খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩ পৌষ, ১৪৩২

বিপ্লব-পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষকের পদত্যাগ ও সমস্যা থেকে উত্তরণ

মো. হাফিজুর রহমান শিকদার
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:০২ এএম
বিপ্লব-পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষকের পদত্যাগ ও সমস্যা থেকে উত্তরণ

পৃথিবীতে কিছু ব্যর্থতার মূল্য হয় অনেক চড়া। বিগত সরকারের দেড়যুগ ধরে ব্যর্থ শাসনের মূল্য বেশ চড়া দামে দিতে হচ্ছে দেশকে। প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতিকীকরণ করে প্রশাসনিক কাঠামো একেবারে ভেঙে দিয়েছে। যার ফল মারাত্মকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে শিক্ষাঙ্গনে।

বিগত সরকারের পতনের পর দেশের আনাচ-কানাচ থেকে নানা অপ্রীতিকর সংবাদ আসছে। কোথাও স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে, কোথাও শিক্ষকের বাড়িঘর ভেঙে ফেলা হচ্ছে কিংবা কোথাও প্রতিবাদী জনতার ভয়ে শিক্ষক পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে যেমন অপরাধী শিক্ষকের নাম আসছে তেমনি নিরপরাধ কিংবা নিরপেক্ষ শিক্ষকও পদলোভী অন্য শিক্ষকের ইন্ধনে আক্রান্ত হচ্ছেন। এটা রাষ্ট্রের জন্য মোটেও সুখকর কোনো সংবাদ নয়। স্বাধীনতার দুই দশক পর অর্থাৎ ১৯৯০-৯১ সালের দিকে শিক্ষার প্রতি যে অবহেলার সূচনা হয়েছিল বিগত সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে তার পূর্ণতা ছাপিয়ে দেশকে এক শিক্ষাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল একটি মহল।

উল্লেখ্য, বিগত প্রায় সব গণতান্ত্রিক সরকারই শিক্ষক সমাজকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কমবেশি ব্যবহার করেছে। দলীয় শিক্ষককে দিয়েছে পদোন্নতি আর প্রত্যাশিত পদায়ন। কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ না করলে প্রমোশন, পদায়নসহ অন্যান্য বৈধ সুবিধা থেকেও স্থানভেদে বঞ্চিত হতে হতো। ফলে শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা হলো ক্রমক্ষয়িষ্ণু, ছিল না কোনো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কিংবা দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা। এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিতে হতো। অসাদুপায় অবলম্বনের দায়ে কোনো শিক্ষার্থীকে শাস্তি দিলে কিংবা পরীক্ষার উত্তরপত্রে নম্বর কম দিলে শিক্ষক এক ধরনের অপমান-অপদস্তের ভয়ে থাকতেন। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকের প্রতি সরকারের আচরণ ছিল এক ধরনের বিমাতাসুলভ। যে কারণে পড়ালেখা শেষ করে চাকরিপ্রার্থীরা এই অনিরাপদ পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দিন দিন। মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে আর ক্ষমতার পেছনে ছুটছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের অন্যতম প্রধান ভিকটিম শিক্ষকরা।

সম্রাট আওরঙ্গজেব একদিন দেখেন তার ছেলে শিক্ষকের পায়ে পানি ঢালছে। এসব দেখেই শিক্ষকের কাছে অনুযোগ করলেন, ছেলে কেন হাত দিয়ে পা ধুইয়ে দিল না অর্থাৎ শিক্ষকের অসম্মান হয়েছে। গত বছর এক শিক্ষক ছাত্রের চুল বড় থাকায় বেত্রাঘাত করায় শিক্ষককে জেলে যেতে হয়েছিল। সম্প্রতি বহু স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংবা কলেজের অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগ করিয়েছে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। কোথাও পদলোভী তাদেরই সহকর্মীদের ইন্ধনে কিছু শিক্ষার্থী এ কাজটি সমাধা করেছে।

দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারের পতন হয় ৫ আগস্ট। এর পর পরই বৈষম্য নিরসনে ছাত্র-জনতা দেশের শিক্ষাঙ্গনে হাত দেন। বিগত সরকারের সঙ্গে কোনোরূপ সম্পর্ক ছিল কিংবা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে প্রকাশ্যে এমন শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দিতে ছাত্র-জনতা অনেকটা জোরাজুরি করেছেন। বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে একপ্রকার অপমান করে শিক্ষক, প্রধানশিক্ষক এবং অধ্যক্ষদের পদত্যাগ করিয়েছে। ফলে দেশের শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগের ক্রমাগত চাপে ‘হৃদরোগে আক্রান্ত’ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন কিশোরগঞ্জ শহরের আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকর সিদ্দিক। কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের অধ্যক্ষকে টেনেহিঁচড়ে চেয়ার থেকে সরিয়ে দেওয়ার কিংবা বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগ করানোর ভিডিও সারা দেশবাসী দেখেছে, হয়েছে মর্মাহত।

এখন স্বাভাবিক প্রশ্ন আসতে পারে, শিক্ষকদের বেলায় শিক্ষার্থীরা এত মারমুখী হচ্ছে কেন। এর অন্যতম কারণ হলো- শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের খুব কাছ থেকে দেখে। তারা দেখে কিছু শিক্ষক কিভাবে কোনো দলের হয়ে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি চাপে রাজনৈতিক দলের হয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্টতা এই শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হয়। মন্ত্রণালয় থেকে অফিসিয়াল নির্দেশনা দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষোভ ঝাড়ে তাদের সন্নিকটে থাকা শিক্ষকদের উপর। এর মধ্যে কিছু শিক্ষক ব্যক্তিগত স্বার্থে দলীয় পরিচয়ে নানা সুবিধা নিতে অতিউৎসাহী হয়ে ভিন্ন মতের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হেয়প্রতিপন্ন করেছে, করেছে নানা হয়রানি। কিছু শিক্ষকের আচরণ ছিল দলীয় কর্মীদের মতো যেগুলো একেবারেই অনুচিত এবং বাংলাদেশ সার্ভিস রুলের (বিএসআর) বিরোধী। যে কারণে সারা দেশে একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি কোনো শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি বেশ ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। বিগত সরকারকে টিকিয়ে রাখতে যারা ফ্রন্টলাইনে থেকে গণতন্ত্র ও জনবিরোধী কাজগুলোকে সমর্থন দিয়েছে তাদের কারও মধ্যে শিক্ষক সমাজ নেই। অথচ শিক্ষকরাই বেশি জনরোষের শিকার হচ্ছেন। এটা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।

দেশের শিক্ষার এহেন করুণ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য কিছু বিষয়ে সংশোধন আনা জরুরি। শিক্ষক একটি জাতির দর্পণ। প্রথমত, একাডেমিক পারপাসে তিনি সংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। তা যদি বিদ্যমান সরকারের কোনো নীতি কিংবা সিস্টেমের বিরুদ্ধে হয় তবুও। কিন্তু এর ফলে এই শিক্ষককে কোনো শাস্তির সম্মুখীন করা যাবে না। শিক্ষার্থীকে কোনো বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করতে হবে। ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক, কোনো তথ্য-উপাত্ত কিংবা তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপনে বাধাগ্রস্ত হলে কিংবা ভয়ের সঙ্গে পাঠদান করলে শিক্ষার্থী সঠিক কিছু শিখবে না, অন্ধকার কেটে আলো আসবে না। ফলে শিক্ষার সঠিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

দ্বিতীয়ত, কোনটি সরকারের সমালোচনা, কোনটি গৃহীত সিদ্ধান্তের গঠনমূলক সমালোচনা আর কোনটি দেশদ্রোহিতা এ বিষয়গুলো পরিষ্কার করা জরুরি। সাবেক স্বৈরশাসক এসব টুলস ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে প্রকৃত শিক্ষার্জন, জ্ঞানলাভ থেকে যেমনি বঞ্চিত করেছিল, তেমনি শিক্ষককে সঠিক কথা বলা থেকেও বিরত রাখতে সফল হয়েছিল। সৃষ্টি করেছিল এক ভয়ের সংস্কৃতি।

তৃতীয়ত, দলীয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বন্ধকরণ। দেশে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুটি ধারা। একটি রাজস্বভুক্ত এবং অন্যটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের জন্য রাজনীতি করার সুযোগ থাকলেও রাজস্বভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯’-এর বিধি-২৫ এর উপবিধি-১ অনুসারে সরকারি কর্মচারী রাজনীতি এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। যেমন বলা আছে- “কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হইতে অথবা অন্য কোনোভাবে উহার সহিত যুক্ত হইতে পারিবেন না, অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারেই সহায়তা করতে পারবেন না।”

বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পদত্যাগে বাধ্য করার পেছনে এই একটি দ্বি-মুখী নীতি অন্যতম। শিক্ষার্থীরা দেখছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছে, ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছে, অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে কিন্তু সরকারি স্কুল, কলেজ কিংবা মাদ্রাসার শিক্ষকরা তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। যে কারণে একটি ক্ষোভ কাজ করেছে। এর সমাধান হতে পারে, শিক্ষকদের দেশের নানা ইস্যুতে কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। শিক্ষক কোনো দলের হতে পারে না। একজন শিক্ষক দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে জ্ঞানদান করেন। তিনি যদি কথাই বলতে না পারেন তবে জ্ঞানদান একপেশে হবে যার ফলে প্রকৃত জ্ঞানলাভে ব্যর্থ হবে শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়বে।

কিছু শিক্ষক দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেছে এবং ভিন্নমতের শিক্ষকদের অপমান-অপদস্ত এবং ন্যায্য প্রাপ্যতা থেকে বঞ্চিত করেছে। ফলে বঞ্চিত সহকর্মী এবং প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু এসব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার এবং শিক্ষক সমাজের আরও সচেতন হওয়া দরকার। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শিক্ষার দায়িত্ব শিক্ষকদের হাতেই থাকা উচিত।

ভবিষ্যতে কোনো দলীয় সরকার যেন জাতির বিবেক এই শিক্ষক সমাজকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বর্তমান সরকারের নজর দেওয়া দরকার। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সেখানে শিক্ষা সংস্কার কমিশন স্থান পায়নি, অথচ এটি সর্বপ্রথমে দরকার ছিল। শিক্ষার প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক সংস্কার করে বিষয়টির একটি স্থায়ীরূপ দিতে না পারলে ২০২৪-েএর ছাত্র-জনতার বিপ্লব, হাজারো শহীদের রক্ত বৃথা যাবে।

মো. হাফিজুর রহমান শিকদার প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ

ফরিদপুরে কলাবাগানে পড়েছিল অটোরিকশা চালকের লাশ

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩:২০ পিএম
ফরিদপুরে কলাবাগানে পড়েছিল অটোরিকশা চালকের লাশ

ফরিদপুরে একটি কলাবাগান থেকে টিপু সুলতান (৪০) নামে এক অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে ওই অটোরিকশা চালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত টিপু সুলতান একই এলাকার মৃত জায়েদ আলী শেখের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টার মধ্যে যে কোনো এক সময় ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সজল মিয়ার পুকুরপাড় সংলগ্ন ইলিয়াস শেখের কলাবাগানের ভেতরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা টিপু সুলতানকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।

অতঃপর ভোরে ইলিয়াস শেখ কলাবাগানে পানি দিতে এসে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়দের জানান। পরে এলাকাবাসী থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আজমীর হোসেন ‘ফরিদপুর প্রতিদিন‘কে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ফরিদপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী দোলনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:৪৬ পিএম
ফরিদপুরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী দোলনের

ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা–মধুখালী–বোয়ালমারী) আসনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘন, প্রার্থীদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে আগ্রহী আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেছেন, কিছু প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা প্রকাশ্যে আইন অমান্য করছেন, যা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিজের ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘যিনি আইন প্রণেতা হতে চান, তিনি যদি শুরুতেই আইন না মানেন, অনুসারীদের আইন অমান্যে উৎসাহ দেন এবং আইন ভঙ্গকারীদের বিষয়ে নীরব থাকেন—তাহলে তার কাছে জনগণের জান-মাল ও মর্যাদা কতটা নিরাপদ, সেটাই বড় প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পাওয়ার পর একই আসনে অন্য প্রার্থীকে সহ্য করতে না পারা আসলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর দুর্বলতারই প্রকাশ। তার ভাষায়, ‘একজন এমপি প্রার্থীর নিজেরই যদি টলারেন্স পাওয়ার না থাকে, তাহলে তার হাতে পাঁচ লাখের বেশি ভোটার এবং সাত লাখেরও বেশি মানুষের সম্মান ও অধিকার কীভাবে নিরাপদ থাকবে?’

আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেন, ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই তাকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার, চরিত্রহনন এবং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমাকে টার্গেট করা হয়েছে। আমি এখন ফরিদপুর-১ আসনে এমপি হতে চাওয়া কোনো কোনো প্রার্থীর—সবাই নন—পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছি।’

তার দাবি, যিনি এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, তিনি কিছুদিন আগেও তাকে নিজ রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়ার জন্য একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তার অফিসে বারবার এসেছিলেন। ‘একটাই শর্ত ছিল—আমাকে মঞ্চে উঠে তার পক্ষে কথা বলতে হবে। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু আমাকে সরাসরি সমর্থন না করায় ধরে নেওয়া হলো আমি তার বিরুদ্ধে,’ বলেন দোলন।

এরপর তার বিরুদ্ধে নোংরা ভাষায় চরিত্রহনন ও বিষোদ্‌গার শুরু হয় এবং অনুসারীদেরও সেই পথে পরিচালিত করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

নিজের পেশাগত অবস্থান তুলে ধরে আরিফুর রহমান দোলন বলেন, ‘ঢাকা টাইমসের একজন সাংবাদিক ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন কাভার করতে গিয়ে নিহত হলেও তখন সাংবাদিকদের পেশাগত নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। আমার পেশাগত দায়িত্ব পালনে আমি সবসময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে ছিলাম এবং আছি।’

তিনি আরও বলেন, তার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ড ফরিদপুর-১ আসনের মানুষের অজানা নয়।

আরিফুর রহমান দোলন অভিযোগ করেন, তার বিরুদ্ধে ভুয়া ফেসবুক আইডি ও পেজ খুলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং মব সৃষ্টি করে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। ‘আমাকে হত্যা করা বা প্রার্থী না হতে সুস্পষ্ট ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে, যা সরাসরি দেশের প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন,’ বলেন তিনি।

তিনি এসব বিষয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সর্বোপরি ফরিদপুর-১ আসনের জনগণের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানান।

নির্বাচনী পরিবেশ প্রসঙ্গে দোলন বলেন, ‘একদিকে দল ঘোষিত প্রার্থীর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী কিংবা ক্ষমতাসীন দলের পদধারী নেতারা প্রকাশ্যে ঘুরছেন এবং অন্যদেরও তাদের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে কথা না বললে বা সঙ্গে না ঘুরলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং ‘ফ্যাসিস্টের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক রং না দেখে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন—এটাই সংবিধানস্বীকৃত দাবি।’

তিনি আরও বলেন, একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রার্থী ঘন ঘন আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী থানায় যাচ্ছেন, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে কিনা, তা জনগণ, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পর্যবেক্ষণ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আরিফুর রহমান দোলনের মতে, ফরিদপুর-১ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে কি না, সেটিই প্রমাণ করবে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব কি না। তিনি নির্বাচনের আগেই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং নির্বাচন কমিশনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের গোপনে ও প্রকাশ্যে সরেজমিন তদন্তের আহ্বান জানান।

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমি ভীত নই। আমি দেশের ও মানুষের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পালিয়ে যাওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নই। প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের রায় নিতে চাই।’

বিবৃতির শেষাংশে তিনি বলেন, ‘ফরিদপুর-১ আসনের শান্তিপ্রিয় মানুষই শেষ পর্যন্ত সবকিছুর বিচার করবেন। ফরিদপুর-১ আসনের শান্তিপ্রিয় জনতার জয় হোক।’

সদরপুরে সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে জখম

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২:২৯ পিএম
সদরপুরে সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে জখম

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জেরে এক সার্ভেয়ারকে কুপিয়ে গুরুতর জখম ও পকেট থেকে দুই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চরবিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা মাজাহার মোল্লা (৬৩) পেশায় সার্ভেয়ার। গত ১৫ ডিসেম্বর বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে তিনি মাগরিবের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় একই গ্রামের রুবেল খান (৩৭) ও তার বাবা ইলিয়াস খান (৬২) পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে তার বসতবাড়িতে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।

মাজাহার মোল্লা গালিগালাজে বাধা দিলে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রুবেল খান কাঠের বাটাম দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে বাঁম কপালে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। অপরদিকে ইলিয়াস খান বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তার বাঁম কানের ওপর কাটা জখম হয়। পরে তার প্যান্টের পকেটে থাকা নগদ দুই লাখ টাকা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

তার চিৎকারে স্ত্রী-সন্তান ও স্থানীয়রা এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। আহত মাজাহার মোল্লাকে স্থানীয়দের সহায়তায় সদরপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এতে তিনি ও তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অভিযোগকারী দাবি করেন, রুবেল খানের বিরুদ্ধে এলাকায় আগে থেকেই একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে মাজাহার মোল্লা সদরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আল মামুন শাহ্ বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।