খুঁজুন
সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১ কার্তিক, ১৪৩২

পেশাদার আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আইনি রূপরেখা

তানভীর আহমেদ
প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১২:৫৭ পিএম
পেশাদার আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আইনি রূপরেখা
২০২২ সালের শেষদিকে যুক্তরাজ্যের একাধিক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেন যে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী এবং বিচারবিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক রব তাদের প্রতি বুলিং (বলপ্রয়োগ বা ভয় দেখিয়ে কাউকে কিছু করতে বাধ্য করা) এবং অপমানজনক আচরণ করছেন। অভিযোগগুলো মূলত বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আসে।  সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অভিযোগগুলো পর্যালোচনার জন্য অ্যাডাম টলি কেসি-কে Independent Investigator হিসেবে নিয়োগ দেন। টলি যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় সিনিয়র ব্যারিস্টারদের একজন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের আচরণসংক্রান্ত তদন্ত, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ অনিয়ম অনুসন্ধান এবং কর্মক্ষেত্রে অনৈতিক আচরণসংক্রান্ত বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তিনি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ King’s Counsel খেতাব অর্জন করেন; সেজন্যই তার নামের পশ্চাতে কেসি লেখা হয়। টলি প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিস্তারিত তদন্ত ও প্রমাণাদি সংগ্রহ করেন। তদন্তে দুটি ঘটনায় বুলিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন যে অভিযুক্ত মন্ত্রী সংক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের প্রতি অযথা রূঢ় ও ভয় সৃষ্টিকারী আচরণ করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের ‘মিনিস্টিরিয়াল কোড’-এর লঙ্ঘন।  অভিযুক্ত উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রব এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও তদন্তের ফলাফলের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৩ উপপ্রধানমন্ত্রী ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন অ্যাঞ্জেলা রেইনার; পাশাপাশি তিনি গৃহায়ন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল যে তিনি ইংল্যান্ডের হোভ এলাকায় নিজের দ্বিতীয় বাড়ি কেনার সময় ৪০ হাজার পাউন্ডের স্ট্যাম্প ডিউটি (কর) কম পরিশোধ করেছেন। বর্তমান ‘স্বাধীন উপদেষ্টা’ স্যার লরি ম্যাগনাসের তদন্তে অ্যাঞ্জেলার অনিয়ম ধরা পড়ে। এরপর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ক্ষমতায় আসার পর গত ১৪ মাসে কিয়ার স্টারমারের মন্ত্রিসভা থেকে ৯ জন পদত্যাগ করলেন; যার বেশির ভাগই স্বাধীন উপদেষ্টার তদন্তের ফলস্বরূপ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির যে অভিযোগের মুখে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’-এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন, সেই অভিযোগের বিষয়েও এই স্বাধীন উপদেষ্টাই তদন্ত করেছিলেন।

যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী ও রাজনৈতিক পদাধিকারীদের করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে বিস্তারিত বিধান রয়েছে ৩৮ পৃষ্ঠার মিনিস্টিরিয়াল কোডে; যার সর্বশেষ ভার্সনটি নভেম্বর, ২০২৪-এ জারি হয়েছে। সেখানে সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, মন্ত্রী হিসেবে দেশ ও জনগণের সেবা করা একটি বিশেষ সুযোগ ও দায়িত্ব। মন্ত্রীদের উচিত সব ধরনের যোগাযোগ ও কার্যসম্পর্কে ভদ্রতা ও পেশাদারি বজায় রাখা এবং যাদের সঙ্গে তারা কাজ করেন তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান ও বিবেচনাবোধ প্রদর্শন করা। যাদের সঙ্গে তাদের কাজের সম্পর্ক রয়েছে যেমন সরকারি কর্মচারী, মন্ত্রিসভা ও সংসদীয় সহকর্মী বা সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে সম্পর্ক যথাযথ ও পেশাগত হওয়া উচিত। যে কোনো ধরনের হয়রানি, হুমকি, নিপীড়ন বা বৈষম্যমূলক আচরণ আচরণবিধির পরিপন্থি এবং তা কোনো অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না [অনুচ্ছেদ ১.৫]। মন্ত্রীদের অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে হবে এবং কখনো তাদের এমন কোনো কাজ করতে বলা যাবে না, যা সিভিল সার্ভিস কোডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় [অনুচ্ছেদ ১.৬] মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্ক একটি সহযোগিতা, যা তাদের অভিন্ন বা জনসেবামূলক দায়িত্বের (public service duty) ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। মন্ত্রীদের অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা রক্ষা করতে হবে এবং কখনো তাদের এমন কোনো কাজ করতে বলা যাবে না যা সিভিল সার্ভিস কোড এবং ‘সংবিধান সংস্কার এবং সুশাসনসংক্রান্ত ২০১০ সালের আইন’-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় [অনুচ্ছেদ ১.৮]। মন্ত্রীদের উচিত এটা নিশ্চিত করা যে সরকারি সম্পদ, যার মধ্যে সরকারি কর্মকর্তারাও অন্তর্ভুক্ত, কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা না হয় [অনুচ্ছেদ-১.১০]।

যদি বলা হয় যে আমাদের দেশেও তো ভালো ভালো আইনকানুন আছে, কিন্তু মানা হয় না। তাহলে তার জবাব কী হবে? না, আমাদের দেশে মন্ত্রীদের করণীয়-বর্জনীয় বিশেষ করে সিভিল সার্ভিসের নিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখার বিষয়ে স্পষ্ট বা বিস্তারিত বিধান নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে তার প্রতিকার কীভাবে হবে সেই সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান এই মিনিস্টিরিয়াল কোডের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের বিভিন্ন উপ-অনুচ্ছেদে পাওয়া যায়। সে মতে, যদি কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ক্যাবিনেট অফিসকে তথ্য অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতে পারেন অথবা তিনি বিষয়টি Independent Adviser on Ministerial Standards-এর কাছে তদন্তের জন্য পাঠাতে পারেন। যুক্তরাজ্যে ‘মন্ত্রীগণের আচরণবিধিবিষয়ক স্বাধীন উপদেষ্টার এই পদটি প্রথম চালু হয় ২০০৬ সালে। তিনি সরকার থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদাধিকারীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাকে তদন্তভার প্রদান করে থাকেন। তবে স্বাধীন উপদেষ্টা প্রয়োজন মনে করলে তার কাছে পাঠানো হয়নি, এমন অভিযোগও স্ব-উদ্যোগে তদন্ত শুরু করতে পারেন। তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে তিনি  শাস্তি বা ব্যবস্থা সম্পর্কেও সুপারিশ করতে পারেন। যদি তিনি মনে করেন যে তার তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা প্রয়োজন তবে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করতে পারেন। কোনো মন্ত্রী তার নিজের সততা বা স্বচ্ছতার বিষয়ে উত্থাপিত কোনো অভিযোগ বা প্রশ্ন পরিষ্কার করার জন্য নিজেই তদন্ত শুরু করার অনুরোধ জানাতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজন মনে করলে ‘স্বাধীন উপদেষ্টা’ ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তিকেও ইনডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেটর হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন। যেমনটি ঋষি সুনাক ব্যারিস্টার টলিকে উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রবের বিরূদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিলেন।

