খুঁজুন
রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬ পৌষ, ১৪৩২

প্রবাসের দূরত্বে অপেক্ষার জীবন: প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীদের নীরব গল্প

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৬:২৩ এএম
প্রবাসের দূরত্বে অপেক্ষার জীবন: প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীদের নীরব গল্প

বিদেশে উপার্জনের আশায় স্বামী পাড়ি জমিয়েছেন বহু বছর আগে। ক্যালেন্ডারের পাতায় দিন গোনা হলেও বাস্তবে অপেক্ষার সময় যেন ফুরোয় না। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর—সবখানেই আছেন এমন হাজারো নারী, যাদের স্বামী দীর্ঘদিন প্রবাসে। সংসারের হাল ধরা, সন্তান লালন-পালন আর সামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেই কাটে তাদের দিন।

ফরিদপুর সদর উপজেলার একটি গ্রামের গৃহবধূ রেহানা বেগম বলেন, “স্বামী সৌদি আরবে আছে প্রায় আট বছর। প্রথম দুই বছর খুব কষ্ট হয়েছে। এখন সন্তানদের পড়াশোনা আর সংসার নিয়েই সময় কেটে যায়।” রেহানার মতো অনেক নারীর জীবন আবর্তিত হয় সন্তান ও পরিবারের দায়িত্ব ঘিরে। স্কুলে নেওয়া-আনা, পড়ালেখার খোঁজখবর, অসুস্থ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা—সবই তাদের একার কাঁধে।

প্রযুক্তির অগ্রগতিতে দূরত্ব কিছুটা কমলেও শূন্যতা পুরোপুরি যায় না। নিয়মিত ভিডিও কল, ভয়েস মেসেজ কিংবা রাত জেগে কথা বলাই এখন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার বড় ভরসা। “দিনে একবার কথা না হলে মনটা ভার হয়ে থাকে,” বলেন আরেক প্রবাসী স্ত্রী শিউলি আক্তার।

অনেক নারী সংসারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত হচ্ছেন। কেউ সেলাই কাজ করেন, কেউ ঘরে বসে খাবারের ব্যবসা, আবার কেউ টিউশনি বা ছোটখাটো চাকরিতে যুক্ত। এতে একদিকে সময় ভালো কাটে, অন্যদিকে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে।

স্থানীয় এক এনজিওকর্মী জানান, প্রবাসী পরিবারের নারীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে বাস্তবতা সবসময় সহজ নয়। সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, একাকীত্ব, সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ অনেককেই মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়। রাতে বাড়িতে একা থাকা, অসুস্থ হলে দেখভালের অভাব কিংবা সামাজিক কটূক্তি—এসব নীরবে সহ্য করেন তারা। তবুও সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর সংসারের স্থিতিশীলতার জন্য ধৈর্য ধরে এগিয়ে যান।

ধর্মীয় চর্চা, পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক, আত্মীয়স্বজনের যাওয়া-আসা—এসবই তাদের মানসিক শক্তি জোগায়। কেউ কেউ বলেন, “আল্লাহর উপর ভরসা রাখলে সময়টা সহজ লাগে।”

প্রবাসী স্বামীর স্ত্রীদের জীবন তাই শুধু অপেক্ষার গল্প নয়। এটি দায়িত্ব, ত্যাগ, সাহস আর আত্মমর্যাদার এক নীরব সংগ্রাম। সমাজ ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা পেলে এই নারীরা আরও শক্তভাবে নিজেদের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবেন।

ফরিদপুরে কলেজে অস্ত্র হাতে মহড়া, সেই আল-সাদকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৭ এএম
ফরিদপুরে কলেজে অস্ত্র হাতে মহড়া, সেই আল-সাদকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলাকালে অস্ত্র হাতে মহড়া, শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং পরীক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি আল-সাদকে (৩০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতে র‌্যাব-১০ সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের দেওয়া এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে আল-সাদকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হয়।

এর আগে একইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা এলাকা থেকে র‌্যাব-১০ সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্প ও র‌্যাব-৬ এর যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়া আল-সাদ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা থানার আলফাডাঙ্গা এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

র‌্যাব প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘গত ৯ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা আদর্শ কলেজ কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বহিরাগত আল-সাদ ১৪৪ ধারা অমান্য করে জোরপূর্বক পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় সে কর্তব্যরত শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। পরে সহযোগী সাদি খানকে সঙ্গে নিয়ে হাতে তলোয়ারসহ কলেজ ক্যাম্পাসে পুনরায় প্রবেশ করে শিক্ষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এতে পরীক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করলে মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে র‌্যাব-১০ এর সিপিসি-৩ ফরিদপুর ক্যাম্প গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করে।’

র‌্যাব জানায়, এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে খুলনা মহানগরীর সদর থানাধীন ময়লাপোতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল-সাদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লীডার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া আল-সাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

ফরিদপুর-৪ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন সেই আলোচিত মুফতি রায়হান জামিল

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮:৩৮ এএম
ফরিদপুর-৪ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন সেই আলোচিত মুফতি রায়হান জামিল

ফরিদপুর-৪ আসন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সুনামধন্য ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মুফতি রায়হান জামিল। তিনি ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে ফরিদপুরসহ সারাদেশে আলোচিত হয়েছেন।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মনোনয়ন সংগ্রহের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টার দিকে তিনি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ফরিদপুর নির্বাচন কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে নির্ধারিত ফরমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি নির্বাচন কমিশনের সকল বিধি-বিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। বর্তমান আইনি কাঠামোর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের অধিকার রক্ষা, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং এলাকার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যেই তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন।’

উল্লেখ্য, মুফতি রায়হান জামিল দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর-৪ আসনে সমাজসেবা ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ১০ টাকায় ইলিশ মাছ, ৩০ নভেম্বর ১ টাকা দরে গরুর মাংস এবং ১১ জুলাই ২ টাকা কেজিতে চাল বিতরণের মতো ব্যতিক্রমী উদ্যোগে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলেন। এছাড়া নির্বাচনী গেট-ব্যানার ভাঙচুরের প্রতিবাদে ঝাড়ু হাতে মিছিল এবং গভীর রাতে দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে এক বস্তা করে চাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাও জনমনে বিশেষভাবে আলোচিত হয়।

প্রকৃতির আলিঙ্গনে ভেজা সকালের গল্প

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৭:০৭ এএম
প্রকৃতির আলিঙ্গনে ভেজা সকালের গল্প

ভোরের আলো ঠিকমতো ফোটার আগেই প্রকৃতি যেন নিঃশব্দে নিজের কাজ সেরে নেয়। রাতের দীর্ঘ শ্বাস-প্রশ্বাস শেষে গাছের পাতা, ঘাসের ডগা, ধানের শীষ আর মাটির বুকে জমে ওঠে ছোট ছোট স্বচ্ছ বিন্দু—শিশির। সকালের এই শিশির ভেজা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, গ্রামবাংলার জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এক অনুচ্চারিত গল্প।

ভোরের প্রথম আলোয় মাঠে নামা কৃষকের পায়ে তখনও লেগে থাকে ঠান্ডা শিশির। পাটক্ষেতে কিংবা ধানক্ষেতে হাঁটলে পায়ের নিচে নরম ঘাসে জমে থাকা পানির স্পর্শ শরীর শিরশির করে তোলে। কৃষকেরা বলেন, এই শিশিরই ফসলের প্রাণ। রাতের আর্দ্রতা গাছকে সতেজ রাখে, পাতায় জমে থাকা শিশির সূর্যের আলোয় ধীরে ধীরে শুকিয়ে গিয়ে গাছের বৃদ্ধি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

শিশির ভেজা সকাল মানেই গ্রামবাংলায় এক ভিন্ন ব্যস্ততা। কেউ গরু ছাগল মাঠে ছাড়ছেন, কেউ সবজি তুলছেন, কেউবা খোলা উঠানে দাঁড়িয়ে রোদ ওঠার অপেক্ষায় ভিজে কাপড় মেলে দিচ্ছেন। শিশির ভেজা কাপড়ের গন্ধে থাকে এক ধরনের স্বচ্ছতা—যেন মাটির সঙ্গে মিশে থাকা প্রকৃতির নিজস্ব সুগন্ধ।

শিশুদের কাছে শিশির ভেজা সকাল এক ধরনের আনন্দ। স্কুলে যাওয়ার পথে খালি পায়ে শিশিরে ভেজা ঘাসে হাঁটা, পাতার ওপর জমে থাকা পানির ফোঁটা হাতে নিয়ে খেলা—এসব মুহূর্ত আজও গ্রামবাংলার শৈশবকে আলাদা করে চিহ্নিত করে। অনেকেই বলেন, শিশির ভেজা ঘাসে হাঁটলে শরীর ভালো থাকে, মন শান্ত হয়।

শহরের মানুষদের কাছেও শিশির ভেজা সকালের আবেদন কম নয়। ভোরবেলা ছাদে বা পার্কে হাঁটতে বের হলে ঘাসে জমে থাকা শিশির সূর্যের আলোয় ঝিলমিল করে ওঠে। কোলাহলমুখর শহরের মাঝেও এই দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্য হলেও মানুষকে থামিয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের কথা।

প্রকৃতিবিদরা বলছেন, শিশির জলবায়ুর একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। পরিষ্কার আকাশ, ঠান্ডা রাত আর আর্দ্র পরিবেশ শিশির পড়ার জন্য অনুকূল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক এলাকায় আগের মতো শিশির দেখা যায় না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও কৃষি ব্যবস্থাও।

তবু যতদিন ভোরের আলো ফোটার আগে পাতার ডগায় ঝুলে থাকবে শিশিরের বিন্দু, ততদিন প্রকৃতি আমাদের নীরবে আশ্বাস দেবে—সব কিছুর মধ্যেই আছে নতুন দিনের সম্ভাবনা। সকালের শিশির ভেজা তাই শুধু ভেজা ঘাস নয়, এটি এক নতুন দিনের প্রথম স্পর্শ, যা মানুষকে আবারও প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে।