খুঁজুন
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২

ফরিদপুরের যৌনপল্লিতে জন্মনিবন্ধন জটিলতায় স্কুলের বাইরে শিশুরা

শ্রাবণ হাসান, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯:১৫ এএম
ফরিদপুরের যৌনপল্লিতে জন্মনিবন্ধন জটিলতায় স্কুলের বাইরে শিশুরা
জন্মনিবন্ধনের ডিজিটাল ব্যবস্থায় বাবার পরিচয় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় বিপাকে পড়েছে ফরিদপুরের যৌনপল্লির শিশুরা। অনেকেরই জন্মনিবন্ধন সনদ না থাকায় বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। ফলে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
ফরিদপুর শহরের রথখোলা ও সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকায় দুটি যৌনপল্লি রয়েছে। সেখানে থাকা ৩৮৯ যৌনকর্মীর শিশুসন্তান রয়েছে ২৯৬ জন। এসব শিশুর অধিকাংশের জন্মনিবন্ধন নেই।
এই শিশুদের আবাসিকের পাশাপাশি পড়াশোনার সুবিধা দিয়ে আসছে শাপলা মহিলা সংস্থা। দি ফ্রিডম ফান্ডের সহযোগিতায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। এর কর্মকর্তারা জানান, ডিজিটাল হওয়ার আগে নিবন্ধন করা গেছে, কিন্তু বর্তমানে জটিলতা শুরু হয়েছে। জন্মনিবন্ধন করাতে না পারায় শিশুদের স্কুলে ভর্তি নিচ্ছে না।
শাপলা মহিলা সংস্থা শহরতলির গেরদায় শিশুদের আবাসনের জন্য গড়ে তুলেছে ভবন। বর্তমানে সেখানে ৫০ মেয়ে ও ৩৫ ছেলে রয়েছে। সেখানে থাকা শিক্ষার্থীরা জানায়, অনেকেই স্কুলে যাচ্ছে, ক্লাসও করছে, তবে ভর্তি হতে না পারায় হাজিরা খাতায় নাম উঠছে না। পড়াশোনা নিয়ে অনেক স্বপ্ন তাদের; কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জন্মনিবন্ধন।
সংস্থার প্রোগ্রাম অফিসার লক্ষ্মণ বিশ্বাস জানান, তাঁরা সারা দেশের ১১টি যৌনপল্লির মা ও শিশুদের বিভিন্ন অধিকার নিশ্চিতে কাজ করছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মা ও শিশুদের জন্মসনদ। বর্তমানে যে অনলাইন সনদ, তা অনেকেরই নেই। এটা করতে যে কাগজপত্র দরকার, তা তাঁদের নেই।
লক্ষ্মণ বিশ্বাস বলেন, ‘২০২৫ সালে আমাদের হোমের ১৮টি শিশুকে এখনো ভর্তি করতে পারিনি। অনলাইন জন্মসনদ না থাকায় কোনো স্কুলই ভর্তি নেয়নি। এর মধ্যে কয়েকজন স্কুলে যাচ্ছে, ক্লাস করছে; কিন্তু ভর্তি হতে পারেনি। আমাদের লিখিত দিতে হয়েছে, স্কুলে কিছুদিনের মধ্যে জন্মসনদ দিতে হবে, তারপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি নেবে।’
এ নিয়ে কথা হলে সংস্থার উপ-নির্বাহী পরিচালক শ্যামল প্রকাশ অধিকারী জানান, অনেক মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেও জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। আবার যাঁদের আছে, সেখানে পেশার জায়গায় পতিতা এবং ঠিকানা হিসেবে যৌনপল্লি লেখা রয়েছে। অনেকেই এগুলো ব্যবহার করছেন না। এ কারণে শিশুদের জন্মনিবন্ধন করাতে সমস্যা হচ্ছে। আবার কারও মায়ের এনআইডিতে স্বামীর নাম নেই। ফলে বাবার নাম না থাকায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে না।
শ্যামল অধিকারী বলেন, ‘আগে জন্মনিবন্ধন করা সহজ ছিল। ডিজিটাল পদ্ধতি আসার পর সার্ভারে বাবার নাম ছাড়া শিশুদের জন্মসনদ করা যাচ্ছে না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, যৌনপল্লির শিশুদের জন্মনিবন্ধন সহজীকরণ করলে তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে।’
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক চঞ্চলা মণ্ডল জানান, শুধু মায়ের নামে সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করা গেলে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা সহজ হতো।
রথখোলা যৌনপল্লির এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার জন্মসনদ নেই। এনআইডি কার্ড আছে। সন্তানদের জন্মনিবন্ধন করাতে গেলে বাবার নাম জানতে চায়। আমরা চাই, শুধু মায়ের নামেই জন্মনিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়া হোক। এ ছাড়া ঠিকানা যৌনপল্লির স্থলে আশপাশের এলাকার নাম দেওয়ার দাবি জানাই।’
সিঅ্যান্ডবি ঘাট যৌনপল্লি সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নে অবস্থিত। ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হায়দার আলী খান জানান, আগে জন্মনিবন্ধন করা যেত; কিন্তু ডিজিটাল হওয়ার কারণে সার্ভারে বাবার নাম বা মায়ের জন্মসনদ না থাকলে শিশুদের সনদ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চৌধুরী রওশন ইসলাম বলেন, ‘আমি শুনেছি যৌনপল্লির শিশুদের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে কোথাও কোথাও সমস্যা হচ্ছে। সবাইকে বলে দিয়েছি, জন্মসনদ করে দেওয়ার জন্য। শিশুদের বাবার নাম ছাড়া মায়ের নাম দিয়েই জন্মনিবন্ধন করা যাবে, নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
সম্প্রতি এ জটিলতা নিয়ে দুই যৌনপল্লির অনিবন্ধিত শিশু ও মায়েদের সঙ্গে সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। এ সময় তিনি বলেন, সংশ্লিষ্টরা যেসব তথ্য দিতে সক্ষম হবেন, এর ওপর ভিত্তি করেই শিশুর জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। শাপলা মহিলা সংস্থার প্যাডে শিশু ও তাঁদের মায়েদের তথ্যের প্রত্যয়ন দেওয়ার এবং ইউপি সচিবকে এর আলোকে জন্মনিবন্ধন দিতে ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তিনি।