কানাডার নৈতিকতাবিষয়ক কমিশনার (আনুষ্ঠানিক নাম Office of the Conflict of Interest and Ethics Commissioner) হলো একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, যার মূল কাজ হলো ফেডারেল রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী এবং সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা যেন স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে না পড়েন এবং নৈতিক আচরণবিধি মেনে চলেন তা নিশ্চিত করা। তিনিও যুক্তরাজ্যের উপদেষ্টার মতোই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বা কারও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে থাকেন। তিনি সরাসরি সংসদকে রিপোর্ট করেন, সরকারি কোনো দপ্তরকে নয়। কানাডায় গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নাম Public Sector Integrity Commissioner (PSIC); যা সরকারি কর্মকর্তাদের নৈতিকতা, সততা ও সুশাসন রক্ষায় কাজ করে। এই সংস্থাটিও পুরোপুরি স্বাধীন এবং সরকার থেকে আলাদা। সরকারি কর্মকর্তারা নিরাপদে সেখানে যে কোনো অনিয়মের অভিযোগ জানাতে পারেন। কোনো মন্ত্রীর দ্বারা বা রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হলে নাম গোপন রেখেও অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। পিএসআইসি অভিযোগ দায়েরকারীকে সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য তার তথ্য কাউকে প্রদান করে না। অভিযোগ করার কারণে চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি বা হয়রানি থেকে রক্ষা পাওয়ার আইনি সুরক্ষাও রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইনে।

যুক্তরাজ্য বা কানাডায় কিংবা অন্য কোনো দেশে অনুসৃত নিয়মনীতির অনুরূপ বিধান আমাদের দেশে চালিয়ে দিতে আমরা বলতে পারি না। তবে এটা জরুরি যে আমরা এই বিষয়গুলো সম্পর্কে উদাসীন না থাকি এবং বিস্তারিত পরীক্ষানিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রণয়নে সচেষ্ট হই। সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘জনপ্রতিনিধির কর্মপরিধি’ শীর্ষক ৯.৯ নম্বর অনুচ্ছেদে সুপারিশ করেন যে ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিগণ কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কর্মপরিচালনায় হস্তক্ষেপ করবেন না। কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তি কোনো সরকারি কর্মচারীকে অন্যায্য ও বিধিবহির্ভূত কাজের জন্য অনৈতিক চাপপ্রয়োগ করলে তিনি বিষয়টি গোপনীয়ভাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করবেন বলে নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। কোনো বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্তৃক লিখিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে উপরস্থ কর্মকর্তা বা উপরস্থ জনপ্রতিনিধি ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন মনে করলে অবশ্যই তাকে লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করতে হবে। মৌখিক নির্দেশ বাস্তবায়ন করা যাবে না এবং মৌখিক নির্দেশে তা কার্যকর করা যাবে না।’ এটি সুপারিশ, স্বভাবতই পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা নয়। পূর্ণাঙ্গ বিধান প্রণয়ন অধিকতর পর্যালোচনার দাবি রাখে। উল্লিখিত সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় বিধান প্রণয়নের উদ্যোগের বিষয়ে আমার জানা নেই, তবে সরকার নিশ্চয় তা গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছে।

কারও কারও এই লেখা পড়ে মনে হতে পারে, যেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার মধ্যেই আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিহিত মর্মে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি মোটেও তা নয়। আমলাতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত নিরপেক্ষ ও পেশাদার আচরণ এবং ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য অনেকগুলো বিষয়ে হাত দিতে হবে। তবে বিশ্বের টপ র‌্যাংকিং ব্যুরোক্রেসির সংস্কার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে আমলাতন্ত্রের পেশাদারি বজায়ের উদ্দেশ্যে লিখিত বিধিবিধান থাকা জরুরি; নতুবা দিন শেষে সংস্কারের প্রকৃত সুফল ঘরে তোলা অথবা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হতে পারে।  সম্প্রতি একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ব্যুরোক্রেট আমাকে বললেন যে তোমরা অভিযোগ কর রাজনীতিবিদরা তোমাদের কাজের ওপর হস্তক্ষেপ করে; বরং আমি তো বলি তোমরাই কাঙ্ক্ষিত পদায়ন আর পদোন্নতি পেতে নিজেরাই তাদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াও। তার অভিজ্ঞতালব্ধ পর্যবেক্ষণ প্রণিধানযোগ্য; তবে সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই লেখার মাধ্যমে মূলত আমাদের আর্জি হচ্ছে, যদি কোনো ক্ষমতাসীন পদাধিকারী অন্যায়ভাবে সরকারি কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করেন, তাহলে সেই ‘বেচারা’ কর্মচারী যদি চাপের মুখেও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখার সংকল্প করেন, তবে তার আইনি প্রতিকার আর সুরক্ষা কোন্ পথে হবে? এই ভাবনার খোরাক জোগাতেই এই নিবন্ধের অবতারণা।
লেখক : সরকারের যুগ্ম সচিব, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন

শীতের আগেই হাতে খসখসে ভাব? মেনে চলুন ঘরোয়া উপায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১:২১ পিএম
শীতের আগেই হাতে খসখসে ভাব? মেনে চলুন ঘরোয়া উপায়

প্রকৃতিতে এখন হেমন্তকাল চলছে। শীতের আগের এ সময়টায় ত্বকের পাশাপাশি হাতেও খসখসে রুক্ষ ভাব দেখা দেয়। এ সমস্যা দূর করতে নিয়মিত ত্বককে ময়েশ্চারাইজিং করা জরুরি। এছাড়া সঠিক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার এবং হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মতো কিছু সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।

হাতের যত্নে কী করবেন

সঠিক হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন: অ্যালকোহল বা রাসায়নিক-যুক্ত হ্যান্ডওয়াশ এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়। গ্লিসারিন বা অ্যালোভেরা যুক্ত মাইল্ড হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করুন।

হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন: অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এ কারণে হাত ধোয়ার জন্য হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।

ময়েশ্চারাইজ করুন: প্রতিবার হাত ধোয়ার পরে, বিশেষ করে শীতকালে, ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ফিরিয়ে আনতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন: দিনের বেলা এবং রাতে ঘুমানোর আগে গ্লিসারিন-ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

আর্দ্রতা ধরে রাখুন: হালকা গরম পানিতে গোলাপ জল এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি দ্রবণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।

রাতে যত্ন নিন: রাতে ঘুমানোর আগে হাতে গ্লিসারিন ও লেবুর রস মিশিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন। এই মিশ্রণ ত্বককে কোমল রাখতে সাহায্য করে।

গ্লাভস পরুন: বাইরে বা ঠান্ডা জায়গায় গেলে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করুন।

হালকা স্ক্রাব করুন: হাত পরিষ্কার করার জন্য স্ক্রাবিং করতে পারেন। এটি ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।

নারকেল তেল ব্যবহার করুন: নারকেল তেল ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং ত্বককে নরম রাখতে সাহায্য করে।

সানস্ক্রিন: মুখের মতো হাতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তা না হলে ট্যান পরতে পারে। প্রতিদিন ভালো এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।

খেজুরে ভরপুর মরক্কোর বাজার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১:০৮ পিএম
খেজুরে ভরপুর মরক্কোর বাজার

মরক্কোর দ্রা–তাফিলালেত অঞ্চল এ বছর রেকর্ড পরিমাণ খেজুর উৎপাদনের পথে রয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, অনুকূল আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে ফলনের পরিমাণ এবং গুণমান উভয়ই গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে।

দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এরফুদ এলাকায়, জিজ নদীর তীরে অবস্থিত খেজুর বাগানগুলোতে এরই মধ্যে এক লাখ টনেরও বেশি খেজুর সংগ্রহ করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এ অঞ্চলের মধ্যম তাপমাত্রা ও পূর্ববর্তী মৌসুমের বৃষ্টিপাত খেজুরের বৃদ্ধি এবং পাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

স্থানীয় কৃষক বলেন, সেপ্টেম্বরে বাজারে খেজুরের সরবরাহ বেড়েছে। ফলন ভালো হয়েছে, তাই আমরা সময়মতো সংগ্রহের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।

