আমেরিকান ক্রীড়া রুচিকে প্রভাবিত করছেন মেসি
ফুটবলের মাধ্যমে লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনাকে গর্বিত করে চলেছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার আমেরিকান ক্রীড়াজগতে এমন এক বিপ্লব ঘটাতে চলেছেন, যা পেলেও পারেননি। আমেরিকার সংবাদপত্র ক্লারিন সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক সংবাদ প্রকাশ করেছে, যার আলোকে তৈরি করা হয়েছে এ প্রতিবেদন।
৩৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) আমেরিকাকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর সঙ্গে ‘সকারকে’ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছেন। আড়াই বছর আগে মেসি ইন্টার মায়ামিকে বাজি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। অনেকে বলছিলেন, বিলাসবহুল অবসরের জন্য মেসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। লিওনেল মেসির পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। এ কিংবদন্তি আসলে ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলেন, নিজেকে আরও দৃঢ় করতে চেয়েছিলেন। ইন্টার মায়ামির হয়ে তিনি ঠিক এটাই করেছেন। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার উত্তর আমেরিকায় পায়ের জাদু দিয়ে প্রায়ই অবমূল্যায়িত ‘সকার’ খেলাকে সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা দিচ্ছেন। এটা ঠিক যে, খ্যাতি ও মানের দিক থেকে এমএলএস ইউরোপের প্রধান লিগগুলোর পর্যায়ে নেই। এটি প্রিমিয়ার লিগের উন্মত্ত গতি বা লা লিগার তারকাদের উজ্জ্বলতা থেকে অনেক দূরে। ইতালির পুনরুত্থিত সিরি-এ এবং প্রায়শই অবমূল্যায়িত বুন্দেসলিগা থেকে ততটা দূরেও নয়। এমনকি এতে ফ্রান্সের লিগ-ওয়ানের মতো তীব্রতাও নেই। মেসি এমন একটি লিগে এসেছেন, যা ক্রমাগত প্রসারিত এবং বিকশিত হচ্ছে। এখানে জেতাটা মোটেও সহজ নয়।
গত মৌসুমে জেরার্দো মার্তিনোর অধীনে ইন্টার মায়ামি প্লে-অফের প্রথম রাউন্ড থেকে ছিটকে গিয়েছিল। ব্যতিক্রমী নিয়মিত মৌসুমের পরে ক্লাবটি সাপোর্টার্স শিল্ড জিতেছিল। নিশ্চিত করেছিল ক্লাব বিশ্বকাপ। ক্লাবটির যখন কাঙ্ক্ষিত এমএলএস কাপের দিকে প্রথম ধাপ নেওয়ার পালা, তখন আটলান্টা ইউনাইটেডের মুখোমুখি হয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। মেসি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। টাটা মার্তিনোর পর হাভিয়ের মাশ্চেরানোকে এমন একজন কোচ হিসেবে খুঁজে পান, যিনি সেরাটা বের করে এনেছেন। এজন্য তিনি মেসির বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে বেঞ্চে বসাতে দ্বিধা করেননি। আক্রমণভাগে আরও বেশি পাসিং বিকল্প এবং গতির খোঁজেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ৩৮ বছর বয়সে মেসির অভাবনীয় পরিসংখ্যান নিয়ে মৌসুম শেষ করার ক্ষেত্রে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মেসি ৩৪ ম্যাচের ৩২টিতে শুরু থেকে খেলেছেন। ৩৫ গোল করেছেন—নিয়মিত মৌসুমে ১৯ এবং ২৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন; প্লে-অফের আগে করেছেন ১৬টি। পুরো অভিযানে হেরনসদের মোট ১০১ গোলের মধ্যে ৫৮টিতে জড়িত ছিলেন মেসি।
সব মিলিয়ে পুরো মৌসুমে মেসি ৫৪ ম্যাচে ৪৬ গোল করেছেন, অ্যাসিস্ট সংখ্যা ২৮। যা ১ হাজার ১৩৭ ক্যারিয়ার ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা ৮৯৬-এ উন্নীত করেছে। সঙ্গে ছিল ৪০৭ অ্যাসিস্ট। অবিশ্বাস্য ৪৭ শিরোপার সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে দিয়েছেন মেসি। ইন্টার মায়ামির সঙ্গে তার আরও তিন মৌসুম বাকি আছে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে ২০২৬ বিশ্বকাপ। আসরে মেসি নিজেকে স্থানীয় মনে করবেন।
হাঙ্গেরির কিংবদন্তি পুসকাসের সর্বকালের অ্যাসিস্টের রেকর্ড ভেঙে হাজার গোল করার রেকর্ডের দিকে ছুটছেন মেসি। ফুটবল ইতিহাসের শীর্ষ স্কোরার হওয়ার দৌড়ে পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পেছনে থাকা মেসি উত্তর আমেরিকার খেলাধুলায়ও নিজের ছাপ ফেলছেন। শুধু খেলোয়াড় সত্তা দিয়ে নয়, মেজর লিগ সকারের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং অ্যাপল ও অ্যাডিডাসের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আমেরিকান ক্রীড়া রুচিকে প্রভাবিত করে চলেছেন মেসি। ভ্যানকুভার হোয়াইট ক্যাপসকে ৩-১ গোলে হারানোর পর তিনি যে উদযাপন করেছেন, তা ১৯৭০-এর দশকে পেলে নিউইয়র্ক কসমসে গিয়ে করতে পারেননি।

আপনার মতামত লিখুন
Array