ফরিদপুরে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ২৭ জন

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ৫:৪৪ পিএম
ফরিদপুরে মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ২৭ জন
কোনো তদবির কিংবা ঘুষ ছাড়াই মাত্র ১২০ টাকার আবেদন ফিতে পুলিশে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন ফরিদপুর জেলার ২৭ জন চাকরিপ্রার্থী।
শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের এ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল জলিল।
সম্প্রতি পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কোনো প্রার্থীকে অর্থ, পৃষ্ঠপোষকতা বা সুপারিশের আশ্রয় নিতে হয়নি। নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই দিনমজুর বা নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান।
বুধবার (১৪ মে) রাতে ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন এসপি মো. আব্দুল জলিল।
এ তালিকায় ২৭ জনকে নিয়োগ ও আরও পাঁচজনকে অপেক্ষমাণ (ওয়েটিং) তালিকায় রাখা হয়। ফলাফল ঘোষণার পর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস ও আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পুলিশ কনস্টেবল পদে যাঁচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চাকরি প্রার্থীরা আবেদন করেন। এর মধ্যে ৪ মে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৫৩ জন, যাদের মধ্যে ৯১ জন উত্তীর্ণ হন। পরে ১৪ মে দিনব্যাপী মৌখিক (ভাইভা) পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং সেদিন রাতেই চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন  বলেন, আমার কোনো সুপারিশ ছিল না। ভেবেছিলাম চাকরিটা হবে না। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় নিজের নাম সবার ওপরে দেখে বিশ্বাস করতে পারিনি। এ স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়ার জন্য বর্তমান পুলিশ প্রশাসন ও নিয়োগ বোর্ডকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
ফরিদপুর জেলা পুলিশ জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শতভাগ স্বচ্ছতা ও নিয়ম অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। তিনটি ধাপ—শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যারা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন, তারাই নিয়োগ পেয়েছেন।

সালথায় ৭শ’ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ৩:৫৯ পিএম
সালথায় ৭শ’ পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারি আটক
ফরিদপুরের সালথায় ৭শ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ রমজান মোল্যা (৩৫) নামে এক মাদক কারবারীকে আটক করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান।
আটককৃত রমজান মোল্যা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের নারানদিয়া গ্রামের আফজাল মোল্যার ছেলে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নারানদিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে রমজান মোল্যাকে আটক করা হয়। এসময় তার ঘরের মধ্যে থেকে ৭’শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। আটককৃতর বিরুদ্ধে মাদকদ্র্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ফরিদপুরে ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদ: শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীরা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ২০২৫, ৩:৪৭ পিএম
ফরিদপুরে ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদ: শহরের সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষার্থীরা
ফরিদপুর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং সড়কের ডিভাইডারে লাগানো গাছগুলো সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদে নেমেছে ফরিদপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল সাড়ে দশটা থেকে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এই সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা।
শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, মেডিকেল সড়ক, নদী গবেষণা সড়ক, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডারে রোপণ করা গাছের উপর ঝুলে থাকা ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। এই কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন ফরিদপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ, মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন এবং সহ-মুখপাত্র উম্মে হাবিবাসহ অন্যান্য সদস্যরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, ব্যানার-ফেস্টুনের কারণে ফরিদপুর শহরের সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে সড়কের ডিভাইডারে এসব ব্যানারের কারণে গাছগুলো মারা যাচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়াও, এসব ব্যানার সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তারা বলেন, “বিশেষ করে রাজনৈতিক ও প্রচারণামূলক ব্যানার বেশি দেখা যায়। আমরা সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন গাছের ওপর ব্যানার না ঝুঁলিয়ে পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসেন। আমাদের লক্ষ্য ব্যানার-ফেস্টুন মুক্ত একটি সুন্দর ফরিদপুর।”
এই উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, এই ধরনের কার্যক্রম ফরিদপুরকে একটি স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বাসিন্দারা আশা করছেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফরিদপুর হবে একটি পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশবান্ধব শহর।