খেজুরে ভরপুর মরক্কোর বাজার

খেজুর পাকার সঙ্গে সঙ্গে বাগানে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। সবুজ থেকে সোনালি বা বাদামি রঙে পরিবর্তনের সময় কৃষকেরা হাতে কাঁচি বা দা ব্যবহার করে ফল সংগ্রহ করেন। এই প্রক্রিয়ায় দক্ষতা প্রয়োজন, যাতে গাছ ও ফলের ক্ষতি না হয়।

অন্য এক কৃষক জানান, সকালের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা খেজুর সংগ্রহে ব্যস্ত থাকি। বিভিন্ন জাতের খেজুর রয়েছে—মাঝহুল, বউফগুস, লখালক ও বউস্লিখ। সংগ্রহ শেষে মাটে ছড়িয়ে বাছাই ও শুকানোর কাজ করা হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন মৌসুমে স্থানীয় বাজারে খেজুরের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ব্যবসায়ীরাও রপ্তানির জন্য মানসম্মত খেজুর সংগ্রহে আগ্রহী।

সূত্র : আফ্রিকানিউজ

ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা কতটুকু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১:০৪ পিএম
ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ বাংলাদেশে আঘাত হানার আশঙ্কা কতটুকু

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানতে পারে। যদিও ঘূর্ণিঝড় সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিডব্লিউওটির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ তথ্য জানানো হয়।

পোস্টে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’ এখন পর্যন্ত সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটি বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে আঘাত হানতে পারে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে। তাই এটি বাংলাদেশে আঘাত হানবে এমন কোনো গুজবে আপাতত কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।

তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। মূলত এই বৃষ্টির সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করেই বৃষ্টিবলয় আঁখি আসতে পারে।

বিডব্লিউওটির আরও জানায়, বৃষ্টিবলয় আঁখি আসার কারণ হলো ঘূর্ণিঝড়ের দূরবর্তী প্রভাব এবং ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে আঘাতের পরে দিক পরিবর্তন করে দুর্বল হয়ে লঘুচাপ বা সার্কুলেশন আকারে বাংলাদেশের রংপুর রাজশাহী বিভাগের ওপরে বা কাছাকাছি আসতে পারে। তখন দেশের ভেতরে বৃষ্টির জন্য বেশ অনুকূল পরিবেশ তৈরি হবে। তবে সারা দেশে একযোগে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

কারণ এটি কোনো বর্ষাকালীন বৃষ্টিবলয় নয় যে সারা দেশে টানা ভারি বর্ষণ বা অধিকাংশ স্থানে ২০০/৩০০ মিমি বৃষ্টি হবে। এটি একটি ক্রান্তীয় বা সিস্টেম কেন্দ্রিক বৃষ্টিবলয়। এই ধরনের বৃষ্টি বলয়ে দেশের অল্প কিছু স্থানে ভারি বৃষ্টি এবং বাকি স্থানগুলোতে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি সিস্টেমের গতিপথের ওপরে নির্ভর করে অনেক স্থান বৃষ্টিহীন ও থাকতে পারে।

পোস্টে আরও বলা হয়, তেমনি বৃষ্টিবলয় আঁখির তীব্রতা এবং সক্রিয়তা দুটোই নির্ভর করছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থার গতিপথের ওপরে। তাই আমরা এখনও বৃষ্টি বলয়ের জেলাভিত্তিক আপডেট দেইনি। কারণ বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম চলছে। যার ফলে অনেকেই কৃষিকাজসহ নানান কাজ করছেন। এ সময় সামান্য বৃষ্টি হলেও অনেকের ক্ষতি হতে পারে। আবার হালকা বৃষ্টি কৃষি কাজে উপকার ও হতে পারে। কিন্তু ভারি বৃষ্টি হলেই বিপদ।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল রাত ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩০০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১২৮০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৬০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। এটি আগামীকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা বা রাত নাগাদ ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

এতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।

এ সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়াও উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে।