খুঁজুন
মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৮ আশ্বিন, ১৪৩২

ফরিদপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মধুমতি তীর রক্ষা বাঁধে ধ্বস

নুর ইসলাম, ফরিদপুর:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫, ৬:৪৪ পিএম
ফরিদপুরে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই মধুমতি তীর রক্ষা বাঁধে ধ্বস
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টির পানিতে ধ্বসে গেছে মধুমতি নদীর ডান-তীর রক্ষা বাঁধের কয়েকটি অংশ। এতে নদীর তীরে বসবাসরত শতাধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং যথাযথ ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণে বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ধসে পড়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা এখনো কাজ বুঝে পাননি। কাজে অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মিলনস্থল চর আজমপুর এলাকায় ডান-তীর রক্ষায় ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিক। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে বাঁধের আনুমানিক ৩০ মিটার ধ্বসে পড়ার দৃশ্য দেখা যায়। এতে সিসি ব্লকগুলো পর্যায়ক্রমে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার সীমান্তবর্তী মধুমতি নদীর পূর্বপাড়ে দীর্ঘ কয়েক বছর তীব্র ভাঙনের কবলে পড়ে ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। নদী পাড়ের অনেক বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে কয়েকবার বসতি স্থাপনা পাল্টিয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। গত সরকারের আমলে এলাকাবাসীর দাবির পেক্ষিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের চেষ্টায় মধুমতি পাড়ে সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। যা ‘মধুমতি নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ নামে ২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে ২৮টি প্যাকেজে কাজটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মধুমতি নদীর ডান তীর রক্ষায় ২৮টি প্যাকেজের মধ্যে ২ নম্বর প্যাকেজের আওতায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজটি প্রায় শেষের দিকে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে নির্মাণ কাজের কয়েক জায়গা ধসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে কাজটি চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান শরীফ (৬৩) নামে এক ব্যক্তি বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই বৃষ্টির পানিতেই বাঁধ ধ্বসে পড়েছে। দ্রুত তীর সংরক্ষণ বাঁধ মেরামত না করা হলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শেফালী বেগম (৫৫) নামে এক বাসিন্দা জানান, স্থায়ী বাঁধ হওয়ার কারণে গত দুই মাস আগে ধারদেনা করে বাড়িতে একটা ঘর দিয়েছি। কিন্তু সেই স্থায়ী বাঁধও নদীতে যদি ভেঙে যায়। তাহলে তো আর কোথাও বলার জায়গা থাকলো না। আমরা এই এলাকায় বসবাস যাতে করতে পারি, সেই অনুযায়ী বাঁধটি যেন সরকার করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে মেসার্স লিটন মল্লিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বার্ধীকারী লিটন মল্লিককে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোনটি ধরেননি।
তবে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধ্বসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ওই অংশে বালু ভর্তি জিও ব‍্যাগ ফেলানো হচ্ছে। পরবর্তীতে নদীর পানি কমলে তা মেরামত করে দেওয়া হবে। আমাদের বাঁধ নির্মাণের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ধসে যাওয়া বাঁধ নির্মাণ কাজটির দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রকৌশলী মো. তৌফিকুর রহমান জানান, আমি সবেমাত্র ফরিদপুরে নতুন যোগদান করেছি। বাঁধ নির্মাণ কাজটি স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) সাথে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বাঁধের ধ্বসে যাওয়া অংশের কাজ পুণরায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজে কোন অনিয়ম আছে কি-না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

হাসানউজ্জামান, ফরিদপুর
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১:০৪ পিএম
কদর বাড়ছে পাটকাঠির, ফরিদপুরে ৫০০ কোটি টাকা ব্যবসার সম্ভাবনা

সোনালি আঁশে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। এ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। এক সময়ে অবহেলা-অনাদরে থাকা পাটকাঠির বেড়েছে কদর। শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই পাটকাঠির এখন দামি পণ্য। এখন এই কাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল পাউডার, বোর্ড, কালিসহ নানা কিছু।

