাগুলো হচ্ছে রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা। ১৬ শতাংশ এলাকা নিম্নমাত্রার ঝুঁকিতে অর্থাৎ জোন-৩ এ অবস্থিত। এলাকাগুলো হচ্ছে বরিশাল, পটুয়াখালী এবং সকল দ্বীপ ও চর।

সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় রাজধানী ঢাকার ভূ-ত্বকও নরম পাললিক শিলার সমন্বয়ে গঠিত। ঢাকার সম্প্রসারিত অংশে জলাভূমি ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসন এলাকা। ভূমিকম্পের সময় নরম মাটি ও ভরাট করা এলাকার মাটি ভূমিকম্পের কম্পন তরঙ্গকে বাড়িয়ে দেয়, ফলে বেড়ে যায় ভূমিকম্পের তীব্রতা। ভূমিকম্পনের জন্য ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্বের ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকাও অন্যতম। ঢাকা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরত্বে মধুপুর অঞ্চলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা অবস্থিত। এদিকে ঘরবাড়িসহ ঢাকার অধিকাংশ অবকাঠামো এবং স্থাপনাসমূহ ভূমিকম্পসহনীয় বিল্ডিং কোড অনুসারে নির্মিত নয়। ফলে ভূ-কম্পন মানচিত্রে ঢাকা জোন-২ অর্থাৎ মাঝারিমাত্রার ঝুঁকিতে অবস্থান করলেও, এতদ্ সংলগ্ন নিকটবর্তী অঞ্চলে তীব্রমাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার প্রায় ৮০ শতাংশ ভবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসময় অপরিকল্পিত ইউটিলিটি সংযোগসমূহ থেকে হতে পারে ফায়ার টর্নেডো। ফলে যে প্রলয়ংকরী ধ্বংসলীলা সংঘটিত হবে তা ছাড়িয়ে যেতে পারে পৃথিবীর অন্যান্য সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিকেও। ঢাকার কিছু কিছু অঞ্চলে ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ এবং ত্রান কার্যক্রম পরিচালনাও হয়ে পড়বে দুঃসাধ্য। তাই সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় রাষ্ট্রীয়ভাবে জরুরি ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক। ভূমিকম্পের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং মহড়ার মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে অপসারণ অথবা রেট্রো ফিটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড-২০২০ অনুসারে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। রাজধানী ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ, প্রয়োজনে কম ভূমিকম্পন প্রবণ অঞ্চলে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পাশাপাশি দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

সাধারণত মূল ভূমিকম্পের পূর্বে ও পরে ছোট ছোট ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। যেগুলোকে বল হয় ফোরশক এবং আফটার শক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে ঘন ঘন স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প পরিলক্ষিত হচ্ছে। এগুলোকে ফোরশক হিসেবে বিবেচনা করলে অদূর ভবিষ্যতে প্রচণ্ড মাত্রার ভূমিকম্পের প্রবণতা স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়। আর মূল ভূমিকম্প পরবর্তী তিন-চার দিনের মধ্যে আফটার শকের প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়, যা মারাত্মক বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্পও আন্তর্জাতিক সীমানা রেখা মেনে সংঘটিত হয় না। টেকটোনিক প্লেটের সাংঘর্ষিকস্থলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভূটান, চীনের মতো যে কোনো একটি দেশে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প সংঘটিত হলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসা অসম্ভব নয়। তাই সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে আন্তঃদেশীয় প্রস্তুতি গ্রহণ সময়ের অপরিহার্য দাবি।

লেখক : জয়ন্ত সরকার, কলাম লেখক এবং গণমাধ্যমকর্মী

সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:০৯ পিএম
সালথায় পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে কৃষকলীগ নেতা আটক

ফরিদপুরের সালথায় ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গিয়ে খোরশেদ খান (৪৫) নামে এক কৃষক লীগ নেতার হামলার শিকার হয়েছেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল। এ ঘটনায় ওই হামলাকারী কৃষকলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭ টার দিকে উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

খোরশেদ খান গট্টি ইউনিয়নের কৃষকলীগের সহ-সভাপতি ও ওই গ্রামের উচমান খানের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের আগুলদিয়া মোড় এলাকায় এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীকে ধরতে যায় একদল পুলিশ। এ সময় ওই আসামীকে ধরতে বাধা দেন কৃষক লীগ নেতা খোরশেদ খান। এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলু রহমান খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত এক আসামীকে ধরতে গেলে খোরশেদ খান বাধা প্রদান করেন এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মুকুল আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মুস্তাফিজুর রহমান শিমুল, চরভদ্রাসন:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:৩৩ পিএম
মহান বিজয় দিবসে চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা

মহান বিজয় দিবসে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে চরভদ্রাসন সরকারী কলেজ মাঠে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জালাল উদ্দিন।

সভার শুরুতে উপজেলার প্রায়াত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

পরে ইউএনও জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) যায়েদ হোছাইন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ ও মো. ফখরুজ্জামান প্রমুখ।

মধুখালীতে গড়াই সেতুর নবনির্মিত ডিজিটাল টোল ঘরের উদ্বোধন

মো. ইনামুল খন্দকার, মধুখালী:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:১৩ পিএম
মধুখালীতে গড়াই সেতুর নবনির্মিত ডিজিটাল টোল ঘরের উদ্বোধন

ফরিদপুরের মধুখালীর কামারখালীতে গড়াই সেতুর নবনির্মিত টোল ঘরের শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নবনির্মিত ডিজিটাল এ টোল ঘর উদ্বোধন করেন সড়ক ও জনপথের (সওজ) গোপালগঞ্জ অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাদিকুল ইসলাম।

এসময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- টোলের ইজাদার প্রতিষ্ঠান ও লোকমান হোসেন খান টেডার্সের স্বত্বাধিকার এবং পান্না গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলহাজ্ব লোকমান হোসেন খান।

অন্যান্যর মধ্যে এাময় উপস্থিত ছিলেন- পান্না গ্রুপের পরিচালক আরিয়ান খান, মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান, পান্না গ্রুপের জিএম (প্রশাসন) শেখ মো. আবুল কালাম, মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ সতেজ, টোলের ম্যানেজার মো. মিজানুর রহমান সহ সাংবাদিক ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

এসময় সড়ক ও জনপথের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সাদেকুল ইসলাম বলেন, টোল ঘরের কারণে অতিরিক্ত যানজট যেন সৃষ্টি না হয়, এতে জনগণের দুর্ভোগ হয়। সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখার জন্য ইজারাদার প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ করেন।

একই সময় মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, টোল ঘর এলাকার যেকোনো প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।