খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮ আশ্বিন, ১৪৩২

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে তিন দেশের স্বীকৃতির তাৎপর্য কী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:২১ এএম
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে তিন দেশের স্বীকৃতির তাৎপর্য কী

অবশেষে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। একটি পরাশক্তিসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দেশের এ ঐতিহাসিক স্বীকৃতির আসলে তাৎপর্য কী, তা নিয়ে নানা পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখার রসদ যোগাল। একই সঙ্গে এই অঞ্চল ঘিরে স্থিতিশীল ও নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রত্যাশা প্রকাশ করেছে।

 

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্য-কানাডা-অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। এতে তিনি বলেন, আজ আমরা শান্তির আশা ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে পুনরুজ্জীবিত করতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে এই পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মানে হচ্ছে, একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরায়েল এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র– যা বর্তমানে নেই।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিস তার ঘোষণায় বলেছেন, কানাডা ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অংশ, যা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান আনতে সহায়ক হবে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি তার বিবৃতিতে বলেন, আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয়ের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমাদের অংশীদারিত্বের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের এমন স্বীকৃতি বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার এই পদক্ষেপ শুধু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আশা জাগাচ্ছে না, এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও গ্লোবাল ৭ (জি-সেভেন) দেশগুলোর মধ্যবর্তী সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে।

প্রথমত এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করছে। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন একটি স্বীকৃত রাষ্ট্রের মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দেশগুলোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও দৃঢ় অবস্থান দিতে সহায়ক হবে।

দ্বিতীয়ত, এটি মধ্যপ্রাচ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি করছে। যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর একটি যৌথ উদ্যোগের বার্তা যাচ্ছে। এতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্ভাব্য সংলাপের জন্য ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হবে।

তৃতীয়ত, স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে জি-সেভেন দেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাতেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রথম দুই জি-সেভেন দেশ যারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি উদাহরণ তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও দেশকে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনুপ্রাণিত করবে।

এ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সমর্থন থাকলে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন সহজতর হবে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে জোরদার করবে।

ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের অত্যাচার-নিপীড়নের পঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায় স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এর পর ইসরায়েলি সেনারা গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। তারা হামাস দমনের কথা বললেও নির্বিচারে বেসামরিক এলাকায় চালাতে থাকা ওই হামলায় অর্ধ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তখন থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৪ হাজার ৯৬৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনকে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে। গত বছর স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে এই স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে পর্তুগাল, ফ্রান্স, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও একই পথে হাঁটার ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিনের কোনো সুনির্দিষ্ট সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই। তাই এই স্বীকৃতি মূলত প্রতীকী।

ফিলিস্তিন এক সময় ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের পরাজয়ের পর ব্রিটেন ফিলিস্তিনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন ফিলিস্তিনে যারা থাকতো তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আরব, সেই সঙ্গে কিছু ইহুদী, যারা ছিল সংখ্যালঘু।

ওই সময় ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটেন ইহুদী জনগোষ্ঠীর জন্য ফিলিস্তিনে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগে রসদ পেয়ে ইহুদীরা ওই অঞ্চলকে তাদের পূর্বপুরুষদের ভূমি বলে দাবি করে। আরবরাও দাবি করে এই ভূমি তাদের।

এরপর ইউরোপ থেকে দলে দলে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে যেতে শুরু করে এবং তাদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার বাহিনীর হাতে ইহুদী নিধনযজ্ঞের পর সেখান থেকে পালিয়ে তারা ফিলিস্তিনে ঘাঁটি গাড়ে।

১৯৪৭ সালে জাতিসংঘে এক ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনকে দুই ভাগ করে দুটি পৃথক ইহুদী এবং আরব রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি। ব্রিটিশরা এই সমস্যার কোনো সমাধান করতে ব্যর্থ হয়ে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ছাড়ে। ইহুদী নেতারা এরপর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

এরপর জল গড়ায় বহুদূর। আরবদের সঙ্গে যুদ্ধেও জড়ায় ইসরায়েল। এতে ফিলিস্তিনিদের অনেক জমির দখলে চলে যায় ইসরায়েলের। তারপর নানা সংঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল।

এর মধ্যে ১৯৯৩ সালে ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান’ভিত্তিক অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি অনুসারে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়ার কথা ছিল ইসরায়েলের। ওই চুক্তির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে যে বোঝাপড়া হয়েছিল যে- ফিলিস্তিনিরা স্বশাসনের আংশিক অধিকার পাবে এবং ইসরায়েল প্রথমে পশ্চিম তীরের জেরিকো এবং তারপর গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেবে। এর পরিবর্তে, ইসরায়েলি রাষ্ট্রের বৈধতা স্বীকার করে নেবে পিএলও।

কিন্তু পরে ইহুদিবাদী দেশটি তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে ফিরে আসে। বারবার ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে বসতি সম্প্রসারণ করে এবং সামরিক আগ্রাসন চালায়। বর্তমানে পশ্চিম তীর ও গাজা—দুটিই ইসরায়েলের দখলে, ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিজেদের ভূমি ও জনগণের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

সম্প্রতি পশ্চিম তীরে একটি বসতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে যাচ্ছি যে ফিলিস্তিন বলে কোনো রাষ্ট্র থাকবে না। এই ভূমি আমাদেরই। ’

ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:৩২ পিএম
ফরিদপুরে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে রাজবাড়ীর আলোচিত আমজাদ খান হত্যা মামলার মো. সুজন মন্ডল (২৯) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১০)।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ফরিদপুর শহরের জোবয়দা ফিলিং স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সুজন মন্ডল রাজবাড়ী সদরের মুকিদহ এলাকার মো. মকিম মন্ডলের ছেলে।

ফরিদপুর র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সুজন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গ, গত ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে রাজবাড়ী সদরের মুচিদহ এলাকায় বসতবাড়ীতে ঢুকে মো. আমজাদ খান নামে এক ব্যক্তিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একদিন পর নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২:৫১ পিএম
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সজিব খন্দকার (৩৬) নামে এক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর র‌্যাব-১০ এর দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ফরিদপুর শহরের টেপাখোলা মাস্টার কলোনী এলাকা থেকে ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া সজিব খন্দকার ফরিদপুরের কোতয়ালী থানাধীন বঙ্গেরস্বরদী এলাকার সালাম খন্দকারের ছেলে।

ফরিদপুর-১০, সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ ও সেনাবাহিনী এর যৌথ আভিযানে সজিব খন্দকারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে একটি মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় আরও ৪টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সজীব দীর্ঘদিন যাবৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে ছিল। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:০৪ পিএম
কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

সোনালি আঁশে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। এ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। এক সময়ে অবহেলা-অনাদরে থাকা পাটকাঠির বেড়েছে কদর। শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই পাটকাঠির এখন দামি পণ্য। এখন এই কাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল পাউডার, বোর্ড, কালিসহ নানা কিছু।

ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট উৎপাদনে যে হারে খরচ বেড়েছে, ঠিক সেভাবে বাড়েনি বাজার দর। তাইতো এ মৌসুমে সোনালি কাঠিতে সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জেলার সর্বত্র এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ। এখন পাট কাঠির বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। পাটকাঠির অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক। গত কয়েক বছর আগেও পাট কাঠির তেমন চাহিদা ছিলো না, কিন্তু এখন এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলায় এসে কাঠি কিনে নিচ্ছেন, কৃষক দামও পাচ্ছেন বেশ। ঘুরে যাচ্ছে জেলার পাট চাষিদের জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাট উৎপাদন উপজেলা সালথা ও নগরকান্দা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে উপজেলার দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। একশ মুঠা (এক মুঠো) বা আঁটি পাট কাঠি বিক্রয় হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ফরিদপুরে এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে।

পাট চাষিরা জানালেন, পাটের যে বর্তমান বাজারমূল্য তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা, তবে তুলনামূলকভাবে পাটকাঠির মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। পাট বিক্রয় করে খুব বেশি লাভবান না হলেও পাটের কাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানায়, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়।

নগরকান্দা উপজেলার সাকপালদিয়া গ্রামের কৃষক জীবন কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমার ক্ষেতের পাট খড়ি (পাট কাঠি) তিন রকম বিক্রি হইছে, যেটা লম্বা ও শক্ত-সেটা পেয়েছি ২০০০ টাকা ১০০ মুঠা, মাঝারিটা পেয়েছি ১০০ মুঠায় ১২০০ টাকা, আর যেইগুলো নরম ও খাটো সেগুলো পেয়েছি ৮০০ টাকা।’

একই গ্রামের পাট চাষি কলিম শেখ বলেন, পাটখড়ি শুকিয়ে এখন আমরা স্তুপ করে রেখেছি, প্রতিদিনই কিনতে মহাজনরা লোক পাঠাচ্ছে, দামে পোষালেই ছেড়ে দিব।

সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষাণী জোবেদা খাতুন নিজের হাতেই পাট ছাড়িয়ে পাটকাঠি রোদে দিয়ে শুকিয়েছেন। ১০০ মুঠা ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের আরেক কৃষাণী মজিরন নেসা জানালেন, ওই গ্রামের বেশিরভাগ নারী পাটের আঁশ ছাড়ানো থেকে শুরু করে পাটখড়ি শুকানোর কাজ করেন, যারা পাট আবাদ করেন সেই পরিবারের নারীরাও এই কাজ করেন। আর যাদের জমি নেই- সেই পরিবারের নারীরা শ্রমিক হিসেবে পাটখড়ি শুকানো ও পালা দেওয়ার কাজ করে থাকেন। পাট বাজারে চলে যাবার পর পাটকাঠি শুকানো ও স্তুপ করার কাজ কাজ করে ওই গ্রামের অনেক নারী বাড়তি আয় করছেন।

রসুলপুর গ্রামের পাট কাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পাট কাঠি থেকে আয় ভালো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট, ব্যবসায়ীরা এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।’

সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ জানান, তিনি ৭ বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন । কিন্তু বর্তমানে জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এজন্য ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ, বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটের রুপালি কাঠি উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদউজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর দেশের সর্ববৃহৎ পাট উৎপন্নকারী জেলা। এ জেলায় ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে এবার। পাট কাটার মৌসুম শেষ, এখন পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। ফরিদপুর জেলা থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটকাঠি এবার উৎপন্ন হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন পারটেক্স কোম্পানি এবং বেশ কিছু কারখানার রয়েছে- যারা পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন উৎপন্ন করে চীনে রপ্তানি করে, তারাই কৃষকের কাছ থেকে পাটকাঠি কিনে নেয়। প্রিন্টের কালি এবং কসমেটিকস তৈরির কাজেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাঠকাঠি। পাটকাঠি রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি; যাতে করে কৃষক আরও বেশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।