ফরিদপুরের জেলায় এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট উৎপাদনে যে হারে খরচ বেড়েছে, ঠিক সেভাবে বাড়েনি বাজার দর। তাইতো এ মৌসুমে সোনালি কাঠিতে সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন কৃষকরা। জেলার সর্বত্র এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ। এখন পাট কাঠির বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে পাটের পাশাপাশি পাটকাঠির ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। পাটকাঠির অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক। গত কয়েক বছর আগেও পাট কাঠির তেমন চাহিদা ছিলো না, কিন্তু এখন এর চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ জেলায় এসে কাঠি কিনে নিচ্ছেন, কৃষক দামও পাচ্ছেন বেশ। ঘুরে যাচ্ছে জেলার পাট চাষিদের জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত পাটকাঠির চাহিদা দেশের পাশাপাশি বাড়ছে বিশ্ব বাজারেও।

জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী পাট উৎপাদন উপজেলা সালথা ও নগরকান্দা। গতকাল শনিবার সরেজমিনে উপজেলার দুটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। একশ মুঠা (এক মুঠো) বা আঁটি পাট কাঠি বিক্রয় হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়। ফরিদপুরে এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে।

পাট চাষিরা জানালেন, পাটের যে বর্তমান বাজারমূল্য তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা, তবে তুলনামূলকভাবে পাটকাঠির মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। পাট বিক্রয় করে খুব বেশি লাভবান না হলেও পাটের কাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন চাষিরা।

স্থানীয়রা জানায়, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছিল শুধু জ্বালানি হিসেবে। আর কিছু ভালো মানের পাটকাঠি পানের বরজের আর ঘরের বেড়া তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে পাটকাঠির চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যায়।

নগরকান্দা উপজেলার সাকপালদিয়া গ্রামের কৃষক জীবন কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘আমার ক্ষেতের পাট খড়ি (পাট কাঠি) তিন রকম বিক্রি হইছে, যেটা লম্বা ও শক্ত-সেটা পেয়েছি ২০০০ টাকা ১০০ মুঠা, মাঝারিটা পেয়েছি ১০০ মুঠায় ১২০০ টাকা, আর যেইগুলো নরম ও খাটো সেগুলো পেয়েছি ৮০০ টাকা।’

একই গ্রামের পাট চাষি কলিম শেখ বলেন, পাটখড়ি শুকিয়ে এখন আমরা স্তুপ করে রেখেছি, প্রতিদিনই কিনতে মহাজনরা লোক পাঠাচ্ছে, দামে পোষালেই ছেড়ে দিব।

সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষাণী জোবেদা খাতুন নিজের হাতেই পাট ছাড়িয়ে পাটকাঠি রোদে দিয়ে শুকিয়েছেন। ১০০ মুঠা ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।

একই গ্রামের আরেক কৃষাণী মজিরন নেসা জানালেন, ওই গ্রামের বেশিরভাগ নারী পাটের আঁশ ছাড়ানো থেকে শুরু করে পাটখড়ি শুকানোর কাজ করেন, যারা পাট আবাদ করেন সেই পরিবারের নারীরাও এই কাজ করেন। আর যাদের জমি নেই- সেই পরিবারের নারীরা শ্রমিক হিসেবে পাটখড়ি শুকানো ও পালা দেওয়ার কাজ করে থাকেন। পাট বাজারে চলে যাবার পর পাটকাঠি শুকানো ও স্তুপ করার কাজ কাজ করে ওই গ্রামের অনেক নারী বাড়তি আয় করছেন।

রসুলপুর গ্রামের পাট কাঠি ব্যবসায়ী সামাদ মাতুব্বর বলেন, ‘বিগত দিনে আমরা রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান বরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পাট কাঠি থেকে আয় ভালো হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট, ব্যবসায়ীরা এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের এলাকায় পাটকাঠির চাহিদা বেড়েছে।’

সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ জানান, তিনি ৭ বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছেন। আগে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতেন । কিন্তু বর্তমানে জেলায় অর্ধশতাধিক কার্বন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে। এজন্য ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব ফ্যাক্টরির চাহিদা মেটানোই কষ্টসাধ্য। তাই তারা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারেন না। কারণ, বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটের রুপালি কাঠি উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহাদউজ্জামান বলেন, ‘ফরিদপুর দেশের সর্ববৃহৎ পাট উৎপন্নকারী জেলা। এ জেলায় ৫৩১ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে এবার। পাট কাটার মৌসুম শেষ, এখন পাটকাঠি নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। ফরিদপুর জেলা থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন পাটকাঠি এবার উৎপন্ন হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন পারটেক্স কোম্পানি এবং বেশ কিছু কারখানার রয়েছে- যারা পাটকাঠি পুড়িয়ে কার্বন উৎপন্ন করে চীনে রপ্তানি করে, তারাই কৃষকের কাছ থেকে পাটকাঠি কিনে নেয়। প্রিন্টের কালি এবং কসমেটিকস তৈরির কাজেও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় পাঠকাঠি। পাটকাঠি রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছি; যাতে করে কৃষক আরও বেশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হয়।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগ স্থবির, ব্যবসায় মন্দা, খাদে অর্থনীতি

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগ স্থবির, ব্যবসায় মন্দা, খাদে অর্থনীতি

দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা ও বেকারত্ব দূর করতে নতুন বিনিয়োগের বিকল্প নেই। সে কারণে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিনিয়োগ বাড়াতে জোর দিয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢেলে সাজানোসহ দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর নিয়ে বিনিয়োগ সামিট করা হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ সাফল্য আসেনি।  

 

কেন সাফল্য এলো না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অর্থায়ন সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদের হারের জন্য নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। ফলে দেশের অর্থনীতি এখন এক বহুমুখী সংকটে, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

দেশের অর্থনীতি চরম সংকটে থাকার কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থায়নও ব্যাহত হচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টার বক্তবেও তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্থায়ন। সবাই বলছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কিন্তু সরকারের কাছে টাকা কোথায়?’

ব্যবসা ও অর্থনীতি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক ও রাজপথের স্থিতিশীলতা আনতে একটা নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। যতক্ষণ পর্যন্ত একটা নির্বাচিত সরকার না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে কাজ করবে। একই সঙ্গে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট হার দ্রুত কমাতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ অনুকূল করা যায়। পাশাপাশি সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা সংযোগ তৈরিসহ সরকারের অগ্রাধিকার খাতে অর্থনীতি ও বিনিয়োগ আনতে হবে।

জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি এলসি ২৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে। একই সময়ে বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হারে কমে ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। চলতি বছরের জুন শেষে এ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, বিনিয়োগ স্থবিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ সুদহার এবং খেলাপি ঋণের চাপ—এই চারটি প্রধান কারণেই ঋণ প্রবৃদ্ধিতে টানা ধস চলছে। গত বছরের জুলাইয়ে যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, তা কমতে কমতে জুনে এসে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশে। এর আগে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমেছিল। করোনার কঠিন সময়েও এ হার সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে মাত্র ১৭৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৮ কোটি ৫১ লাখ ডলারের, যা ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর আগের বছরেও (২০২৩-২৪) এই খাতে এলসি খোলা কমেছিল ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এছাড়া শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের এলসি খোলা কমেছে ৬ দশমিক ২৬ শতাংশ এবং নিষ্পত্তি কমেছে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যদিও শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা সামান্য কমলেও নিষ্পত্তি বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর বেশিরভাগই নিম্নমুখী। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে, যা নতুন বিনিয়োগের স্থবিরতাকে স্পষ্ট করে। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতেও ধস নেমেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেমন অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, অন্যদিকে সম্ভাবনাময় অনেক নতুন উদ্যোগ অর্থের অভাবে আটকে আছে। ফলে আগামী ছয় মাসে বেসরকারি বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আশা করছেন না ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের বিনিয়োগ চাঙ্গা না হওয়ার নানা করণ রয়েছে। তারমধ্যে ডুয়িং বিজনেস, উচ্চ মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সামগ্রিকভাবে আমরা বিনিয়োগ পরিবেশের বড় কোনো পরিবর্তন করতে পারিনি। ফলে নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। যদিও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের একটা তারিখ ঘোষিত হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা বিনিয়োগ করবেন তারা দীর্ঘ ও মধ্য মেয়াদি একটা নিশ্চিত পরিবেশ চাইবেন। সে বিষয়টা বিনিয়োগকারীদের মনে কাজ করছে। তবে সরকার যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন, ওয়ানস্টপ সার্ভিস, অবকাঠামোগত সমস্যা দূর করার চেষ্টা করছে, এটার ফলে আমার ধারনা বিনিয়োগে কিছুটা চাঞ্চল্য আসবে। সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়ছে। সেটাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। বিনিয়োগ না হওযার ফলে আমাদের নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না। যেটা ছিলো গণঅভ্যুত্থানের বড় দাবি।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের অনেক লোকজন আয়ের উৎস কম থাকায় দারিদ্র সীমার নিচে পড়ে যাচ্ছে। শিক্ষিতদের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। তো সব কিছু মিলিয়ে আমাদের বিনিয়োগকে চাঙ্গা করতে হবে। সেখানে যতক্ষণ পর্যন্ত একটা নির্বাচিত সরকার না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের বিরুদ্ধে কাজ করবে।

তিনি বলেন, আমরা যদি মূল্যস্ফীতি কমাতে পারি তাহলে ব্যাংকের ইন্টারেস্ট হার কমাতে পারবো৷ তখন বেসরকারি খাত উৎসাহিত হবে বিনিয়োগে। একই সঙ্গে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ অনুকূল করা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে একটা নির্বাচিত সরকার এসে পরিবেশটাকে স্বস্তির জায়গা নিয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিনিয়োগে মন্দা বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে চলছে। এর কারণ হলো আমাদের কাঠামোগত সমস্যা। ব্যবসা বা বিনিয়োগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গত এক বছর ধরে রাজপথের অস্থিরতা। ভবিষ্যতে কী হবে! রাজপথের অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দুইটাই মিলে গেছে। সে পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকে, আরেকটু দেখি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় কি না। ফলে ব্যবসায়ীরা অনিশ্চিয়তায় রয়েছে। আগামীতে কী হবে রাজনৈতিক পর্যায়ে সেটা পর্যবেক্ষণ করছে ব্যবসায়ী। যদিও বলা হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সেটা নিয়েও জনমনে সংশয় আছে। তাই অনিশ্চিয়তা যে কেটে গেছে সেটা বলা যাবে না।

তিনি বলেন, সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে। অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিনিয়োগ সামিট, এক ছাতায় সব কিছু নিয়ে আসা বা ওয়ানস্টপ সার্ভিস করার উদ্যোগ তো অনেক দিন ধরেই চলছে। নতুন বিডা সেটাকে বেগবান করেছে। তবে অনিশ্চয়তা না কাটলে কোনো লাভ নেই। একই সঙ্গে জ্বালানি সংকট রয়েছে। সেটার নিশ্চয়তা দেওয়া মুশকিল। এছাড়া ব্যাংকিং খাতে সমস্যা রয়েছে। কিছু কাজ চলছে কিন্তু পরিপূর্ণ পায়নি। মূল কথা হলো, একদিকে আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা অন্য দিকে কাঠামোগত সমস্যা আছে। সেগুলোর কিছু কিছু হয়েছে, কিছু কিছু আগামীতে হবে। সবগুলো বিষয় যদি এক সাথে না মেলে তাহলে ফলাফল পাবো না। সংস্কার এগিয়ে গেলেও অনিশ্চয়তা থেকে যাবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, বিনিয়োগে খরার প্রথম কারণ হলো; বর্তমান সরকার যে সংকোচনমূলক মূদ্রানীতি চালু করেছে। সে কারণে অনেক ব্যবসায়ী বিনিয়োগ করছে না। কারণ এই নীতির ফলে উচ্চ সুদের হার। যেটা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে বাধা দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, গণঅভ্যুত্থানের ফলে অনেক ব্যবসায়ী ভয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে। এ পর্যন্ত বিজিএমইএ ১৬০টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। অনেকে চাপের মুখে আছে। ফলে শিল্পাঞ্চলের পরিবেশ স্থিতিশীল হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটা সংযোগ থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের যোগযোগ কম। সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর মধ্যে ব্যবসা বা অর্থনীতি নেই। সংস্কারকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করছে। এজন্য এতো বড় বিনিয়োগ সম্মেলন হলেও বিনিয়োগ আসছে না। কারণ ব্যবসায়ীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তারপর নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কায় আছে যে পরবর্তী সরকারের পদক্ষেপ বা পলিসি কী হবে।

এছড়া ২০২৬ সালে আমরা এলডিসি বা গ্রাজুয়েশন উত্তরণে যাব। সেখানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা এই উত্তরণ তিন বছর পিছিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু সরকার সে কথা শুনছে না। সেটা নিয়ে ব্যবসায়ীরা দ্বিধায় আছে। ফলে সার্বিক বিবেচনায় বিনিয়োগে মন্দা দেখা দিয়েছে।

এজন্য সরকারকে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে। প্রয়োজনে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি কমিটি করতে হবে, যারা প্রতি মাসে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসবে। সরকারের অগ্রাধিকার খাতে অর্থনীতি ও বিনিয়োগকে আনতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবে।

অর্থনীতিবিদ ও ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবু আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো বর্তমান সরকার কতোদিনের সরকার সেটা বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে না। সাধারণত বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত সরকারের সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বর্তমান সরকার অনেক ক্ষেত্রে ভালো করেছে রিজার্ভ বৃদ্ধি করেছে, ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট কমিয়েছে, রপ্তানি বাড়ছে। তবে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। কারণ ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেশি। যেটা সরকার কমাচ্ছে না। এটা করতে পারলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হবে।

তিনি বলেন, সরকারের আয়ের উৎস হলো রাজস্ব। সেখান থেকে যেটা আয় হয় সেটা বেতন ভাতা দিতেই ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে সরকার দাতা সংস্থা থেকে কিছু পায়। এখন তারাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে যে নির্বাচনের পর যদি রাজনৈতিক সরকার আসে, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে তারা বিনিয়োগের চিন্তা করবে। ফলে আমরা আশা করছি, রাজনৈতিক সরকার এলে বিনিয়োগ বাড়বে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সুদের হার কমাতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে।

এদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবার অস্থির হয়ে উঠছে। নির্বাচনের রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় রয়েছে ব্যবসী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। প্রস্তুতি নিয়েও অনেকে বিনিয়োগ করছেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ বলেন, দেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত ও দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অপরিহার্য। যে কোনো বিনিয়োগকারী, দেশি হোক বা বিদেশি- আগে নিরাপদ ও পূর্বানুমেয় পরিবেশ খোঁজ করেন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে সব মহলের উচিত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে একটি সহনশীল ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা। এছাড়া শিল্প-বিনিয়োগের অনেক বাধা এখনো দূর হয়নি। এসব বাধার মধ্যেও অনেক বিনিয়োগকারী বিনিয়োগের প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনেকে বিনিয়োগ নিবন্ধনও করেছেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় সব স্থবির হয়ে আছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ও রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদ হাসান খান বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে আস্থা পান না। দেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের পরিস্থিতি ভালোভাবে জানেন। তারা অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। দেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে না এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহী হন না। নিরাপদ পরিবেশ ছাড়া কেউ বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চান না। তাই বিনিয়োগ বাড়াতে হলে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ জরুরি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক সচিব মো. হাফিজুর রহমান বলেছেন, অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘদিন বিনিয়োগকারীদের দ্বিধায় ফেলেছিল এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। তবে নির্বাচন ঘোষণার ফলে সেই অনিশ্চয়তা কিছুটা কেটেছে। বিশ্ব অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ধরে রাখা জরুরি। ব্যবসায়ীসমাজ সব সময় চায়, একটি নির্বাচিত সরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও স্থিতিশীলতার মাধ্যমে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিক। তাই এফবিসিসিআই মনে করে, এই নির্বাচন শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারেরও সুযোগ। অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবসাবান্ধব পরিবেশকে সুসংহত করবে।

বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত দেশে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না। অন্তত নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলেও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়। নির্বাচনের তারিখ জানা না থাকলে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করবেন না।

উল্লেখ্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) মন্দাভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এফডিআই আসার হার বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশে মোট ১৫৮ কোটি ডলারের এফডিআই আসে। এর মধ্যে ৭১ কোটি ডলার আবার ফেরত নিয়ে গিয়েছেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।

এআই নাকি বাস্তব—ছবি চিনবেন যেভাবে

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৩৯ পিএম
এআই নাকি বাস্তব—ছবি চিনবেন যেভাবে

ডিজিটাল যুগে ছবি ও ভিডিওর জগতে এআই ও ডিপফেইক প্রযুক্তি নতুন ধাঁধা তৈরি করেছে। প্রতিদিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক ছবি ভেসে ওঠে, যেগুলো আসল নাকি কৃত্রিম—তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।

তবে কিছু কৌশল জানা থাকলে এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট চেনা সম্ভব।

 

ছবি জুম করুন
ছবিকে বড় করে দেখলে প্রায়ই অসঙ্গতি ধরা দেয়। মানুষের চোখ, ঠোঁট, চোয়াল, হাত বা আঙুলে অস্বাভাবিকতা থাকতে পারে। মুখের চারপাশ ঝাপসা দেখা যায়। আবার ভিডিওতে ঠোঁটের নড়াচড়া ও শব্দের মিল না-ও থাকতে পারে। বিশেষ করে মুখ নড়াচড়া করলে দাঁতের অসংলগ্নতা সহজেই বোঝা যায়।

আবেগ-অনুভূতির সামঞ্জস্য খুঁজুন
মানুষের স্বাভাবিক হাসি, কান্না কিংবা উচ্ছ্বাস শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। কিন্তু ডিপফেইক বা ফেস-সোয়াপ সফটওয়্যার এ বিষয়গুলো পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারে না। ফলে আবেগ প্রকাশে অসামঞ্জস্য চোখে পড়তে পারে।

পুরো ছবিটি খেয়াল করুন
একক ছবি অনেক সময় বাস্তবের মতো মনে হলেও গ্রুপ ছবি বা জটিল দৃশ্যে এআই ভুল করে বসে। এতে হাত-পায়ের গরমিল, বাড়তি আঙুল কিংবা অদ্ভুত ভঙ্গি ধরা পড়তে পারে।

ব্যাকগ্রাউন্ড পর্যবেক্ষণ করুন
ছবির বিষয়বস্তু ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে চারপাশের দৃশ্য যদি মানানসই না হয়, তবে সেটি সন্দেহজনক। এআই-তৈরি অনেক ছবিতে এমন পটভূমি থাকে যার বাস্তব অস্তিত্ব নেই।

ছবির প্রেক্ষাপট যাচাই করুন
ছবিটি কেন তোলা হতে পারে বা কোথা থেকে এসেছে তা খুঁজে দেখা জরুরি। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই সম্ভব। জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের ছবি হলে বিষয়টি যাচাই করা আরও সহজ হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআইয়ের ছবি যতই নিখুঁত মনে হোক না কেন, সচেতন চোখ অনেক সময়েই তার ভেতরের অসঙ্গতি ধরতে পারে। তাই ছবি দেখেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে খতিয়ে দেখা উচিত।